Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫,   চৈত্র ২৭ ১৪৩১

সাহিত্য ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৩ অক্টোবর ২০২২
আপডেট: ১৩:০৩, ২৩ অক্টোবর ২০২২

জীবনানন্দ দাশ : বাংলা সাহিত্যে যার মৃত্যু এক ধোঁয়াশা

অলংকরণ- আরাফাত করিম

অলংকরণ- আরাফাত করিম

রবীন্দ্রনাথ-নজরুলদের ছাপিয়ে যার কবিতা বাঙালী সাহিত্য প্রেমিকদের আলোচনায় দীর্ঘদিন ধরে ঠাই নিয়ে আছে তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ। কবি জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন আরও হাজার বছর হয়তো উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় আলোকিত করে রাখবে বাংলা সাহিত্যের প্রাঙ্গণ। কিন্তু বরেণ্য এই কবি তার সাহিত্য কর্মের বাইরে আরও যে একটি কারণে এদেশের পাঠকদের কাছে বিস্ময় হয়ে আছে তা কবির মৃত্যু। ট্রামের নিচে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছিলো না তিনি ট্রামের তলায় আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তা আজও তর্কের বিষয়। তর্কের বিষয় কারণ, তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ।

জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু রহস্য নিয়ে গত ছয় দশক ধরে বিস্তর আলোচনা হয়ে আসছে। কেউ কেউ এক বাক্যে বলে দিয়েছেন জীবন সংসারে এলোমেলো জীবনানন্দ আ ত্ম হ ত্যা করেছেন। আবার কেউ কেউ এই কথা এক বাক্যে উড়িয়েও দিচ্ছেন। তারা বলছেন- এমন একজন কবি আত্মাহুতি দিতে পারেন না। তাহলে কীভাবে মৃত্যু হয়েছিলো বাংলার প্রকৃতির এই কবির?

অনেকেই যে 'কবি আত্মহত্যা করেছেন' বলেন তার কারণ সম্ভবত কবির কিছু কবিতায় আত্মহত্যার সাধ প্রকাশের জন্য। কবি মৃত্যুর আগে বেশ কিছু কবিতায় আত্মাহুতি শব্দটিতে এমনভাবে এনেছেন যেকোন পাঠকের পক্ষেই তার মৃত্যুর পর এটিকে আ ত্ম হ ত্যা বলে বিশ্বাস করে নেয়া সম্ভব।

‘আট বছর আগে একদিন’ কবিতায় পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে যাওয়ার সময় মরিবার সাধ হওয়ার কথা লিখেছেন; দিনলিপির পাতায় লিখেছেন, কোন কোন পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করা যায়। সুতরাং যারা বলছেন কবি আ ত্ম হ ত্যা করেছেন তাঁর সম্পর্কে তাদের এমন ধারণাকে পুরোপুরি ফ্যান্টাসি বলে উড়িয়ে দেওয়াও মুশকিল।

তবে কেউ কেউ দাবি করেন কবি জীবনানন্দ দাশ আ ত্ম হ ত্যা করেন নি। শেষকালে তার শারিরীক অসুস্থতা এবং সাংসারিক অস্থিরতার দরুণ তিনি অনেকটাই আত্মনিমগ্ন আর অসচেতন হয়ে যান। আসলেই কি তাই? ইতিহাসও কি একই কথা ইঙ্গিত দেয়?

জানা যায়- ১৯৫০ সালের শুরু থেকেই কবি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষীণদৃষ্টিসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য রোজ বিকেলে হাঁটতে বেরোতেন প্রতিবেশী সুবোধবাবুর সঙ্গে। এমনকি যেদিন কবি ট্রাম দুর্ঘটনার শিকার হন সেদিন বিকেলেও রাসবিহারী এভিনিউয়ে হাঁটতেই বেরিয়েছিলেন কবি।

জীবনানন্দ–গবেষক ও অনুবাদক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জীবনানন্দ দাশের আত্মহত্যার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন এক নিমেষেই। তিনি বলেছেন ‘এ কথা ঠিক জীবনানন্দ অনেকবার আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন। কীভাবে আত্মহত্যা করা সব দিক দিয়ে সুবিধাজনক, এসব কথাও দিনলিপিতে সবিস্তার লিখেছেন। কিন্তু কখনো আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেননি।

১৯৫০-এর শুরু থেকেই দীর্ঘদিনের অনাহার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসুখে তিনি বিপর্যস্ত ছিলেন। চোখের দৃষ্টিশক্তিও হ্রাস পেয়েছিল। সুচিকিৎসার সংগতি ও ব্যবস্থা ছিল না। নানা কারণে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন। অন্যমনস্কভাবে তিনি ট্রামলাইনের কাছে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে নয়। দুই হাতে চারটি ডাব ঝুলিয়ে নিয়ে কেউ আত্মহত্যা করতে যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেদিন কবির হাতে ডাবের পানি কেন ছিল? এই প্রশ্নের একটি প্রাসঙ্গিক আলাপ এখানে করা দরকার বলে মনে করি। বাঙালী সাধারণ পাঠকদের অনেকেই জানেন না কবি জীবনানন্দ দাশ এক পর্যায়ে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হন। এবং তার কিছু সহচর, বন্ধু ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে বা বইয়ে লিখেছেন যে, কবি জীবনানন্দ দাশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার পর এর থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছু জড়িবুটিও পথ্য হিসেবে ব্যবহার করতেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ডায়াবেটিস রোগ বা মধুমেহ সেই হাজার বছর আগ থেকে আবিষ্কৃত হলেও এর ওষুধ এই সেদিন পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকেও পাওয়া যেন না। যাহোক সে আলোচনা অন্যদিন লিখা যাবে।

কবি জীবনানন্দ দাশ যেদিন ট্রামের নিচে পড়ে মারা যান সেদিন তার হাতে ডাব ছিলো বলেও উল্লেখ করেন সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীরা। এটি সত্য হলে প্রশ্ন উঠতেই পারে হাতে ডাব নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কেউ আ ত্ম হ ত্যা করতে যাবে কেন বা যায় কি? তাহলে কী অসচেতনভাবেই সেদিন ট্রামের তলায় পড়ে গিয়েছিলেন কবি? এই কথাও তো মানতে কষ্ট হয়। কারণ ট্রামের মতো একটা ধীরগতির যানের নিচে পড়েও মানুষ হতাহত হয়!

কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার বনলতা সেনকে নিয়ে যেমন আজও এ অঞ্চলের পাঠকদের রহস্যের ঘোর কাটেনি তেমনি এক ঘোরে হয়তো লুকিয়ে থাকবে কবির মৃত্যুর রহস্যটি। কে জানে সেদিন কবি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন কিনা। যিনি তার কবিতায় অনেকসময় কামনা করেছেন একটি মোলায়েম মৃত্যু। অথবা কে জানে সেদিন হয়তো নেহাতই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান বাংলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তি কবি। তা কেবল জানা থাকবে সেদিনেই সেই রাসবিহারী এভিনিউন আর তার ওপর দিয়ে ওরে বেড়ানো জীবনানন্দের কবিতার কোনও কাক নয়তো চিল!


লেখক- শ্যামলাল গোসাঁই, (ছদ্মনাম- শ্যামলাল গোসাঁই) কবি ও গণমাধ্যমকর্মী

লেখকের আরও লেখা:


দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের দেশ ।। Most beautiful woman in the world ।। Eye News

যে গ্রামে পুরুষ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারীরা | Women are pregnant without men | Kenyan Girls | Eye News

চুল বেঁধে ঘুমিয়ে নিজের যে ক্ষতি করছেন ।। Hair loss problems

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়