বানের জলে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। উঁচু সড়ক কিংবা বন্যাকবলিত এলাকা ছেড়ে অনত্র আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষ। যারা বাঁধে কিংবা উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের অনেককে থাকতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। এটাই এখন জামালপুরের বন্যার্ত মানুষের বাস্তবতা।
ভয়াবহ এ বন্যায় শুধু মানুষ নয়, বিপদে পড়েছে অন্য প্রাণীরাও। চারিদিকে থৈ থৈ পানির কারণে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে এসব প্রাণী। খাবারের খোঁজে ওরা হাজির হচ্ছে মানুষের আবাসস্থলগুলোয়।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বন্যাকবলিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে বাড়িঘরের পেছনের বাঁশঝাড়ে, ঝোঁপঝাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে শিয়াল, গুঁইসাপ, বেজি আর বনবিড়াল। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে আশ্রয় নেওয়া এসব প্রাণী বাড়ির গৃহপালিত হাঁস, মুরগি, কবুতর ধরে খাচ্ছে। এতে লোকজন বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।
গত শুক্রবার সকালে দেওয়ানগঞ্জের তারাটিয়া বাজারে লাঠিসোটা নিয়ে জড়ো হন একদল তরুণ। তাদের উদ্দেশ্য- বাড়ির আশেপাশে ঝোঁপঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া এসব পশু নিধন। তারা বাঁশের ঝাড়ে, ঝোঁপ-জঙ্গলে হানা দেন। সারাদিন সব পশুগুলোর লুকানোর জায়গায় হানা দিয়ে, খুঁজে খুঁজে ওদের হত্যা করতে শুরু করেন।
তাদের এই পশু নিধন অভিযান চলে শনিবার বিকেল পর্যন্ত। দুইদিনে প্রায় অর্ধশত শেয়াল পিটিয়ে মারেন তারা। এ সময় একটি বনবিড়ালকেও হত্যা করা হয়। এরপর মৃত প্রাণীকে তারা সড়কে সারিবদ্ধভাবে ফেলে রেখে উল্লাস করতে থাকেন!
ওই নৃশংসতার ছবিসহ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এসব বন্য প্রাণী হত্যার সঙ্গে জড়িত এক তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমরা নিজেদের অনিরাপদ বোধ করেছি। বাড়ির গৃহপালিত পশুর ওপর ওরা আক্রমণ করছে। বাড়িতে শিশু, ছোট বাচ্চারাও থাকে- তাই পশুগুলো ওদের আক্রমণ করতে পারে, এই আতঙ্কে এ কাজ করেছি।'
দেওয়ানগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণী হত্যার বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাদের ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের কাজ না করার জন্য এলাকাবাসীকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।