ড. আতিউর রহমান
আপডেট: ১৩:২২, ৩০ অক্টোবর ২০২০
নয়া পৃথিবীর নয়া অর্থনীতি
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কৌশলে কৃষিই নেতৃত্ব দেবে। আগামী দিনে বিশ্বজুড়ে কৃষির শক্তিমত্তা আরও বাড়বে। বাংলাদেশ তো এই দৌড়ে আশপাশের সহযোগী দেশগুলোর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। আগামীতে কৃষির এ নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে আমাদের কৃষি প্রক্রিয়াকরণ জোরদার করা; কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কৃষকের আয় বাড়ানোর কাজে নীতি মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।
কভিড-১৯ ভাইরাসটি পুরো বিশ্বের খোলনলচে বদলে ফেলেছে। এই অদৃশ্য ভাইরাস এতটাই শক্তিশালী যে, মনে হয় একটি সর্বব্যাপী বিশ্বযুদ্ধ চলছে। পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যে কোনো ঘরেই এই ভাইরাস হামলে পড়তে পারে। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বেড়েছে। কিন্তু এমন করে যে এই ভাইরাস মানুষকে ঘরবন্দি করে ফেলবে তা আগে কেউ ভাবেননি। তবে অর্থনৈতিক স্থবিরতায় যানবাহন, কলকারখানার দূষণ কম থাকায় প্রকৃতি বেশ খানিকটা ডানা মেলতে শুরু করেছে। প্রকৃতির প্রতি যে আমরা খুবই অবিচার করেছি সে সত্যটি এই করোনাকালে বের হয়ে এসেছে। তাই মানুষ বুঝতে পেরেছে এ সংকট পেরিয়ে এক নয়া পৃথিবীর সন্ধান তাদের করতে হবে। সেই নয়া পৃথিবীর অর্থনীতিও হবে আরও প্রকৃতি-বান্ধব ও জলবায়ু-সহিষ্ণু।
বিশ্বব্যাপী যে মন্দা জেঁকে বসেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এমন মহাসংকটেও বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব খারাপ করছে না। আমরা পর্যটন শিল্পনির্ভর দেশ নই। কৃষি রপ্তানি ও প্রবাস আয়নির্ভর আমাদের অর্থনীতি তাই জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে পৃথিবী এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল। সম্প্রতি জলবায়ু খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ও আমাজনে দাবানল। আমাদের দেশেও আম্পান ও বন্যা আঘাত হেনেছে। তাপমাত্রার রেকর্ড দেখেছে সাইবেরিয়া। গ্রিনল্যান্ড ও কানাডা থেকে বরফের বড় বড় চাক গলে সাগরে মিশেছে। এর প্রভাবে সমুদ্রের পানি স্ম্ফীত হচ্ছে। এ বছর উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্যে সবুজ বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বড় ধরনের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল। ব্যক্তি খাতও এগিয়ে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু সারাবিশ্বের মনোযোগ এখন কভিড-১৯-এর দিকে।
এ প্রেক্ষাপটেই 'ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম'-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, একা কোনো দেশ এ সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না। জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। নিচের দিকে ১০০টি দেশ করে ৩.৫ শতাংশ। তাই বেশি নিঃসরণকারীদের দায়িত্ব অনেক বেশি। কিন্তু তারা জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেভাবে এগিয়ে আসছে না। তবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৬৪টি দেশ 'প্লেজ টু নেচার' অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছে।
তাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বিশ্বের ব্যবসায়ী নেতৃত্ব, প্রধান নির্বাহী, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাসহ বড় বড় বিনিয়োগকারীকে জলবায়ু-বান্ধব বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ববিখ্যাত ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে তিনি লিখেছেন, কভিড-১৯ সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের অভিযাত্রা হতে হবে সবুজ। জলবায়ুবান্ধব। কভিড-১৯ শুধু বিশ্ব অর্থনীতিকে সংকুচিত করে চলেছে তাই নয়, পাশাপাশি ঝুঁকিগুলোকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে সমান তালে। বেশিরভাগ উন্নয়শীল দেশের অর্থনীতি অনানুষ্ঠানিক। এ সব দেশের বড় বড় শহরে বিরাট বিরাট বস্তি আছে। এসব বস্তির অবকাঠামো খুবই দুর্বল। এখানে যারা বাস করেন তাদের জীবিকাও ঝুঁকিপূর্ণ এবং তারা দিন আনেন দিন খান। ঘনবসতিপূর্ণ এসব বস্তিতে ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। তাদের জন্য স্থানীয় সরকার সুবিধা ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অপ্রতুল। এবারের মহামারি নগরের এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বেশি করে আঘাত হেনেছে। তাদের আয়-রোজগার ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এমনি প্রেক্ষাপটে করোনা-উত্তর অর্থনীতির চেহারাটা আন্দাজ করা বেশ কষ্টসাধ্য। একথা মানতেই হবে। বিশ্ব অর্থনীতি অসংখ্য আন্তঃসম্পর্কের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এসব সম্পর্কের কয়েকটি ভেঙে গেলেই আন্তঃসম্পর্কের চেহারাটা কী হবে বলা মুশকিল। এই সংকটে সরবরাহ চ্যানেল হঠাৎ করেই ভেঙে পড়েছিল। লাখ লাখ আন্তঃসম্পর্ক ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাই বিশ্ব অর্থনীতি এখন আর আগের মতো নেই। হয়তো আর কোনো দিনই আগের মতো হবে না। সংকট কাটিয়ে উঠতে পাঁচ মাসও লাগতে পারে, আবার পাঁচ বছরও লেগে যেতে পারে। নিশ্চিতভাবেই বলা চলে, বিশ্ব অর্থনীতির শরীরে এমন সব ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে যা সারতে অনেকটা সময় লেগে যাবে।
এই করোনাকালে একটি শিক্ষা আমরা পেয়েছি। বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি যে আগে থেকেই তৈরি হচ্ছিল সেগুলো বিশ্বনেতৃবৃন্দ আমলে নেননি। এবারে সেই ফাটলগুলো স্পষ্ট বের হয়ে এসেছে। বিশেষ করে জলবায়ু সংকট নিয়ে, আরও নির্দিষ্ট করে যদি বলি- প্রকৃতিকে নিয়ে আমরা বড়ই অবিবেচনা করেছি। গবেষণায় ধরা পড়ছে, যেসব নগরের বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি, সেখানে করোনা সংকটও বেশি তীব্র। তবে সংকট নয়া সম্ভাবনার সুযোগও তৈরি করে। সংকটকালেই এসবের গুরুত্ব অনুভব করি। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের, শিক্ষা-প্রশিক্ষণের এবং অফিসে না গিয়েও অফিস করার ধরন সবকিছু এমন করে পাল্টে দেবে তা কি আমরা আগে ভেবেছিলাম? করোনাকালেই বুঝতে পারলাম নতুন করে চলার নয়া নয়া কত সুযোগ রয়েছে আমাদের কাছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগবে বিশ্বায়নে। এরই মধ্যে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি লেনদেনের প্রশ্নে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হবে। হাই-এন্ড প্রযুক্তি, মানবসম্পদ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সক্ষমতা নিজেদের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করবে অনেক দেশই। দুঃসময়ে অন্যের ওপর বেশি নির্ভরশীল হবার বিপদের আঁচ অনুমান করতে পারছে সবাই। কৌশলগত কারণে অনেক বিদেশি পুঁজি চীন ছেড়ে আমাদের মতো দেশে চলে আসবে। এসব সুযোগ আকর্ষণে আমরা কতটা প্রস্তুত তার ওপরই নির্ভর করবে পরবর্তী অবস্থা কোন দিকে বাঁক নেয়। আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কয়েকটি দ্রুত বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রস্তুত করে ফেলতে পারি। তাদের আবাসন, সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও ব্যবসায়ের নিয়মনীতি সহজীকরণের ওপর নির্ভর করবে তারা আমাদের দেশে আসবেন কি-না। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কাম্পুচিয়া এসবে খুবই সচেতন।
তবে সন্দেহ নেই যে এখন থেকে প্রতিটি সরকারই তার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দেবে। বিশেষ করে খাদ্য, ওষুধ এবং ওষুধ তৈরির যন্ত্রপাতি উৎপাদনের সক্ষমতার ওপর বেশি জোর দেবে। চীন এরই মধ্যে তার অর্থনৈতিক কৌশল বেশ খানিকটা বদলে ফেলেছে। কম খরচের উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে সরে গিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদনে তারা মনোযোগ দিচ্ছে। এয়ারক্রাফট ও টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতির উৎপাদনে বিশ্বসেরা হবার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপান- চীনে আর উচ্চপ্রযুক্তি স্থানান্তরের বাণিজ্যিক সম্পর্কে যেতে চাইছে না। নিজেদের মেধাস্বত্ব সম্পদ খোয়া যেতে পারে- এই ভয়েই তারা এমন করে তাদের কৌশল বদলাচ্ছে। মনে হয় বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থাতেও বড়সড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বিশ্ব মুদ্রা হিসেবে ডলার তার অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এশিয়ার অর্থনৈতিক তেজ বাড়বে। তাই চীনের মুদ্রার দামও বাড়বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড তা ভালোভাবেই অনুমান করতে পারছে। তাই এরই মধ্যে ১৬টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ডলার সোয়াপ কর্মসূচি চালু করে দিয়েছে। ওই সব দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ডলার ঢেলে বিশ্ব অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি আইএমএফকেও সক্রিয় করেছে বিশ্বব্যাপী জরুরি ডলার সহায়তা দেবার জন্য। বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশ এই সহায়তার সুযোগ নিয়েছে। অবশ্য বাড়তি সহায়তার মাত্র ১১ শতাংশ পেয়েছে গরিব ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো। আইএমএফ আরও বলছে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলো চাইলে বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে নিজেদের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে পারে। আগে কিন্তু উল্টো কথা বলত। ডলারভিত্তিক অর্থনীতি যাতে সচল থাকে তাই এমন কথা তারা বলছে।
সকল দেশই চেষ্টা করছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে যেন চাহিদা বজায় থাকে। ভোগের যেন সংকোচন না ঘটে। তাই তারল্য ঢেলে পুরো অর্থনীতিকে আপাতঃনমনীয় করে রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশও এই কৌশলের বাইরে নয়। বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি যেখানে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করে পুনরুদ্ধারের দৌড়ে অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। করোনা সংকটের শুরুতেই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন অনেক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা ঘোষণা করে যার ফলে অর্থবাজারে তারল্য সংকট দানা বাঁধতে পারেনি। অন্যদিকে ছোট-বড় সকল উদ্যোক্তার জন্যই কম সুদে পুনঃঅর্থায়নমূলক এমন কিছু ঋণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে যাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সরকারপ্রধানের সুদূরপ্রসারী নীতিনির্দেশনাকে বাস্তবে আর্থিক সহায়তা দেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচক্ষণ ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নীতি গ্রহণ করেছে।
নয়া বাস্তবতায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পুনঃরুদ্ধার যে ভালো করবে তার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত- বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যটন বা মানুষের আসা-যাওয়ার ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয় বরং কৃষি ও রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এ দুটো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ বেশ ভালো করছে। তৃতীয় খাতটি হলো প্রবাস আয়। এখানেও সরকার বিচক্ষণ কিছু নীতি প্রণোদনা দিয়ে বাংলাদেশকে খুবই ভালো অবস্থানে রাখতে পেরেছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, গেল এই তিন মাসে যে পরিমাণ প্রবাস আয় এসেছে তা আগের বছরের এই সময় থেকে ৪৮ শতাংশেরও বেশি। পাশাপাশি আমরা জলবায়ুসহিষ্ণু কৃষি ও শিল্পের দিকেও নজর রাখছি। নয়া বাস্তবতায় আগামী দিনে আমাদের অর্থনীতিতে যেসব ধারা জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করছি:
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কৌশলে কৃষিই নেতৃত্ব দেবে। আগামী দিনে বিশ্বজুড়ে কৃষির শক্তিমত্তা আরও বাড়বে। বাংলাদেশ তো এই দৌড়ে আশপাশের সহযোগী দেশগুলোর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। আগামীতে কৃষির এ নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে আমাদের কৃষি প্রক্রিয়াকরণ জোরদার করা; কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কৃষকের আয় বাড়ানোর কাজে নীতি মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সনাতনি শক্তি উৎপাদনে এখন উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হলেও, সবুজশক্তি উৎপাদনে আমাদের আরও বিনিয়োগ ও নীতি সমর্থন দিতে হবে। আগামীর অর্থনীতিতে সবুজশক্তিই বসবে চালকের আসনে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে আমাদের সাফল্য বেশ। এই ধারা আরও জোরদার করতে হবে। এখাতে নয়া উদ্যোক্তাদের অবস্থান শক্ত করার মতো নীতি ও বিনিয়োগ সুবিধা দিয়ে যেতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকেও এর পরিপূরক করে সাজাতে হবে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে সংযুক্ত হতে পারলেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান গতিময় এশিয়ার মধ্যখানে। এই কৌশলগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ফরওয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সঙ্গে যুক্ত খাতগুলোতে বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে।
অবকাঠামোই প্রবৃদ্ধির মূল শক্তি। তাই ভৌত এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী নীতি এবং অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বড় প্রকল্পগুলোর সময়মতো বাস্তবায়ন করা গেলে সারাদেশের অর্থনীতিতে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ার যে জোয়ার বইবে তা হলফ করেই বলা যায়। উদ্যোক্তা উন্নয়নের সময় কুটির, খুদে, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দিকে বিশেষ নজর দেবার যে ঐতিহ্য আমরা গড়ে তুলেছি তা যেন অব্যাহত থাকে। উৎপাদনশীল বড় উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করেছে সেসব তো থাকছেই।
কয়েকটি মাত্র সম্ভাবনার কথা বললাম। এর বাইরে আমাদের প্রবাসীদের দিকে আরও সুনজর দিতে হবে। আমাদের এই মহামারির সময়ও বেশি বেশি অর্থকড়ি পাঠিয়ে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে। এখন তাদের আরও মূল্যসংযোজনমূলক বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সবশেষে বলব, আগামী দিনের অর্থনীতির গতিময়তা অনেকটাই নির্ভর করবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুঁজি দিয়ে আমরা মানুষের ওপর কতটা বিনিয়োগ করছি তার ওপর। ডিজিটাল প্রযুক্তির আরও প্রসার আগামীর অর্থনীতিকে গতি দেবে। সবুজ অর্থনৈতিক রূপান্তর আমাদের আগামীদিনের অর্থনীতিকে টেকসই করবে। মোদ্দাকথা প্যানডেমিক-উত্তর নয়া পৃথিবীর নয়া যে অর্থনীতি বিকশিত হবে সেখানে কৃষি, প্রযুক্তি, সবুজ রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার বিস্ময়কর অর্থনৈতিক অর্জনের ধারাকে ঠিকই অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
ড. আতিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ