বিশেষ প্রতিনিধি
আপডেট: ২১:২১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
দেশে মাত্র একটি মর্মর বিড়াল বেঁচে আছে!
মর্মর বিড়াল দেখতে অনেকটা মেছো বাঘের মত। নামে বিড়াল হলেও সাধারণ বিড়ালের চেয়ে বড়। নাকের ডগা থেকে লেজ পর্যন্ত একটি মর্মর বিড়াল তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট হয়ে থাকে।
তবে শরীরের প্রায় অর্ধেকটাই লেজ। এরা সাধারণত ১২ বছর বেঁচে থাকে। একসময় বাংলাদেশে এদের প্রচুর দেখা গেলেও শিকার এবং বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বিলুপ্ত প্রায়। স্বাধীনতার পর দেশের কোথাও এদের দেখা মিলেনি।
তবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে একটি মর্মর বিড়াল এখনো বেঁচে আছে সঙ্গীহীন ভাবে। ৬ বছর কয়েক আগে সীমান্ত এলাকা নিরালাপুঞ্জি থেকে একটি মর্মর বিড়ালের বাচ্চা নিজ হেফাজতে নিয়ে আসেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন।
৫ দিন বয়সী সেই বাচ্চাটি এখন দেশে একমাত্র মর্মর বিড়াল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু বাচ্চা হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছিল তাই ধারণা করা হচ্ছে আরও বিড়াল আছে। তবে দৃশ্যমান সংখ্যায় এটাই দেশের একমাত্র মর্মর বিড়াল। দেশে এর দেখা না মিলায় প্রথম দিকে কেউ জানতনা এটা কি বিড়াল।
মর্মর বিড়ালের ইংরেজী নাম Marbled Cat বৈজ্ঞানিক নাম Pardofelis marmorata। গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মর্মর বিড়াল বাংলাদেশের বাইরে ভারতের আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরা,মেঘালয়সহ পাহাড়ি অঞ্চলে এবং মিয়ানমার, নেপাল, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশে মর্মর বিড়ালের বাস রয়েছে।
বাংলাদেশে সিলেট এবং চট্রগ্রামে এই বিড়ালটি এখনো ঠিকে থাকতে পারে । চির সবুজবনে গভীর প্রাকৃতিক বনে প্রাণীটির বিচরণ আছে তা ধারণা করছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে একটি মর্মর বিড়াল বেঁচে আছে তাদের সেবা যত্বে।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, আদিবাসী খাসিয়াদের কাছ থেকে এই বিড়ালটি উদ্ধ্বার করা হয় তখন এর বয়স চার কি পাঁচ দিন ছিল। তখন থাকে বাঁচিয়ে রাখাই ছিল এক কঠিন বাস্তবতা। চোখও ফোটেনি সে সময়। প্রথমে ড্রপার দিয়ে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়।
সেই ছানাটির বয়স এখন ৬ বছর। এখন সে নিজেই নিজের খাবার খেতে পারে। পছন্দের খাবার কবুতর বা কোয়েল। ছোট পাখি খেতেই সে বেশি পছন্দ করে। দু-একবার মোরগও দেওয়া হয়েছে।
মর্মর বিড়ালের বাচ্চাটি উদ্ধার করার পর প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান প্রথমে এটির পরিচয় শনাক্ত করেন। তিনি এই বিড়াল নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন যা আন্তর্জাতিক জার্নাল ক্যাট নিউজ-এ প্রকাশিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মুনতাসির আকাশ জানান, প্রকৃতিতে নিশাচর প্রাণীটি গাছে থাকতেই ভালোবাসে। খাবারের সন্ধানে মাটিতে নেমে আসে। বুনো ছোট পাখি, পাখির ডিম ও বাচ্চা, বুনো খরগোশ, বড় ইঁদুর, ব্যাঙ ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে।
একটি মা মর্মর বিড়াল একসঙ্গে এক থেকে চারটি বাচ্চা দিয়ে থাকে। ২১ মাসে পরিণত হয়ে ওঠে। পরিণত মর্মর বিড়াল নাকের ডগা থেকে লেজ পর্যন্ত তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট হয়ে থাকে। তবে লেজটাই প্রায় অর্ধেক।
এদের গড় আয়ু প্রায় ১২ বছর। পার্বত্য চট্রগ্রামে মর্মর বিড়ালের দেখা পেয়েছেন বলে জানিয়ে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন এলায়েন্স।
সংস্থাটির গবেষক শাহারিয়ার সিজার জানান, পার্বত্য এলাকায় তাদের ক্যামেরায় ২ টি বিড়াল ধরা পরে ২০১৫ সালে এবং তখন একটি বিড়ালের চামড়াও তারা পেয়েছিলেন। কেউ শিকার করে খেয়েছে বলে ধারণা।
বন্য প্রাণি বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান জানান, সিলেট, ময়মনসিংহ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর বনে মর্মর বিড়ালের বিচরণ রয়েছে।
সম্প্রতি ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন এলায়েন্স-এর পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্যামেরা ট্রাপিং-এ এই বিড়ালটির ছবি পাওয়া গিয়েছে। একমাত্র শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রানী সেবা ফাউন্ডেশনে জীবিত নমুনাটি রয়েছে।
আইনিউজ/আরডি/এইচএ
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে