হেলাল আহমেদ
কবি মোহাম্মদ রফিকের কবিতা
কবি মোহাম্মদ রফিকের কবিতা, এদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংগ্রাম আর জাতীয় ইস্যুর সাথে জড়িয়ে আছে ওগুলো। ১৯৮৭ সালে চলমান এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় কবি মোহাম্মদ রফিকের লেখা কবিতার পঙক্তি ক্রোধের জন্ম দিতে পেরেছিলো স্বৈরাচারী এরশাদের মনেও।
যদিও সেসময় কবিতা লেখার কারণে সুনামের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় চক্ষুশূলেই কবি পরিণত হয়েছিলেন বেশি। তাঁর নামে বেরিয়েছিলো হুলিয়াও। হুলিয়া মাথায় নিয়ে সেসময় আত্মগোপনে থেকেছিলেন কবি। অবশ্য কবি-সাহিত্যিকদের জীবনে এর চাইতে বড় মাল্যদানও আর হতে পারে না; যা কবি মোহাম্মদ রফিকের কবিতা তাঁকে এনে দিতে সক্ষম হয়েছিলো।
কবি মোহাম্মদ রফিকের নানান সময়ে লেখা এরকম নানা লেখা, পঙক্তি শিক্ষিত সমাজে চেতনার নতুন দোয়ার খুলে দিতে পেরেছিলো। সেই সঙ্গে সাহিত্য দিয়ে যারা জড়িয়ে পড়ছিলেন জাতীয় আন্দোলনে তাদেরকেও দিয়েছিলো ভাবনার নতুন খোরাক।
সেই কবি মোহাম্মদ রফিক গত হয়েছেন গতকাল রোববার (৬ আগস্ট)। বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার পথে গাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। কবির মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেছেন।
আই নিউজের আজকের এই আর্টিকেলের মূল উদ্দেশ্য সাহিত্যিক জীবনে কবি মোহাম্মদ রফিক রচিত সেইসব কবিতা কিছু অংশ পড়ার সুযোগ করে দেয়া যা আলোচিত হয়েছে আবার পড়েছে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর রোশানলেও। নিচে কবি মোহাম্মদ রফিক রচিত আলোচিত কিছু কবিতা দেয়া হলো-
বংশপরম্পরায়
সেই, দাদা যখন গেলেন
ভোররাত,
দেউড়ির বাইরে খালপাড়ে
তেঁতুলের পাতায় পাতায়
বাতাসের শিরশির,
শিউলি বৃষ্টিভেজা,
অবশ্য তখনো
ভিনদেশি বনবিড়ালের
ডাক শোনা যেত
বনবাদাড়ে;
রাত্তিরের প্রথম প্রহর,
বাবার শরীরে গূঢ় ছায়া
মুদে এল চোখ, ঠোঁট বিড়বিড়—
ওই গাছটাকে দেখিস
আমাদের ভিটের প্রহরা
তোর দাদা তার দাদা তার...
হঠাৎ হর্নের ত্রাহি শব্দ
দৌড়াদৌড়ি চিলচিৎকার
কেউ কি মরেছে, দেখো;
আমার সময় হলো,
দেহ ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে
মাথা তুলছে অচেনা-অজানা
পরভোজী উন্নয়নে ইট-কাঠ
মস্তিষ্কে মেধায় চুন-সুরকি-বালু
হাড়ে-হাড়ে রাতে-দিনে
হাতুড়ির শব্দ—বৈদ্যুতিক
ঘোঁষ্টানির হুংকার সংগীত;
নাতি-পুত্র, তোমাদের কালে,
দুশ্চিন্তার কিছুই থাকবে না
তখন সারাটা পৃথিবীই
মরুভূমি মরুময় চিন্তালোক
ছিন্নমাথা স্বপ্নলোক নাঙ্গা
হা নিস্তব্ধ হাহাকার;
তখনো কি ভোর হয়
জন্ম নেয় বৃক্ষ, ধায় জল, স্রোত;
খোঁজো, সেই সুদিনের!
২৫ মে ২০১৯, উত্তরা, ঢাকা।
সখী, মৃত্যু দাও
সাধিত পোশাকি ভালোবাসা
নয়, ভালোবাসা, মৃত্যু দাও,
অগ্নি কিংবা তুমুল তুষার;
মরে, গোরে পচে গলে—যেতে
যেতে—কাঁদি, চিৎকারে ফাটিয়ে
দিই বিশ্ব, নিস্তব্ধ আকাশ
দাহ, ঢেউ, সাগরে সাগর;
দুটি শব্দে, জীবন, জীবন
তড়পিয়ে তীব্র হু-হুংকারে;
উইমাটি আচ্ছাদিত অস্থি
নালি, ফেটে দোলনচাঁপার
পাপড়ি, নীল গোলাপের ঝাড়;
দেখে নিয়ো, সকল কবর
ভেঙে, মাটি উপড়ে, চিতা থেকে
হত্যাকারী, পুষ্পছুরি হাতে,
চুমু খায় হাতে-মুখে-গালে,
যেখানে যেমন যাকে পারে;
আমার মৃত্যুতে আজ মৃত
মৃত্যু, হিংসা, ঘৃণা, হানাহানি,
চতুর্দিকে, কাজরী উৎসব,
অভিষিক্ত গজলের কলি
পদাবলি, বর-বধূ আলিঙ্গনে
দোলে মালা, বাসর-চুম্বনে;
অন্ধকার, আলো, অন্ধ গাইছে
শেখ ফরিদের মত্তশব্দ প্রাণ,
মীরার ভজন, কবীরের বোল
তোলে এক বাউলিয়া লালন;
তুমি, তবে ভালোবেসেছিলে!
২৮ মে ২০১৯, উত্তরা, ঢাকা।
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা