মহিদুর রহমান
ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার গল্প
রাগ জিনিসটা যে ভালো নয় তা এনায়েত ভালো করেই জানে। কিন্তু আজকে তার রাগটা চরমে। রাগের কারণ, ক'দিন থেকে মৌমিতা তাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। এনায়েত কলেজ গেট থেকে খানিকটা দূরে একটা গাছের ছায়ায় অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে।
তখন কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। বেল বাজার সাথে সাথে কলেজ গেইট খোলে দেয় আমীর আলী। ক্লাসরুম থেকে হুড়মুড় করে বের হতে গিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল মৌমিতা। সহপাঠী মিজান যদি তাকে তাৎক্ষণিক না ধরতো তাহলে কি একটা বিপদ হয়ে যেত! বড় রাস্তা দিয়ে গাড়িগুলো উত্তরে যাচ্ছে- দক্ষিণে যাচ্ছে। মৌমিতা ও মিজান ফুটপাথ দিয়ে পায়ে পায়ে হাঁটছে।
মৌমিতা মিজানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
- পেটে খিদা আছে?
- কিন্তু এখন খেতে মন চাইছে না।
- এটা ডাহা মিথ্যা। তোমাকে খেতেই হবে।
মিজান আর খুব একটা আপত্তি করলো না। পাশেই পৌরপার্ক। পার্কের আশেপাশে বেশ কয়েকটি চটপটির দোকান। কর্নারের দোকানটায় তখন ভীড়টা অপেক্ষাকৃত কমই ছিল। মৌমিতা চুপিসারে মিজানকে নিয়ে সে দোকানে ঢুকেই দুই বাটি চটপটি অর্ডার করে। এই ফাঁকে দুজনে বেশ জমিয়ে আলাপ গল্প করতে থাকে। তবে পরিচিত কেউ দেখে ফেলে কি না সেদিকে মৌমিতা-মিজান দুজনেরই চোখ খুব সতর্ক।
আলাপ গল্পের ফাঁকে হঠাৎ মৌমিতার চোখ পড়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক এনায়েতের চোখের উপর। এনায়েতের চোখে মুখে কি এক আদিম হিংস্রতার স্পষ্ট অভিব্যক্তি।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা নামে।
মৌমিতাকে দেখামাত্রই এনায়েতের মেজাজটা আরও বিগেড়ে যায়। এবং খুব ভয়ঙ্করভাবে বিগড়ে যায়। সে উন্মাদের মতো তেড়ে আসে মৌমিতার দিকে। মিজান কিছু বুঝে উঠবার আগেই এনায়েত মৌমিতার কবজিতে ধরে হেঁচকা টানে চেয়ার থেকে তুলে ফেলে। কিছুটা ধস্তাধস্তি চলে। মিজান এনায়েতকে বলে,
- একটু স্থির হ ভাই।
ততক্ষণে উৎসুক কিছু লোকও জড়ো হয়ে যায়। মৌমিতা নিজেকে আর সামলাতে পারে না। এনায়েতের গালে একটা চড় কষিয়ে জোর গলায় অস্পষ্ট শব্দে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।
চড়টা হজমের পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এনায়েত। মৌমিতাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বড় রাস্তায়। তখন কিছু পথচারী এগিয়ে এসে তাদেরকে আটকায়। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ব্যাপারটা তারা বুঝতে চায়। এনায়েত কারো কথায় কর্ণপাত না করে শুধু মৌমিতাকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকে,
- সে একটা বিশ্বাসঘাতক! বেঈমান! আপনারা আমাকে পাগল বলতে পারেন আমি কিন্তু পাগল নই। আপনারা আমাকে উন্মাদ বলতে পারেন আমি কিন্তু উন্মাদ নই। সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমি তাকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না।
জটলাপাকানো লোকজন একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। ততক্ষণে এনায়েত জটলা থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে থাকে। আর কিছুক্ষণের মধ্যে সে জনতার ভীড়ে হারিয়ে যায়। মৌমিতাও দাঁত কিড়মিড় করে উল্টা দিকে হাঁটতে থাকে।
ঘটনাটা এখানেই শেষ হতো পারতো। কিন্তু পুরো ঘটনাটা একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামরায় ধরা পড়ে। এবং সন্ধ্যার খানিক বাদে তা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হয়।
দৃশ্যটা মৌমিতার নজরে পড়তেই তার চোখ ছানাবড়া! লজ্জায় সে আড়ষ্ট! কিংকর্তব্যবিমূঢ়! মৌমিতা বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকে। মৌমিতা ভাবে, খানিক বাদে বাবা মাও জেনে যাবে ব্যাপারটা তখন কি জবাব দেবে মৌমিতা? মৌমিতা স্বস্তি পাচ্ছে না। পুরো ঘটনাটা তার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে।
এনায়েতের রক্তাক্ত চোখ কেবলই জানান দেয়, মৌমিতা তুমি আমার ভালোবাসা।
মহিদুর রহমান, কবি ও লেখক
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা