পূর্ণা রায়
প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ৩০ এপ্রিল ২০২০
লকডাউনে শিশু ও আমরা
শিশুর প্রকাশের ভাষা কঠিন
রবিঠাকুর তাঁর নাতনীর আধো আধো বুলি বুঝতে না পেরেই রচনা করেছিলেন, “তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি…”। “করোনা মহামারী” চলছে। সময়টা খারাপ সত্যি। কিন্তু আমরা কি সময়টা আমাদের অনুকূলে আনতে পারি না! পারতাম বা পারছি, যদি বা যখন একটু সচেতন হই।
একান্ত ইন্দ্রিয়সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে মানবশিশু জন্ম নেয়। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় মানবশিশু মানুষ হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া জীবনব্যাপী আর বহুমুখীও বটে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয়,সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসকে।
তাঁর মতে, “সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয়। সমাজে যোগ্য উপযুক্ত নাগরিক হয়ে উঠতে পারে না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মানবশিশু ক্রমশ ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠে”।
শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে বংশগতি মূল উপাদান। এই বংশগতিই তার সংস্কৃতি আঁকে যার মূল তাঁর বাবা-মা।
শিশুর বিকাশে কাজ করা একজন সৌভাগ্যের অংশীদার শিক্ষক হিসেবে বলবো; একান্ত ইন্দ্রিয়সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে মানবশিশু জন্ম নেয়। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় মানবশিশু মানুষ হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া জীবনব্যাপী আর বহুমুখীও বটে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয়,সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসকে।
তাঁর মতে, “সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয়। সমাজে যোগ্য উপযুক্ত নাগরিক হয়ে উঠতে পারে না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মানবশিশু ক্রমশ ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠে”।
শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে বংশগতি মূল উপাদান। এই বংশগতিই তার সংস্কৃতি আঁকে যার মূল তাঁর বাবা-মা।
শিশুর চিন্তা, আবেগ, কর্মের অভ্যাস, সুকোমল বৃত্তি, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, আচার-আচরণ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা পরিবারের মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে। তাই বলা হয়ে থাকে, পরিবার হলো শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মা হলেন তার প্রধান শিক্ষক।
শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে পরিবারের তিনটি বিষয়ের উপর
-
বাবা-মায়ের সম্পর্ক।
-
বাবা-মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্ক।
-
পরিবারের অন্যন্য শিশুদের সাথে সম্পর্ক।
এই সম্পর্কগুলোর ইতিবাচকতাই মূলতঃ শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখে।
এবার আসি,বর্তমানে প্রকৃতির এই “শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া”য়, সংশোধনাগারে অবস্থানরত আমরা মানবকূল কী করে ভবিষ্যৎ “মানুষ” তৈরি করবো! আজ যে শিশু জন্ম নিলো এই মুহুর্তে; এই সদ্যজাত থেকে ১৮ বছর বয়সী সকল শিশুর জীবনে যেনো “করোনা মহামারী” আতংক না হয়।
আমরা সাধারণত যা করি
-
গর্ভে থাকা সন্তানের জন্মদান নিয়ে, গর্ভবতী মাকে এমনিতেই থাকতে হয় নানা দুশ্চিন্তায়। তার উপর এই করোনাকালে,লকডাউন অবস্থায় তার নিজের মানসিক চাপের সাথে আমরা অর্থাৎ পরিবারের অন্য সদস্যবৃন্দের মানসিক চাপে তার সাথে খারাপ আচরণও করছি।
-
সদ্যজাত শিশু থেকে কথা ফোটার আগে পর্যন্ত শিশুর ভাষা কঠিন।
-
তারপরের স্তরগুলো কথা বলে বুঝাতে চায়,আমরা তার মতো করে বুঝি না, বুঝতেও চাই না। অনেকক্ষেত্রে আমার মানসিক চাপ তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি। ভয় দেখাচ্ছি। আবার কখনো, আমার মানসিক চাপে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত শাসন করে বসি। তাদেরকে কথা পর্যন্ত বলার সুযোগ দেই না।
আমাদের কি করা উচিৎ
শিশুর বিকাশ যেহেতু মায়ের গর্ভাবস্থায় শুরু,কাজেই বর্তমান সময়ে গর্ভবতী মাকেও মানসিক চাপমুক্ত রাখা উচিৎ।
শিশুকে আনন্দঘন পরিবেশে রাখা উচিৎ। শিশু যেনো মানসিক আঘাত না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ।
শিশু যদি আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবে এমন কি শিক্ষকের সাথে কথা বলতে চায়,তাকে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া যেতে পারে।
শিশুদের সাথে সারাক্ষণ খিটমিট করা যাবে না। ধৈর্য ধরে কথা শুনতে হবে।বুঝিয়ে বলতে হবে। করোনা বিষয়ে ওদেরকে এমনভাবে বলা উচিৎ যেনো সে হতাশ না হয়ে সতর্ক হতে পারে। এমন কি কী করে এই ভাইরাস নির্মূল করা যায় বা যাবে কী উপায়ে যাবে সে বিষয়ে তাকে কৌতুহলী করা যেতে পারে। মৃত্যুর হিসাব সামনে না এনে তাদের সামনে এর থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনার খবরগুলো নিয়ে বেশি করে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে, বড়দের মানসিক চাপের ছায়াও যেনো শিশুদের ওপর না পড়ে,সে দিকটা খুব বেশি করে ভাবা উচিৎ।
কারণ, মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে শিশু মানসিক চাপে থাকলে মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকাও থেকে যায়।
করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই জরুরি।
পূর্ণা রায়, শিক্ষক
আরও পড়ুন
খোলা জানালা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ
সর্বশেষ
জনপ্রিয়