ডা. মো. উবায়দুল ইসলাম বাপ্পী
আপডেট: ১৫:৩৮, ২১ মার্চ ২০২২
আজ বিশ্ব কবিতা দিবস
কবিতার নিজস্ব একটা আবেদন আছে। যুগে যুগে তাইতো বিশ্বব্যাপী রচিত হয়েছে কবিতা। যা তার বর্ণের মাদকতায় পাড়ি দিয়েছে শত কিংবা সহস্র বছর। কবিতার অবদান আছে ভাষার ব্যাপ্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে। কবিতা মানবমনকে জাগিয়েছে খরায়, দুর্যোগে, যুদ্ধে, মুক্তিতে আর পূর্নিমা রাতে।
আজ ‘বিশ্ব কবিতা দিবস’। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কবি ও কবিতা পাঠকদের দিন আজ। কবিতা ভাবের সুন্দর রূপ। কবিতার বিমূর্ততার মতো অনুভূতি ও আবেগের আধিক্য আর কোনো সাহিত্যে তৈরি হয় না।
প্রাচীনতম কবিতা ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু সময় “গিলগামেশের মহাকাব্য” এর সাথে প্রকাশিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তবে সম্ভবত সাক্ষরতার বিস্তারের আগেও কবিতার অস্তিত্ব ছিল। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধরনের কবিতার প্রবণতা ঘটেছে এবং রূপান্তরিত হয়েছে।
সনেট থেকে র্যাপ লিরিক্স পর্যন্ত, কবিতার মূল উদ্দেশ্য একই থাকে - মানুষের অবস্থা অন্বেষণ করা এবং শব্দের মাধ্যমে আবেগকে আহ্বান করা। কবিতা মানবজাতির অস্তিত্বগত দ্বিধাগুলির সাথে অনুরণিত হয়, গভীর থেকে ধারণাগুলিকে উড়িয়ে দেয়।
কবিতা একটি ভাষাগত অভিব্যক্তি উদযাপন করে। যা সমস্ত সংস্কৃতির লোকেরা সনাক্ত করতে পারে। কবিতা প্রতিটি জাতির ইতিহাসে পাওয়া যেতে পারে এবং আমাদের ভাগ করে নেওয়া মূল্যবোধ এবং সাধারণ মানবতার অধীনে একত্রিত করে। সবচেয়ে মৌলিক কবিতায় সংলাপ আলোড়িত করার ক্ষমতা রয়েছে।
কি করে এলো বিশ্ব কবিতা দিবস
তখন ১৯৯৯ সাল। প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনের অধিবেশনে একটা দিনকে বেছে নেয়া হলো। প্রতি বছরের ২১শে মার্চকে বিশ্বব্যাপী পালন করা হবে 'বিশ্ব কবিতা দিবস’ হিসেবে। সেদিনের সেই সম্মিলনে বিশ্ব নেতারা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে কবিতার একটা অনুপম সামর্থ্য আছে মানব মনের সৃষ্টিশীল মর্ম তার গহীনে ধারণ করার।
কি ছিলো উদ্দেশ্য
ভাষাগত বৈচিত্র্যে সহজাত করা, বিপন্ন ভাষাগুলোকে সংরক্ষণ করা এবং মূল্যবান সংস্কৃতির স্বরুপ হিসেবে তুলে ধরা।
বিশ্বের প্রাচীন ভাষাগুলো বেঁচে থাকায় কবিতার ভূমিকা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়া। পাশাপাশি বিশ্বের উন্নয়ন আর আলোকিতকরণে কবিতার যে রয়েছে ব্যপক ভূমিকা।
কবিরা যে যুগে যুগে ভাষাকে বিভিন্নভাবে রুপায়িত করে মানুষের জ্ঞান আর উপলব্দিকে শোভিত ও সমৃদ্ধ করেছেন নিরবধি।
কবিতা দিবসের গুরুত্ব
- সবার জন্য কবিতা। জীবনকে বুঝতে ও সহজ করতে পারে কবিতা
- আমাদের চারপাশেই কবিতা আছে, আপনি হয়তো গান অনেক ভালোবাসেন। তবে জেনে রাখুন আপনি কবিতাও ভালোবাসেন। গানের সুর মুর্ছনায় যে কবিতাও বাস করে।
- একটা নতুন কবিতাপ্রেমী প্রজন্ম তৈরি করে কবিতা।
মুগ্ধকর কার্যকলাপ বিশ্ব কবিতা দিবসের
- একটা ভালো কবিতার বই কিনতে পারেন।
- আপনি এমন একটা কবিতা খুঁজে বের করুন যা আপনাকে আনন্দ দেবে।
- নিবিড়ভাবে কবিতাটি পাঠ করতে পারেন।
- বন্ধুদের সাথে এই কবিতা শেয়ার করতে পাতেন।
- কবির মতো আপনিও আপনার আবেগ স্বযত্নে লিখে রাখতে পারেন।
- সমকালীন নিয়ম মেনে বিশ্ব কবিতা দিবসের প্রকাশ করতে পারেন।
যবনিকাপাত
কবিতার নিজস্ব একটা আবেদন আছে। যুগে যুগে তাইতো বিশ্বব্যাপী রচিত হয়েছে কবিতা। যা তার বর্ণের মাদকতায় পাড়ি দয়েছে শত কিংবা সহস্র বছর। কবিতার অবদান আছে ভাষার ব্যাপ্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে। কবিতা মানবমনকে জাগিয়েছে খরায়, দুর্যোগে, যুদ্ধে, মুক্তিতে আর পূর্নিমা রাতে। তাইতো ২০০০ সালের ২১ মার্চ প্রথম পালিত হয় বিশ্ব কবিতা দিবস। আর আমিও লিখে ফেললাম ২০২২ সালের ২১ শে মার্চের প্রাক্কালে কবিতা নিয়ে কিছু কথা।
গত শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা কবিতা
যদি
রাডিয়ার্ড কিপলিং
অনুবাদ আনিসুল হকযদি তুমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারো তখন
যখন সবাই মাথা গরম করে দোষারোপ করছে তোমাকেই,যদি তুমি নিজের ওপরে আস্থা রাখতে পারো তখন, যখন সবাই তোমার ব্যাপারে সন্দিহান, আবার অন্যদের সন্দেহ করার জায়গাটাও দাও;
যদি তুমি অপেক্ষা করতে পারো, আর অপেক্ষা করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে না পড়ো;
যদি তোমাকে নিয়ে যখন মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে, তখন নিজে মিথ্যা কথা না বলো,
যখন তোমাকে ঘৃণা করা হচ্ছে, তখনো তুমি ঘৃণার পথ বেছে না নাও;
অবশ্য তখনো তোমাকে অতিরিক্ত ভালো সাজতে হবে না, খুব জ্ঞানীর মতো কথা বলতে হবে না:যদি তুমি স্বপ্ন দেখতে পারো, কিন্তু স্বপ্নকে তোমার প্রভু বানিয়ে না ফেলো,
যদি তুমি চিন্তা করতে পারো, কিন্তু চিন্তাকেই তোমার লক্ষ্য বানিয়ে না ফেলো,
যদি তুমি ‘বিজয়’ আর ‘বিপর্যয়’—এই দুইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারো,
আর যদি তুমি এই দুই প্রতারককেই একইভাবে গ্রহণ করতে পারো;যদি তুমি সহ্য করতে পারো তখন, যখন তোমার বলা সত্য কথাকে বিকৃত করে অসাধু লোকেরা বোকা মানুষদের জন্য ফাঁদ বানায়;
অথবা তুমি যে জিনিসগুলোর জন্য জীবন দিয়ে দিয়েছ, সেগুলোকে যদি তুমি ভেঙে যেতে দেখো, আর যদি তুমি সামনে-পেছনে ঝুঁকে পড়ে ক্ষয়ে যাওয়া হাতিয়ার দিয়ে আবার সেগুলোকে গড়ে তুলতে পারো:
যদি তুমি তোমার বিজয়গুলোকে এলোমেলো করে রাখতে পারো
আর সেসব নিয়ে বাজি খেলে সব হারিয়ে আবারও নতুন করে শুরু করতে পারো,
আর হারটা নিয়ে একটা কথাও ব্যয় না করো,
যদি তুমি তোমার হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু আর পেশিকে তোমার পালা চলে যাওয়ার অনেক পরেও কাজ করতে বাধ্য করতে পারো, তখনো...
যখন তোমার ভেতরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই কেবল ইচ্ছাশক্তি ছাড়া, যা বলছে ‘লেগে থাকো’:যদি তুমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলার সময়ও তোমার বিনয় ধরে রাখতে পারো
আর রাজাধিরাজের সঙ্গে চলার সময়ও সাদাসিধে ভাবটা হারিয়ে না ফেলো,
যদি শত্রু কিংবা সহৃদয় বন্ধুও তোমাকে আঘাত দিতে না পারে,
যদি সব মানুষ তোমার ওপরে নির্ভর করে, কিন্তু কেউই খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে,
যদি তুমি ক্ষমাহীন একটা মিনিটকে ভরে তুলতে পারো ষাট সেকেন্ডের দৌড়ের সমান মর্যাদায়,
তাহলে
তাহলে এই পৃথিবী তোমার, এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তোমার;
এবং তারও চেয়ে বড় কথা, তুমি হয়ে উঠবে একজন মানুষ, পুত্র আমার।
ডা. মো. উবায়দুল ইসলাম বাপ্পী, রেডিওলজী এন্ড ইমেজিং বিশেষজ্ঞ, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মৌলভীবাজার।
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা