মোস্তফা মনজুর
আপডেট: ১৬:১৬, ২২ এপ্রিল ২০২১
পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৫)

তারাবীতে ২০ রাকাআত পুরণের চাইতেও নামাজ সুন্দর করা উচিত। আপনার যদি এক ঘণ্টা সময় নির্ধারিত থাকে, তাহলে সুন্দর করে এক ঘন্টায় যা পারা যায় ততটুকুই পড়ুন। তাতে এ সময়টুকু কাজে লাগবে। হ্যাঁ যদি এভাবে সুন্দর করে পড়তে ২০ মিনিট বেশি লাগে তাহলে চেষ্টা করুন সে সময়টুকুও আল্লাহর জন্য বের করতে। না পারলে, ২০ রাকাআত দরকার নেই; এক ঘণ্টায় যা পারেন ততটুকুই সুন্দর করে পড়ুন।
আলহামদুলিল্লাহ, নাহমাদুহু ওয়া নুছাল্লী আলা রাসূলিহিল কারীম।
নফল নামাজ
মাহে রমজানের বিশেষ ফযীলত হচ্ছে এ মাসে একটি নফল অন্য মাসের একটি ফরজের সমতুল্য সাওয়াব নিয়ে আসে। প্রিয় ভাই, সুতরাং এ মাসই হচ্ছে নফল নামাজের সর্বোত্তম সময়।
নামাজ, বিশেষ করে নফল, বান্দাকে আল্লাহর সর্বাধিক নিকটে নিয়ে আসে। আর বান্দা সেজদারত অবস্থাতেই তাঁর রবের সবচেয়ে নৈকট্য হাসিল করে। প্রিয় ভাই, এটাই সবচেয়ে যথার্থ সময় আপনার রবের কাছে কিছু চাইবার।
আমরা অনেকে নামাজে শুধু সিজদার তাসবীহ পরেই শেষ করে ফেলি, যা দু আ করার তা নামাজের পর করি। প্রিয় ভাই, নফলে আপনি যা চাইবার তা সিজদাতেই চান, অবশ্যই হালাল ও জায়েজ জিনিস চাইতে পারেন। এ মাসে তো নফলের মর্যাদা বেড়ে যায়, সুতরাং দুআ কবুলের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। এ মাসে যদি আমরা চেয়ে না পাই, আর কখন পাব?
এ রমজানে আমরা দুইটি বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে আদায় করব।
এক. প্রতি ওয়াক্তের নামাজের সুন্নাত নামাজ। আমাদের অনেকে বর্তমান সময়ে সুন্নাত নামাজের গুরুত্ব দিতে চান না। প্রিয় ভাই, এসব সুন্নাত নামাজ হচ্ছে প্রতি ওয়াক্তের অলংকার। সুন্নাত ছাড়া শুধু ফরজ নামাজ যেন তেল-নুন বিহীন তরকারী।
আমরা অন্তত এ মাসে চেষ্টা করব এসব সুন্নাত নামাজ যেন না ছুটে যায়।
দুই. তারাবীর নামাজ। এক্ষেত্রেও অনেকে অলসতা করেন। আবার কেউ ৮ রাকাআত পড়ার পক্ষপাতী। প্রিয় ভাই, আমরা তারাবী অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আদায় করব।
তারাবী না পড়লে রোযার হয়ত কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রমজান মাসের পুর্ণ ফযীলত পেতে হলে তারাবী না পড়লে হবে না। প্রিয় ভাই, তারাবী তো শুধু এ মাসেরই আমল। রোযা আপনি অন্য মাসেও রাখতে পারেন, কিন্তু তারাবী? রমজান ছাড়া তারাবী নেই। ওতএব রমজানের পুর্ণ বরকত হাসিল করতে চাইলে তারাবী আমরা পূর্ণরূপেই পরব ইনশা আল্লাহ।
আমি ৮ বা ২০ এ তর্কে যাচ্ছি না। তবে একথা বলতে চাই, আমরা চেষ্টা করব ২০ রাকাআতই পড়তে। কেননা তাতে নামাজ বেশি পড়ার সাওয়াব তো আমরা পাচ্ছিই। হ্যাঁ যদি শরঈ ওজর (সফর, অসুস্থতা) থাকে তাহলে সুবিধামত যতটুকু পারেন ততটুকুই পড়বেন, তা ৪ হোক বা ৮ বা ১৬।
একটা কথা মনে রাখবেন, কতটুকু নামাজ পড়ছেন এবং কেন পড়ছেন তার খবর আপনি যেমন জানেন। তারচাইতে বেশি জানেন আপনার মালিক। যদি অলসতার কারণে বা প্রবৃত্তির অনুসরণে আপনি ৮ রাকাআতের সমর্থক হয়ে যান, তাহলে জেনে রাখবেন আপনার ৮ রাকাআতও কবুল হও্যার সম্ভাবনা কম। কেননা আপনার নিয়ত প্রবৃত্তির কাছেই বাঁধা।
আমরা চেষ্টা করব যত বেশি সম্ভব নফল পড়ার। এক্ষেত্রে মাগরিব, ইশা ও ফজরে সাধারণত আমরা নফলে একটু ক্লান্ত বোধ করি। আচ্ছা, সেসময় না হয় বাদই দিলাম। অন্য সময় চেষ্টা করব পড়তে।
আর যারা নিয়মিত বিভিন্ন সময়ের নামাজ (ইশরাক, চাশত, আওয়াবীন) আদায় করেন সেগুলোও আদায় অব্যাহত রাখা উচিত। আমরা যারা এসবে নিয়মিত নই, তারাও চেষ্টা করতে পারি এগুলো আদায়ের। তবে কিছু আমল সম্ভবত আমরা করতেই পারি। যেমন –
ক. তাহাজ্জুদ পড়া। সাহরি খাওয়ার সময় দু রাকাআত, চার রাকাআত বা আট রাকাআত যতটুকু সম্ভব পরে নেওয়া। ঘুম থেকে উঠেই যদি মুখ ধোও্যার সময় ওযু করে ফেলি তো ২/৪ রাকাআত নামাজ পরতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।
প্রিয় ভাই, নফল সালাতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তাহাজ্জুদ। আর রাত্রির এসময় আল্লাহ তাআলা এমনিতেই বান্দার জন্য তাঁর রহমতের দ্বার খুলে দেন। রমজান মাসে আমরা এমনিতেই এসময় উঠি। এমতাবস্থায় যদি রহমত না নিতে পারি তাহলে দুর্ভাগ্যের দায় আর কে নেবে। এটা তো এমন যে, ঘরে ঘরে এসে কেউ গিফট দিয়ে যাচ্ছে আর আমরা ঘরের দরজাই খুলছি না।
খ. সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুরাকাআত নামাজ পড়ে নেওয়া। এসময়ও মুখ ধোয়ার সময় ওযু করে নিলে নামাজ পড়াটা কষ্টকর মনে হবে না।
গ. যুহরের নামাজে ও আসরের আগে ২ রাকাআত করে মোট ৪ রাকাআত নামাজ সম্ভবত প্রতিদিন পড়া খুব কষ্টের হবে না।
শেষ কথা হচ্ছে, নামাজ যতটুকুই পরব, উত্তমরূপে পড়ব। সুন্দর করে ওযু করব, তারপর সুন্দরভাবে সুস্থির চিত্তে নামাজে দাড়াব। যথাসম্ভব উত্তমভাবে তিলাওয়াত করব। রুকু সেজদায় চুরি করব না; অর্থাত এসব ধীরস্থিরভাবে আদায় করব, রুকু থেকে সোজা হয়ে দাড়াব, দুই সেজদার মধ্যে সোজা হয়ে বসব, উত্তম হলো এসবের তাসবীহ আদায় করা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের সকলে মিলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়লে একা পড়ার তুলনায় বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে।
বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজে লম্বা কেরাত পড়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি লম্বা সূরা না জানা থাকে তবে দু তিনটি সূরা একত্রে (পরপর সূরা মিলান যাবে) এক রাকাতে পড়ে কিরাত লম্বা করা যায়।
আর তারাবীতে ২০ রাকাআত পুরণের চাইতেও নামাজ সুন্দর করা উচিত। আপনার যদি এক ঘণ্টা সময় নির্ধারিত থাকে, তাহলে সুন্দর করে এক ঘন্টায় যা পারা যায় ততটুকুই পড়ুন। তাতে এ সময়টুকু কাজে লাগবে। হ্যাঁ যদি এভাবে সুন্দর করে পড়তে ২০ মিনিট বেশি লাগে তাহলে চেষ্টা করুন সে সময়টুকুও আল্লাহর জন্য বের করতে। না পারলে, ২০ রাকাআত দরকার নেই; এক ঘণ্টায় যা পারেন ততটুকুই সুন্দর করে পড়ুন।
প্রিয় ভাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে নামাজ। ধৈর্য আর নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া মহান রবেরই নির্দেশ। আর তা যদি হয় সর্বোত্তম মাসে, সর্বোত্তম পন্থায় তবে প্রার্থিত জিনিস পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। আল্লাহ তাআলা আমাদের উত্তম রূপে নামাজের তাওফিক দিন।
চলবে...
মোস্তফা মনজুর, সহকারি অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও
পিএইচডি গবেষক, নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি, ইংল্যান্ড
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের