এম, এম, আসাদুল্লাহ
প্রকাশিত: ১২:১৮, ১৩ জুন ২০২০
আপডেট: ১২:২৪, ১৩ জুন ২০২০
আপডেট: ১২:২৪, ১৩ জুন ২০২০
অমানুষ চাই না: মানুষের জন্যই স্বাভাবিক জীবন চাই
পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগই পানি। ধরে নেয়া হয় পানি নাই মানে জীবনও নাই। মরুভূমিতে পানির পরিমাণ খুবই কম, তাই সেখানে জীবিত প্রানীও খুবই কম। পৃথিবীর এই পানির বেশিরভাগই আছে সমুদ্রে, দুই মেরুতে আর উঁচু উঁচু পর্বতের চূড়ার জমাট বরফে। এইসব পানি সরাসরি ব্যবহার করা যায় না; গাছপালা পশুপাখির কাজে লাগেনা; তাই মানুষের জীবনে এই পানির গুরুত্ব নাই বললেই চলে। মানুষের কাছে পানির গুরুত্ব তখনই যখন সেই পানি তাঁর কাজে লাগে। যেমন ধরেন নদীর পানি থেকে ফসলের খেতে সেচ দেয়া যায়;গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছে গিয়ে ফসল ফলে আর পশুপাখির তৃষ্ণা মেটায়। অর্থনীতিতে টাকাকে পানির সাথে তুলনা করা হয়। বড় লোকের ব্যাংকে জমানো টাকা সেখানে দুই মেরু আর পর্বতের চূড়ার জমাট বরফের মতোই; মানুষের রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক জীবনে এই টাকার কোনোই দাম নাই। কারণ এই টাকা সাধারণ মানুষের হাতে থাকে না; জনগণের প্রতিদিনের কেনাকাটায় কাজে লাগে না।
লকডাউন আর করোনা আতঙ্কে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ। আতঙ্কের কারণও খুব স্বাভাবিক; হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেকে মারাও যাচ্ছেন। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত আর নিম্ন বিত্তের এখন শুধু গলায় দড়ি দেয়া বাঁকি। তাঁদের কাছে খাবার কেনার টাকা নাই, বাড়ি ভাড়া দেবার টাকা নাই, ঔষধ কেনারও টাকা নাই।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীকে গুরুত্ব দিয়ে বলতে হয়েছে- “মানুষকে খাবার দিতে হবে, চাকরি হারাদের চাকরি দিতে হবে,অসুস্থদের চিকিৎসা দিতে হবে”। কিন্ত এই সবকিছু করতেই তাঁকে টাকা সাধারণ জনগণের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও খুব সহসাই দেশ থেকে করোনা বিদায় নিচ্ছে বলে কারোরই মনে হচ্ছে না।
যারা নতুন করে লক ডাউন আর কারফিউ কারফিউ করে চিল্লায়ে মাথা খারাপ করে ফেলছেন তাঁদের সাথে আমি সে কারনেই একমত না। এর মানে এই না যে আমার কাছে মানুষের জীবনের মূল্য নাই। এরমানে এই না যে আমি দেশের অর্থনীতি নিয়ে খুব বেশী চিন্তিত। এর মানে এই না যে আমি টাকার কুমির। বরঞ্চ এর মানে এই যে আমি অন্য মানুষের জুতা নিজের পায়ে দিয়ে তাঁদের কষ্টটা বুঝতে চাই; অন্যের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভাবতে চাই।
আমাদের চিকিৎসা নাই,অক্সিজেন নাই, আইসিইউ নাই, ভেন্টিলেটর নাই; তারপরও যতটুকু আছে সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই অফিস আদালত পুরোদমে খোলার কথা বলি। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমন প্রতিরোধে জীবাণুর বিরুদ্ধে গণ সচেতনতা, মাস্ক, সব ধরনের সুরক্ষা যন্ত্রপাতির ব্যবহার সহ জানা সব উপায়ই ব্যবহার করতে বলি। সবটুকু সদিচ্ছা দিয়েই জীবন স্বাভাবিক করার কথা বলি। ঐসব সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের কথা মনে করেই বলি- যারা এই দমবন্ধ অবস্থায় করোনা আক্রান্ত না হয়েও, টাকা নামের পানির অভাবে তিলে তিলে মারা যাচ্ছেন। কাজ করা ছাড়া সাধারণ জনগণের হাতে টাকা পৌঁছানোর কোন সঠিক উপায় সত্যিই জানা নেই বলেই বলি। নিজের এবং ঘনিষ্ট আত্মীয় বন্ধুদের ঝুঁকি আছে জেনেও বলি। নিজের জীবনের বিনিময়েও মানুষ কে অমানুষ হিসেবে দেখতে ঘোর আপত্তি আছে বলেই সবাইকে নিয়ম মেনে কাজে নেমে পড়তে বলি। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু মানুষের কর্তব্যটা করতে বলি।
আরও পড়ুন
খোলা জানালা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ
সর্বশেষ
জনপ্রিয়