Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৫ ১৪৩২

রিপন দে, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২ ডিসেম্বর ২০২১

দেশে মেছো বিড়াল হত্যার প্রথম সাজা

মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে প্রাণ হারানো মেছোবাঘের ফাইল ছবি।

মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে প্রাণ হারানো মেছোবাঘের ফাইল ছবি।

মৌলভীবাজারে একটি মেছো বিড়াল হত্যার ঘটনায় মামুন মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়েছেন আদালত। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী। এর মধ্য দিয়ে দেশে এই প্রথম মেছো বিড়াল হত্যায় সাজা বা শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

বিড়ালটি হত্যার এক বছর পর মামুনকে সাজা হিসেবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, মেছো বিড়াল হত্যার ঘটনায় এই প্রথম বন আদালতে কাউকে সাজা দেওয়া হলো। মৌলভীবাজার বন আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান গত সোমবার (২৯ নভেম্বর) মামুন মিয়াকে সাজা দেন। 

জানা যায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে বাড়ির পুকুরে মাছ খাওয়ার সময় সহযোগীদের নিয়ে মেছো বিড়ালটি হত্যার অভিযোগ ওঠে মামুনের বিরুদ্ধে। তিনি মৌলভীবাজারের রাজনগরের কাজীরহাট গ্রামের বাসিন্দা।

বন বিভাগের বন মামলা পরিচালক জুলহাস উদ্দিন সাজার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামুন মিয়া আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, মেছো বিড়াল হত্যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কাজীরহাটে মেছো বিড়ালটি হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সে সূত্র ধরে মামুনকে শনাক্ত করা হয়। পরে এ ঘটনায় মামলা করেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ফরেস্টার মো. আনিসুজ্জামান।

ঘটনার তদন্ত ও স্থানীয় লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় রাজনগর থানা। 

বন বিভাগের বন মামলা পরিচালক জুলহাস উদ্দিন জানান, এর আগে সাপ, বানর হত্যার ঘটনায় আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। মেছো বিড়াল হত্যা নিয়ে কোনো মামলায় এই প্রথম জরিমানা করা হয়েছে। 

রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, দেশে এই প্রথম মেছো বিড়াল হত্যায় শাস্তি হল। ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে এইসব অপরাধের সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব। এই বিচার দেশের বন্যপ্রাণী রক্ষায় অবদান রাখবে।

বিড়াল প্রজাতির নিরীহ প্রাণী মেছোবাঘ

এর নামে বাঘ থাকায় এটিকে অনেকেই আক্রমণাত্মক ভাবতে পারেন। কিন্তু মেছোবাঘ নিতান্তই নিরীহ। আমাদের গৃহপালিত বিড়ালের মতোই। এজন্যই এর অন্যান্য নাম মাছবিড়াল, বড় বিড়াল ইত্যাদি। ইংরেজি নাম Fishing Cat, বৈজ্ঞানিক নাম- Prionailurus viverrinus

মেছোবাঘের বিষয়ে বিভিন্ন জার্নাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এটি মাঝারি আকারের বিড়ালগোত্রীয় একধরনের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী। ব্রাজিল, কোস্টারিকা, বাংলাদেশ, ভারত, বলিভিয়া, ক্যাম্বোডিয়া, লাউস, শ্রীলঙ্কায় এরা স্থানীয়ভাবে বাঘরোল নামে পরিচিত। এদের আবাসস্থল থাইল্যান্ড ও এল সালভাদোর। বিগত কয়েক দশকে এই বাঘরোলের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জনবসতি স্থাপন, কৃষিজমিতে রূপান্তর ও অন্যান্য কারণে বাঘরোলের আবাসস্থল জলাভূমিগুলো দিন দিন সংকুচিত ও হ্রাস পাওয়াই এর মূল কারণ। তাই আইইউসিএন ২০০৮ সালে মেছোবাঘকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে।

বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

মেছোবাঘ সাধারণত নদীর ধারে, পাহাড়ি ছড়া এবং জলাভূমিতে বাস করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী হ‌ওয়ায় এধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। এদের গায়ে ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকার জন্য চিতাবাঘ বলেও ভুল করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এটিকে সেই রাজ্যের 'জাতীয় প্রাণী' তকমা দেওয়া হয়েছে এবং এই রাজ্য বর্তমানে বাঘরোল সংরক্ষণে ও তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আশার আলো দেখিয়েছে।

আইনিউজ/আরডি/এসডি

আইনিউজে প্রাণ-প্রকৃতির ভিডিও

হাতির আক্রমণে হাতি হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু 

মানুষ হত্যা করেছে মা হাতিকে, দুধের জন্য কাঁদছে বাচ্চা হাতিটি

লাউয়াছড়ায় ক্ষিপ্রগতির সাপখেকো শঙ্খিনী সাপ

ওঝা পিতার ঝাড়ফুঁক বাঁচাতে পারলো না ছেলেকে

জলময়ূরের সাথে একদিন | বাইক্কা বিল | ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি

শ্রীমঙ্গলে ১২ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার

বিষধর গোখরা সাপের ১৪টি ছানা লাউয়াছড়ায়

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়