Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৪ ১৪৩২

মোস্তফা মনজুর

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ১৫ এপ্রিল ২০২১
আপডেট: ১২:৪৭, ১৫ এপ্রিল ২০২১

কুরআন তিলাওয়াত

পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব-৩)

এত সুযোগ পাওয়ার পরও যদি আমরা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করতে না পারি, তবে ব্যর্থতা কার? কাল কিয়ামতে যদি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তার জবাব কি আমরা তৈরি করেছি? 

আলহামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ

রমজান কুরআন নাযিলের মাস, তিলাওয়াতেরও মাস। এ মাসের মত বেশি তিলাওয়াত বিশ্ব জুড়েই আর কোন মাসে হয় না। এমনকি এর এক দশমাংশও সম্ভবত হয় না।

তবে এতে আমাদের কী? আমরা নিজেরা যদি তিলাওয়াত না করি তাহলে বাকীরা কতটুকু করল তাতে আমাদের কী লাভ? আমি বলছি না, আসুন  আমরা দিন-রাত শুধু তিলাওয়াতই করি। বরং আমি বলছি, আমরা চেষ্টা করি কিছু সময় কুরআন তিলাওয়াতের জন্য বরাদ্দ করতে। সেজন্য রুটিন করার দরকার নেই। কারণ অভিজ্ঞতায় জানি, কোন কাজ রুটিন করে শুরু করলে দু`তিনদিন পর সে কাজ আর করাই হয় না।

হ্যাঁ যারা রুটিন করে পড়তে অভ্যস্ত, তাঁদের কথা আলাদা। এখনই কিছুটা সময় কুরআন তিলাওয়াতের জন্য আলাদা করে ফেলুন। দিনে ৩০ মিনিট কে খুব বেশি? যদি একটানা ৩০ মিনিট নাও দিতে পারেন তাহলে কয়েক ভাগে দিন। প্রত্যেক নামাজের পর ১০ মিনিট করে দিলেও কিন্তু ৫০ মিনিট হয়। যদিও রমজানে মাগরিব ও ইশার পর অনেকেই আমরা ১০ মিনিট সময় তিলাওয়াতে দিতে পারব না। বাকী তিন ওয়াক্তে তো ৩০ মিনিট পরাই যায়। যদি সুযোগ থাকে তাহলে ২০ মিনিট করে দৈনিক এক ঘণ্টা সময় দিন।

হ্যাঁ যদি কোনদিন ছুটে যায়, মন খারাপ করার দরকার নেই, যেদিন চলে গিয়েছে সেটা তো চলেই গিয়েছে। নতুন করে আবার শুরু করুন। হ্যাঁ যদি সেদিনের পড়াও অন্যদিন বেশি পড়ে কাভার করে নিতে পারেন তবে তো আলহামদুলিল্লাহ।

অনেকে খুব ভালো কুরআন পড়তে পারেন। কিন্তু পড়া হয় না। তাঁরা এই রমজানে পুরো কুরআন একবার পড়ার নিয়ত করুন ও চেষ্টা করুন। হয়ত এর বরকত আপনার জীবন পালটে দিতে পারে। 

ক.

সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে, পবিত্র কুরআন নিম্নোক্ত ভাবে পড়া-

  •  উত্তম রূপে তিলাওয়াত করা।
  •  অর্থ বুঝে পড়া।
  •  কুরআন অনুযায়ী আমল করা। 

আমরা যদি একটি আয়াতও এভাবে পড়তে পারি, হয়ত আল্লাহ তাআলা বাকী গোটা কুরআনও এভাবে পড়ার তাওফিক দিবেন। 

জনৈক সালাফের (কেউ নাম জানলে জানানোর অনুরোধ রইল) এর একটি উক্তি মনে পড়ছে, তিনি বলেছেন, “এখনকার লোকেরা (তাঁর সময়ের) খুব সহজেই কুরআন মুখস্থ করে, অথচ আমাদের নিকট তা মুখস্থ করার চাইতে আমল করা সহজতর ছিল”।

নিদেনপক্ষে যেসব সূরা আপনি নিয়মিত নামাজে তিলাওয়াত করেন সেগুলোর অর্থ এ মাসে জেনে নিন। নামাজে সেসবের অর্থ খেয়াল করুন, দেখবেন আপনার পূর্বের নামাজ ও এ নামাজে কত তফাত।

খ.

আমরা অনেকে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে চলতে অভ্যস্ত। রমজানে এ ইয়ারফোনে আল্লাহর কালাম ধ্বনিত হবে এটাই আশা। এখন তো অনেক সুন্দর সুন্দর তিলাওয়াত পাওয়া যায়। নিয়মিত এসব শুনার অভ্যাস করুন, হয়ত পাপ শুনার অভ্যাস উত্তমতায় পরিবর্তিত হতে পারে।

হ্যাঁ, যদি তিলাওয়াত শুনতে ভালো লাগে তবে খেয়াল রাখবেন কুরআনের অবহেলা যেন না হয়। তিলাওয়াত ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে মনযোগী হয়ে গেলাম, ওদিকে তিলাওয়াত চলতেই থাকল। কিংবা কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ে গেলাম। 

আবার অনেকে জোরে ভলিউম দিয়ে তিলাওয়াত শুনতে অভ্যস্ত, প্রিয় ভাই আপনি হয়ত শুনছেন, কিন্তু আপনার পরিবারের কিংবা সাথী সবাই হয়ত অন্য কাজে বা কথায় ব্যস্ত। তাদেরকে গুনাহগার করার পথ তৈরি করাও উচিত নয়। মনে রাখা উচিত, নফল করার চাইতে, হারাম থেকে বাচা বেশি জরুরি। 

গ. 

কুরআন তিলাওয়াত সংক্রান্ত এ লেখা শুধু রমজানে না এরপরেও প্রযোজ্য। তবে রমজানে যেহেতু রহমত বেশি, আমাদের মানসিকতাও কিছুটা পরিবর্তন হয়, তাছাড়া এবারে ঘরে অবস্থানের কারণে সময় বেশি পাওয়া যাবে, তাই এ কাজ এখন শুরু করলেই উত্তম।

মনে রাখবেন, কুরআন কিন্তু কবরে ও হাশরের মাঠে পক্ষে বিপক্ষে দাঁড়াবে। এবার আপনিই ঠিক করেন আপনি কোন দিকে যাবেন। 

বর্তমান দূর্যোগে আমরা আল্লাহর উপরই একমাত্র নির্ভর করি। আর কুরআন হচ্ছে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। আমাদের নিজেদের কথাই চিন্তা করি। নিজের প্রমাস্পদের চিঠি আমরা কতবার পড়ি? অথচ সে জানেই না আমরা তাঁর লেখা বারবার পড়ছি। যদি জানত তবে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক যে আগের চাইতে ভালো হত তাতে কোন সন্দেহ নিশ্চয়ই নেই। প্রিয় ভাই, কুরআন আমাদের প্রতি আল্লাহর কালাম। আর তিনি ভাল করেই জানেন কে তা বারবার পড়ছে আর কে সুযোগ পেয়েও অবহেলা করেছে। 

এত সুযোগ পাওয়ার পরও যদি আমরা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করতে না পারি, তবে ব্যর্থতা কার? কাল কিয়ামতে যদি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তার জবাব কি আমরা তৈরি করেছি? 

এবার থেকেই শুরু হোক পরিবর্তনের, মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ এবার কুরআনের মাধ্যমেই শুরু করি। বেশি না হোক, ন্যূনতম একটি সূরা বা একটি আয়াত তো আমরা নিয়মিত পড়তে পারি। আমাদের হাতের মোবাইল ফোনেও পড়া যায়, ফেবু একটু সময় বন্ধ রেখে পাঁচ মিনিট তিলাওয়াত করা কি খুব বেশি সময়? আর যিনি বেশি করবেন, তাঁর প্রতিদান তাঁর রবের নিকটই তোলা রইল।

চলবে...

মোস্তফা মনজুর, সহকারি অধ্যাপক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ) ও পিএইচডি গবেষক (নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি, ইংল্যান্ড)

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়