Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৪ ১৪৩২

মোস্তফা মনজুর

প্রকাশিত: ০০:০৮, ৪ মে ২০২১
আপডেট: ০০:১৬, ৪ মে ২০২১

পবিত্র মাহে রমজান ও করণীয় আমল (পর্ব ৭)

অনেকে দুআ বেশি করতে লজ্জা পান। লজ্জার কিছুই নেই। বরং এটা তো খোটা দেবে বা মানুশকে বলে বেড়াবে এমন কেউ জানছে না। বরং যিনি আপনার সবচেয়ে কল্যাণকামী তিনিই জানছেন।

আলহামদুলিল্লাহ, নাহমাদুহু ওয়া নুছাল্লী আলা রাসূলিহিল কারীম।

দুআ 

দুআ হচ্ছে মুমিনের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। আর রমজান দুআ কবুলেরও মাস। এ মাসে যত বেশি সম্ভব দুআ করা উচিত। নিজের জুতার ফিতাও আল্লাহর নিকট চাওয়া উচিত।

আমাদের সৌভাগ্য যে, আমাদের মালিক খুবই মেহেরবান। দুনিয়ার অন্য মাখলুখের মত তিনি কারো চাওয়া শুনতে ক্লান্ত হন না। বরঞ্চ উলটো তিনি বান্দার প্রার্থনাতে খুশিই হন। যে যত বেশি চাইতে পারে, তার উপর তিনি ততই খুশি। প্রিয় ভাই, দুআ  ঈমানেরও পরিচায়ক। দুনিয়ার সব আসবাব বা উপকরন থেকে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহ তাআলার কেবল মুমিনই চাইতে পারে। যার বিশ্বাস তাঁর মালিকের উপর সে-ই তো কেবল তাঁর দিকে ফিরে চলে। 

দুআ একটি স্বতন্ত্র ইবাদাতও বটে। শুধু নামাজ আর তিলাওয়াতের পরই দুআ করতে হবে তা নয়। সর্বাবস্থায় দুআ কর যায়। এমনকি নাপাক অবস্থায়ও যখন অন্য ইবাদাত করা যাচ্ছে না, তখনও দুআ কার্যকর। অতএব, সারাক্ষণ দুআ করলেও ইবাদাতরত থাকার সুযোগ থাকছে, হোক না তা নিজের চাল-ডালের জন্য কিংবা রোগমুক্তির দুআ।

রমজান মাস দুআ কবুলের উত্তম সময়। বিশেষ করে ইফতারের পুর্ব মুহূর্তে। এই সময়টা আমরা অনেক গাফিল থাকি। অথচ এ সময় দুআ কবুল হওয়ার বর্ণনা সদা সত্যবাদী প্রিয় নবীর (স.)। এ সময় সুন্দর করে আন্তরিকতার সাথে দুআ চেষ্টা করা উচিত। যদি না হয়, মনে মনে হলেও যেন দুআ করা বাদ না যায়। 

আমাদের অনেক অভিযোগ, আমাদের রব আমাদের দুআ কবুল করেন না। অথচ যখন তিনি সুযোগ দিলেন তখন আমরা গাফিল। কি আশ্চর্য! দুনিয়ার সবক্ষেত্রেই আমরা সময় মেনে চলতে রাজি অথচ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের চাহিদামত সবকিছু চাই।
 
দুআ সাধারণত দুভাবে করা হয়ে থাকে। প্রস্তুতিসহ আনুষ্ঠানিকভাবে, যেমন নামাজের পর, ইফতারের পুর্বে, তিলাওয়াতের পর। বিশেষ করে, তাহাজ্জুদে বা নফল নামাজের সেজদায় আমরা দুআ করতে পারি। 

দুআর ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় খেয়াল রাখা উচিত-

১। দুআয় কটি বিষয় থাকা জরুরি - ক. আন্তরিকতা - অলসতা বা অবহেলার সাথে না করা খ. বিনয় গ. নিজের নিঃস্ব হওয়া, আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া 
২। কাকুতি মিনতি করা। সম্ভব হলে কান্না করা, আর না হলে কান্নার ভান করা। 
৩। দুয়ার প্রথমে এবং যথাসম্ভব আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা বর্ণনা করা। এমনও হতে পারর শুধু একটি বিষয় চাইবার জন্য ৫ মিনিট ধরে আল্লাহর বড়ত্ব বলা 
৪। দুয়ার প্রথমে, মধ্যে ও শেষে দুরুদ পাঠ করা। 
৫। দুয়া কবুল হবে, এমন ধারণা রাখা। কবুল হবে না ধারণা রাখলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে না। 
৬। পাপ কাজের জন্য দু আ করলে তা কবুল হবে না। 
৭। দু আ শুধু নিজের জন্য না করা। দুনিয়ার সকল মানুষ ও মুমিনের জন্যও হওয়া চাই। তারপর নিজের জন্য যা প্রয়োজন তা চাইলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এছাড়াও সদাসর্বদাই দুআ করা যায়। এরুপ অনানুষ্ঠানিক দুআ আমার ব্যক্তিগত পছন্দের। বসাবস্থায় মনে হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া, কিংবা কাজের ফাকে ফাকে চাইতে থাকা। অনেকে দুআ বেশি করতে লজ্জা পান। লজ্জার কিছুই নেই। বরং এটা তো খোটা দেবে বা মানুশকে বলে বেড়াবে এমন কেউ জানছে না। বরং যিনি আপনার সবচেয়ে কল্যাণকামী তিনিই জানছেন। আর  প্রিয় ভাই, আপনার রব এতে খুশিই হবেন, বিরক্ত বা রাগান্বিত হবেন না।

আরো একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের পিতা মাতা, আত্মীয় স্বজন যারা দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন, তাঁদের কথা। প্রিয় ভাই, তাঁরা এ সময়ে আমাদের দুআর মুখাপেক্ষী। আমরা যেন আমাদের দুআয় তাঁদের ভুলে না যাই। রমজানের এ মুবারক সময়ে হয়ত আমাদের দুআর কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁদের মাফ করে দেবেন।

আল্লাহ রাব্বুল ইযযত আমাদের জিন্দা-মূর্দা সবাইকে ক্ষমা করুন, তাঁর নেক বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করুন। আমীন।

চলবে...

মোস্তফা মনজুর, সহকারি অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও

পিএইচডি গবেষক, নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি, ইংল্যান্ড

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়