Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৫ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

আই নিউজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ১৭ জুলাই ২০২৪
আপডেট: ১৮:১৯, ৯ অক্টোবর ২০২৪

যে জাতের একটি মুরগির দাম ৬ লাখ টাকা!

আয়াম সিমানি জাতের একটি মোরগ।

আয়াম সিমানি জাতের একটি মোরগ।

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মুরগি ইন্দোনেশিয়ার আয়াম সিমানি জাতের মুরগি। বিরল প্রজাতির এই মুরগি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মুরগি হওয়ার পেছনেও নানা কারণ। আগাগোড়া কালো রঙের এই মুরগি দেখতে যেমন দৃষ্টি আকর্ষক মুরগির বাসস্থান ইন্দোনেশিয়া ও জাভা দ্বীপপুঞ্জে। আজকের প্রতিবেদনে জানবো কালো রঙের এই বিরল জাতের আয়াম সিমানি মুরগি সম্পর্কে নানা তথ্য। 

শুরুতেই এই মুরগির নামের কথা বলা যাক। এর নাম আয়াম সিমানি। যা ইন্দোনেশীয় ভাষার দুইটি শব্দ। আয়াম মানে মুরগি আর সিমানি মানে পুরোপুরি কালো রঙের। বুঝাই যাচ্ছে, পা থেকে মাথা অব্দি পুরোপুরি কালো রং হওয়ার ফলে এই মুরগিকে ডাকা হয় আয়াম সিমানি নামে। নামের সাথে মুরগির গায়ের রঙের মিল রয়েছে বলেই এমন নামকরণ। 

আয়াম সিমানি মুরগি কেন কালো রঙের হয়?
বিরল এই জাতের মুরগির পা, শরীরের পালক, ঠোঁট, জিহবা, ঝুঁটিসহ শরীরের ভেতর-বাহির সব অংশই কালো রঙের হয়ে থাকে। এর নেপথ্যে রয়েছে এই জাতের মুরগির জৈবিক প্রক্রিয়া। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা আয়াম সিমানি জাতের মুরগির সবকিছুর রঙ কালো হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেছেন, এই জাতের মুরগির মধ্যে এক ধরনের প্রভাবশালী জিন রয়েছে যা হাইপারপিগমেন্টেশন (ফাইব্রোমেলানোসিস) ঘটায়। এর ফলে মুরগির পালক , ঠোঁট এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গসহ মুরগিকে কালো রঙের করে তোলে। 

যদিও বিশ্বের সব আয়াম সিমানি জাতের মুরগিই যে আপাদমস্তক কালো হবে সে কথা বলা যায় না। মাঝেমাঝে আয়াম সিমানি জাতের মুরগির বাহির ও ভেতরের রঙ পুরোপুরি কালো হয় না। যে মুরগির মধ্যে হাইপারপিগমেন্টেশন এর সুযোগ রয়েছে কেবল সেই মুরগিগুলোই পুরোপুরি কালো আকার ধারণ করে। 

প্রথম কবে পাওয়া যায় এই জাতের মুরগির? 
জানা যায়,  ১২০০ শ্বতাব্দীর শুরু থেকে মুরগির আয়াম সিমানি জাতটি পরিচিতি পায়। অতীতকালে মূলত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজে এটি ব্যাবহৃত হত। 

ডাচ কর্নেল সেটেলার এর মাধ্যমে প্রথম আয়াম সিমানি মুরগি সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে আরেক ডাচ বিজ্ঞানী জ্যান স্টভেরিক এটি ইউরোপে নিয়ে ব্রিডিং করান। এর ফলে ইউরোপেও জাতটির ব্যাপ্তি ঘটে।

দাম কেন এত বেশি?
আগেই বলেছি আয়াম সিমানি জাতের মুরগি পৃথিবীর সবচাইতে বেশি দামের মুরগি। বাংলাদেশি টাকায় এই জাতের একেকটি মুরগি কিনতে খরচ করতে হবে অন্তত ৫-৬ লাখ টাকা। কিন্তু, এই মুরগির দাম এত বেশি হবার কারণ কি জানেন? 

জানলে অবাক হবেন যে, এই জাতের মুরগির দাম নির্ধারিত হয় এদের গায়ের রঙের উপর নির্ভর করে। যে সিমানি মুরগির ভেতর ও বাহির সবকিছু কালো রঙের হয় সে মুরগির দামও হয় অনেক বেশি। আবার যেই মুরগি তুলনামূলক কম কালো হয় সেই মুরগির দাম থাকে কম। আয়াম সেমানি জাতের মুরগির ইন্দোনেশিয়ায়  দাম ২০০০ থেকে ৬০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে, বাংলাদেশি টাকায় যা ৬ লক্ষ টাকার বেশি।

আয়াম সিমানি মুরগির আকার, বৈশিষ্ট্য 
আয়াম সিমানি জাতের সাধারনত মোরগ ২ থেকে ২.৫ কেজি ও মুরগি ১.৫ থেকে ২ কেজি হয়ে থাকে। এরা সাধারণ মানের ডিম দিয়ে থাকে। যা বছরে প্রায় ১৮০-২০০ টা পর্যন্ত। ডিমের ওজন ৪৫ গ্রাম। ডিমের রঙ হালকা বাদামি ও নীলাভ। কালো মাংসের সিল্কি মুরগি ডিমে তা দিতে খুব পছন্দ করলেও আয়াম সিমানি সম্পূর্ন এর বিপরীত। এরা সাধারণত ডিমে তা দিতে পছন্দ করেনা।

এটি চঞ্চল প্রকৃতির একটি মুরগি। তাই এদের মাঝে কিছুটা বন্য স্বভাব লক্ষনীয়। পোকা-মাকড় ও শাক-পাতা এদের প্রিয়। আবদ্ধ পরিবেশ এরা খুব একটা পছন্দ করেনা। মোরগ কিছুটা আক্রমনাত্বক হতে পারে। তবে এরা বেশ বন্ধুত্বপূর্ন। মানুষের ধারেকাছে এরা থাকতে পছন্দ করে।

সিমানি মুরগির মাংস কেন জনপ্রিয়?
একটা সময় আয়াম সিমানি জাতের মুরগি শুধু ইন্দোনেশিয় অঞ্চল ও জাভা দ্বীপপুঞ্জেই পাওয়া যেতো। ব্যবহার করা হতো গোপন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজকর্মে। যদিও সময়ের সাথে সাথে এখন বহির্বিশ্বেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে এই জাতের মুরগি। আফ্রিকাতেও এই জাতের মুরগি পাওয়া যায়। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে শৌখিন মানুষরাও এই জাতের মুরগি পালন করছেন। 

মূলত, ডিম এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মাংসের কারণে এই জাতের মুরগি পালন বাড়ছে। এর কালো রঙের মাংস যে কাউকেই আকর্ষিত করে। বিশ্বাস করা হয় যে এই জাতের মুরগির মাংসে ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্যান্য জাতের মুরগির তুলনায় এতে ২৫-২৭% প্রোটিন রয়েছে। যেখানে সাধারণ মুরগিরতে ১৮% প্রোটিন থাকে। 

তাছাড়া, বিশেষ কোনো খাবার দিতে হয় না বলে লালনপালনও অনেক সুবিধাজনক। এই জাতের মুরগি যে খাবার খায় তা সাধারণত এরা নিজেরাই সংগ্রহ করে নেয়। নতুন পরিবেশে ও আবহাওয়ায় এদের মানিতে নিতে তেমন একটা সময়ও লাগে না। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবিতে আয়ান সিমানি ছাড়াও আরও দুই জাতের পুরোপুরি কালো মুরগি আছে। অন্য দুটি হচ্ছে কাদাখনাথ ও সিল্কি জাতের মুরগি। এই জাতের মুরগিও সিমানির মতো কালো রঙের হয়ে থাকে। যদিও, প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে জৈবিক ও আচরণগত পার্থক্য।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়