নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট: ১৬:৫৫, ২৭ আগস্ট ২০২২
কী সিদ্ধান্ত আসবে — জানতে অধীর লাখো চা শ্রমিক

মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছেন দেশের চা বাগানের চা শ্রমিকরা ছবি: ঈশা চৌধুরী
মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের সমাধান টানতে আজ বৈঠকে বসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চা শ্রমিকদের মজুরির সমস্যার সমাধান হবে এমনটাই আশা করছেন চা শ্রমিক-নেতারা। ১৯ দিনে গড়ানো চা শ্রমিকদের এ আন্দোলনের শেষ পরিণতি কী তা দেখতে অপেক্ষায় সবাই।
মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে এখনও হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগানের শ্রমিকরা অনড় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরও বিকেলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে দেবেন।
এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ১২০ টাকায় কিছুই হয় না বলে জানান চা শ্রমিকরা। তাদের বক্তব্য- শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে ৪০ টাকা ভাড়া চলে যায়, বাকি ৮০ টাকায় খাবার হয় না। এখন যেহেতু প্রধানমন্ত্রী মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বসছেন তাই আজ সমাধান হবেই এমন বিশ্বাস রয়েছে তাদের।
দাড়াগাঁও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি প্রেমলাল আহির বলেন, আজ যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন, আশা করছি আমাদের দাবির বিষয়টি সমাধান হবে। এটি নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না হয়। আমরা আশা করি আজ আন্দোলন শেষ হবে। দাবিও পূরণ হবে।
চা-শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো উচিৎ কি-না একটু ভাবুন
দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন নিবন্ধিত ও ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন অনিবন্ধিত শ্রমিক আছেন। সব মিলিয়ে এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জনের। এদের প্রত্যেকেও যদি ১২০ টাকা করে মজুরি পান, তবে বছরে শ্রমিকদের মজুরির পেছনে খরচ করতে হয় ২ হাজার ৬৭ কোটি ৯০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। চা বিক্রির টাকা থেকে শ্রমিকদের বেতন বাদ দিলে ৯৫৭ কোটি ৯২ লাখ ৫ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে
এদিকে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে ৪ দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করেন চা শ্রমিকরা। এরপর তারা ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও তা সমাধান হয়নি। এরইমধ্যে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত গত শনিবারের বৈঠকে তাদের মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হলে নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।
পরবর্তীতে শ্রমিকরা এ মজুরি মানেন না জানিয়ে ফের আন্দোলনে নামেন। কয়েক দফা বৈঠকের পর সোমবার তাদের একাংশ কাজে যোগ দিলেও মঙ্গলবার ফের তারা আন্দোলন শুরু করেন। এদিকে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার বিকেলে বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।
এদিকে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তাদের সন্তানরাও।
চা শ্রমিকের মেয়ে মুন্নি আহির বলে, ১২০ টাকা মজুরিতে আমরা পড়ালেখা করতে পারি না। পরীক্ষা দিতে পারি না। তাই আমরা আন্দোলনে এসে যোগ দিয়েছি।
লাভলী গোয়ালা বলেন, আমরা আমাদের মায়ের মজুরি বৃদ্ধির জন্য তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি। যে মজুরি দেওয়া হয় তাতে আমরা বই, খাতা, কলম কিনতে পারি না। পরীক্ষার ফি দিতে পারি না। আমাদের যাতায়াত খরচ দৈনিক ৪০ টাকা খরচ হয়। ৮০ টাকায় আমাদের দুই কেজি চালও হয় না।
চা শ্রমিক স্বর্ণা সাও বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী আজ (শনিবার) বৈঠকে বসছেন তাই আমরা আশা করি এটির সমাধান হবে। তিনি একটি সমাধান দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় চা শ্রমিকরা
চা শ্রমিকদের উপার্জনের হিসাবটা কেমন?
দেশে চা-শিল্পের ইতিহাস প্রায় ১৬৮ বছরের। কিন্তু এতো বছর পরেও একজন চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৬৮ টাকাও হয়নি। চা শ্রমিকদের বর্তমান দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা! বাগান কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা হলেও চা-বাগানের শ্রমিকরা অন্যান্য সুবিধা পান।
বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, রেশন ইত্যাদি সবকিছুই বাগান কতৃপক্ষ দিচ্ছেন বলে দাবি মালিক পক্ষের। তাদের এই হিসাবে একজন চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা।
তাছাড়া, বাগানে তিন শ্রেণির শ্রমিক কাজ করেন। ‘এ’ ক্যাটাগরির শ্রমিকরা ১২০ টাকা দৈনিক বেতন পান। ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির শ্রমিকদের বেতন আরও কম। এ ছাড়া প্রতিটি বাগানে স্থায়ী শ্রমিকের অর্ধেক অস্থায়ী শ্রমিক থাকেন। তাদের বেতন আরও অনেক কম। তাদের জন্য নেই উৎসব ভাতা ও রেশন।
হিসাবটা আরও একটু ভিন্নভাবে করা যেতে পারে, ২০১৭-১৮ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৭৫১ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে) ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৫ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে সেই আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার বা ২ লাখ ৪২ হাজার ৬৩০ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৭৬ হাজার ২৮৫ টাকা।
মৌলভীবাজারে উত্তপ্ত সড়কে শুয়ে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ
কিন্তু ১২০ টাকা মজুরি হিসাবে একজন চা-শ্রমিকের বার্ষিক আয় মাত্র ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা। বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলা যায়; দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির যে ধারা, তার কোনো ছাপ পড়েনি চা-শ্রমিকদের জীবনে। গত পাঁচ বছরে চা-শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে মাত্র ১৮ টাকা।
চা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, দেশের চা-বাগানগুলোয় ২০২১ সালে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২৫ কোটি টাকা টাকার চা-পাতা।
অন্যদিকে দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন নিবন্ধিত ও ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন অনিবন্ধিত শ্রমিক আছেন। সব মিলিয়ে এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জনের। এদের প্রত্যেকেও যদি ১২০ টাকা করে মজুরি পান, তবে বছরে শ্রমিকদের মজুরির পেছনে খরচ করতে হয় ২ হাজার ৬৭ কোটি ৯০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। চা বিক্রির টাকা থেকে শ্রমিকদের বেতন বাদ দিলে ৯৫৭ কোটি ৯২ লাখ ৫ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। সে হিসাবে প্রতিটি বাগান গড়ে ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করে।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- মৌলভীবাজারে বঙ্গবন্ধু : খুঁজে পাই পিতার পদচিহ্ন (ভিডিও)
- দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: ইতিহাসে ভিন্নরকম এক সঙ্গীতায়োজন
- এ পি জে আব্দুল কালাম: ‘দ্য মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের