মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ২০:১৫, ২১ আগস্ট ২০২৩
বাড়িতে খরগোশ পালন ও পরিচর্যা করবেন যেভাবে
খরগোশ । ছবি লিখক
আমাদের মধ্যে অনেকেই হুট করে খরগোসের বাচ্চা কিনে নিয়ে আসি। আনার সময় আমরা জানি না এদের কিভাবে পালতে হয়। বাচ্চাগুলোকে কি খাওয়াতে হয়, কোথায় রাখতে হয়, আর কিভাবে পরিচর্চা করতে হয়। ফলাফল স্বরূপ কিনে আনার কিছুদিনের মধ্যেই বাচ্চাগুলো মারা যায়।
তাই যারা খরগোশ পালতে চান বা খরগোশের বাচ্চা কিনে ফেলেছেন তাদের জন্য আই নিউজের আজকের এই প্রতিবেনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকে আমরা খরগোশ পালন পদ্ধতি এবং এর সবগুলো সমস্যার সমাধান জানবো।
খরগোশের বাসস্থান ; খরগোশ কিনে আনার আগে আপনাকে এদের বাসস্থান ঠিক করতে হবে। ছোট বাচ্চা কিনে আনলে প্রথম দুই তিন মাস আপনি একসাথে দুইটা খরগোশকে রাখতে পারবেন। কিন্তু বয়স চার মাস হওয়ার আগেই আলাদা আলাদা দুইটা খাঁচায় দুইটা খরগোশকে রেখে পালতে হবে। এক্ষেত্রে দেড় ফিট বাই দুই ফিট সাইজের খাঁচা একটা খরগোশের জন্য প্রযোজ্য। তার মানে আপনি দেড় ফিট বা দুই ফিট সাইজের খাঁচাতে একটা করে খরগোশ রাখতে পারবেন। সহজ কথা হলো আপনি যদি খরগোশ পালতে চান তবে হয় আপনাকে দুই ফুট বাই দের ফুট সাইজের দুইটা খাঁচা কিনতে হবে। নয়তো permanently এদের জন্য কোনো বাসস্থান তৈরি করে তারপর পালতে হবে খরগোশ। তবে খরগোশ কিনে এনে সারাদিন খাঁচায় আটকে রাখলে তারা সুস্থ থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পাবেন খরগোশ গুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই-তিন ঘণ্টা এদেরকে দৌড়াদৌড়ি করার ও খেলাধুলা করার সময় দিতে হবে। তবে যদি আপনি ওদের বাসস্থানটা বড় করে তৈরি করেন সেক্ষেত্রে আর আলাদাভাবে ছাড়ার প্রয়োজন হবে না। বাসস্থানটা যদি পাঁচ ফিট বা তিন ফিট সাইজের মতো জায়গা হয় সেক্ষেত্রে আর ছাড়ার প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে ওরা ওই জায়গাটাতেই লড়াচড়া করতে পারবে। অতিরিক্ত পরিমাণে হাত দেওয়া যাবে না এবং সারাদিন কোলে নিয়ে বসে থাকা যাবে না। খরগোশকে তার ন্যাচারাল স্বভাব মতো চলতে দিন। তবে আপনিও ভালো থাকবেন আর খরগোশ গুলোও ভালো থাকবে। খরগোশের প্রাকৃতিক স্বভাব দেখে আপনিও মজা পাবেন। আর বেশি আল্লাদ করতে গেলে ছোট খরগোশ গুলোকে বেশি হাতাহাতি করতে গেলে বাচ্চাগুলো মারা যাবে।
কোথায় রাখবেন? খরগোশকে আপনি হাঁস, মুরগি, কবুতর এগুলোর মতো দুয়ারে ছেড়ে পালতে পারবেন না। মানে গ্রামের মানুষ যেভাবে দুয়ারে ছেড়ে হাঁস, মুরগী কবুতর পালে এভাবে আপনি দুয়ারে ছেড়ে খরগোশ পালতে পারবেন না। কারণ বিড়াল অথবা কুকুর আপনার খরগোশকে দেখা মাত্রই মেরে ফেলেবে। যদিও খরগোশ বড় হয়ে গেলে বিড়াল এদেরকে তেমন আক্রমণ করতে পারে না। কিন্তু আশপাশে যদি কুকুর থাকে তবে কুকুরগুলো অবশ্যই আপনার খরগোশ গুলোকে দেখা মাত্রই মেরে ফেলবে। আপনি যখন খরগোশের জন্য বাসস্থান তৈরি করবেন সেটা খুব শক্তপোক্ত ভাবে তৈরি করবেন। যাতে কুকুর বা বিড়াল আক্রমণ করে সেটাকে ভাঙতে না পারে। কারণ এরা চেষ্টা করবে আপনার খরগোশ গুলোর উপর আক্রমণ করার। খরগোশকে আপনি যদি বদ্ধ পরিবেশে রাখেন তাহলে একটা নেট দিয়ে ঘরের সামনের অংশটা দিতে পারেন। যাতে করে আপনি সামনে থেকে দেখতে পারেন এবং পর্যাপ্ত মাত্রায় বাতাস চলাচল করতে পারে। এটা আপনাকে একশ পার্সেন্ট নিশ্চিতভাবে নিশ্চিত করতেই হবে। এর দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। আপনি যদি খরগোশকে বদ্ধ পরিবেশে রাখেন বা ফলের ক্যারেট অথবা কাঠের বাক্স অথবা কোনো ঝুড়ি জাতীয় জিনিসের মধ্যে রাখেন, যেখানে প্রপারলি বাতাস চলাচল করে না বা একটু বদ্ধ পরিবেশ, এরকম হলে কিন্তু খরগোশের শরিরে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হবে।খরগোশের শরীরে একটা সময় আপনি দেখবেন যে মাইটস হচ্ছে। পায়ের লোম পরে যাচ্ছে, শরীরে ঘা হচ্ছে। এগুলোর কারণে আপনার খরগোশ গুলো একটা সময় মরে যাবে। এসব কারণে খরগোশ পালন করতে হলে খাঁচাটায় রেখে পালতে হবে। আর যদি খাঁচায় না পেলে আপনি আলাদা বাসস্থান তৈরি করতে চান। তবে বাসস্থানটা খোলামেলা পরিবেশ দিয়ে তৈরি করতে হবে। সামনে লোহার নেট দিয়ে তৈরি করতে হবে। যাতে করে বাইরের বাতাসটা ওদের ঘরের ভেতরে চলাচল করতে পারে। তা নাহলে প্রচণ্ড গন্ধ হবে এবং একটা সময় আপনার খরগোশগুলো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।
আবার অনেকেই আছে মনে করে খরগোশ জঙ্গলে যখন থাকে তারা তো মাটিতে গর্ত করে থাকে। তো আমিও খরগোশকে এমন একটা ঘর তৈরি করে দেই যেখানে মাটিতে গর্ত করে খরগোশ গুলো থাকুক।
এটা আপনি করতে পারবেন না পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে। কারণ এটার পেছনে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। যদি আপনি এদেরকে মাটির মধ্যে রাখতে চান। সেক্ষেত্রে গর্তের ভেতরে বৃষ্টির পানি ঢুকে খরগোশ বা তার বাচ্চা গুলো মারা যেতে পারে। অনেক সময় বন্যা হয় আমাদের দেশে। বন্যার পানি সাভাবিক সেই গর্তের মধ্যে ঢুকবে। সেক্ষেত্রে গর্তের ভেতরে যদি বাচ্চা সে দিয়ে দেয়, ওই বাচ্চাগুলোকে আপনি বাঁচাতে পারবেন না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সাপ অথবা বেজি জাতীয় প্রাণীগুলো যদি কোনোভাবে খরগোশের গর্তে ঢুকে যায় সেক্ষেত্রে ওরা কিন্তু খরগোশকে মেরে ফেলবে। আর আপনি জানবেনও না যে আপনার খরগোশটার কি হয়েছে বা তাকে কিসে আক্রমণ করলো বা কিভাবে মারা গেলো। এগুলো সম্পর্কে আপনি কিছুই জানতে পারবেন না। আপনি আপনার খরগোশটিকে খুঁজেই পাবেন না। তাই গর্ত করে খরগোশ গর্তের ভেতরে থাকবে এই নিয়মে পোষা খরগোশ পালা যাবে না। এই জন্য গর্তের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিন। আপনি যদি খরগোশের বাসস্থান তৈরি করেন সে ক্ষেত্রে নিচে ঢালাই করে দেবেন অথবা এমনভাবে ইট বিছিয়ে দেবেন যেন ওখানে তারা গর্ত তৈরি করতে না পারে।
খরগোসের বাচ্চা পাল পদ্ধতি ; খরগিসের বাচ্চা পালনের তৃতীয় পদক্ষেপটি হল খাবার। মানে আপনি খরগোশের বাচ্চাকে কি খাওয়াবেন? সঠিক খাদ্য তালিকা হলো সত্তর পার্সেন্ট ঘাস, বিশ পারসেন্ট শাকসব্জি এবং দশ পার্সেন্ট গমের ভুসি বা পিলেট। মানে একশো গ্রাম খাবার যদি খাওয়ান বা দিনে যদি এক কেজি খাবার খাওয়ান সেক্ষেত্রে এক কেজি খাবারের সাতশো গ্রাম হবে শুধু ঘাস, দুইশো গ্রাম হবে বিভিন্ন শাক সব্জি, গাজর, একশ গ্রাম গমের ভুশি অথবা পিলেট। এক কেজি খাবার তো আর একটা খরগোশ এক দিনে খাবে না। আপনার কাছে যদি সাত আটটা খরগোশ থাকে তারা যদি এক কেজি খাবার খায় তবে এরকম ফর্মুলেশনে খাবারটা তৈরি করতে হবে। একটা খরগোশের জন্য আপনি আপনার মতো করে ভাগ করে ওই খাবারটা দিবেন। তবে সমস্যা হচ্ছে আমাদের শহরে বাসা বাড়ি যাদের তারা কিন্তু এই ঘাস সংগ্রহ করতে পারে না বা ঘাসের খড় বা হেয় যেটাকে বলে যেটা সারা দুনিয়াব্যাপী খরগোশকে খাওয়ানো হয় ওদের খাবার হিসাবে সেটা আমাদের শহরাঞ্চলে খুব বেশি পাওয়া যায় না। এটা খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে বর্তমানে।
ঘাসের বিকল্প খাবার ; এক্ষেত্রে আপনাদের যাদের ঘাস সংগ্রহ করা সম্ভব নয় তারা কি করবেন? মানে মন্দের ভালো হিসেবে আপনি কি করতে পারেন? এবার আমরা এই বিষয়ে জেনে রাখি। আপনি যদি একেবারেই ঘাস খাওয়াতে না পারেন তবে কলমি শাক,শশা,গাজর,গমের ভুসি এই চারটা খাবার দিয়ে ওদের খাবারের মেনুটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনি কলমির শাকটা বেশি পরিমানে দিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত কলমির শাক খাওয়ানো যাবে না। ঘাস খাওয়ানোর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, যে খরগোশগুলোকে ৭০-৮০% ঘাস খাবিয়ে পালন করা হয় তাদের গড় আয়ু মোটামুটি ১০ বছর পর্যন্ত। আর যেগুলোকে শাকসবজি খাওয়ানো হয় এই খরগোশগুলো দুই বা তিন বছর বেশি বাঁচে না। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি ঘাস খাওয়াবেন নাকি শাকসবজি খাইয়ে পালবেন। আমি দুইটা বিষয়ে আপনাদের কাছে ক্লিয়ার করে সামনে রাখলাম।
খরগোশকে কি খাওয়াবেন ; এবার আমরা কিছু খাবার সম্পর্কে জানি। যেগুলো খরগোশকে খাওয়ানো যায় সেগুলো হলো কলমির শাক,শসা,গাজর,ডাটা শাক, সরিষা শাক, হেলেঞ্চা শাক,গমের ভুষি এগুলো মিক্স করে খরগোশকে প্রতিদিন খাবারটা খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন যদি আপনি ঘাস সংগ্রহ করতে না পারেন। আরো কিছু খাবার অল্প স্বল্প পরিমাণে খরগোশকে খাওয়ানো যায়। মানে এগুলো খরগোশের মেইন খাবার নয় তবে একটু একটু করে খাওয়ানো যায়। যেমন মুলা শাক, আমপাতা, জামরুলের পাতা, কলার খোসা, তরমুজের খোসা এগুলো অল্পস্বল্প খাওয়ানো যায়। আপনি একদিনে যদি ১০০গ্রাম খাবার খাওয়ান সে ক্ষেত্রে দশ-বিশ-ত্রিশ গ্রাম পর্যন্ত কিন্তু মিক্স করে খাওয়াতে পারবেন। কিন্তু বাকিটুকু কলমি শাক, ঘাস, গাজর, শসা এগুলোর মধ্য থেকেই আপনাকে ব্যবস্থা করতে হবে।
-
বনসাই গাছপালা- বৈশিষ্ট্য,পরিচর্যা জেনে নিন
খরগোশের জন্য কোন সবজি ক্ষতিকর ; খরগোশের জন্য ক্ষতিকর সবজি গুলো হলো- আলু, ড্যাফোডিল, টিউলিপস, রবার্ব, লিলি, মাশরুম, অ্যাভোকাডো, ব্রড বিনস, মিষ্টি মটর, বাটারকাপ, কিডনি বিনস, জেসমিন, ফক্সগ্লোভ এবং আইসবার্গ লেটুস। এই খাবারগুলি খরগোশের জন্য বিষাক্ত তাই এই কাবার গুলি কখনো খাওয়ানো যাবে না।
সাপ্তাহিক পরিচর্যা কি? সাপ্তাহিকভাবে খরগোশের বাচ্চা কেনার পর থেকে সুস্থ সবল রাখতে কিছু আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন। যেমন সাপ্তাহে দুইদিন থেকে তিনদিন পর্যন্ত খরগোশ গুলোকে মুছে দেয়া। আপনারা জানেন যে খরগোসকে গোসল করানোর নিয়ম নেই। কারণ গোসল করলে ওদের কানে পানি চলে যায়। সে ক্ষেত্রে খরগোশ গুলো মারা যা। যদি মুছে না দেন তাহলে খরগোশ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে। আর ঠিকমতো মুছে না দিলে ওদের মাইটস হয়ে যায় এবং শরীরের পোকামাকড় ধরে। তাই অবশ্যই আপনাকে মুছে দিতেই হবে।
আই নিউজ/আর
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে