শ্যামলাল গোসাঁই
আপডেট: ১৯:৫৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস ‘দুই সত্তা’
শ্যামলাল গোসাঁই`র ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস `দুই সত্তা`
নিজের চশমা মুছে ভালোভাবে তাকিয়েও কাউকে দেখা গেলোনা। হাসানের বাবার পেরেশানি যেন আরও বেড়ে গেলো এতে। এই ঘরে আসলে হচ্ছেটা কি! আগাগোড়া কিছুই যে তার মাথায় ঢুকছে না। হাসান ছাড়া আর কেউ ওর ঘরে নেই। তাহলে এতক্ষণ যা শোনছিলেন তা কী মিথ্যা? মিথ্যা হবে কেন- নিজের কানেই তো শোনছিলেন তিনি একটি নারীকণ্ঠ!
১.
হাসানের যখ ঘুম ভাঙলো বেলা তখন ১১টা। হাসানের শোবার খাটের পাশেই ইজি চেয়ারে উবু হয়ে বসে আছেন হাসানের বাবা জাফর আহমেদ। পুরো একটি রাত নির্ঘুম জেগে থাকার চিহ্ন তার সমস্ত মুখ জুড়ে। অবশ্য ছেলের এই অবস্থায় জাফর সাহেব-রই শুধু এ অবস্থা হয়নি, এ ঘরের আরো দুইজন মানুষ নিদ্রাহীনভাবে রাত কাটাচ্ছেন। তারা হাসানের মা শাহিনা বেগম আর হাসানের দাদী। হাসানের ঘরের পাশের ঘর থেকেই তাঁদের মৃদু কান্নার শব্দ আসছিলো।
হাসানের ঘুম ভেঙেছে দেখে জাফর সাহেব হাসানের দিকে তাকালেন। কেমন বদলে গেছে ছেলেটা। মুখ, চোখ অদ্ভুতরকম ফুলে আছে। দেখলে মনে হবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ও অনেক দিন ধরে। ছেলের জন্য এই মুহুর্তে বড় মায়া জাগে জাফর সাহেবের। চোখ গড়িয়ে কিছুটা জলও পড়ে যায় মাটিতে।
হাসানের নিরব দৃষ্টিও তখন মাটির দিকে। নিজের পায়ের নখের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। অদ্ভুত তার তাকিয়ে থাকার ধরণ। শরীর উঠানামা করছে না। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষ নিঃশ্বাস নিলে কিংবা নিঃশ্বাস ফেলার সময় শরীর উঠানামা করে। চোখের পাতাও নড়ছে না হাসানের। যেন খুব গভীর ভাবে কিছু ভাবছে হাসান।
ওর হাতের কাছেই ভাঙা একটা কাঁচের বোতল চোখে পড়লো জাফর সাহেবের। কোথা থেকে এই বোতল এলো কিছুই বুঝতে পারলেন না তিনি। কিছুটা আঁতকে উঠেন তিনি। নিজের ছেলেকে আজকাল আর চিনতে পারছেন না জাফর সাহেব। অথচ আজ থেকে ঠিক তিন দিন আগেও হাসান অন্য দশটা ছেলের মতোই ছিলো। হাসতো, কথা বলতো, কলেজে যেতো। সুঠামদেহী এই হাসান অল্প ক’দিনেই কেমন রোগা আর অচেনা হয়ে গেছে পরিবারের সকলের কাছে। কিন্তু কেউ ধরতে পারছে না ছেলে কেন এরকম হয়ে গেলো!
হঠাৎ বিড়বিড় করে কিছু বলতে শোনলেন হাসানকে। কী বলছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অবিরামভাবে একই কথা বলে যাচ্ছে হাসান। জাফর সাহেব ভয় পেলেন ছেলের এমন অবস্থা দেখে। তিনি হাসানের বাম হাঁতে নিজের একটি হাঁত রাখলেন। সাথে সাথে হাসান ভীষণ জোড়ে টান দিয়ে তার হাত সরিয়ে নিলো। জাফর সাহেব অবাক হলেন! এমন করছে কেন হাসান? তিনি লক্ষ করলেন আবার কিছু একটা বিড়বিড় করছে হাসান। কী বলছে বুঝতে পারছেন না তিনি।
‘কেমন আছিস বাবা?’ কিছুটা ভয় নিয়েই জিজ্ঞেস করলেন জাফর সাহেব।
- ‘ভালো আছি। তুমি ভালো নেই তাই না বাবা? কেমন রোগা হয়ে যাচ্ছো দিনদিন। রাতে ঘুম হয়নি তোমার? তোমার কি শরীর খারাপ?’ হাসানের এমন সহজ, সাবলীল কথা শোনে কিছুটা অবাক হলেন জাফর সাহেব! কে বুঝবে যে এই ছেলেটি একটু আগেই বাবার হাত থেকে হিংস্রভাবে নিজের হাত সরিয়ে নিয়েছিলো? জাফর সাহেব হাসানের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। যেন হাসানকে বলার মতো কোনো শব্দই এখন আর খুঁজে পাচ্ছেন না জাফর সাহেব। সত্যিই চিনতে পারছেন না নিজের একমাত্র এই ছেলেটিকে। প্রতি সেকেন্ডে যেন বদলে যাচ্ছে ও। কিছু বললেন না জাফর সাহেব, বসে রইলেন চুপ করে।
- ‘তোমরা আমায় অনেক ভয় পাও তাই না বাবা? আজকাল আমার কাছে আসো না তুমি। মাও আসেনা। আমি বুঝি তোমরা যে আমাকে ভয় পাও। কিন্তু বিশ্বাস করো বাবা আমার কিছু হয়নি। আমি একদম ঠিকাছি। মা কোথায়? মাকে ডেকে বলো আমার ক্ষুধা লেগেছে, মাকে ভাত বাড়তে বলো। আজকে তোমাদের সাথে একসাথে টেবিলে বসে ভাতে খাবো।’ ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠে হাসান। ছেলের অবস্থা দেখে স্থির থাকতে পারেন না জাফর সাহেব। তার চোখ দিয়ে আবারও কিছুটা পানি গড়িয়ে পড়লো; কেউ তা দেখলো না। তিনি কাঁদছেন, তার ছেলেটির জন্য কাঁদছেন!
বললেন, ‘তোর পাশে এই ভাঙা কাঁচের বোতল কেন বাবা? আমার কাছে দে বাইরে ফেলে আসি।’
কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসান বোতলটি হাতে তোলে নেয়। বলে, ‘এটা নেয়া যাবে না বাবা। ও আমাকে এটা দিয়েছে। বলেছে সবসময় পাশে রাখতে।’
‘ও কে হাসান?’
- হাসান বলে, ‘একটা মেয়ে বাবা।’
শোনে অবাক হন জাফর সাহেব।
‘কি কলছিস তুই এসব?’
- ‘ঠিকি বলছি বাবা। প্রতিদিন অনেক রাতে হলে ও আসে আমার ঘরে। কথা হয় আমার সাথে । ওর নাম রিজু। ওকে তোমরা দেখতে পাও না বাবা? ও যখন আসে আমার ঘর একটা অচেনা ফুলের গন্ধে ভরে যায়। অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ। অনেক সুন্দর করে হাসে ও। এক পায়ে নুপুর পড়ে। যখন আসে নুপুরের শব্দ হয়। তোমরা শোনতে পাও না? অনেক কিছু বলে আমাকে। ওইতো আমাকে বলেছে আমার খুব বিপদ। তাই এটা যেন সবসময় সাথে রাখি।’
হাসানের এমন সহজভাবে কথা শোনে পাথরভাঙা বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকেন জাফর সাহেব। তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোয় না। পাশের ঘর থেকে হাসানের মা এসব শোনে আরো উচ্চায়াজে কান্না করতে থাকেন। হাসানের মায়ের কান্নার শব্দ বিরক্ত লাগে জাফর সাহেবের। কিন্তু ছেলের শোকে কোন মা’ই বা কান্না না করে থাকতে পারে? তাই তিনি কিছু বলেন না। হাসান আবার মুখ ফিরিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকে। অস্পষ্ঠ তার কথার ধরণ। কিছুই বোঝা যায় না।
আজ তিনদিন হয় হাসান অদ্ভুত এক রোগে ভোগছে। রাত হলে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে হাসানের। কিছুক্ষণ ছটফট করে স্থির হয়ে যায় হাসান। তারপরই শুরু হয় ওর অদ্ভুত কথাবার্তা। কার সাথে যেন হাসান কথা বলে। গভীর রাতেও হাসানের ঘর থেকে উচ্চস্বরে হাসির আওয়াজ ভেসে আসে। দীর্ঘসময় একইভাবে চলতে থাকে। কিসব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে একা একা! তখন মনে হয় হাসানের ঘরে অন্য কেউ আছে। জাফর সাহেব লক্ষ করেছিলেন একদিন। হাসানের ঘর থেকে ঠিক একই সময় একটি মেয়ের কণ্ঠও ভেসে আসে। তার মানে একটি মেয়ের সাথে কথা বলে হাসান? ওর কথাই ঠিক?
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জাফর সাহেব একদিন হাসানের এমন এক মুহুর্তে দরজা খুলে হাসানের ঘরে ঢুকলেন। কিন্তু অবাক হলেন তিনি! ঘরে হাসান একাই বসে আছে হাসান! দেয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে শিশুর মতো হাসছে। এমন যেন ওর সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কই জাফর সাহেবের চোখে তো কাউকে পড়ছে না। নিজের চশমা মুছে আবার ভালোভাবেন তাকিয়েও কাউকে দেখা গেলোনা। হাসানের বাবার পেরশানি যেন আরও বেড়ে গেলো এতে। এই ঘরে আসলে হচ্ছেটা কি! আগাগোড়া কিছুই যে তার মাথায় ঢুকছে না। ও ছাড়া আর কেউ ওর ঘরে নেই। তাহলে এতক্ষন যা শোনেছিলেন তা কী মিথ্যা? মিথ্যা হবে কেন- নিজের কানেই তো শোনছিলেন তিনি!
জাফর সাহেবের চিন্তায় জট পেকে যায়। চন্তার অথৈ এক সাগরে পড়ে থাকা অসহায় নাবিকের মতো দেখায় থাকে। হাসানের ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে একটি সিগারেট ধরান। এই কয়দিনে সিগারেটের পরিমাণ বেড়ে গেছে অনেক। বুক ভরে কাশি জমা হয়েছে। সিগারেটে দুই টান দিয়েই ধরিত্রী কাঁপিয়ে কাশ ওঠে জাফর সাহেবের। চরম বিতৃষ্ণায় হাতের সিগারেটটি ফেলে দেন। আবার যেন হাসান আর সেই নারী কণ্ঠ ভেসে এলো!। হাসান খুব উচ্চস্বরে হাসছে এবার।
২.
হাসানের এই সমস্যা নিয়ে শহরের বড় মানসিক ডাক্তার রাশেদুল সাহেবের সাথে তার চেম্বারে বসে কথা বলেছেন জাফর সাহেব। যদিও তিনি চাইছিলেন না ছেলের এই অদ্ভুত রোগের কথা পরিবারের বাইরে কেউ জানুক। কিন্তু রাশেদুল বন্ধু মানুষ। সেই ছেলেবেলা দুজন একই কলেজে পড়েছেন। তাছাড়া রাশেদুল জাফর সাহেবদের একজন পারিবারিক ডাক্তারও। তাই ব্যপারটা সবার আগে তাকেই জানানো উচিৎ মনে করলেন হাসানের বাবা। ভেবেছিলেন রাশেদুল হয়তো এর একটা সমাধান বের করতে পারবে। কোনো ট্রিটমেন্ট দিয়ে হয়তো রাশেদুল হাসানের এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে। কিন্তু হাসানের পুরো ঘটনা শোনে রাশেদুল সাহেব এর কোনো সমাধান দিতে পারলেন না।
কপাল ভাঁজ কের চিন্তার রেশ নিয়ে বললেন, ‘দেখো বন্ধু পুরো ঘটনাটি শোনে যা মনে হচ্ছে হাসানের এই ঘটনাটি কোনো ট্রিটমেন্ট কিংবা ঔষুধ দিয়ে সারাবার নয়। অদ্ভুত এক রোগ ওর। যদিও এটাকে রোগ বলবো না আমি। এরকমটা আমাদের সবার মাঝেই আছে। কারো কম, কারো বেশি।’
রাশেদুলের কথা শোনে অবাক হলেন জাফর সাহেব। বললেন,
‘কী বলছো এসব তুমি? হাসানের এটা কী রোগ নয়? দিনের পর দিন চোখের সামনে নিভে যাচ্ছে ছেলেটা আমার, আর তুমি বলছো ওটা রোগ নয়?’ বলেই কাঁদতে লাগলেন জাফর সাহেব।
রাশেদুল তাকে শান্তনা দিয়ে বললেন, ‘কেঁদে এর কোনো সমাধান হবে না। হাসানের সাথে এখন যা হচ্ছে সেটাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘হেলোসিনেশন’ বলে। এটা সবার সাথেই হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে হাসানের ক্ষেত্রে হেলোসিনেশনের ব্যপারটা অতি মাত্রায় হচ্ছে। যা একজন স্বাভাবিক মানুষের সাথে ঘটেনা। আমি তোমাকে একজন লোকের ঠিকানা দিচ্ছি। তুমি বরং দেরি না করে। তার সাথে যোগাযোগ করো। লোকটার নাম করমচাঁদ ভাদুড়ি। ভাদুড়ি কোনো ডাক্তার নন। কিন্তু এসব সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন অনেকদিন ধরেই। এ লাইনে বেশ নামডাকও কামিয়েছেন। যদি হাসানের সত্যিই খারাপ কিছু ঘটে থাকে তবে এর সমাধান ইনিই বের করে দিতে পারবেন আমার বিশ্বাস। তাছাড়া এ ধরনের বেশ কিছু সমস্যার সমাধানও করেছেন করমচাদ ভাদুড়ি। আমার মনে তিনি হাসানকে ঠিক করে তোলতে পারবেন। আর হ্যা পারলে হাসানকে সাথে করে নিয়ে যেও।’
‘ঠিকাছে আসি তাহলে আজ।’ বলে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন হাসানের বাবা। ডাক্তার রাশেদুল তাকে থামালেন। বললেন, ‘আরেকটা কথা। হাসানকে এখন থেকে চোখে চোখে রাখবে। ওর রাগ হয় এমন কিছু করো না। যার ঠিকানা দিয়েছি তার কাছে যতো তাড়াতাড়ি পারো যাও। লোকটা কিন্তু বেশি কথা বলে না। আর যাওয়ার সময় উনার জন্য এক প্যাকেট পাশিং শো সিগারেট নিয়ে যেও। খুশি হবেন উনি। রাশেদুলের কথা শোনে কিছুটা অবাক হলেও তা প্রকাশ করলেন না জাফর সাহেব। শুধু যাওয়ার আগে বললেন, ‘আচ্ছা।’
রাশেদুলের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে তড়িৎগতিতে বাসায় ফিরে আসেন জাফর সাহেব। সোঁজা গিয়ে হাসানের ঘরে ঢুকেন তিনি। গিয়ে দেখেন হাসান স্বাভাবিক ভাবে ইজি চেয়ারে শীর্ষেন্দুর একটা বই হাতে হয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত। আস্তে করে হাসানকে ডাকলেন তিনি। সাথে সাথেই হাসান সোজা হয়ে বসলো। যেন বাবার জন্যই অপেক্ষা করছিলো হাসান। বললো, ‘তুমি এসেছো বাবা? তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। কী বলেছেন রাশেদ আংকেল?’
জাফর সাহেব শিউরে উঠলেন হাসানের কথা শোনে। তিনি রাশেদুলের সাথে কথা বলতে যাচ্ছেন এ কথা তারা দুই বন্ধু ছাড়া তৃতীয় কেউই জানে না। এমনকি হাসানের মাও না। তাহলে হাসান জানলো কিভাবে?
তিনি শংকিত গলায় হাসানকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই কিভাবে জানলি আমি রাশেদ আংকেলের সাথে তোর ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছি?’ হাসান হু হু করে হেসে উঠলো। হাসানের হাসি দেখে ভয় যেন আরো ঘিরে ধরলো জাফর সাহেবকে। হাসানের এই হাসি জাফর সাহেবের অপরিচিত। এভাবে হাসান কখনোই হাসেনি। কিন্তু এখন হাসছে। - ‘তোমরা জানো না। আমি আজকাল অনেক কিছুই বলতে পারি বাবা। তুমি রাশেদ আংকেলের কাছে গিয়েছো আর আমাকে নিয়ে কথাও বলেছো। সেটা আমি জানি। কি বলেছো তাও জানি। তারপরো তুমি বলো বাবা। তোমার মুখ থেকে শোনবো।’
‘তোর রাশেদ আংকেল একজন লোকের ঠিকানা দিয়ে বলেছে তোকে নিয়ে উনার কাছে যেতে। তুই যাবি?’
- ‘হ্যা আমি অবশ্যই যাবো বাবা। করমচাঁদ ভাদুড়ি অনেক বড় একজন মানুষ। তাকে নিয়ে কিছু ম্যাগাজিনে টুকটাক লেখা হয়েছে। আমি তার ব্যাপারে পড়েছি। তার কেস সলভ করার উপায় দারুণ। আমি জানতাম তার সাথে আমার দেখা হবে। তুমি তৈরি হয়ে আসো, আমিও তৈরি হচ্ছি। ছোট মামার দেওয়া পাঞ্জাবিটা পড়ি বাবা?’
জাফর সাহেবের মেরুদণ্ড দিয়ে ঠাণ্ডা একটি স্রোত জেনে নেমে যাচ্ছে হাসানের এসব কথা শোনে। তিনি তা অনুভব করলেন। হাসান সব জানে? সব বলে দিচ্ছে ও! যা যা তিনি ভাবছেন কিন্তু কাউকে বলছেন না তাও বলে দিচ্ছে হাসান। ভাদুড়ির ওখানে আজকে যাবেন সেটা তিনি মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু কাউকে বলেন নি। তাও হাসান জেনে যাচ্ছে! হাসানকে কী তবে জ্বীনে আঁচড় করেছে? একথা নিজেরই মেনে নিতে কষ্ট হয় জাফর সাহেবের। তিনি আগাগোড়া একজন বাস্তবিক জ্ঞানসম্মত লোক, তিনি জ্বীন-ভূতের গল্পে কীভাবে বিশ্বাস করবেন। কিন্তু ছেলের দিকে তাকালে নিজের সব জ্ঞান আর যুক্তিকে যে বড়ই তুচ্ছ মনে হচ্ছে আজ!
হাসান কি মৃত্যুর দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে? জাফর সাহেব কোথাও শোনেছেন যে, মানুষ নাকি মৃত্যুর আগে অনেক কিছু বলে দিতে পারে। হাসানও পারছে। তবে কী হাসানও মরে যাবে? তিনি আবার ভেঙে পড়লেন। চোখ ভরে কান্না নেমে আসে তার। বাইরের ঘর থেকে তখনো হাসানের মা বোবা বেশে পড়ে আছেন। নিথর দেহে তার যেন প্রাণের সঞ্চার নেই। ঘর একদম থমথমে হয়ে গিয়েছে। হাসানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। হাসান তখনো বিড়বিড় করে কিছু বলছে। কখনো হাসছে, খুব উচ্চস্বরে। যেন কেউ ওকে খুব হাসির কোনো গল্প শোনাচ্ছে। আর তাই শোনে হাসছে হাসান। অথচ হাসানের ঘরে তখন হাসান ছাড়া দ্বিতীয় কেউ নেই!
অগ্রহায়নের একটি রৌদ্রজ্জল দিনেও হঠাৎ কেমন কালো করে এসেছে আকাশ। অসম্ভব রকমের কালো! ঘাড় কাঁপানো বাতাসো বইতে শুরু করেছে। এক্ষুনি হয়তো মেঘ নামবে। কিন্তু এ ঘরের কারোর সেদিকে কোনো লক্ষ নেই! শুধু হাসানের ঘর থেকে ভেসে আসছিলো এক নারীকণ্ঠ!
চলবে...
শিল্প-সাহিত্য পাতায় আরও পড়ুন-
- ছোটগল্প: মহাজন বাড়ির দুর্গাপূজো
- অবেলার ভাবনায় হুমায়ুন এবং বাদল কথা...
- এ পি জে আব্দুল কালাম: ‘দ্য মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- ২০ হাজার গানের জনক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও তার কীর্তি
- প্রেম-ভালোবাসার ১০ উপকারিতা : শ্রেষ্ঠ কিছু প্রেমের গল্প
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সৌদি আরবে মেয়েকে নির্যাতনের খবরে মায়ের আহাজারি-কান্না
গ্রিসের বস্তিতে বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন, অধিকাংশই সিলেটি
গ্রিসে পাঁচ বছরের ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা