Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

সাজু মারছিয়াং

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২৩ আগস্ট ২০২১
আপডেট: ১৯:৫৩, ২৩ আগস্ট ২০২১

লাউয়াছড়ার বিপন্ন চশমাপরা হনুমান

চশমাপরা হনুমান। ছবি- সাজু মারছিয়াং।

চশমাপরা হনুমান। ছবি- সাজু মারছিয়াং।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মেলে বিপন্ন প্রানী চশমাপরা হনুমানের একটু দূর থেকে হঠাৎ যদি দেখা যায়, তাহলে অনেকেই বানরের চোখে চশমা পরানো হয়েছে ভেবে ভুল করতে পারেন। তবে কাছাকাছি গেলে স্পষ্ট হবে,চোখের চারপাশে সাদা রঙের লোমে আবৃত হয়ে চশমার আকার নিয়েছে। এ জন্যই প্রাণীটির নাম চশমা পরা হনুমান। 

শরীরের তুলনায় লেজ অনেক লম্বা। শরীর কালচে বাদামি, বুকের দিকটা সাদাটে। শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, চশমা পরা হনুমান আকারে ছোট এবং এদের লেজ অনেক লম্বা হয়ে থাকে। তাদের চোখের চারপাশের লোম সাদা রঙের, ফলে এটিকে চশমার মতো মনে হয়।

এরা হনুমানের চেয়েও লাজুক প্রকৃতির। দিনের বেলায় ঘন বনের ছায়াযুক্ত স্থানে বিচরণ করতে পছন্দ করে। আর সহজে এরা মাটিতে নামে না। চশমা পরা হনুমান কচিপাতা, ফুল-ফল বীজ ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। পানির চাহিদা পূরণ করতে শিশির লেগে থাকা পাতা চেটে খায় ও পানিবহুল লতাগুল্ম খায়। কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি ও ইকো ট্যুরগাইড মঞ্জুর আহমেদ আজাদ মান্না বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, চশমা পরা হনুমান চোখে পড়লেও এখন অনেক কমে যাচ্ছে। এখন এটি দিন দিন বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এদের টিকিয়ে রাখতে নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংস রোধ করে বন্য প্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল ঠিক রাখতে হবে।

চশমাপরা হনুমান এ দেশের মহাবিপন্ন প্রাণী, চশমাপরা হনুমান (Spectacles Langur, Phayre’s Langur বা Phayre’s Leaf Monkey)। কালো হনুমান বা কালা বান্দর নামেও পরিচিত। কালো মুখমণ্ডলে শুধু চোখের চারদিকে সাদা, দেখলে মনে হয় যেন চশমা পরে আছে। Cercopithecidae গোত্রভুক্ত এই প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম trachypithecus phayrei। এ দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে আকারে এরাই ছোট। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা এরা।

স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বায় ৫৫-৬৫ সেন্টিমিটার। লেজ ৬৫-৮০ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষগুলো সাত থেকে নয় ও স্ত্রীগুলো পাঁচ থেকে সাড়ে সাত কেজি। চোখের চশমা ছাড়া দেহের বাকি অংশের চামড়া কালো। ঠোঁটের চামড়ার ওপরও সাদার ছোপ রয়েছে। লোমবিহীন মুখমণ্ডল, কান, হাত ও পায়ের পাতা কুচকুচে কালো। পিঠ, দেহের পাশ ও লেজ কালচে ধূসর। বুক, পেট ও দেহের নিচটা সাদাটে ধূসর। নবজাতকের পুরো দেহের লোম কমলা,যা মাস খানেক পর থেকেই ধূসর হতে থাকে।

বন্যপ্রাণী গবেষক তানভির আহমেদ সৈকত বলেন, মজার বিষয় হল চশমাপরা হনুমান প্রায়ই মাটিতে নামে, বেশীরভাগই লোক চক্ষুর একটু আড়ালে।

সচরাচর একটি শক্তিশালী পুরুষের নেতৃত্বে ১০-১৫টি একটি দলে বিচরণ করে। তবে কোনো কোনো বড় দলে ২-৩টি শক্তপোক্ত পুরুষও থাকতে পারে। প্রতিটি দলের নির্দিষ্ট বিচরণ এলাকা রয়েছে, যেখানে অন্যরা প্রবেশ করে না। একই এলাকায় মুখপোড়া হনুমান ও অন্যান্য বানর প্রজাতির সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ছাড়াই খাবার-দাবার খেয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করে।

এরা গাছের ডালে ডালে ঘুরে পাতা,পাতার বোঁটা, ফুল, ফল ও কুঁড়ি খায়। উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বংশবৃদ্ধিতে বেশ সাহায্য করে। বাচ্চারা দীর্ঘ সময় ধরে খেলাধুলা করে। মা বাচ্চাকে বুকে নিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যখন লাফিয়ে পড়ে দেখতে বেশ ভাল লাগে। পাতা ও গাছে জমে থাকা পানি ও শিশির পান করে তৃষ্ণা মেটায়। ‘চেং কং’ শব্দে ডাকে। অন্যকে ভয় দেখাতে মুখে ভেংচি কাটে।

জানুয়ারি থেকে এপ্রিল প্রজননকাল। স্ত্রী ১৫০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে। গড়ে প্রতি দুবছরে একবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা ৪-৫ মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। পুরুষ ৫-৬ ও স্ত্রী ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। আয়ুষ্কাল প্রায় ২০ বছর। যেহেতু বর্তমানে এরা মহাবিপন্ন, তাই অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই নিরীহ এই প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর তা আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য কিছুটা হলেও নষ্ট করবে।

আইনিউজ/এসডি

আইনিউজ ভিডিও

লাউয়াছড়া গাছে বসে থেঁ-ঁউ, হু-ঁউ, কেঁ-উঁ উঁয়েহুঁ শব্দে ডাকছে কী এই প্রাণী?

লকডাউনে কেমন আছে লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণীরা?

যত্ন ও ভালোবাসায় যেভাবে লাউয়াছড়ার অরণ্যে ফিরলো মারাত্মক আহত কন্ঠী নিমপ্যাঁচা

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়