Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৭ ১৪৩২

আইনিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ৫ জুন ২০২১
আপডেট: ১৪:৪৬, ৫ জুন ২০২১

কুয়াকাটায় বাইকের চাকায় প্রতিদিন প্রাণ হারায় ৬ হাজার কাঁকড়া

কুয়াকাটার সুপরিচিত লাল কাঁকড়া (ফাইল ছবি)

কুয়াকাটার সুপরিচিত লাল কাঁকড়া (ফাইল ছবি)

সমুদ্রের পাশে বালিতে বাইক চালানো দেখেছেন? হ্যাঁ, দুই চাকার ডার্ট বাইক বা অনেক ক্ষেত্রে বালিতে চালানোর উপযোগী চার চাকার কোয়াড বাইক। টুরিস্টদের আকর্ষণ করতে প্রায় সব সি-বিচেই দেখা যায় এই বাইকগুলো। বাংলাদেশেও কুয়াকাটায় এটি বেশ জনপ্রিয়। 

তবে যারা কুয়াকাটায় বাইক চালিয়েছেন, তারা জানেন বালিতে বসবাস করা দুই-একটা কাঁকড়া প্রায়ই চলে আসে বাইকের নিচে। এটা খারাপ না লাগলেও এর পরিসংখ্যানটা জানলে আপনি অবশ্যই অবাক হবেন। পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে চলাচল করা বাইকের চাপায় প্রতিদিন অন্তত ছয় হাজার কাঁকড়ার মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের প্রভাবে প্লাস্টিক দূষণ ও পশুপাখি বিলীন হয়ে সৈকতটি তার সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে।

এমন তথ্যই জানিয়েছে সমুদ্র পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে। গত ২৭মে এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫০-৬০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন। কিন্তু এদের ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। যার কারণে প্রতিদিন এই সৈকতে পর্যটকদের ফেলা প্লাস্টিকের ৯০ শতাংশই চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। এর কারণে সমুদ্রের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটায় প্রতিদিন অন্তত ২০০টি মোটরসাইকেল চলে। যার প্রতিটির দৈনিক আয় এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব মোটরসাইকেল দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার সৈকত হয়ে কাঁকড়ার দ্বীপে যায়।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিবার একটি মোটরসাইকেলের চাপায় অন্তত ১০টি করে কাঁকড়ার মৃত্যু হয়। হিসাব করে দেখা যায়, বাইকচাপায় প্রতিদিন অন্তত ছয় হাজার কাঁকড়ার মৃত্যু হয়। কুয়াকাটায় বন ধ্বংস, বেদখল, ভাঙনে বসতি হারানো ও মৎস্য সম্পদের হুমকির তথ্যও উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন বন্ধ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটনের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সৈকত এলাকায় প্লাস্টিক মোড়কজাত পণ্য নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠা টঙ দোকান উচ্ছেদ করে সৈকতকে পরিচ্ছন্ন রাখা, আবর্জনা পরিষ্কার, সৈকতে ফুটবল খেলা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যটকদের সচেতন করতে একটি বিশেষ বাহিনী নিয়োগ করা, পুরো সমুদ্র সৈকত এলাকায় মোটরবাইক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, সৈকত এলাকায় উচ্চস্বরে বাদ্য বাজানো বন্ধ করা, লাল কাঁকড়া সংরক্ষণে পর্যটক নিয়ন্ত্রণসহ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, কুয়াকাটাকে দ্রুত ইসিএ এলাকা ঘোষণা করা ইত্যাদি।

মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের সভাপতি মাহমুদ সোহেলের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হকের সঞ্চালনায় প্রতিবেদনটি পাঠ করেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কেফায়েত শাকিল।

খেয়াল করলে দেখবেন, উন্নত দেশগুলোতে কাঁকড়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে, সেগুলো বিভিন্ন দেশে রফতানি করে তারা লাভবানও হচ্ছে। আর আন্তর্জাতিকভাবে কাঁকড়ার চাহিদাও অনেক। এ তো গেলো বাণিজ্যের কথা, প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়া জীব-বৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কাঁকড়া মাংসাশী প্রাণিদের খাদ্য শিকলে রয়েছে, ফলে কাঁকড়া বিলুপ্ত হলে সে প্রভাব অন্যান্য প্রাণিদের উপরও পড়বে। 

সূত্র: ইত্তেফাক

আইনিউজ/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়