শ্যামলাল গোসাঁই
অন্যরকম কেউ (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব) | দরকারি প্রবন্ধ
অন্যরকম কেউ (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব) | দরকারি প্রবন্ধ
প্রথম পর্বের পর থেকে
মানুষের ‘অন্যরকম’ কোনোকিছুর প্রতি ভয়, সংশয় থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটিকে অন্য প্রাণীর মতোই মানুষের স্বাভাবিক একটি আচরণিক বৈশিষ্ট্য বলা যায়। শেয়ালও মানুষের আচানক উপস্থিতিতে ভরকে যায়। তবে এখানে একটি কথা আছে। মানুষের দৃষ্টিতে, যা ভরকে যাওয়া শেয়ালের দৃষ্টিতে এই ভরকে যাওয়াই সাবধান হওয়া হতে পারে। যেহেতু শেয়ালটি আমার মতো নয় আর আমারও শেয়াল সমজ্ঞান নেই; তাই শেয়ালের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে বলাটা আমার সম্পর্কে শেয়ালের বলতে না পারার মতোই কঠিন।
যে কথা বলতে চাচ্ছি— মানুষসহ সব প্রাণীই তার সাথে সাদৃশ নয় এমন কিছু দেখলে শুরুতে অবাক হয়, ভয় পায় এবং প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু, একমাত্র মানুষই তার প্রতিক্রিয়াকে, অভিজ্ঞাকে, মতামতকে চিরন্তন সত্য বলে দাবি করে, বিশ্বাস করে, প্রচার-পাঠ করে। এর জন্য প্রয়োজনে রক্তও ঝরায়!
ভেবে দেখুন একটি শোল মৎস মাতা কখনো বর্ণনা করতে পারছে না তার ক্ষুদ্রাকার পোনাগুলো মানুষের হাতে হত্যার কাহিনী। সে এতে দুঃখী না আনন্দিত, তা কোনোভাবেই আমাদের জানাতে পারছে না। জানাতে পারলেও বিজ্ঞান বলে— মাছের ভাষা বোঝবার মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ আমাদের দেহকোষে নেই। তাই শোল মাছের পোনা ভাজি খাওয়াকে মানবসভ্যতা হত্যা হিসেবে দেখছে না। এই ‘অন্যরকম’ মতামতটিকে গ্রাহ্য করছে না। ‘একরকম’ভাবে থাকা গড় মানুষের মতামতকেই তারা বেছে নিচ্ছে সুবিধানুযায়ী। যা তাদেরকে বলে, মাছের পোনা ভাজি মানুষের খাবারের পক্ষে উপাদেয় এবং এটি করলে যেহেতু কোনো জবাবদিহি করতে হবে না, তাই এটি হত্যা নয়! অথচ, একই কায়দায় আপনি একটি মানুষের বাচ্চাকে ভেজে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেখুন। সবাই আপনাকে ‘হত্যাকারী’, ‘হত্যাকারী’ বলে হইহই রইরই করে উঠবে। ব্যাপারটা এমন যে, মানুষ বলতে পারে বলে মানুষের সন্তান মারলে এটি হত্যা আর শোল মাতা বলতে পারে না তাই তার ডিমের পোনাগুলো মানুষের খাদ্য! কথায় কথায় এ ধরনের স্বৈরাচারী মত প্রতিষ্ঠা আর অন্যায় প্রাণীজগতে একমাত্র মানুষই করে চলেছে। শুধুমাত্র মতামতটি ‘একরকম’ ভাবনার গড় মানুষের এবং শিকারটি ‘অন্যরকম’ বলে। আমি বলতে চাইছি গড় মানুষের ‘একরকম’ মতামত সংখ্যায় বেশি হলেও মানের দিক থেকে বেশিরভাগ সময়ই জঘন্য হয়। গড় মানুষের যেকোনো মত প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে থাকে গোষ্ঠীস্বার্থ বা সম্প্রদায়ের স্বার্থ৷ কিন্তু ‘অন্যরকম’ কারো কোনো মতের নেপথ্যে সেরকম কিছু থাকার সম্ভাবনা থাকে কম। কারণ, প্রথমত, ‘অন্যরকম’ কেউ ছাগলদের মতো দলবদ্ধ নন, তাই একপাল ছাগলের স্বার্থ বিষয়ে তিনি চিন্তাহীন। আর দ্বিতীয়ত, যেহেতু তিনি গড় মানুষদের মতো নন, ‘অন্যরকম’। তাই তাঁর উপলব্ধি থাকে গড় মানুষদের চেয়ে ‘ব্যাতিক্রমি’। পৃথিবীতে স্বার্থহীন ‘ব্যাতিক্রমি’ বা ‘অন্যরকম’ মতগুলোই সমাজকে সবসময় এগিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু, সেই সঙ্গে এটাও সত্যি যে, ‘ব্যাতিক্রমি’ বা ‘অন্যরকম'’ মতগুলোকে সমাজে প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সহ্য করতে হয়েছে অসহনীয় নিগ্রহ, অবজ্ঞা, অবহেলা ইত্যাদি। মানুষের আচরণিক ইতিহাস অদ্ভুত— দেখা যায় তারা এই কালে যে মতটিকে চিরসত্য বলে মানছে, বিশ্বাস করছে; বিগত কালে একই মত তাদের মতবিরুদ্ধ ছিল বলে মতামতকারীকে হত্যা করেছে।
পৃথিবীতে যারা ‘অন্যরকম’ কিন্তবদন্তী হয়ে আছেন আমাদের মাঝে, তাদের আবিষ্কারে, অবদানে উপকৃত হচ্ছে যারা ‘অন্যরকম’ নয় তারা। মানে, সমাজের গড় মানুষ। যারা অন্যরকম মানুষদের ভয় পান, পীড়ন করেন। পৃথিবীতে আমরা যেসব আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, আবিষ্কার, দর্শন, ধর্ম, শিল্পকলা, সংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি করছি, উপকার ভোগ করছি, সুযোগ গ্রহণ করছি এসব এসেছে গুটিকতক ‘অন্যরকম’ মানুষদের দ্বারা। গড় মানুষ শুধু যাপিত জীবনে তার উপকার ভোগ করছেন। অর্থাৎ, এরা শুধু উপকারভোগী। উৎপাদনশীল (prductive) নয়। সমাজের গড় মানুষরা নিত্য কাজে মত্ত থাকেন। কিন্তু, তাদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের করার কাজটি করেন বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা কিছু ‘অন্যরকম’ মানুষ।
এই যে মানুষের এক ধরনের স্বৈরাচারী প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন এবং একপাক্ষিক বক্তব্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্রমাগত চেষ্টা, বাকিসব মিথ্যা বলে খারিজ করে দেওয়ার প্রবণতা— এ ধরনের কাজ আপনি অন্য কোনো প্রাণীর মাঝে পাবেন না। কোকিল দাবি করে না তার কুহু কুহু ডাক মনুষ্য সমাজে স্বীকৃতি পাক প্রেমসঙ্গীত হিসেবে। হাতি কখনো এসে বলে না, মোটা দেখতে কাউকে 'হাতির বাচ্চা' বলার রীতি বন্ধ হোক বা চলমান থাকুক, দোয়েল কোনোদিন জানতে চায় না তাকে বাংলাদেশে কেন জাতীয় পাখির তকমাটি কেন দেওয়া হয়েছে? যেখানে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে। প্রাণীরা এসব করে না, বলে না কারণ তাদের জীবনে এগুলো অহেতুক, অপ্রয়োজনীয়। তাদের কাছে নিজেদের জন্য এর থেকে প্রয়োজনীয় কিছু করার আছে। কিন্তু, আমার বিশ্বাস কাল যদি ‘দোয়েল পাখি আর জাতীয় পাখি নয়’ এমন ঘোষণা দেওয়া হয় সারাদেশের গড় মানুষদের মাঝে একটা শোরগোল পড়ে যাবে। শোরগোল হবার কারণ, সমাজের গড় মানুষরা এটাকে এতদিন জাতীয় পাখি হিসেবে ‘একরকম’ভাবে ভেবে এসেছেন আর এখন তা নিয়ে ‘অন্যরকম’ কেউ ‘ভিন্নরকম’ কথা বলছেন। যা তারা মানতে নারাজ। ফলে এর পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিবাদ, আন্দোলন, টকশো শুরু হয়ে যাবে। এহেন কাণ্ড একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। প্রাণীরা এহেন কাজ করে বলে মনে হয় না। তবে, মানুষ তা করে গর্বের সাথে, অহংকারের সাথে আর মুর্খতার বশে। অন্য প্রাণীরা প্রয়োজনের বাইরে কিছু করতে চায় না। আর গড় মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে হলেও অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে পড়ে রয়। প্রয়োজন নেই তা-ও ‘দোয়েলকে জাতীয় পাখি রাখা হোক’ দাবি তোলবে। অথবা অন্য পক্ষ বলবে ‘দোয়েল নয় আমরা কাককে জাতীয় পাখি হিসেবে চাই’। অথচ, এই সময়ে হয়তো তার জন্য প্রয়োজন স্কুল পড়ুয়া তার সন্তানটির জন্য একটি ভালো ‘শিক্ষানীতি’র দাবি তোলা। যে দাবির পক্ষে হয়তো লিখছেন তাদের চোখে ‘অন্যরকম’ কেউ। যিনি আবার রাষ্ট্রের চোখে ‘অপরাধী’। তার অপরাধ তিনি রাষ্ট্রপালিত গড় মানুষদের মতো ‘একরকম’ হতে পারেননি। তিনি হয়েছেন, ‘অন্যরকম’ কেউ। যা রাষ্ট্রের পক্ষে ক্ষতিকারক। কেন ক্ষতিকারক? আপনারাই বলুন— একজন রাখাল, পাল ছেড়ে এদিকে সেদিকে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা গরুটিকে পেটায় কেন? কারণ, সে পালের বাকি গরুদেরও আকর্ষিত করে এবং তার দৃষ্টিতে এতে গরুর পালে শৃঙখলা নষ্ট হয়। রাখাল তা চায় না। সে চায় সুন্দর শৃঙখলিত পালবদ্ধ গরু। যারা তার নির্দেশ অনুসরণ করবে বিনাবাক্য ব্যায়ে। স্বাধীনচেতা গরু রাখালের পছন্দ নয়। এই রাখলটি হচ্ছে ‘রাষ্ট্র’, ‘একরকম’ মতামতের গড় মানুষ হচ্ছেন রোজ রোজ একই রকম নির্দেশনা অনুসরণ করে বাঁচা ‘পালবদ্ধ’ গরু। আর পাল থেকে এদিকে সেদিকে চলে যাওয়া স্বাধীনচেতা গরুটি হচ্ছে ‘অন্যরকম’ কেউ। যে নতুন কোনো পথে ছুটে যেতে চায়। যে আর একপাল গরুর সঙ্গে স্যাঁতসেঁতে ওই খামারটিতে থাকতে চায় না। গড় মানুষ যেখানে থাকাটাকেই শ্রেয় ভাবে।
৩.
‘অন্যরকম’ বা ‘ভিন্নরকম’ কেউ বলতে আসলে কী বুঝাচ্ছি? আমি ‘ভিন্নরকম’ বলতে তাদেরকেই বোঝাচ্ছি যারা আপনার আমার চেয়ে অন্যভাবে চিন্তা করেন, ভাবেন, চলাফেরা করেন। যারা আমাদের মতো ভাবতে পারেন না এবং আমরাও যাদের মতো ভাবতে অক্ষম। যার সাথে আমার সাদৃশ নেই সে’ই আমার কাছে ‘অন্যরকম’ কেউ বা ‘ভিন্নরকম’ কেউ। অর্থাৎ, যার সাথে আমার মেলে না সেই ‘অন্যরকম’ কেউ। ব্যক্তিজীবনে আমরা নানা ধরনের ‘অন্যরকম’ মানুষদের সাথে পরিচিত হই। যিনি আমাদের মতো না। যার কাজ অন্যরকম, বিশ্বাস, জীবনযাপন অন্যরকম, চিন্তা অন্যরকম, ধর্ম, দর্শন অন্যরকম। ভিন্ন রকম তাঁর প্রার্থনার ধরণ, আনন্দের বহিঃপ্রকাশ, কান্নার শব্দ।
অন্যদের চাইতে ‘ভিন্নরকম’ বা ‘অন্যরকম’ হওয়া দোষের কিছু নয় কিংবা রোগও নয়। আমার বিশ্বাস, রোগহীন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষের জন্য বরং, ‘অন্যরকম’ হতে পারা বা ‘ভিন্নরকম’ করতে পারা মানে, গড় শ্রেণীর চাইতে একটু বেশিই সম্ভাবনাময়তা লাভ। কিন্তু, আমাদের দেশে ‘অন্যরকম’ বা ‘ভিন্নরকম’ কিছু দেখলে গেলে সেটাকে এমনভাবে চিহ্নিত করা হয়, যেন সেটা অপরাধের কিছু, দোষের কিছু কিংবা ডাক্তারি ভাষায় রোগী। ফলে, ‘অন্যরকম’ হবার চাইতে ‘ভিন্নরকম’ হয়ে গেলে লোকের চোখে কেমন দেখাবে এ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন বেশিরভাগ তরুণ। কেননা, আমাদের আবার গেলানো হয়েছে- ‘লোকে যারে বড় বলে, বড় সেই হয়’। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে আলোচিত দার্শনিক, লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ খুব সুন্দর করে এই ‘লোক’ ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর বইয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলছেন তাঁর ঢোলটি তিনি ‘লোকে’র হাতে দিতে নারাজি। কারণ? হরিদাস বাবু যে ‘লোকে’র কথা পদ্যে লিখে গেছেন বর্তমান সময়ে সেই ‘লোক’ আর নেই। এখানে একটা ‘লোকে’র নামে ইতিমধ্যে একটি ‘লোকজঙ্গল’ তৈরি হয়েছে। যেখানে যুক্তিনির্ভর সত্যের চাইতে আবেগনির্ভর মিথ্যার চর্চা বেশি। ওই জঙ্গলবাসী লোকেদের হাতে নিজের ঢোল পেটাতে দেওয়া মানে সাড়ে সর্বনাশ করা। আমি সেটা চাইনা। বিবেচক পাঠকও চাইবেন না আশা করি। কারণ, হরিশচন্দ্র মিত্র পদ্যের সেই ‘লোক’ এখন একটি সত্যকে সত্য বলতে অক্ষম হয়ে গেছেন। তাঁরা এখন অন্ধকারকে আলোকিত বলে বেড়াচ্ছে। তাদের অবদান কম কিন্তু, সমাজের প্রতি নিবেদন অপ্রতুল। তাঁরা সমাজে অবদান রাখতে পারে না। শুধু পারে একের পর এক নিবেদন জানাতে। তাদের নিবেদনগুলোও হয় হাস্যকর আর আত্মবিধ্বংসী।
পৃথিবীতে যারা ‘অন্যরকম’ কিন্তবদন্তী হয়ে আছেন আমাদের মাঝে, তাদের আবিষ্কারে, অবদানে উপকৃত হচ্ছে যারা ‘অন্যরকম’ নয় তারা। মানে, সমাজের গড় মানুষ। যারা অন্যরকম মানুষদের ভয় পান, পীড়ন করেন। পৃথিবীতে আমরা যেসব আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, আবিষ্কার, দর্শন, ধর্ম, শিল্পকলা, সংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি করছি, উপকার ভোগ করছি, সুযোগ গ্রহণ করছি এসব এসেছে গুটিকতক ‘অন্যরকম’ মানুষদের দ্বারা। গড় মানুষ শুধু যাপিত জীবনে তার উপকার ভোগ করছেন। অর্থাৎ, এরা শুধু উপকারভোগী। উৎপাদনশীল (prductive) নয়। সমাজের গড় মানুষরা নিত্য কাজে মত্ত থাকেন। কিন্তু, তাদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের করার কাজটি করেন বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা কিছু ‘অন্যরকম’ মানুষ।
ধরা যাক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কথা। আধুনিক বিজ্ঞান এ মানুষটির কাছে ঋণি তাঁর বহুদামী তত্ত্বগুলোর জন্য। তিনি এমন কেউ ছিলেন যা অন্যদের কাছে ছিল ‘অন্যরকম’। কিন্তু, তাঁর আবিষ্কার শুধুই তাঁর মতো ‘অন্যরকম’দের জন্য নয়, বা তাঁর আবিষ্কারের সুবিধা শুধুই ‘অন্যরকম’ মানুষরা পাচ্ছেন না। পাচ্ছে উন্নত বিশ্বের সকল গড় মানুষ। শত্রু-মিত্র, আস্তিক-নাস্তিক, বিজ্ঞানী-মাওলানা সকলেই। যিনি বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছিলেন তিনিও অন্যদের চেয়ে ‘অন্যরকম’ ছিলেন। কিন্তু, তাঁর অবদানে আজ উপকৃত গোটা বিশ্ববাসী।
ভাবছেন, এতোকিছুর পরও মানুষ কেন ‘অন্যরকম’ কেউ হতে যথেষ্ট সাহস জোগাতে পারে না? সকলেই যে সাহস জোগাতে পারেন না তা নয়। কেউ কেউ নিজের বিবেক-বুদ্ধি, প্রজ্ঞার প্রয়োগে ‘অন্যরকম’ হয়ে ওঠতে পারেন। কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেখ মুজিবুর রহমান, মহাত্মা গান্ধী, ক্ষুদিরাম, লীলানাগ এরকম হাজার হাজার মানুষ আছেন যারা ‘অন্যরকম’ ছিলেন আমাদের থেকে। তাঁরা আমাদের গড় মানুষদের মতো ছিলেন না। ‘অন্যরকম’ হতে পারেন না তাঁরা, যারা গড় মানুষ হয়েই বাঁচতে চান। নির্দিষ্ট একটি ছাঁচের মধ্যে ফেলেই জীবনকে দেখতে পছন্দ করেন তাঁরা। নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশা তাদের নেই। তাঁরা নতুন কিছু দেখলে চমকে উঠেন না। বরং বিরক্ত হন। কেননা, তিনি ‘অন্যরকম’ প্রত্যাশা করতে জানেন না। ‘অন্যরকম’ গ্রহণ করতেও নারাজ।
শুনেছি আইনস্টাইন বাল্যকালে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতেন না। কারণ, আইনস্টাইন ছিলেন অন্য বাচ্চাদের চেয়ে ‘অন্যরকম’। অটিজমের লক্ষণ ছিল বলে এ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু, সব সমস্যা জয় করে আইনস্টাইন আজ বিজ্ঞান শাখায় এক কিংবদন্তি বিজ্ঞানী। এদেশে জন্ম নিলে হয়তো ভালোভাবে কথা বলতে না পারার কারণে এতো দিনে তাঁর কোনো একটা ট্যাগনাম জুটে যেতো। যেটা হতো নিন্দাসূচক বা গালিসূচক। কেননা, আমাদের সমস্যা কথা বলতে সময়া, স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না এমন ‘অন্যরকম’দের সাথে এহেন ব্যবহার করাটাকেই স্বাভাবিক মনে করেন সমাজের ‘গড় মানুষ’। লেখক মহিউদ্দিন এই গড় মানুষদের আবাসভূমিকে বলেছেন, ‘লোকের জঙ্গল’। আমাদের উচিৎ এই ‘লোকের জঙ্গলে’ ‘অন্যরকম’ কেউ হয়ে বাঁচার চেষ্টা করা। যেখানে বিশ্বাসের আগে ঠাই পাবে যুক্তি। আমাদের বিশ্বাস হবে যুক্তিনির্ভর এবং কল্যাণকর।
লেখক- শ্যামলাল গোসাঁই, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী
- এই লেখার প্রথম পর্বটি পড়ুন- অন্যরকম কেউ (প্রথম পর্ব) | দরকারি প্রবন্ধ
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা