Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

আব্দুল করিম কিম

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২০ এপ্রিল ২০২১
আপডেট: ২২:৫৩, ২০ এপ্রিল ২০২১

মেছোবাঘটি এখন গ্রামবাসীর অতিথি

গ্রামবাসী প্রস্তুত। মেছো বাঘটি পিটিয়ে মারা হবে। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে পরিবেশকর্মীরা বন বিভাগের গাড়িতে করে সেই গ্রামে পৌঁছালেন।

সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার মোগলগাঁও ইউনিয়নের লামা আকিলপুর গ্রামে তখন দুপুর। সিলেট থেকে লামাকাজি ব্রিজে ওঠার ঠিক আগে সুরমা নদীর তীর ধরে ডান দিকে নেমে যাওয়া পাকা সড়কে প্রায় বিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিলে লামা আকিলপুর গ্রাম।

সেই গ্রামে একটি মেছোবাঘকে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মেছোবাঘের একাধিক শাবকও দেখেছেন। সম্প্রতি গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি বাঘটিকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখেছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাঘটি আটক করার বা প্রয়োজনে পিটিয়ে মেরে ফেলার কথা ভাবছিলেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে বাঘটিকে লাঠিসোটা দিয়ে একাধিকবার ধাওয়া করাও হয়েছে।

সেই খবর পরিবেশকর্মীদের কাছে গেলে স্ট্যান্ড ফর আওয়ার ইন্ডেঞ্জারড ওয়াইল্ড লাইফের খোকন থঊনাউজম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী'র সাথে ও সিলেটে বাপা'র সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম কিম-এর সাথে যোগাযোগ করেন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গ্রামবাসীকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় লিফলেট দিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মৌলবীবাজার থেকে দুজন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বাপা'র সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম কিম'কে অনুরোধ করেন সেখানে যাওয়ার জন্য। জনাব কিম সিলেট থেকে পরিবেশকর্মী বিনয় ভদ্র ও বদরুল হোসেন সহ বন বিভাগের গাড়িতে করে লামা আকিল্পুর পৌছান।

বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের আসার সংবাদে গ্রামবাসীদের অনেকে লামা আকিল্পুর গ্রামের মসজিদের পাশে জমায়েত হয়ে মেছোবাঘ দেখার বর্ননা দেন। তাদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, গত দু'দিন এলাকার প্রায় অর্ধশত কিশোর-তরুন বাঘ মারার জন্য লাঠিসোটা নিয়ে সম্ভাব্য অবস্থানে ধাওয়া দিয়েছে। সমবেতদের উদ্দেশ্যে বাপা সিলেটের সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সব ধরনের প্রাণীর বেঁচে থাকা প্রয়োজন। মেছোবাঘিনীটি নিজের সন্তানের জীবন বাঁচাতে আক্রমণাত্মক আচরন করছে। এই প্রাণীটিকে আমরা বাঘ বললেও মূলতঃ ইহ বড় আকৃতির বেড়াল। মাছ খাওয়ার জন্য নদী ও জলাভুমির আশপাশে এরা থাকতে চায়। এরা মানুষকে আক্রমণ করে না। বরং মানুষকে ভয় পায়। বাসস্থানের অভাব ও আমাদের অসচেতনতায় প্রাণীটি আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

https://www.eyenews.news/media/imgAll/1586079616.gif

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্যা মেহেদী সারোয়ার বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী- মেছোবিড়াল ফাঁদ পেতে ধরা দন্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছরের কারাদন্ড অথবা এক লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড।

তিনি উপস্থিত গ্রামবাসীকে বলেন, আপনাদের গ্রামে প্রাণীটি আশা নিয়ে বাচ্চাসহ আশ্রয় নিয়েছে। অতিথি হিসাবে ওদের কিছুদিনের জন্য আশ্রয় দিন। বাচ্চা একটু বড় হলেই অন্যত্র চলে যাবে।

পরিবেশকর্মী ও বন কর্মকর্তাদের কথায় এলাকাবাসী তরুণদের মনে থাকা ভয় দূর হয়। গ্রামের মুরুব্বী সহ উপস্থিত সবাই মেছোবাঘটিকে আর বিব্রত না করার অঙ্গিকার করেন। স্থানীয় মুরুব্বী আব্দুর রহিম ও নিজাম উদ্দিন মেম্বার বলেন, এরা যেহেতু নিশাচর ও মানুষ থেকে দূরত্বে থাকে তাই আমরাও তাদের কাছে যাওয়ার চেস্টা আর করবো না। স্থানীয় তরুন আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, শিশু-কিশোরেরা যেন বন্যপ্রাণীর আর ক্ষতি না করে আমরা তা দেখবো। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান, জাকির হোসেন, আব্দুল লতিফ প্রমুখ।

আইনিউজ/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়