রিপন দে
আপডেট: ২৩:৩১, ৬ জুলাই ২০২১
বন্য বানর দিয়ে ভ্যাকসিন ট্রায়াল কতটা বৈজ্ঞানিক?
ফাইল ছবি
বানরের সাথে বিভিন্ন ভাবে আমাদের বা শারীরবৃত্তীয় মিল থাকায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ড্রাগ বা ভ্যাক্সিন মানব দেহের জন্য ব্যবহারের আগে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য প্রয়োগ করা হয়। কোভিডের ভ্যাকসিন 'বঙ্গভ্যাক্স' তৈরী করতে কাজ করছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। তারা অনেক কাজ এগিয়ে নিয়েছে। মানুষের শরীরে এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করার আগে বানরের দেহে প্রয়োগ করা হবে কারণ জিনগত ভাবে মানুষের খুব কাছের প্রাণী বানর।
এই কারণে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। তাই গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড এর পক্ষ থেকে তাদের ৫৬টি বানরের প্রয়োজন বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয় এবং বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে তাঁরা তিন দিনে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর ধরেন এবং বাকিগুলি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকা থেকে ধরতে যান এ নিয়ে আবার অন্য রকম বিতর্ক ঘটেছে।
তবে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হিসেবে সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন তৈরীতে যে কৌশল বানরের উপর প্রয়োগ যেভাবে করা হয় তাঁর উল্টো ভাবে করা হচ্ছে বাংলাদেশে। অর্থাৎ ভ্যাকসিন তৈরীতে যে সব বানর বা প্রাণী দেহে প্রয়োগ হয় সেগুলো থাকে নির্দিষ্ট এরিয়ায় এবং ল্যাবের সম্পূর্ন জিবাণুমুক্ত বানর। কিন্তু বাংলাদেশে বায়োটে লিমিটেড ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য বানর সংগ্রহ করছে বন থেকে। অর্থাৎ বন্য-বানর। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
গাজীপুরের বরমী বাজার এলাকায় বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার জন্য বানর ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের কর্মীরা।
গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে বনে যে বানর থাকে তার বেশীরভাগ মানুষের পাশাপাশি থাকে। তাদের শরীরে প্রচুর রোগের জীবাণুর সন্ধান ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। তার উপর বন্য বানরগুলিকে ট্রায়াল শেষে আবার বনে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এতে ভ্যাকসিন ট্রায়াল যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তেমনি এই বানরগুলোর মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, অন্য প্রানীরা যেমন হুমকিতে পরবে তেমনি বেশীর ভাগ এলাকায় বানর মানুষের পাশাপাশি বসবাস করে বলে মানুষেরও হুমকি রয়েছে।
কেনো বন্যবানরের উপর ভ্যাকসিন ট্রায়াল করা উচিত না তা নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ। মোস্তফা ফিরোজ এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশের বন্যবানর নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত University of Washington, USA এর সাথে মিলে যৌথ গবেষণা করেছেন। তিনি জানান,
বন্যবানরের উপর এ ধরনের ভ্যাক্সিন ট্রায়াল করা উচিৎ না। যেসব বানর মানুষের কাছাকাছি থাকে বা বনে থাকে সেগুলোকে সাধারণত অনির্দিষ্ট-রোগ-মুক্ত (এসপিএফ) হিসাবে গণ্য করা হয়। এসব বানরে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু থাকে। যা যে কোন ট্রায়ালের ফলাফলকে প্রভাবিত করে। ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্টের ইউনির্ভাসিটি অব ওয়াশিংটন এবং আমার যৌথ গবেষণায় দেখা যায়- বাংলাদেশের যে জায়গাগুলোতে (শ্রীপুরের বর্মিসহ) মানুষের বসতির আশেপাশে বানর পাওয়া যায় সেসব বানররা বিভিন্ন ধরনের জীবাণুতে আক্রান্ত। বিশেষ করে বাংলাদেশের বানরে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম এসপিপি, পিকারনভাইরাস, প্যারামিক্সোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস এবং এনজুটিক ভাইরাস পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, এসব জীবাণু বানর থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে বানরে সংক্রমিত হওয়ারও প্রমাণ পেয়েছি । শুধু আমাদের দেশেই না এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও একই ধরনের নজির পাওয়া যায়। তাই বিশ্বব্যাপী যখন কোন অ্যানিম্যাল মডেলিং করা হয় তখন খুবই সতর্ক ভাবে সম্পূর্ণ নীরোগ বা নির্দিষ্ট-প্যাথোজেন মুক্ত (এসপিএফ)) প্রাণী ব্যবহার করা হয় যাতে করে Viral infection বা ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে নরমাল ইমিউন রেসপন্স পাওয়া যায়।
এই গবেষক আরও জানান, আমাদের দেশে উৎপাদিত কোভিড-১৯ টিকা বঙ্গভ্যাক্স এর জন্য যে কোন Specific-pathogen-free(SPF) প্রাণী এমনকি Specific-pathogen-free(SPF) বানরে ব্যবহার করলেও কারো আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু আমার আপত্তি হচ্ছে এধরনের একটি অনুমতি দিতে হলে সেটা অবশ্যই আমাদের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী Scientific committee এবং Wildlife Advisory Board থেকে অনুমোদিত হতে হবে। IUCN Red List 2015 অনুযায়ী Rhesus Macaque (Macaca mulatta) বা বানর আমাদের দেশে একটি সংকটাপন্ন প্রজাতির প্রাণী। বন বিভাগকে এ ধরনের যে কোন অনুমতি দেয়ার আগে সব কিছু খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করবো। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠালেই অনুমতি দিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা আছে বলে আমার জানা নেই। আমি দীর্ঘ দিন Scientific committeeর সদস্য এবং সভাপতি থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক অনুমতির আবেদন বাতিল হতে দেখেছি। এই কমিটিটি রাখাই হয়েছে যাতে বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত যে কোন সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে নেয়া যায়। আশা করি বনবিভাগ বানর গুলি ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সচেতন থাকবে।
বন্যবানরের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন বানর বিশেষজ্ঞ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান। তিনি জানান,
এভাবে বন্যবানর ধরে নেওয়া কোন ভাবেই ঠিক নয়। যদি দেশীয় বানরের উপর পরীক্ষা করতে হয় তাহলে চিড়িয়াখানা থেকে সংগ্রহ করে সেইসব বানর রোগ মুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার পর ভ্যাকসিন ট্রায়ালের কথা ভাবা যেত। বিশ্বের কোন কোন দেশ Animal Model হিসেবে বানর রপ্তানি করে থাকে। Pathogen free এসব বানর ভ্যক্সিন Trial এ ব্যবহার করা হয়। বুনো পরিবেশ থেকে বানর ধরার অনুমতি দেবার আগে বনবিভাগের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের পরিচালক এসএম জহির উদ্দিন আকন জানান, আইন মেনেই ভ্যক্সিন ট্রায়ালের জন্য বানর সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বন্যবানরের উপর কেন এই পরীক্ষা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এইগুলো উচ্চপর্যায়ের বৈজ্ঞানিক বিষয় আমি মন্তব্য করতে পারছিনা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গ্লোব বায়োটেকের রিসার্চ এন্ড ডেভলাপমেন্টের বিভাগীয় প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে থাকে পাওয়া যায়নি।
আইনিউজ/রিপন দে/এসডি
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে