হেলাল আহমেদ
আপডেট: ১৩:১২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
জুড়ীতে লজ্জাবতী বানর উদ্ধার : এগুলোর নাম লজ্জাবতী কেন?
এরা খুবই শান্ত এবং সহজে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শে আসে না
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কচুরগুল গ্রাম থেকে একটি বিলুপ্তপ্রায় লজ্জাবতী বানর (স্লো লরি) উদ্ধার করে লাঠিটিলা বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কচুরগুল গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বানরটি উদ্ধার করেন।
আশরাফুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাতে বানরটি বনাঞ্চল থেকে পথ হারিয়ে লোকালয়ে চলে আসলে স্থানীয়রা বানরটিকে আটক করে। খবর পেয়ে বানরটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করে বানরটিকে তার কাছে হস্তান্তর করি।
তিনি আরও জানান, উদ্ধার হওয়া বানরটি এখনও প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি। তবে বানরটি স্বাভাবিক এবং সুস্থ আছে।
বন্যপ্রাণী গবেষকদের সূত্রে জানা গেছে, লজ্জাবতী বানর লাজুক বানর নামেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) লজ্জাবতী বানরকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। এটি দেশের ক্ষুদ্রতম বানর জাতীয় প্রাণী।
সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা মিলে এদের
বাংলাদেশে মূলত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনের বাসিন্দা এই বানরগুলো। এগুলো নিশাচর ও বনের গভীরে উঁচু গাছে থাকতে পছন্দ করে। দিনে গাছের খোঁড়লে বা ঘন পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে কাটায়। বিরল, নিশাচর ও লাজুক হওয়ায় দিনে সহজে চোখে পড়ে না।
লজ্জাবতী বানরের প্রকৃতি
এই জাতের বানর গাছে গাছেই থাকে সহজে মাটিতে নামে না। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাফেরা করে। এগুলো সাধারণত ফল, পাতা, উদ্ভিদের কষ বা নির্যাস ইত্যাদি খায়। মাঝেমধ্যে বড় কীটপতঙ্গ, পাখির ডিম-ছানা, সরীসৃপও খেয়ে থাকে।
পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম জানান, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশনায় লজ্জাবতী বানরটিকে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের লাঠিছড়া এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের সমন্বয়ে অবমুক্ত করা হয়।
লজ্জাবতী বানর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য-
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)-এর তালিকায় এদেরকে বিপন্নপ্রায় প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ১৯৭৪ ও ২০১২ এর তফসিল ১ অনুযায়ীও সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে লজ্জাবতী বানর।
বানরের বাঁদরামি কথাটি একেবারেই খাটে না লজ্জাবতী বানরের ক্ষেত্রে। ইংরেজিতে এদের নাম Bengal Slow Loris বা Northern Slow Loris. ধীরগতি ও অলস স্বভাবের কারণে এই নাম পেয়েছে এরা। সারা ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়েই এই বানরের দেখা পাওয়া যায়।
নিশাচর লজ্জাবতীরা দিনে যখনই কারুর দেখা পায়, দু-পায়ের মাঝখানে মাথা গুঁজে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলে; যেন ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। এমন মুখ লুকোনো স্বভাবের কারণে এদেরকে আদর করে মুখচোরা বানর নামেও ডাকা হয়।
শ্রেণিবিন্যাস
পর্ব: Chordata
শ্রেণি: Mammalia
বর্গ: Primates
উপবর্গ: Strepsirrhini
পরিবার: Lorisidae
গণ: Nycticebus
প্রজাতি: N. bengalensis
বৈজ্ঞানিক নাম: Nycticebus bengalensis
লজ্জাবতী বানর কতোদিন বাঁচে?
স্ত্রী বানরেরা সাধারণত বছরে একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। মিষ্টি দেখতে এই বানরগুলো ২০ বছরের কাছাকাছি বাঁচে। প্রাইমেটদের মধ্যে এরা ভেনোমাস অর্থাৎ বিষধর। এদের কামড় ভয়ানক হতে পারে, যদিও এরা খুবই শান্ত এবং সহজে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শে আসে না।
সিলেটের ঘন সবুজ বন, রেমা কালেঙ্গা, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ আরো কিছু জায়গায় এদের দেখা পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে খাবারের অভাবে তারা লোকালয়ে চলে আসে। এ অঞ্চলে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গা থেকে লজ্জাবতী উদ্ধার করার খবর শোনা যায়।
কেন এরা বিলুপ্তির মুখে?
বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তির প্রধানতম কারণটি হলো দিনকে দিন বনাঞ্চল কমে যাওয়া। আর বনাঞ্চল কমে যাওয়া মানে বন্য পশুর আবাসের ভূমি কমে যাওয়া। দেশে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের ব্যবসায়িক কার্য হাসিলের জন্য বনাঞ্চল কেটে সমভূমিতে রূপান্তর করা হচ্ছে।
নাগরিক লোভে কাটা পড়ছে গাছপালা, লতা, গুল্ম, উদ্ভিদরা। ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক শৃঙ্খল। এর প্রাকৃতিক শৃঙ্খল ভঙ্গের ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লজ্জাবতী বানরসহ নানা ধরনের জীবজন্তু।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- রেসকিউ সেন্টার থেকে ফের লাউয়াছড়ার বুকে গেলো লজ্জাবতি বানরগুলো
- লোকালয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আতঙ্কে গ্রামবাসী
- ঘুমন্ত মানুষের ঘামের গন্ধে আসে এই সাপ, দংশনে নিশ্চিত মৃত্যু
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের দেশ ।। Most beautiful woman in the world ।। Eye News
যে গ্রামে পুরুষ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারীরা | Women are pregnant without men | Kenyan Girls | Eye News
চুল বেঁধে ঘুমিয়ে নিজের যে ক্ষতি করছেন ।। Hair loss problems
পায়খানা ও প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখলে যে ক্ষতি হয়??
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে