হেলাল আহমেদ
আপডেট: ১৭:১৯, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
`পদ্মা সেতু` একটি ইতিহাসের নাম
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন মূল পদ্মা সেতু ও নদীশাসনকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তখন স্বপ্ন বোনা শুরু করে ভয়াল পদ্মার দুই পাড়ের মানুষ। সেদিন তাঁদের বিশ্বাস হয় পদ্মার বুকে ব্রীজ হবে। মাওয়া-জাজিরা প্রান্তর সংযুক্ত হবে। তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো আজ সকালে। সকাল সাড়ে দশটায় যখন ৪১ নম্বর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয় তখন কোটি মানুষের চোখে ধরা দেয় পদ্মার বাস্তব অবকাঠামো।
তাই স্বপ্ন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। যেই বাস্তবে পা রেখে নতুন একটি ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার ছাপ রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের সরে যাওয়ায় যে দ্বিধা-দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়েছিলো সেই দ্বন্ধেরই যেন অবসান করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানো হয়। যার মাধ্যমে এই প্রথম দৃশ্যমান হয় এতোদিন স্বপ্ন হয়ে থাকা পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গোটা সেতু।
সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হওয়া স্প্যান বসানোর কাজ দুপুর ১২টা নাগাদ শেষ হয় ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘৪০তম স্প্যান বসানোর ৬ দিনের মাথায় সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া অংশে মাঝ নদীতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারে (পিলারের ওপরের প্ল্যাটফরম) ৪১তম স্প্যানটি বাসানো হয়। রাতেই স্প্যানটি ভাসমান ক্রেনে করে নির্ধারিত পিলারের কাছে নেওয়া হয়।’
এদিকে, স্প্যান বাসানো ছাড়াও অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে সেতুতে ১৮ শতাধিক রেলওয়ে ও ১২ শতাধিক রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যায়ে এই সেতুর নির্মাণকাজ চলছে।
অনেক চড়াই উৎরায়ের পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু স্প্যান বসানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে একটু একটু করে দৃশ্যমান হতে থাকে পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতুর সুফল কী?
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এ সেতু বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতিতে সরাসরি এর সুফল আসবে। তাঁদের মতে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে সরাসরি তিন ধরনের সুবিধা রয়েছে।
প্রথমত, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে।
দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে।
তৃতীয়ত, এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯১ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ। মূল সেতু কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা।
নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ১৭ ভাগ। নদীশাসন কাজের চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা।
প্রকল্পের সর্বমোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক ০২ কোটি টাকা; অর্থাৎ ৭৯ দশমিক ৮৯ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ।
পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব
২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারী ধারণা করে অনেক মানসিক ভারসাম্যহীনকে মারধরে পুলিশে হস্তান্তর করার ঘটনা ঘটে।
ঢাকায় একটি জায়গায় এক শিশুর মাকে অপহরণকারী ভেবে মারপিঠ করা হলে ওই নারী মারা যান। পরে এ ঘটনাকে গুজব ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে ৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।
এক্ষেত্রে গবেষকরা সেতু কর্তৃপক্ষকে সেতুটি নির্মাণে খুঁটিনাটি সকল তথ্য জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন।
হেলাল আহমেদ কবি ও সংবাদকর্মী
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ