আই নিউজ প্রতিবেদক
যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লড়ছেন ৭ সিলেটি প্রার্থীও

যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৪ জন প্রার্থীও রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হবে নতুন প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টারিয়ান সদস্যরা। যুক্তরাজ্যে এবারের নির্বাচনে প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রার্থীর মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৪ জন প্রার্থীও রয়েছেন। যার মধ্যে সিলেটি বংশোদ্ভূত ৭ জন।
যুক্তরাজ্যে বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির দীর্ঘ ১৪ বছরের শাসনের অবসান হতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন জরিপে বলা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সিলেটি বংশোদ্ভুত সাত প্রার্থী। এরমধ্যে চারজনই সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের। এরমধ্যে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীও রয়েছেন। জগন্নাথপুর উপজেলায় জন্ম হওয়া চার বাংলাদেশি প্রার্থী হলেন, আফসানা বেগম, এহতেশামুল হক, নুরুল হক আলী ও রুফিয়া আশরাফ। সিলেটি বংশোদ্ভুত অন্য প্রার্থীরা হলেন, রুশনারা আলী, রুবিনা খান ও হালিমা খান।
লেবার পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন আফসানা বেগম। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশামুল হক। তারা প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীও। আর লেবার পাটি থেকে নির্বাচনে লড়ছেন নুরুল হক আলী।
এদিকে লন্ডনের গর্ডন ও বুকান আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে নুরুল হক আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের শাহারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কয়েকবার কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিসহ ছোট-বড় অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগেই গত ২২ মে আকস্মিক আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। যদিও ২ মে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনের পর লেবার পার্টি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।
নির্বাচনে প্রধান দলগুলো জনমত নিজেদের দিকে টানতে চলমান সমস্যার সমাধানে ও সুসংহত যুক্তরাজ্য গড়ে তুলতে নির্বাচনী ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিয়ার স্টারমার না কি ঋষি সুনাককে ফিরবেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে? এক দিন পরই জানা যাবে চূড়ান্ত ফলাফল।
জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার তার প্রচারনায় বলে আসছেন, ক্ষমতায় গেলে অর্থনীতি পুনর্গঠন, স্বাস্থসেবাকে গতিশীল করা, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, স্কুলগুলোতে আরো শিক্ষক নিয়োগসহ অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা না পাঠিয়ে নিজ নিজ দেশে পাঠাবেন। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির টানা ১৪ বছরের ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ থেকে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য ৪ জুলাই লেবার পার্টিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে জনমতকে পাত্তা না দিয়ে আবারও বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ঋষি সুনাক। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লেবার পার্টির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বলা হলেও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি একদম হাল ছেড়ে দেননি। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লেবার পার্টির কাছে আত্মসমর্পণ না করতে বলেছেন।
বাংলাদেশী প্রার্থীদের অবস্থান: হাউস অব কমনসের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ২০২৪ সালের নির্বাচনে চার হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যেখানে ৯ নারীসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোট ৩৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন গত নির্বাচনে বিজয়ী চার নারী রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রূপা হক ও আফসানা বেগম। এবারও এ চারজনের বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
লেবার পার্টি থেকে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন রুশনারা আলী। এরপর টিউলিপ সিদ্দিক ও রুপা হক। সর্বশেষ আফসানাসহ মোট চারজন বাংলাদেশি বংশোদ্ূ্ভত এমপি পায় যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশিরা। সবাই নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টি থেকেই। ধারণা করা হচ্ছে, সব ঠিকঠাক থাকলে এবারের নির্বাচনে সেই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। ধারণা করা হচ্ছে, আরো দুই নারী প্রার্থী রুমী আশরাফ ও রুফিয়া চৌধুরী বিজয়ী হতে পারেন বলে।
এ ছাড়া জনমনে ধারণা, নির্বাচনে লেবার দল সরকার গঠন করলে এবং রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিক নির্বাচিত হলে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথমাবারের মতী মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি।
রুশনারা আলী: যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি তিনি। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে ২০১০ সাল থেকে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০১০ থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। রুশনারা আলীর জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথে। তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন।
আফসানা বেগম: পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন আফসানা বেগম। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এমপি আফসানা বেগম।
লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। তার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের সিভিক মেয়র ছিলেন। তিনি ছিলেন জগন্নাথপুর পৌরসভার লুদুরপুর এলাকার বাসিন্দা। আফসানা লেবার পার্টির লন্ডন রিজিয়ন শাখার সদস্য। দলটির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার সহসভাপতিরও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে কর্মরত।
রুবিনা খান: রুবিনা খান বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে লিব-ডেম দলের হয়ে লড়ছেন। তিনি টাওয়ার হেমলেটসে ১২ বছরের কাউন্সিলর এবং আবাসন বিষয়ক কেবিনেট সদস্য ছিলেন। রুবিনা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ও গার্ডিয়ানে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ লর্ডসে কাউন্সিলর ও বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
রুবিনা খানের বাবা কেন্টের চাথাম ডকইয়ার্ডে মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বিয়ে করতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সিলেটেই রুবিনার জন্ম হয়। তিন বছর বয়সে সপরিবারে ইংল্যান্ডে চলে যান তিনি। কেন্টের রচেস্টারে তিনি বড় হয়েছেন। তিনি লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে থাকেন।
হালিমা খান : হালিমা খান স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বো আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টি জিবির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি লেবার পার্টির গভর্ন্যান্স অ্যান্ড লিগ্যাল ইউনিটের তদন্তকারী ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি শিক্ষকতা করতেন। পরে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে নিউহ্যাম এবং টাওয়ার হ্যামলেটসের মানুষের জন্য কাজ শুরু করেন তিনি।
হালিমা খান মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের বিশিষ্ট সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি মরহুম আব্দুল হামিদ খানের নাতিন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মো. জালাল আহমদ খানের বড় মেয়ে। তিনি রাজনগরের ৬ নম্বর টেংরা ইউনিয়নের টানা ৩ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ টিপু খানের ভাতিজি।
রুফিয়া আশরাফ: এই ব্রিটিশ বাংলাদেশি নারী নর্থাম্পটন টাউন কাউন্সিলের মেয়র ও কাউন্সিলর। তিনি প্রথম লেবার পার্টির মনোনয়নে সাউথ নর্থাম্পটন আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তার বাবার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়। তার স্বামী আবু তাহের মোহাম্মদ আশরাফ সিলেটের সাবেক মেয়র আ ফ ম কামালের ছোট ভাই।
আই নিউজ/এইচএ
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের