বিষ্ণু দেব, মৌলভীবাজার
আপডেট: ২২:১৩, ২ নভেম্বর ২০২১
হাইল হাওরে মাছের বড়শিতে দুর্লভ কালিবক
শ্রীমঙ্গলের হাওরে বড়শিতে মাছ খেয়ে আটকা পড়া দুর্লভ কালিবক
হাইল হাওরে মাছ ধরতে বড়শি পেতেছিলেন রাজা মিয়া। সেই বড়শির মাছ খেয়ে আটকা পড়ে কালো একটি বক। বড়শির মাছ ধরতে গিয়ে রাজা মিয়ার চোখে পড়ে বিষয়টি। দ্রুত বকের গলা থেকে বড়শি বের করেন। তবে জীবনে এই জাতের পাখি কখনও দেখেননি রাজা মিয়া। পরিচিতজনদের সহযোগিতায় সাথে সাথে খবর দেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের লোকজন খবর পেয়ে ছুটে যান। উদ্ধার করে নিয়ে আসেন পাখিটিকে।
‘এটা এতোটাই দুর্লভ- আমার জীবনে এই প্রথম দুর্লভ প্রজাতির কালিবক দেখলাম।’
মাছশিকারী রাজা মিয়া জানান, বোয়াল, শোল, আইড়, চিতলসহ বড় মাছের জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, যার অধিকাংশই শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। এই মাছের আশায় সন্ধ্যারাতে পুঁটি, টাকি ইত্যাদি জিওল মাছ দিয়ে নিয়মিত বড়শি পাতেন শিকারীরা। ভোরে গিয়ে দেখতেন পান বড়শিতে ধরা পড়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ। সেই মাছ কেউ নিজে খান, আর অনেকেই তা বাজারে বিক্রি করে দেন।
রাজা মিয়া জানান, অন্যান্য দিনের মতো রোববার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যারাতে হাইল হাওরে বড়শি পাতেন তিনি। পরদিন সোমবার (১ নভেম্বর) সকালে গিয়ে দেখেন বড়শি খেয়ে আটকে আছে একটি পাখি। তবে পাখিটি অচেনা, এর আগে কখনও দেখেননি। বড়শি খোলে সেবা-শুশ্রুষা দেওয়ার চেষ্টা করেন। খবর দেন শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে। খবর পেয়ে ফাউন্ডেশনের লোকজন ছুটে যান হাওর এলাকায়।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল আইনিউজকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে আমরা পাখিটিকে নিয়ে আসি। প্রাথমিক সেবাযত্ন দিয়ে সন্ধ্যায় হাইল হাওরের বাইক্কাবিল অভয়াশ্রমে অবমুক্ত করা হয়। অবমুক্তকালে উপস্থিত ছিলেন বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গলের পরিচালক স্বপন দেব সজল, এফজি সুব্রত সরকার ও তাজুল ইসলাম।
সজল বলেন, ‘এটা এতোটাই দুর্লভ- আমার জীবনে এই প্রথম দুর্লভ প্রজাতির কালিবক দেখলাম।’
জানতে চাইলে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার আদনান আজাদ আসিফ আইনিউজকে বলেন, বকটি দুর্লভ প্রজাতির ‘কালিবক’। তিনি বলেন এখন বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় এই বক।
হাওরের বাইক্কাবিল অভয়াশ্রমে অবমুক্ত করা হয় দুর্লভ কালিবক
কালিবক
‘কালিবক’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লাক বির্টার্ন’(Black bittern), বৈজ্ঞানিক নাম: (ইক্সোব্রিকাস ফ্ল্যাভিকলিস)Ixobrychus flavicollis, এরা ‘কালা বগলা’, নামেও পরিচিত এটি লম্বায় ৪৮ সেন্টিমিটার। মাথার তালু চকচকে স্লেট বর্ণের। ঘাড়, গলা হয়ে পিঠে কালো রঙ ছড়িয়ে গেছে। গলার নিচ দিয়ে কমলা-নীল চওড়া রেখা ঘাড়ের পাশ হয়ে বুকে এসে মিশেছে। বুকে খাড়া কালচে টান। ঠোঁট লালচে ধূসর। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম।
ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, ফড়িং ইত্যাদি এদের প্রধান খাবার। প্রজনন সময় সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে।
চালাক-চতুর এবং তুখোড় শিকারি এই পাখির প্রধান শত্রু মানুষ। সামান্য মাংসের লোভে ফাঁদ পেতে শিকারিরা শিকার করে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিচ্ছে। এ ছাড়াও ভোঁদড় বা বেজি এদেরকে যথেষ্ট বিরক্ত করে। সুযোগ পেলে ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে।
দুর্লভ কালিবক
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ওশানিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা যায়। বিশ্বের প্রায় ৮৬ লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাব্যাপী এদের বিস্তৃতি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এদের অল্প-বিস্তর সাক্ষাৎ মেলে। সাক্ষাৎ মেলে হাওরাঞ্চলেও। অন্যান্য স্থানেও তেমন সন্তোষজনক নয় এদের অবস্থান। গত কয়েক দশক ধরে ক্রমান্বয়ে এদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতির বক পাখি সংরক্ষিত। তথ্যসূত্র- আলম শাইন, কথা সাহিত্যিক, কলামিস্ট, গবেষক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
আইনিউজ/এইচকে
আইনিউজের ভিডিওতে দেখুন হাইল হাওরের বাইক্কাবিলের সৌন্দর্য-
এবার সত্যি সত্যি বাজারে এলো উড়ন্ত বাইক, বিক্রি শুরু
চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে ২১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন
আইনিউজ/এইচকে
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে