Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

খোকন সিংহ

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২০ জুলাই ২০২১
আপডেট: ০০:৪৭, ২১ জুলাই ২০২১

অস্তিত্বের হুমকিতে পাতি সরালি হাঁস

বাচ্চাসহ পাতি সরালি হাঁস। ছবি: খোকন সিংহ

বাচ্চাসহ পাতি সরালি হাঁস। ছবি: খোকন সিংহ

পাতি সরালি হাঁস (Lesser whistling duck) আমাদের আবাসিক পাখি। শীতে জলাশয়গুলি শুকিয়ে তাদের বিচরণ ক্ষেত্র কমে আসলে  টিকে থাকার প্র‍য়োজনে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে হাওর অঞ্চলে জড়ো হয়। শীতের পরে আবার বিশাল এলাকা জুড়ে ছোট বড় জলাশয় গুলিতে ছোট ছোট দলে ছড়িয়ে যায়।  

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। IUCN এর তালিকায় বাংলাদেশে এই পাখিটিকে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ ঘোষণা করেছে।

পাতি সরালি মূলত নিশাচর। দিনের বেলা নিরাপদ জলাশয়ে জলজ ঝোপঝাড়ে বা গাছে বিশ্রাম নেয়। রাতের বেলা ধানক্ষেতে বা অগভীর জলাশয়ে খাবারের সন্ধানে নেমে পড়ে। খাবারের তালিকায় রয়েছে ধানক্ষেতের ছোট ছোট শামুক, জলজ উদ্ভিদ-শ্যাওলা, ছোট মাছ, জলজ পোকামাকড়।

এপ্রিল-মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন মৌসুমে এরা মূলত জলাশয়ের ধারে বড় গাছের কোটরে, ডাব গাছে বাসা করে। ডিম দেয় ৭-১১ টি। ডিম ফুটে ছানা বের হয় ২০-২১ দিনে।

জন্মের কিছুক্ষণ  পর বাচ্চারা  মায়ের দেখানো পথ ধরে  লাফিয়ে নেমে পড়ে মাটিতে এবং জলাশয়ের দিকে চলে যায়। অন্যান্য  পাখির  মতন মা এদের মুখে খাবার তুলে দেয়না, নিজের খাবার এরা নিজে খুঁজে নিতে পারে।  

তবে দুঃখের বিষয় হলো অন্যান্য পাখিদের মতন সারাদেশে দিন দিন এদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। কৃষিজমিতে  অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যাবহার, কল কারখানার বর্জ্য খালে-বিলে মিশে যাওয়া, জলাশয় ভরাট ইত্যাদি কারণে দিন দিন এদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে খাবার সংকট।  

তার পাশাপাশি যথেচ্ছ শিকার এবং উপযুক্ত প্রজনন ক্ষেত্রের অভাব পাখিটিকে দ্রুত বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।  

যেহেতু পাতি সরালি বড় জাতের হাঁস তাই এদের প্রজননের জন্য প্র‍য়োজন হয় জলাশয়ের ধারে শতবর্ষী বড় গাছের বড় কোটর, যেটাতে ঢুকে সে ডিম দিতে পারে। জলাশয়ের ধারে এখন আর এরকম গাছ নেই বললেই চলে। তাই বাধ্য হয়ে এখন তারা নারিকেল গাছ বা জলাশয়ের ধারে জলজ ঝোপের ভিতর ডিম দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যা টেকেনা। অনেক ক্ষেত্রে দূরে কোন গাছথেকে ডিম ফুটে বাচ্চারা বের হয়ে  জলাশয়ের দিকে এগুতে এগুতেই মানুষের চোখে পড়ে অথবা অন্যান্য শিকারী প্রাণীর  শিকার হয়ে যায়। 

গত কয়েক দশক ধরে যেভাবে তাদের সংখ্যা কমে আসছে তাতে এখনই কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই হয়ত হারিয়ে যাবে সুন্দর এই পাখিটি আমাদের দেশ থেকে।

আইনিউজ/আরডি/এসডি

 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়