আব্দুল করিম কিম
আপডেট: ১১:২৯, ৩ মার্চ ২০২২
সর্বভূক ও সর্বনাশী মানুষের দেশে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস
আব্দুল করিম কিম, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট।
বাংলাদেশে মহাবিপন্ন, বিপন্ন ও সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকা দির্ঘ হলেও সর্বভূক ও সর্বনাশী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই মানুষ কমাতে হবে অথবা এই মানুষকে বদলাতে হবে। প্রাণপ্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধ সম্পন্ন মানুষের বড্ড প্রয়োজন। সেই মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধি হলে বিপন্ন বন্যপ্রানী রক্ষা পাবে।
আজ ৩রা মার্চ। বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এই দিবসে বন্যপ্রাণী নিয়ে মানুষেরা আলোচনা করবে। সভা করবে, সেমিনার করবে। বন্যপ্রাণীকে রক্ষার জন্য কিছু মানুষ আকুল হয়ে সমগ্র মানব জাতির প্রতি আবেদন জানাবে। অসচেতনকে সচেতন করার চেষ্টা করবে। তাদের রক্ষায় প্রাণী বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ প্রদান করবে। আবার কিছু লোক এদের রক্ষা করার কথা বলে দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করবে। বন্যপ্রাণী বাঁচানোর দোহাই দিয়ে আফ্রিকা থেকে কম টাকায় কিভাবে জেব্রা-জিরাফ কিনে বাংলাদেশের জনগণকে বেশী টাকায় কেনা হয়েছে এমন নথি দেখানো যায়--সে উপায় সন্ধান করবে। আবার বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাচ্চা কিভাবে মধ্যপ্রাচ্যের শেখের হেরেমে পাচার করা যায় সে চেষ্টায় থাকবে কেউ কেউ। এই সব কিছুই বঙ্গে রঙের সাথে চলবে। সংবাদপত্রে সে সব সংবাদ নিয়ে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন হবে। সেই সব প্রতিবেদন পড়ে কিছু দেশপ্রেমিক ক্ষোভে ফেটে পড়বে কিন্তু বেশীরভাগ মানুষের কিছুই যাবে আসবে না।
এই যে, বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের মৌলবীবাজার জেলার বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক বানানো হবে; সেই পার্ক বানানোর পেছনের যুক্তি কী? যুক্তি দেখানো হচ্ছে বন্যপ্রাণীকে সুরক্ষা করা। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর আসনে যিনি বর্তমানে বিরাজমান আছেন; তিনি বলেই দিয়েছেন- সাফারি পার্ক বন সুরক্ষা করবে। কিভাবে বন সুরক্ষা করবে? সে প্রশ্ন কে করবে? করলেও জবাব কে দেবে? মন্ত্রী, না আমলা?
এবারের বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'Recovering key species for ecosystem restoration' এর বাংলা করা হয়েছে "বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা করি, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসি'। সাফারি পার্ক করে লাঠিটিলার বিপন্ন হাতি রক্ষা হবে? এক বছরে বাংলাদেশে ৩৪টি হাতি হত্যা হয়েছে। হাতি আকারে বিশাল। তাই লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ছোট ছোট প্রাণীগুলো এই দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে। সে তথ্য অনেক ক্ষেত্রে গোপন থাকছে।
আরো পড়ুন : বন্যপ্রাণীরা পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখছে
বাংলাদেশে মহাবিপন্ন, বিপন্ন ও সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকা দির্ঘ হলেও সর্বভূক ও সর্বনাশী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই মানুষ কমাতে হবে অথবা এই মানুষকে বদলাতে হবে। প্রাণপ্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধ সম্পন্ন মানুষের বড্ড প্রয়োজন। সেই মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধি হলে বিপন্ন বন্যপ্রানী রক্ষা পাবে। অন্যথায় দিবস পালনই হবে, দিবস পালনের সফলতা পাওয়া যাবে না।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালনের উদ্দেশ্য যদি হয় বিশ্বের বন্যপ্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা তবে টিকে থাকা প্রাকৃতিক বনকে সংরক্ষণ করতে হবে। সামাজিক বনায়নের নামে করা ‘তামাশা’ দিয়ে বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তিরোধ করা যাবে না। বিশ্বকে রক্ষার জন্য দেশে দেশে টিকে থাকা বনাঞ্চলকে ‘বিশ্ব সম্পদ’ ঘোষণা করতে হবে। এই সম্পদ কোন দেশ বা গোষ্ঠির লোভে বিনাশ হতে দেয়া যাবে না। বিপন্ন, মহাবিপন্নের তালিকায় থাকা কোন প্রাণীকে হত্যা করা, পাচার করা, বন্দি করার জন্য কঠিন সাজা ও অর্থদন্ডের বিধান রাখা প্রয়োজন। এছাড়া খাঁচায় বন্যপ্রানী রেখে প্রদর্শন করা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় সেবা আশ্রমের নাম দিয়ে চিড়িয়াখানার ব্যাবসা চলবে।
-
আরো পড়ুন : অভিযানে গেলেই বনের পাখি হয়ে যায় হাঁস কোয়েল
পৃথিবীর সমস্ত চিড়িয়াখানাকে হাজতখানা করে দেয়া উচিত। বিভিন্ন অপরাধে দন্ডিত অপরাধীদের খাঁচায় রেখে দর্শনার্থীদের দেখার ব্যাবস্থা করে দিলে অপরাধ করার প্রবনতা কমবে। পৃথিবীতে যখন চিড়িয়াখানা ছিলো না, সে সময়ের মানুষের বাচ্চারা কি পশুপাখি খাঁচায় দেখতে পারেনি বলে মূর্খ থেকেছে? বন্যপ্রাণী সম্পর্কে যাদের জানার আগ্রহ থাকবে তাঁদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মিত হবে। এবারের বিশ্ব বন্যপ্রাণি দিবসের প্রতিপাদ্য দিয়েই শেষ করি, 'Recovering key species for ecosystem restoration' অর্থ্যাত 'ecosystem restoration' এর জন্য বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হবে। এইদেশে প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার করা কঠিন। এই দেশে সর্বভূক কিছু মানুষ আছে। যারা নদীখেকো, পুকুরখেকো, পাহাড়খেকো, বনখেকো, বন্যপ্রাণীখেকো। এই সর্বভূক মানুষের পেটে চলে যাওয়া নদী উদ্ধার হয় না। পাহাড় ফেরত পাওয়া যায় না। বন উদ্ধার হয় না। এই মানুষেরা সর্বগ্রাসী ও সর্বনাশী। এদের সংখ্যা বাড়ছে আর সংকটাপন্ন প্রাণী বিপন্নের তালিকাতে যাচ্ছে। বিপন্নের তালিকায় থাকা প্রাণী মহাবিপন্ন হচ্ছে। মহাবিপন্ন প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই এদেশে বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার করার কথা বলা সহজ হলেও করা কঠিন।
আব্দুল করিম কিম, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট।
আইনিউজে প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ক ভিডিও
পোষ মানাতে হাতির বাচ্চাকে নির্মম প্রশিক্ষণ
ভাইরাল অজগর সাপটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে লাউয়াছড়া বনে
হাতির আক্রমণে হাতি হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু
কৃষক ও ফিঙে পাখির বন্ধুত্ব (ভিডিও)
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে