আইনিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুগুলোকে কতটা গুরুত্ব দেয় ভারত

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ঢাকায় এক সংক্ষিপ্ত সফরে এসে বলেছেন, দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিবিড় করার লক্ষ্যেই তার এই সফর।
বিবিসির বরাতে বৃহস্পতিবার এই সফরে মি: জয়শঙ্কর ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক সময়ে ভারত সফরের অপেক্ষায় তারা রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবছরই সুবিধাজনক সময়ে ভারত সফরে যেতে পারেন।
এদিকে, দুই দেশের মধ্যে এখনও তিস্তা নদীর পানিবন্টনের প্রশ্ন এবং সীমান্তে হত্যা বন্ধ করাসহ বেশ কিছু ইস্যু অমীমাংসিত রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বার্থের এই বিষয়গুলোকে ভারত কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে - এনিয়ে বাংলাদেশে নানা আলোচনা রয়েছে।
তিস্তা ইস্যু ঝুলে আছে
তিস্তা নদীর পানিবন্টন নিয়ে চুক্তির বিষয় ঝুলে রয়েছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে।
এর মীমাংসা না হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বড় ইস্যু হয়েছে।
ফলে এটা বলা যায়, দেশে সাধারণ নির্বাচনের আগের বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার যখন ভারত সফরে যাবেন, তখন দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় তিস্তা নদীর ইস্যুটি থাকবে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার তালিকায়।
সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিককে হত্যা বন্ধ না হওয়ার বিষয়টিও বাংলাদেশে একটা বড় ইস্যু।
যদিও ভারত বিভিন্ন সময় সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু এরপরও তা বন্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।
'প্রতিশ্রুতি আছে, ফল নেই'
বাংলাদেশের সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এর আগেও দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তিসহ দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোতে অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছে । কিন্তু কোন ফল হয়নি।
ফলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বাংলাদেশকে এই ইস্যুগুলোতেই আবারও আগ্রাধিকার দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
"তিস্তা নদীর পানিবন্টন সমস্যা অনেক দিন ধরে কোল্ড স্টোরেজে আছে," তৌহিদ হোসেন বলেন, "আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, সীমান্তে সাধারণ নাগরিকদের বিএসএফ এর গুলি করে হত্যার ঘটনা। ভারতের সদিচ্ছা থাকলে এটা বন্ধ করা একদিনের কাজ।"
"এখানেও ভারতের শুভেচ্ছার অভাব দেখেছি," বলেন মি. হোসেন।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের দিক থেকে এই দু'টিই বড় ইস্যু।
শেখ হাাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরের বছর তিনি ভারত সফরে গিয়েছিলেন।
তখনই তিস্তা নদীর পানিবন্টন নিয়ে চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশের শীর্ষপর্যায়ে ঐকমত্য হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
বিষয়টিতে পরে আর অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। এক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাণার্জীর বিরোধিতার বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব
তবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে এবং এই সময় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল বলে বলা হয়ে থাকে।
ফলে বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুতে মীমাংসা না হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও।
এই তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনার জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার চীনের সহায়তায় একটি প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হয়েছিল।
তাতে ভারতের অসন্তুষ্টি বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছিল।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুগুলোতে গুরুত্ব না পেলে তখন সেই সম্পর্কে এধরনের বিষয় আসতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেছেন, "বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিশ্বাস করে।"
"বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের মধ্যে আর কোন রাষ্ট্রের ভূমিকা নেই। সেখানে আমরা কোন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখব - সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বার্তা নয়া দিল্লিকে দিতে হবে," বলে মনে করেন ড. ইয়াসমিন।
দু'দেশের মধ্যে যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটি বাড়ানোর বিষয়ে ভারত বরাবরই অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
এতে বাংলাদেশের কতটা লাভ হচ্ছে - এনিয়েও দেশে নানা আলোচনা রয়েছে।
সাবেক সচিব হুমায়ুন কবির মনে করেন, ভারত বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির ব্যাপারেও আগ্রহী হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশের সাথে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি এবং সম্পর্ক বাড়ানোর ব্যাপারে ভারত পাঁচশো মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়ে রেখেছে।"
"কারণ সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক সরঞ্জামের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করেছে। ফলে ভারতে এ বিষয়ে দু'দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনাগুলোতে এখন অগ্রাধিকার দিতে পারে," বলেন হুমায়ুন কবির।
অন্যদিকে, ঢাকায় সফরের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, "দু'দেশের সম্পর্কে ভাল অগ্রগতি হয়েছে। দুই দেশ একসাথে কাজ করে বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছে।"
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্কে এখন সোনালী অধ্যায় চলছে।
তবে ঢাকায় বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, দু'শের সম্পর্ক যাতে নেতিবাচক কোন দিকে মোড় না নেয়, সেজন্য তিস্তা নদীর পানিবন্টনের বিষয়সহ বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুগুলোতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আইনিউজ/এমজিএম
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের