হোসেন সোহেল
প্রকাশিত: ২১:৫৮, ৪ জুন ২০২০
বন্যপ্রাণী গবেষণা, গবেষক ও সাংবাদিকতা
যেকোন গবেষণা যত বেশি হবে সকলের বেঁচে থাকার সম্প্রসারণ তত হবে। কিন্তু গবেষণা যখন হয় পরিবার বা প্রাতিষ্ঠানিক লেজুড়বৃত্তির অসৎ পরিমন্ডল ঘিরে তখন কিছু প্রশ্ন আসে বৈকি। অবশ্য এসবের উত্তর গবেষকদের চাপেচুপে আবার হারিয়ে যায়। প্রকৃতি পরিবেশ সাংবাদিকতার সাথে একই বিষয়ের নানান গবেষণার ফল বা বাস্তবতার প্রকাশ মাধ্যম যখন গণমাধ্যম তখন যোগসূত্র উদার হতে হয়। প্রচার হতে হয় আসমান জমিনের মঙ্গল নিরিখে। অথবা দিন বা সভ্যতার উজ্জ্বল আলো হয়ে প্রান্তিক মানুষের ঘর ঘিরে।
কিন্তু এদেশে উন্নয়নের চাকায় মধ্যবিত্তীয় সঙ্কট। অর্থদাতা বা গ্রহীতার সঙ্কট গবেষণায় যতোখানি প্রভাব বিস্তার ঘটায় তার চেয়ে বেশি ঘটে গবেষকদের পেটচুরির আদ্যোপান্তে। গেলো দেড় যুগে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় নানাভাবে পরিবর্তন এসেছে বন ও বন্যপ্রাণী গবেষণায়, ছবিতে, তুলিতে বা বুলিতে। আবার সেই বলা, করা, চলা মানতে পারে না একশ্রেণীর সাম্প্রদায়িক গবেষক।
গত এক দশক আগেও বন এবং বন্যপ্রাণী গবেষণায় একটি সম্প্রদায় নিজেদের একজোটে দেশের পাখ-পাখালিসহ টিকটিকির লেজ পর্যন্ত নিজের ঘরের সম্পদ মনে করতো। তারা বলতো বন্যপ্রাণী গবেষণা প্রচার প্রকাশনা এতো সহজ নয়। সত্যি আমরাও তাই ভাবতাম, এখনও ভাবি সহজ নয়। সহজটা শুধু তাদের হবার কথা যারা খুব সহজে নিজেদের সুবিধা ভোগ করেছেন। কীভাবে কতভাবে করেছেন তা যেন ভাবনার অতীত!
বছর দশেক আগে এই মাত্রার গবেষকদের এমন প্রতিযোড়িতার ভিড়ে গুটি দু’য়েক সাংবাদিকের ঠাঁই পাওয়া ছিলো কষ্টের। কারণ সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কেন বুঝতে চাইবেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কার জন্য কল্যাণকর হবে। অথবা তখন পর্যন্ত সাধুবলে যদি জিজ্ঞাসা করা হতো এই প্রকল্পের বাজেট কতো, ব্যাস তখনই সম্পর্কের বারোটা। জোঁকের ঘাড়ে লবন ছিটানো মনে করে দশ হাত দুরে ঠেলার চিন্তার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু। কিছু নয় কিন্তু গবেষকের সন্দেহে উভয়ের একটি বস্তুর উপস্থিতি ঘটায়। অথচ কথা এমন নয় বরং গবেষণার সহযোগী হয়ে মঙ্গলের জয়গান করাটাই প্রকৃতির সংবাদ বিস্তার বা সাংবাদিকতা।
গবেষণা হবে সেতো আনন্দের কথা, নিশ্চয় শোকের নয়। আবার চ্যালেঞ্জটা ওখানে যেখানে এই দেশের একদল গবেষক নিতান্ত ছোট মনের ঘরে লোটাকম্বলে বাস করে। তারা বনবিভাগকে যেমন বনসাই করে রাখতে চায় তেমনি বনবিভাগের ঘাড়ে পা দিয়ে হুক্কা টানার আয়েশও করতে চায়।
গত দেড় যুগে এমন শতখানেক বন-বন্যপ্রাণী সুরক্ষার গবেষণা ও গবেষকদের দেখেছি যারা সত্যিকার কিছু যুক্ত করেছেন। যাদের কেউ ইহকাল ছেড়ে গেলেও রাতের তারা দেখার ছলে প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে নানান পরিকল্পনা হয়। তারা ছিলেন মনের দিকে আকাশের মতো অবারিত। আর বাকি কজন পূর্বে বলেছি তারা বনজ সম্পদকে নিজের সম্পদ হিসেবে দেখেছেন তাদের হিসেব কষা কোষ্টকাঠিন্য হবার দশা হবে। এদিকে বনবিভাগের কেউ সেই দলের সদস্য। যদিও প্রজন্ম পরিবর্তন ঘটে চলেছে, সুপথের দিন আসন্ন।
একবার চিন্তা করলে পাওয়া যায় সুন্দরবন যখন আমাদের ঘরে তখন সুন্দরবনের বাঘ গবেষক কেন তৈরি হয় না। কতজন নদী গবেষক অথবা কতজন প্রাণ-প্রকৃতির গবেষক এখন পর্যন্ত তৈরি করতে পেরেছেন নাটের গুরু গবেষকরা? না পেরেছেন গবেষকের দল বড় করতে না পেরেছেন নিজেদের সন্তুষ্ট রাখতে। দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্নের মাদুড়ে বসিয়ে পঙ্খিরাজে ঘুরিয়েছেন। ক’দিন বন জঙ্গল ঘুরিয়ে ব্যস হয়ে গেল। বললে বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নেই। টাকার ওপিঠে যখন বলা হয় তখন ছাত্রছাত্রীরা দেখে শাপলা ফুল আবার এ পাশে গবেষকরা দেখে হরিণের অন্ডকোষসহ চকচকে চোখ। কারণ হরিণের ছালবাকলেই তো বাজেট।
বছরের পর বছর সেই গুরুমন্ডলের কারসাজি এক। বিশ্বব্যাংক যখন উঠতি মধ্যম আয়ের দেশে শ্রমের টাকা পইপই করে শোধ দেবার কথায় লোন দেয়, সেখানে ঘপাৎ করে সে টাকায় হাত বসায় সেই একই মহল।
বাঁচাতে গেলেও জানতে হবে, বাঁচতে গেলেও জানতে হবে। যে জানা এখনকার প্রজন্ম জানে সময় ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে। নতুনদের বজ্রপাতে পুরনোদের ভয় লাগার কথা। কারণ দায়গ্রস্ত তারা কখনও মুক্তি পাবে না। বরং গত ১৫ বছরে নানান বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী বিভাগ থেকে যে পরিমাণ গবেষক বের হবার কথা তারা বের হতে দেননি ও পারেননি। গুরু গবেষকদের ভাগ বাটোয়ারার অশ্লীলতায় মন খারাপের ঝুলি নিয়ে কেউ ব্যাংকের ছেড়া বা চকচকে নোট হাতায়; ডানা ভাঙ্গা বন্যপ্রাণী গবেষণায়। এমন উদাহরণ অনেক আছে…..
লেখক: সিনিয়র পরিবেশ সাংবাদিক ।
আরও পড়ুন
খোলা জানালা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ
সর্বশেষ
জনপ্রিয়