নাজমুল হাসান রাফী
আপডেট: ২১:৫৩, ১ মে ২০২১
অর্থে নয়, মানুষ বড় হয়ে উঠুক উত্তম কর্ম ও মনুষ্যত্ববোধে
শ্রেণি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম, পদমর্যাদা ভেদে মানুষকে বিভাজন না করে পৃথিবীর সকল মানুষকে নিজ নিজ কর্মের ভিত্তিতে ভালো এবং খারাপ এই দুই জাতে চিহ্নিত করলে কেমন হয়! সভ্যতা নিশ্চয়ই এমন কথাই বলে।
একটা নির্মোহ অবস্থান থেকে বিচার করলে দেখি বিবাহিত এবং সন্তানের জনক হয়েও নিজের অর্থ-প্রতিপত্তির সুযোগ নিয়ে একজন অপরিণত মেয়ের সাথে অসামাজিক এবং অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো অতঃপর ভোগ শেষে অপমৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ধনাঢ্য আনভীরের যেমন দৃশ্যতঃ জঘন্য অপরাধ ও দুশ্চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ তেমনি ঘটনার মর্মান্তিক শিকার মুনিয়ার একটি গন্তব্যহীন, অসম এবং অসামাজিক সম্পর্কে জড়ানো বিপথগামীতা ও অনুচিত কাজ।
একজন অপরিণত বয়সী মেয়ের সাথে নষ্ট সম্পর্কে জড়ানোর লালসা এবং ঘটনাক্রমে নিষ্ঠুর মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া নিঃসন্দেহে ভয়ংকরতম অপরাধ এবং এই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঠিক বিচার একান্ত প্রত্যাশিত। যুগপৎভাবে মুনিয়ার এই আপাতদৃশ্য বিপথগামীতার পেছনে যারা দায়ী, সেটা হতে পারে মুনিয়ার অভিভাবকের উদাসীনতা কিংবা মুনিয়ার অযাচিত লোভ। এসব কারণকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে অন্তত সকলের সচেতনতার জন্যে হলেও।
ঘটনার শিকার মুনিয়ার আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি। ঘটনার একমাত্র ভিক্টিম হিসেবে মুনিয়ার প্রতি আমাদের সহানুভূতি থাকলেও মুনিয়ার দৃশ্যতঃ পথভ্রষ্টতা নিশ্চয়ই সমর্থনযোগ্য নয়।
অঢেল অর্থ কিংবা দারিদ্র্যের দোহাই দিয়ে কোন অন্যায় কিংবা বিপথগামীতাকে বিচার করা যায় না। লোভ এবং অন্যায়ের পরিণতি কেবল বিনাশে স্থির। আনভীর তাঁর অর্থে চেয়েছে অবৈধ যৌনতাকে ভোগ করতে, হয়তো মুনিয়া কিংবা মুনিয়ার তথাকথিত অভিভাবক চেয়েছে বিনিময়ে একটা বিলাসবহুল জীবন। তবে মনে রাখতে হবে, মুনিয়া কিংবা মুনিয়ার পরিবারের ভুল মানসিকতায় অভিযুক্ত আনভীরের দৃশ্যতঃ জঘন্য অপরাধের পরিমাণ বা তীব্রতা বিন্দুমাত্র কমে যায় না!
বাস্তবতা হলো, দেশে দেশে আনভীরের চেয়েও বহু ধনাঢ্য ব্যক্তি নিজের ভব্যতা, সুরুচি ও নৈতিকতা বজায় রেখে ভদ্রলোকের জীবন যাপন করছেন। শত শত উঠতি ব্যবসায়ী, শিল্পপতির অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে উঠছেন। অভিযুক্ত আনভীরেরও সেই সুযোগ ছিলো।
অপরদিকে নিম্ন মধ্যবিত্ত/মধ্যবিত্ত পরিবারের (অভিভাবক/ অভিভাবকহীন) মুনিয়ার মতো অনেকেই নিজের ব্যক্তিত্ব, আত্নমর্যাদা এবং নৈতিকতা বজায় রেখে সংগ্রাম করে টিকে আছেন অনিবার্য জীবনযুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রেই সুন্দর উদাহরণ হয়ে উঠছেন, হয়ে উঠছেন অনেকের অনুপ্রেরণা। মুনিয়ার জীবনটাও এমন হতে পারতো!
- আলোচ্য ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম পর্যন্ত উচ্চারণ না করা চরম দৈন্যতা, দাসত্ব ও বিবেকহীনতার পরিচায়ক। অথচ নীতি- নৈতিকতার এই বাঁক বদলের সময়ে ন্যায্যতার পক্ষে হতেই পারতো সুদৃঢ় উচ্চারণ। স্বার্থ/চেয়ার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ক্রীতদাসের মতো আচরণ, অন্ধ চাটুকারিতা কেবল প্রলয়ই ডেকে আনবে। তাই, বিশাল বিপুল কলিজা দেখার পাশাপাশি ভেতরের আপাতদৃশ্য পশুত্বের বিষয়েও সতর্ক থাকা সমীচীন।
- আলোচ্য ঘটনায় অভিযুক্ত ধনকুবের শিল্পপতি সায়েম সোবহান আনভীর নিজের বিপুল প্রভাব প্রতিপত্তির অপব্যবহার করে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারবে না বলে প্রত্যাশা করি। বিশ্বাস করি, আইন কিংবা রাষ্ট্রের চেয়ে কেউ বড় নয়। মানুষ জেগে উঠলে ন্যায্য বিচার হবেই!
আমরা যেন মনে রাখি, 'A society that has more justice is a society that needs less charity'
নাজমুল হাসান রাফী
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর), কুমিল্লা জেলা পুলিশ
[খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।]
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ