নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার
আপডেট: ২৩:২৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভাইরাল অজগর সাপটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে লাউয়াছড়া বনে
ভাইরাল সেই অজগর সাপ
মৌলভীবাজারে ভাইরাল অজগর সাপটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে লাউয়াছড়া বনে। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিনটি অজগর সাপ অবমুক্ত করে বনবিভাগ।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি অজগরটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী জাগছড়া চা বাগানে যায়। সেখান থেকে সাপটি আটক করে স্থানীয়রা। বাগানের শ্রমিকরা সাপের ভিডিও ধারণ করেন। সেই ভিডিও পরিবেশ কর্মী ও সাংবাদিক রিপন দে তাঁর টাইমলাইনে শেয়ার করলে মুহুর্তে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। পাঁচ লক্ষাধিক সেই ভিডিও দেখেন। দশ হাজার মানুষ সেই ভিডিও শেয়ার করেন। রিঅ্যাক্ট করেছেন সাত হাজারের বেশি মা্নুষ। পরে সাপটি উদ্ধার করে বনবিভাগ। রাখা হয় লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরীর উপস্থিতে সাপটিকে অবমুক্ত করা হয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। এসময় বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদি সরোয়ার, সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র, বিটিভির জেলা প্রতিনিধি ও আই নিউজ-এর সম্পাদক হাসানাত কামাল, পরিবেশ কর্মী ও সাংবাদিক রিপন দে সহ বনবিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
- আরও পড়ুন - বিড়াল হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হলো গাছে
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী আই নিউজকে বলেন, ভাইরাল হওয়া সাপটি সম্ভবত নারী সাপ। ১৪ ফিট দীর্ঘ সাপটির ওজন আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ কেজি। ধারণা করা হচ্ছে সে তার পরিবারসহ লাউয়াছড়ায় বসবাস করে। এটা বার্মিজ পাইথন জাতের অজগর।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শীতের মৌসুমে উষ্ণতার খুঁজে সাপ গর্ত বা লোকালয়ে চলে যায়। এটার ক্ষেত্রে হয়তো তেমনটা ঘটেছে।
তিনি জানান, লাউয়াছড়া অজগর সাপের ব্রিডিং (প্রজনন) জোন। এ বনে প্রচুর পরিমাণ অজগর সাপ বসবাস করে। বনের সাপসহ পশুপাখি-জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছে বন বিভাগ।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিশাল আকৃতির সেই সাপসহ তিনটি অজগরের সুস্থতা নিশ্চিত করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অজগর নির্বিষ ও নিরীহ একটি সাপ। কেউ যদি সাপ দেখেন তাহলে না মেরে বা আহত না করে বনবিভাগকে খবর দিলে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করা হবে। বনের সাপ বনে ছেড়ে দিতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
অজগর
বাংলাপিডিয়া অজগর সম্পর্কে বলছে, এটি সার্পেন্টস বর্গের অন্তর্গত নির্বিষ সাপ।
এ নিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়- অন্য যেকোন সাপের তুলনায় অজগর দীর্ঘ হয়। এর আঁশ মসৃণ। অজগরের দাঁত অত্যন্ত শক্তিশালী, কিন্তু কোনো বিষদাঁত নেই। গ্রীবা স্পষ্ট, মস্তক প্রশস্ত এবং তুন্ড দীর্ঘ। অজগরের চোয়ালের পেশীগুলো খুবই নমনীয়।
শিকারকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয় অজগর সাপ। অজগর বড় প্রাণী খায়, মানে ইঁদুর থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত গিলে খেতে পারে। মৃত প্রাণী খায় না অজগর। লোকালয়ে ধরা পড়া অধিকাংশ অজগর পাওয়া গেছে হাঁস-মুরগির খামারে, না হয় মাছের ঘের বা পুকুরে। তবে অজগরের পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে ইঁদুর, খরগোশ, ছাগল, ভেড়া, শিয়াল এবং হরিণের মত প্রাণী।
দেশে কি অজগরের সংখ্যা বেড়েছে?
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাণীবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অজগরের নয়টি প্রজাতি আছে। তবে, বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরণের অজগর সাপ বেশি দেখা যায়।
একটি বার্মিজ পাইথন, এটি স্থানীয়ভাবে ময়াল নামেও পরিচিত।
আরেকটি রেটিকুলেটেড পাইথন, এই দ্বিতীয় ধরণটিকে গোলবাহার বা জালি অজগরও বলা হয়।
লোকালয়ে অজগরের বেরিয়ে আসার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি শোনা গেছে। এ কারণে বাংলাদেশে অজগরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা এমন একটি ধারণা রয়েছে অনেকের মনে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপতত্ত্ব বিষয়ে পড়ান এবং গবেষণা করেন অধ্যাপক ফরিদ আহসান। তিনি বলছিলেন, অজগরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে দেশে, তবে এ সংক্রান্ত পরিষ্কার কোন হিসাব প্রাণীবিদদের কাছে নেই।
তবে, অজগরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক আহসান।
তিনি বলেছেন, "সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কাছে কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে এটা বলতে পারি গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অজগরের প্রাকৃতিক প্রজনন বেড়েছে।"
২০২১ সালের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অজগরের ছোট ছোট বাচ্চা পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা করা যায় এখানে প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটেছে।
তিনি বলেন, "দেশের অনেক জায়গাতেই এমনটা ঘটেছে। এর অর্থ হচ্ছে, তারা আশ্রয় পাচ্ছে বলেই প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটতে পারছে।"
তিনি বলেছেন্, "এর বাইরে আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। আগে সাপ দেখতে পেলেই মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলত, কিন্তু এখন তা করে না।
আক্রান্ত না হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ সেটা বন বিভাগের কাছে বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হস্তান্তর করে দেয়। অজগরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবার এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।"
তবে অজগরের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক প্রাণীবিদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনিরুল এইচ খান বলছেন, "সংখ্যা বাড়েনি অজগরের, কারণ তাদের আবাস বা হ্যাবিটাটের সংখ্যা বা পরিমান তো বাড়েনি। বরং তারা লোকালয়ে আসছে এবং ধরা পড়ছে বলে সেটা মানুষ জানছে। তাতে করে মনে হচ্ছে যে সংখ্যা হয়ত বেড়েছে।"
লোকালয়ে বেরিয়ে আসছে কেন?
অজগর সাধারণত উপদ্রবহীন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে, যে কারণে তারা লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলের গভীরে থাকে।
বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, অধিকাংশ অজগর কিছুটা বৃক্ষবাসী। তবে নদী, হাওর কিংবা ঝিলের কাছেও এদের দেখা যায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসান বলছেন, যে কোন বন্যপ্রাণীর আবাস ঝুঁকির মুখে থাকলে এবং খাবারের সংকট হলে তারা লোকালয়ে বেরিয়ে আসে।
অজগরের ক্ষেত্রেও আবাস সংকোচনের ফলে তাদের খাবার সংকট হচ্ছে। ফলে তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে খাবারের খোঁজে আসছে।
"এ পরিক্রমায় অনেক সময়ই তারা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে আর বের হতে পারে না।"
এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে পাহাড় বা ঘণ জঙ্গল আছে, সেসব জায়গায় এপ্রিল-জুন এ সময়ে পাহাড়ে অনেক সময় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
অধ্যাপক আহসান বলছেন, ওই সময় আগুনের কারণে বা প্রচন্ড গরমে সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় অজগর বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুল এইচ খান মনে করেন, বর্ষাকালে নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ায় বা স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ার কারণে তুলনামূলক উঁচু জায়গায় চলে আসে অজগর।
আবার বন্যায় ভেসেও অনেক সময় তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে আসে।
এছাড়া অজগরের প্রজননরে সময় শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে। ফলে এই সময়ে তাদের লোকালয়ে বা প্রকাশ্য স্থানে কম দেখা যায়।
- আরও পড়ুন- সুন্দরবনে বাঘ-মানুষের লড়াই
অজগর নিয়ে কয়েকটি মজার কিন্তু দরকারী তথ্য
- আক্রান্ত না হলে অজগর মানুষকে আঘাত করে না।
- নিজের শিকারকে অজগর শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মারে
- শিকারের আকার অনুযায়ী অজগরের হজমের সময় নির্ধারিত হয়, কোন কোন শিকার হজম করতে কয়েকমাস সময়ও লাগতে পারে
- অজগর সাপ একসাথে ৩০টির বেশি ডিম পাড়তে পারে
- ডোরা কাটা অজগর ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে
আইনিউজ/এমজিএম
কৃষক হালচাষ করে, উৎসবে মেতে পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়ায় ফিঙে পাখির দল | Drongo Birds | Farmer | Eye News
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে