মোস্তফা মনজুর
আপডেট: ১৯:৪৮, ২ এপ্রিল ২০২২
পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ২)

প্রিয় ভাই, আপনি হয়ত তাহাজ্জুদ পরছেন, দান করছেন, কিন্তু সেসব ফেবুতে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে বেড়ানোর বিষয় নয়। সেটা থাকুক না আপনার আর আপনার রবের কাছেই। মানুষকে শুনিয়ে কী লাভ?
আলাহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।
রমজান আমলের মাস। যত বেশি আমল করা যায় ততই উত্তম। তবে প্রিয় ভাই, আমাদের কৃত আমল যেন বরবাদ না হয়। আমল যা-ই করব, কম হোক বেশি হোক, তা যেন কবুল হয়। এজন্য প্রথমে কিছু সাধারণ মূলনীতি উল্লেখ করব।
- প্রথমেই ইখলাস।
আমরা যা কিছুই করব সবই আল্লাহর জন্য। ছোট থেকে ছোট কাজও যেন আল্লাহর জন্য হয়, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য হয়।
মনে করেন, ইফতার রান্না করবেন বা প্রস্তুত করবেন, প্রিয় ভাই, নিয়ত যেন থাকে এতে আমাদের রব খুশি হবেন। কাউকে সাহায্য করা, কারো সাথে হাসিমুখে কথা বলা সবই আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আর এসব যদি আল্লাহর বিধান জেনে খুশি মনে পালন করেন তবে আল্লাহ তাআলার সন্তষ্টি লাভ করাটাই স্বাভাবিক।
আমলের ক্ষেত্রে তা আরো বেশি জরুরি। অন্য কাউকে খুশি করার জন্য নয়, বাবা-মায়ের আদেশের কারণে নয় বরং এসব আমলে আমার-আপনার রব খুশি হবেন এ নিয়ত রাখবেন। হ্যাঁ, এমন নিয়ত একদিনেই হয়ত আসবে না, কিন্তু যখনই মনে হবে নিজের নিয়তকে ঠিক করে নিন। ইনশা আল্লাহ কিছুদিন পরই আপনার কাজে ইখলাসের দেখা মিলবে।
আর ইখলাসের পরিণাম হলো – আপনি ইবাদাত ও আমল করে স্বাদ পাবেন, করতে ভালো লাগবে। এজন্যই তো আমাদের সালাফদের রাতভর আমল আমাদের কাছে রূপকথা মনে হয়। অথচ ৭ ঘন্টার ক্রিকেট খেলা দেখা আমাদের নিকট বাস্তব লাগে।
- খ. দ্বিতীয়ত সুন্নাহর অনুসরণ।
সব কাজে আল্লাহর রাসূল (স.) এর সুন্নাহর অনুসরণে হওয়া চাই। আল্লাহর রাসূল (স.) যেভাবে করেছেন, আমাদের দ্বারা তো সেভাবে করা সম্ভব না, তবে আমলের কাঠামোটা তো ভাই আমরা চেষ্টা করে সেরূপ করতে পারি। তা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টার খবর আমাদের চাইতে আল্লাহই ভালো জানেন।
হ্যাঁ যেসব কাজে ইমামগণ ইখতিলাফ করেছেন তাতে আমাদের ইখতিয়ার আছে। আমরা যার যার মাযহাব মেনেই আমল করব। কারণ সুন্নাহর অনুসরণের ক্ষেত্রে আমাদের ইলম আর তাকওয়ার চাইতে ইমামগণের ইলম আর তাকওয়ার উপর নির্ভর করাই মঙ্গলজনক।
- গ. লোক দেখানো, বা লোক শোনানোর প্রবণতা বাদ দেওয়া।
ইখলাসের কথা বলার পর আবার এ কথা বলা জরুরি মনে করছি। কারণ বর্তমানে আমাদের সমাজে এসবের প্রবণতা খুব ব্যাপক। অনেকে ইখলাসের সাথেই কোন আমল করে, কিন্তু পরে মানূষকে জানানোর লোভ সামলাতে না পেরে আমলটাকে বরবাদ করে দেয়।
প্রিয় ভাই, আপনি হয়ত তাহাজ্জুদ পরছেন, দান করছেন, কিন্তু সেসব ফেবুতে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে বেড়ানোর বিষয় নয়। সেটা থাকুক না আপনার আর আপনার রবের কাছেই। মানুষকে শুনিয়ে কী লাভ?
হ্যাঁ, যদি ৫০০ টাকা দান করে থাকেন, তাহলে মিডিয়াতে লোক দেখানোর জন্য বলায় তা আপনার পকেট থেকে চলে যাওয়াটাই হচ্ছে আপনার লাভ !! আর আপনি যদি গোপন রাখতেন তাহলে দুনিয়াতে যেমন আখিরাতেও তেমনই উপকৃত হতেন।
অতএব, কষ্ট হলেও এমন আমলের অভ্যাস করুন যা শুধু সময়, সম্পদ আর শ্রমের ক্ষতিই বয়ে আনবে না, বরং আপনার উভয় জগতের কাজে আসবে।
- ঘ. নিষ্ঠার সাথে, যথাসম্ভব সুন্দর করে আমল করা।
প্রিয় ভাই, আমলের ক্ষেত্রে পরিমাণের চিন্তা না করে গুণগত মানের চিন্তা করা। অর্থাৎ আমি কত রাকাআত নামাজ পড়লাম সেটা যেন আমার প্রধান চিন্তা নাহয়। বরং আমার নামাজ কতটুকু সুন্দর হলো, আমার নামাজ কতটুকু আল্লাহর রাসূল (স.) এর নামাজের সদৃশ হল এই চিন্তা করা উচিত।
এজন্যই কিয়ামতে মানুষের আমল ওজন করা হবে, গণনা। আপনি হয়ত ৫০ রাকাআত নাআমজ পড়লেন, কিন্তু যদি তা সুন্দর না হয়, ইখলাস আর সুন্নাহর ইনুসরণে না হয়, তবেঁ এর ওজন হবে সামান্যই। অপরপক্ষে সুন্দর করে দুই রাকাআত নামাজও এর চাইতে মীযানের পাল্লায় ভারী হবে।
প্রিয় ভাই, এজন্য নফল নামাজ কম পড়ুন, অসুবিধা নেই। কিন্তু তা যেন দীর্ঘ রুকু, সিজদা ও ক্বিরাতের দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। মনে রাখবেন, বিশ মিনিটে দশ রাকাআত নামাজের তুলনায়, দুই রাকাত নামাজ ধীরে সুস্থে পড়া উত্তম।
প্রিয় ভাই, আপনি সুবহানাল্লাহ/আলহামদুলিল্লাহ বলবেন, গণনা করে পরতে পারেন অসুবিধা নেই। সমস্যা হচ্ছে যখন আপনি তোতা পাখির মত ১০০ বার শেষ করার তাড়ায় থাকবেন। তার চাইতে একবার অন্তর দিয়ে অর্থ বুঝে সুবহানাল্লাহ বলেন, আল্লাহর প্রশংসায় আলহামদুলিল্লাহ বলেন, নিশ্চিত থাকেন এই বলাটা আপনার কাছে বিস্ময় হয়ে কিয়ামতে হাজির হবে। এভাবে যত বেশি বলা যায় ততই উত্তম।
- ঙ. উত্তম নিয়ত করা।
প্রিয় পাঠক, আমরা যারা পুর্বে রমজানে ইতিকাফ, ওমরা ও খতমে তারাবী, কিয়ামুল লাইল ইত্যাদি আল্লাহর মেহেরবাণীতে নিয়মিত আদায় করতাম, এবছর তাঁদের হয়ত খুব কষ্টকর সময় যাবে। মসজিদে যাওয়ার আকুলতা হয়ত চোখের পানিতে প্লাবিত হবে।
তাঁদের জন্য খুশির কথা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এসবের জন্য আগের মতই সাওয়াব দেবেন, আশা করা যায়। অতএব, ঘরেই থাকুন, অযথা বেশি সাওয়াবের আশায় সকলের বিপদ ডেকে আনবেন না। বরং ঘরে বসেই আপনি সে সাওয়াব পাবেন ইনশা আল্লাহ।
আর যারা পূর্বে নিয়মিত ছিলেন না, কিন্তু এবার আগে থেকেই নিয়ত করেছিলেন, তারাও আশা করা যায় সাওয়াব থেকে মাহরূম হবেন না।
অন্যদিকে যারা নিয়মিত ছিলেন না, এ বছরের জন্য নিয়তও ছিল না, তাঁদের উচিত তাওবা করে, নিয়ত ঠিক করা। মনে রাখবেন ভাই, আল্লাহর রহমতের ভাণ্ডার অসীম। তিনি চাইলে আপনাকেও তাঁর নিয়ামত ও সাওয়াবের ভাণ্ডার থেকে অফুরন্ত দান করতে পারেন। আমরা এমনই আশা রাখি।
চলবে...
মোস্তফা মনজুর, সহকারি অধ্যাপক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ) ও পিএইচডি গবেষক (নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি, ইংল্যান্ড
আরও পড়ুন-
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৯)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৮)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৭)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৬)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৫)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৪)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৩)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ২)
- পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ১)
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের