মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ২০:০২, ১৮ আগস্ট ২০২৩
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ১০টি সাপ
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ১০টি সাপ
সাপ দেখলে ভয় পায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। যেখানে কোবরার কামড়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হইতে পারে। আবার অন্যদিকে অ্যানাকোন্ডা বা জায়েন্ট পোয়ার মতো সাপ আপনাকে গিলে ফেলতেও পারে। তবে সবকিছুর মধ্যেই ভালো এবং খারাপ দুটি দিকই থাকে। যেসব সাপ অনেক ভয়ঙ্কর হয় সেগুলো দেখতেও যে ভয়ঙ্কর হতে হবে এমনটা কিন্তু নয়।
এই সাপগুলোর মধ্যে কিছু সাপ এতটাই সুন্দর হয় যে এদেরকে দেখলেই আপনার এদেরকে খাবার খাওয়াতে বা গলায় জড়িয়ে সেলফি তুলতে ইচ্ছে করবে। সাপগুলো এতটাই সুন্দর যে সেগুলোর রং রুপ দেখলে আপনি তো তাদের রূপে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। তাহলে চলুন কিছু অসম্ভব সুন্দর কে দেখতে তাদের জগতে চাওয়া যাক।
১১/ কিং কোবরা সাপ ; যদি বিশ্বের সব থেকে বড় এবং বিষাক্ত সাপের সম্পর্কে কথা বলা হয় তাহলে তাদের মধ্যে সবার আগে কিং কোবরা নামিয়ে আসে। কিন্তু এই সাপটি যতটা বড় এবং বিষাক্ত ঠিক ততটাই সুন্দর।
এই সাপ হলুদ সবুজ, বাদামি এবং কালো রঙের হয়। আর এই রঙের জন্যই এই সাপগুলোকে দেখতে ভীষণ আকর্ষণীয় লাগে। এই সাপগুলো প্রায় বিশ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। আর এই সুন্দর সাপ দক্ষিণ ভারতে খুব সহজেই দেখা যায়। এইসাপ বিষাক্ত হলেও এর সৌন্দর্যের জন্য মানুষ এই সাপের দিকে আকর্ষিত হয়। খাবারের বিষয়ে এইসব ভীষণ পেটুক হয়। এই সাপ ইঁদুরের পাশাপাশি অন্যান্য সাপদেরকে খেতেও পছন্দ করে। যেহেতু এই সাপগুলো অনেক বড় এবং রং-বেরঙের হয় সেই জন্য এই সাপগুলোকে দেখার পরেও মানুষ নিজেদের চোখে বিশ্বাস করতে পারে না।
১০/ লাল কোরাল কুকরি বা (Red headed krait snake) ; এই সাপগুলোর মাথা লাল রঙের হয়। আর এদের লাল রঙের মাথার জন্যই এদের এমন নামকরণ করা হয়েছে। বিশেষত লাল রঙের জন্যই এই সাপগুলোর সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়।
এই সাপগুলোকে থাইল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায়। আর এরা লম্বায় প্রায় সাত ফিট পর্যন্ত হয়। নিজেদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য এরা অন্য সাধ্যের কেউ খেয়ে ফেলে। যদিও এই সাপ অনেক বিষাক্ত হয়। তারপরেও এদেরকে দেখে ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এই সাপের কামড়ে আজ পর্যন্ত কোন মানুষের মৃত্যু হয়নি। কিন্তু তারপরেও এই সাপগুলোকে দেখে আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। কারণ অসাবধান হলেই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
৯/ নীল সাপ বা (Blue racer snake) ; উজ্জ্বল এবং নীল রঙের দেখতে এই সাপটি ভীষণই সুন্দর হয়। এরা একেবারেই বিষাক্ত হয় না। প্যানিল সোলার আশেপাশে নরম এলাকায় এই প্রজাতির সাপকে দেখ দেখা যায়।
এরা নদী এবং জলাশয়ের মতো জায়গায় থাকতে বেশি পছন্দ করে। এই সাপ লম্বায় তিন থেকে পাঁচ ফিট পর্যন্ত হতে পারে। এই সাপ ইঁদুর এবং টিকটিকি ছাড়াও ছোট ছোট প্রাণীদেরকে খেতে ভালোবাসে। এই সাপের গড় আয়ু প্রায় দশ বছর। এই সাপ বারো থেকে ষোল কিলোমিটার গতিবেগে তার শিকারের পিছু ধাওয়া করতে পারে। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে, এই সাপ যখন দ্রুত পালাতে থাকে তখন এদেরকে দেখতেও দারুন লাগে। আর এই জন্যই বেশিরভাগ মানুষ এদের দিকে আকর্ষিত হয়।
৮/ সবুজ গাছ পাইথন (Green tree Python) ; গাছের উপরে থাকা সবুজ রঙের এই সাপটি দেখতে সত্যিই অনেক সুন্দর। সাধারণত অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া এই সাপটি প্রায় ছয় ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়।
এইসব তাদের বেশিরভাগ সময় গাছের মধ্যেই কাটায়। অন্যান্য সাপের থেকে আলাদা এই সাপ গাছের ডালে ডায়মন্ডের আকারে বসে থাকে। যেখানে এরা তাদের পুরো শরীরকে গাছের ডালে পেঁচিয়ে নেয়। এক ডাল থেকে অন্য ডালে গ্রিক বানানোর জন্য এরা নিজেদের লেজ ব্যবহার করে। এরা অন্যান্য জন্তুদেরকে লোভ দেখিয়ে বারবার নিজের লেজ নাড়ায়। আর যখনই কোনো ইঁদুর বা ছোট প্রাণী তাদের সামনে চলে আসে তখন এরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর গলা টিপে সেখানেই মেরে ফেলে। মিটিং এর পরে একটি স্ত্রী সাপ প্রায় পাঁচ থেকে পঁয়ত্রিশটি পর্যন্ত ডিম দেয়। যার ভিতর থেকে খুবই সুন্দর সুন্দর হলুদ উজ্জ্বল রঙের সাপ বের হয়।
৭/ কিলব্যাক’ সাপ (green keelback); নিজেদের সবুজ রং এবং ধারালো লেজের কারণে এই সাপের রং এমন দেওয়া হয়েছে। এদেরকে মূলত দক্ষিণ ভারতের জঙ্গলে দেখা যায়। আর এরা একেবারেই বিষাক্ত হয় না।
কিন্তু তারপরেও বেশিরভাগ সময় এদেরকে মেরে ফেলা হয়। এইটা এই জন্য হয় কারণ এদের সবুজ রং হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ এদেরকে গ্রীন ফিট ভাইপার স্নেক ভেবে ভুল করে। যারা প্রচণ্ড বিষাক্ত হয়। আর এই জন্যই এই সাপ প্রায় সময় মারা পড়ে। আর এই সাপগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদেরকে মূলত বর্ষার সময়ই দেখা যায়। এই সাপ ব্যাঙ, ইঁদু এবং লিজার্দেরকে খেয়ে জীবন ধারণ করে।
৬/ সাদা সাপ। (White Snake) ; এই সাপগুলো মিল্ক স্নেক নামেও পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে পাওয়া এই সাপ ডিম থেকে বেরোনোর পরে বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। কিন্তু যখনই এরা বড় হয়ে যায় তখন এদের রং পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়।
সাদা রঙের এই সাপগুলো বিশ্বের সব থেকে সুন্দর সাপের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এদের সৌন্দর্যের কারণেই প্রায় সময়ই এরা মানুষের শিকার হয়ে যায়। হয়তো এই জন্যই গোটা বিশ্বে এই সাপের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে এই সাপ অনেক বিষাক্তও হয়। কিন্তু এরা ততটাও আক্রমণাত্মক হয় না। কিন্তু এদেরকে কেউ বিরক্ত করলে বা আঘাত করলে তখনই এরা কামড় দেয়। এই সাপগুলো এক দশমিক তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। যদি আমরা এই সুন্দর সাপ গুলোকে স্বীকার করা বন্ধ না করি তাহলে এই সাপগুলো খুব তাড়াতাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
৫/ রংধনু সাপ (rainbow snake) ; আপনারা কি কখনো এমন কোনো সাপকে দেখেছেন যারা একেবারেই রংধনুর মতো দেখতে। যার মধ্যে রংধনুর সাতটি রঙেরই উপস্থিত আছে। আসলে এই সাপটির নাম রেইনবো স্নেক।
এই সাপের পিঠে নীল এবং কালো রং থাকে। এই সাপটি প্রচন্ড উজ্জ্বল হয়। আর এরা লম্বায় একশ ছেষট্টি সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হইতে পারে। এই সাপটিকে সাধারণত পানির আশেপাশেই দেখা যায়। আর এই জন্য এরা ব্যাঙ এবং মাছ খেতে ভালোবাসেন। যদিও এই সাপটা ভীষণ লাজুক প্রকৃতির হয়। তাই এদেরকে দেখতে পাওয়া অনেক মুশকিল। বিগত কয়েক বছর ধরে এই সাপের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এদেরকে তেমন একটা দেখা যায় না। এই সাপগুলো প্রায় উনিশ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
৪/ (emerald tree boa) ; ব্রাজিলের rain forest এ পাওয়া এই সাপটি ভীষণই বিরল প্রকৃতির। যাদের রং সবুজ হয় আর এদের সবুজ রঙের ত্বকে সাদা স্পট ও থাকে। হয়তো এই সুন্দর রঙের কারণেই এই সাপ সারা বিশ্বে পাওয়া সমস্ত সাপের মধ্যে অন্যতম সুন্দর সাপ। এই সবুজ সাপকে সবুজ গাছের উপর দেখা যায়। আর এরা দিনের বেশিরভাগ সময়ই গাছেই কাটিয়ে দেয়। কিন্তু রাত হতেই এরা শিকার করার জন্য বেরিয়ে পড়ে। তারপর এরা ইঁদুর এবং ছোট ছোট প্রাণীদেরকে স্বীকার করে। শিকার করার জন্য এদের দাঁত এদেরকে সাহায্য করে। কিন্তু এদের শরীরে কোনো প্রকার বিষ থাকে না। এই সাপগুলো দুই দশমিক দুই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। আর এদের ওজন দেরকেজি পর্যন্ত হতে পারে।
৩/ টাইগার কিল ব্যাক (Tiger keelback snake) ; কালো এবং হলুদ রঙের এই সাপটিকে অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যায়। আর যারাই এই সাপকে দেখে তারাই এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায়। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে,
এই সাপটি ভীষণই বিষাক্ত হয়। আর এদের শরীরে নিউরো টক্সিক ভ্যানম পাওয়া যায়। যদি ভুল বসত এই সাপ কাউকে কামড় দেয় তাহলে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই সেই ব্যক্তি মারা যাবে। এই ধরনের সাপ কামড়ানোর পরে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমাদের দেশে এইসব দেখা যায় না। তবে এটাও একটা কারণ যে এই সাবমি কারণে কাউকে কামড় দেয় না। কেউ এই সাপকে আঘাত করার চেষ্টা করলেই নিজের সুরক্ষার জন্য এইসব পাল্টা হামলা করে। এরা লম্বায় প্রায় ৬০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। আর এই সাপ দেখতে ভীষণই ব্যতিক্রমী হয়।
২/ ব্লাক মাম্বা (Black mamba) ; আফ্রিকায় পাওয়া এই সাপের মুখ ভিতর থেকেই কালো হয়। এই জন্য এদের নাম রাখা হয়েছে ব্লাক মাম্বা। বাদামি রঙের এই সাপ ভীষণই সুন্দর হয়। আর প্রায় বিশ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতিতে দৌড়ে শিকারের পিছনে ধাওয়া করে। এই সাপের নাম black মাম্বা হলেও এই সাপ কিন্তু একেবারে কালো নয়।
এই সাপ অনেক বিষাক্ত এবং রাগী প্রকৃতির হলেও এরা সহজেই পরিস্থিতির সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়। তাই সহজেই কেউ এদেরকে দেখতে পায় না। তাই আপনারাও যদি কখনো এই সাপের সামনে চলে আসেন। তাহলে এদের সৌন্দর্য দূর থেকে দেখেই খুশি থাকবেন। এদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা কখনো ভুলেও করবেন না। তা নাহলে এই সাপ আপনাকে আঘাতও করতে পারে। আর এই সাপ এতটাই রাগী হয় যে এরা একসঙ্গে না থেমে কয়েকবার পর্যন্ত ছোবল মারতে পারে। আর এদের এক কামড়ে যে পরিমান বিষ থাকে সেটা প্রায় ২০০ মানুষকে মারার জন্য যথেষ্ট। এরা লম্বায় প্রায় ১৪ ফিট পর্যন্ত হয়। আর এরা প্রায় এগারো বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
১/ ড্রাগন সাপ (Xenodermus) ; সাউথ ইস্ট এশিয়াতে পাওয়া এই সাপের মাথা একেবারে ড্রাগনের মতো হয়। আর তাই এই সাপের নাম রাখা হয়েছে ড্রাগন স্ন্যাক। এই সাপ অনেক সুন্দর হয়। কিন্তু এরা যেমন সুন্দর হয় তেমন ব্যতিক্রমীও হয়।
যেখানে অন্যান্য সাপের শরীর অনেক উজ্জ্বল এবং সমান হয়। সেখানে এই সাপের পিঠে কুমিরের মতো কাঁটা থাকে। এই সাপ লম্বায় প্রায় দুই থেকে আড়াই ফিট পর্যন্ত হয়। আর এই সাপ ধূসর রঙের হয়ে থাকে। আর এই সাপ একেবারেই বিষাক্ত হয় না। এরা মূলত ছোটোখাটো প্রাণী ব্যাঙ,মাছ এসব খেয়েই বেঁচে থাকে। এদেরকে বেশিরভাগ সময়ই পানির আশেপাশেই দেখা যায়।
আশা করছি আপনাদেরকে আমি দেখাতে পেরেছি পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর কিছু সাপকে। এর মধ্যে কোন সাপটিকে আপনার সব থেকে বেশি সুন্দর বলে মনে হয়েছে এবং এরপরে আপনি কোন প্রাণী সম্পর্কে জানতে চান সেটা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
আই নিউজ/আর
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে