Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

সাজু মারছিয়াং, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:২১, ৩১ জুলাই ২০২১
আপডেট: ১৪:৪৩, ৩১ জুলাই ২০২১

সকালে হাঁটতে গিয়ে লাউয়াছড়ার গ্রিন পিট ভাইপারের সাথে দেখা

হোয়াইট লিপড গ্রিন পিট ভাইপার। ছবি: সাজু মারছিয়াং।

হোয়াইট লিপড গ্রিন পিট ভাইপার। ছবি: সাজু মারছিয়াং।

অবসরে ঘুরে বেড়াতে কার না ভালো লাগে, তাও আবার জঙ্গলে। এর মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞার লকডাউনে সবকিছু বন্ধ। আমার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর। এই সুবাদে বন জঙ্গলে কিছু সময়ের জন্য ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে শুক্রবার (৩০ জুলাই) সাতসকালে হাঁটতে বেড়িয়ে পড়লাম। পাহাড়ের বুক বেয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি ছড়া পার হয়ে বনের কর্দমাক্ত বালি বিছানো আঁকাবাঁকা রাস্তা। একসময় চলে আসলাম লাউয়াছড়ার ভেতরের বন গবেষণা কেন্দ্রের সামনে।

করোনা মহামারি সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে দীর্ঘ কয়েকমাস লাউয়াছড়ায় পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। সুনশান নিরব-নিস্তব্ধ বন, নেই কোন পর্যটকের হই-হুল্লোড় প্রকৃতি যেন ফিরে এসেছে তার আপন রূপে। বনের গাছে গাছে একদল চশমাপরা হনুমান লাফালাফি করছে বন্য প্রাণীদের মাঝেও ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। লাউয়াছড়ার পরিবেশ একেবারে অন্যরকম।

বনের ভিতর হাটতে হাটতে হঠাৎ রাস্তার পাশের জঙ্গলের ঝোপে কি যেন নড়ে উঠলো। দূর থেকে দেখে বুঝার উপাই নেই তাই কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম গাছের সবুজ পাতার সঙ্গে মিশে থাকা একটি সাপ। সবুজ পাতার সঙ্গে মিশে ছিল বলে সাপটিকে ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিলো না। সাপটির দেহের ওপরটা সবুজ, মাথার পাশে চোখের নিচে হলুদ ও সাদা। ওপরের ঠোঁটের প্রান্তে সরু সাদা রেখা, দেহের নিচটা ফ্যাকাশে সবুজ ও খানিকটা হলুদ। দেখতে লাউ গাছের মতো হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এই সাপকে লাউডুগি সাপ বলে। 

অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ছবি তোলে নিলাম সাপটির। সে ছবিটি পাঠিয়ে দিলাম শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেবের কাছে। সাপটির ছবি দেখে তিনি বলেন, সাপটির নাম 'সবুজ বোড়া' এটি ভাইপারিডি পরিবারের সাপ। ইংরেজী নাম (White Liped Green Pit Viper) হোয়াইট লিপড গ্রিন পিট ভাইপার, বৈজ্ঞানিক নাম Trimeresurus Albolabris, এটি বিষধর সাপ। এই সাপের ওপরের চোয়ালে একজোড়া লম্বা বিষদাঁত  থাকে। ওই দাঁত দুটি তারা মুখের তালুর সঙ্গে ভাজ করে রাখে প্রয়োজন মতো পেশির সংকোচনে মুখ খুলে গেলে বিষদাঁত দুটি মুখের তালু থেকে বেরিয়ে  আসে শিকারকে ছোবল দিয়ে তার শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে আবার আগের মতো ভাজ হয়ে যায়।

সাপটি নিশাচর হওয়ায় দিনের বেলা সচরাচর দেখা যায়না। রাতের বেলায় বেশি ঘুরে বেড়ায়। বৃক্ষচারী হলেও খাদ্যের জন্য প্রায়ই মাটিতে নেমে আসে। খুবই ধীর গতিতে চলাফেরা করে। এরা গিরগিটি, ব্যাঙ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রানী ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। সাপটি সবুজ বনে থাকতে পছন্দ করে সবুজ লতাপাতায় নিজেকে মিশিয়ে ফেলে।

হুট করে দেখা যায় না বন, ঝোপজঙ্গল, বাঁশঝাড়, চা-বাগানে সাপটি থাকে। স্ত্রী-সবুজ বোড়া ডিম্বথলিতে ডিম পাড়ে ও প্রাপ্ত বয়স্ক সাপের মতো দেখতে ৭-১৬টি বাচ্চা প্রসব করে।

সজল দেব আরও বলেন এখন প্রায়ই বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসে এ সাপ। সবুজ বোড়া বিষধর সাপ। এ সাপের বিষ আছে কিন্তু দংশনে মানুষ মারা যায় না। খুবই কম রেকর্ড আছে মানুষ মারা যাবার। লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় লাউয়াছড়া বনে এই সাপ প্রায়ই দেখা যায়। সাধারনত এরা লুকিয়ে বসে থাকে আর শিকার এলেই ছোবল দেয়।

আইনিউজ/সাজু মারছিয়াং/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়