আপডেট: ১২:৫৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
বঙ্গবন্ধু টানেলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার
নিজস্ব প্রতিদেবক : দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল। আর এই টানেল নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে অন্তত ৫০ কিলোমিটার।
এতে করে সাশ্রয় হবে জ্বালানি, বাঁচবে সময়। সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল। আর এই টানেল নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে অন্তত ৫০ কিলোমিটার।
চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণাকে সামনে রেখে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার হবে। ২০২২ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে এর প্রায় ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে এই সুড়ঙ্গপথের কাজ শেষ হলে সরকারের জন্য অনেক বেশি গর্ব করার মতো প্রকল্প হবে এটি। কিন্তু এই টানেল থেকে সবচেয়ে বেশি সুফল পেতে হলে সড়কপথে যুক্ত হবার বিকল্প নেই।
কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, দুটি টিউবের কাজ করতে হচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে, এখানে আরো কাজ আছে। এভাবে কাজ চললে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে যে সময় দেয়া আছে তারমধ্যে শেষ করতে পারব।
চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টানেল নির্মাণ করছে। কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক লি চেন বলেন, নিরাপদ নির্মাণের নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে, দ্রুতই কাজ এগিয়ে চলছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, আমরা কক্সবাজার এবং টেকনাফকে ঘিরে যে ধরনের বিশ্বমানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য এ প্রকল্প বিশাল ভূমিকা রাখবে।

সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। স্বভাবতই কক্সবাজার যেতে পারি দিতে হয় দীর্ঘ সময়ের পথ।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হলে ঢাকার যানবাহনগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট হয়ে বন্দর টোল রোড-নির্মাণাধীন আউটার রিং রোড-পতেঙ্গা ছুঁয়ে কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার করলে চট্টগ্রামের দিকে পথ কমবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। তাছাড়া কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ঘাট-চাতরি চৌমুহনী-বাঁশখালী-পেকুয়ার মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার সদরে যুক্ত হলে কক্সবাজারের দিকে সড়ক কমবে আরো প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।
এর ফলে দুই দিকের সড়ক ১৫ আর ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমে দাঁড়াবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) উদ্যোগে পতেঙ্গার আউটার রিং রোডের কাজ চলছে। অন্যদিকে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া হয়ে কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক নির্মাণে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন করে তৈরি হবে টানেল থেকে কালাবিবি দীঘি হয়ে ক্রসিং পর্যন্ত সড়ক। পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করা হবে।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী শামস মোহাম্মদ হাসান বলেন, প্রায় তিন বছর আগে থেকেই আমরা আউটার রিং রোড নির্মাণ করছি। তখনই আমরা সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে টানেলের প্রবেশ পথটি বর্তমান স্থানে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। এখন টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার যানবাহনগুলোকে আর নগর হয়ে যেতে হবে না। আউটার রিং রোড দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে আনোয়ারা ও বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজার যেতে পারবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডের এই বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন ও এর সুফল নিয়ে কথা হয় সওজ দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহের সঙ্গে। তিনি জানালেন কাজের অগ্রগতি আর উন্নয়নের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে।
নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, টানেলকে কেন্দ্র করে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। একটি টানেল হয়ে আনোয়ারা কালাবিবি দীঘি-শিকলবাহা ক্রসিং হয়ে কক্সবাজার মহাসড়কে যুক্ত হবে। এর আনুমানিক বাজেট ৪০৭ কোটি টাকা। অপরটি টানেল হয়ে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত। দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এদিকে সেবা খাতের আওতায় ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হতে যাচ্ছে কক্সবাজার। এই সড়কে থাকবে না টোল। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ৩৬১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে সেই সড়ক নির্মাণের কোনো উদ্যোগ বা আয়োজন এখনো নেয়া হয়নি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ ব্যাপারে যে মন্তব্য করেছেন, তা খুব উৎসাহব্যঞ্জক নয়।
কারণ, তিনি বলছেন, এই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ চলছে। এটা শেষ হলে এই প্রকল্প অনুমোদনের কাজে হাত দেয়া হবে। তিনি বলছেন তাতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে আমাদের যে সাধারণ অভিজ্ঞতা, তাতে খুব ভরসা রাখার উপায় নেই।
একই সঙ্গে পাল্লাদিয়ে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতাবাড়িতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি স্টেশনসহ বহুবিধ শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে।
সুতরাং বিদেশি বিনিয়োগ ও বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে সুফল পেতে হলে টানেলে সঙ্গে যোগযোগের সংযোগ সড়কটির কাজও সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে। না হলে প্রস্তাবিত সড়কটি নির্মাণের গুরুত্ব একসময়ের কর্ণফুলী সেতুর উদাহরণকেও ছাড়িয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মূল খননকাজেরও উদ্বোধন করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন অর্থায়ন করছে প্রায় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের