বি. এম খোশবুর রহমান
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এলএনজি ও বাংলাদেশ
ফাইল ছবি
সাসটেইনেবল এনার্জি বর্তমান বিশ্বে অন্যতম আলোচিত বিষয়, এর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ। বর্তমান বিশ্ব চায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ মুক্ত সাসটেইনেবল এনার্জি, যা এসডিজি-৭ অর্জন করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।
এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বর্তমান বিশ্বে ক্লিন ফুয়েল হিসেবে সমাদৃত। এলএনজি, জ্বালানি তেল থেকে প্রায় ৪২% কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে। পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে মেরিন ফুয়েল হিসেবে কয়লার পরিবর্তে এলএনজি স্থান পেয়েছে। এলএনজি ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে এলএনজি চাহিদা বার্ষিক ১৬৭ মিলিয়ন টন হবে, যার সিংহভাগ চাহিদাকারী হবে এশিয়ার দেশগুলো।
গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও শেল গ্যাস থেকে গ্যাস উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে এলএনজি ইন্ডাস্ট্রির দ্রুত উন্নতি হয়েছে এবং এর চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। বর্তমানে কাতার সব থেকে বেশি এলএনজি প্রোডাকশন করছে যা বিশ্বের চাহিদার ৩১ %। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাসহ আরো কিছু দেশ এলএনজি উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। আমেরিকা ইতিমধ্যে জাপান ও সাউথ কোরিয়ার এলএনজি মার্কেট নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে।
তবে কোভিড-১৯ মহামারী এলএনজি ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। রাউটারের তথ্য মোতাবেক, এশিয়াতে এলএনজি স্পট মার্কেটে গত ২৪ এপ্রিল সবচেয়ে কম দাম পরিলক্ষিত হয়, যা ১.৯৫ ইউএস ডলার/মিলিয়ন বিটিইউ। এপ্রিল থেকে এলএনজি স্পটের দাম কম রয়েছে। রাউটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষে ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট প্রতি মিলিয়ন সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
কোভিড -১৯ বিশ্বে এলএনজি কীভাবে এগিয়ে চলছে তা গুরুত্বপূর্ণ। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লকডাউন চলাকালীন তেলের চাহিদা থেকে এলএনজির চাহিদা আরো বেশি স্থিতিশীল ছিল। এলএনজি অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং পরিবহন খাত এই জ্বালানির চাহিদা উপভোগ করায় এটি স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।’
কোভিড -১৯ মহামারীতে বিশ্বে চাহিদা আকস্মিকভাবে কমে যাওয়ায় কার্গো বাতিল করা হয়েছে, তাই উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদার ব্যাপক ব্যবধান হয়। ফলে স্পট মার্কেটে দাম কমতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান জ্বালানির উৎস গ্যাস। প্রায় ৬২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে গ্যাস থেকে। এর অন্যতম কারণ গ্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক কম। দিনে দিনে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৩৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট, দেশ থেকে উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ দৈনিক ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট জ্বালানি এলএনজি দিয়ে পূরণ করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ এলএনজি যুগে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে দুইটা ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) রয়েছে যা দিয়ে ১০০০ এমএমএসসিএফডি (গ্যাস প্রসেস প্ল্যান্টের ধারণ ক্ষমতা) সরবরাহ করা সম্ভব। দূরদর্শী সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে সরকার ল্যান্ডবেস এলএনজি টার্মিনাল করার চিন্তাভাবনা করছে। অফশোরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি এলএনজি কার্যক্রম চলমান থাকায় দেশের এনার্জি সিকিউরিটি মজবুত হবে।
লেখক: প্রকৌশলী বি. এম খোশবুর রহমান
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ