জসীম উদ্দীন মাসুদ
আপডেট: ১৮:৪১, ১১ মে ২০২১
টিকা সংকট মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?
ভাবতে অবাক লাগে, কি করে আমরা এতো আগে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেয়ে গেলাম। বিশ্বের অন্তত ১৩০টি দেশ যখন এক ডোজও টিকা পায়নি তখন আমরা দিব্যি লাইন ধরে টিকা দিচ্ছি। তাই কেউ মানুক আর না মানুক এটা স্বীকার করতেই হবে, ভ্যাকসিনের এমন বিশ্ব পরিস্থিতিতে উন্নত দেশ না হয়েও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। জনসংখ্যার সঙ্গে টিকাদানের অনুপাত হিসাব করলেও বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখতে হবে। এর জন্যে ভ্যাকসিন হিরো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।
প্রসঙ্গ কথা
বাংলাদেশে এখন করোনাভাইরাসের একটা টিকাই চলছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা অনুমোদিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড। বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল সরকার। গত নভেম্বরে সম্পাদিত ওই চুক্তি অনুযায়ী সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল। এরপর জানুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রায় এক হাজার তিনশ কোটি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত তিন কোটি ডোজ টিকা সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনার অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি।
বেক্সিমকো ফার্মা এখন মনে করছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার উপর ভারত সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশকে সরবরাহ করতে পারবেনা। কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা আনতে পেরেছে। বেক্সিমকো ফার্মা লাগামহীন লাভও করেছে এ যাত্রায়। প্রতি টিকায় তারা মুনাফা করেছে ৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা। এই হিসাবটি ৫০ লাখ টিকার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ২০ লাখ টিকা এপ্রিলে সরবরাহ করা হয়েছে। সবকিছুর পর আরও বাকী থেকে গেলো ২ কোটি ৩০ লাখ টিকা। ভারত সরকার টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আপাতত দেশে সেরামের কোনো টিকা আসছে না। নতুন আরেক দুঃসংবাদ হলো, সেরাম ইনস্টিটিউট-এর সিইও আদর পুনাওয়ালা নানা ধরণের হুমকির মুখে গতকাল ভারত থেকে ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছেন। অবশ্য পুনাওয়ালা বলছেন, ভারতের বাইরেও তার কোম্পানির টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
দুঃসংবাদের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা
এটাও তো সত্যি, ভারতে ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে সেখানে টিকার বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় মোটামুটি ধরে নেয়া যায় জুন-জুলাইয়ের আগে ভারত থেকে বাংলাদেশ কোন টিকা পাচ্ছে না। এদিকে ঔষধ প্রশাসন জানিয়েছে, দ্রুত ফুরিয়ে আসছে ভ্যাকসিনের মওজুদ। এ পরিস্থিতিতে চিন্তার ভাঁজ সর্বত্র। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২ মে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যতই টাকা লাগুক না কেন, দেশে টিকা আসবেই।
আপাতত স্বস্তি চীনের টিকায়
আপাতত সুসংবাদ হচ্ছে চীন থেকে বিমান প্রাপ্তি সাপেক্ষে যে কোন সময় দেশে টিকা চলে আসবে। চীনের সিনোফার্ম উৎপাদিত এই ‘বিবিআইবিপি-সিওরভি’ টিকা নিরাপদ ও কার্যকর বলে ভাইরোলজিস্টরা মতামত দিয়েছেন। বাংলাদেশের চাহিদামতো সিরিঞ্জসহ বা সিরিঞ্জছাড়া প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ ২ হাজার ৪শ ডোজ টিকা দেশে আসবে। এটি পুরাতন প্রযুক্তির একটি ইনঅ্যাকটিভেটেড টিকা। ইপিআইর মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি ডোজ ইনঅ্যাকটিভেটেড টিকা আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়।
ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে এ টিকার নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বের ৫টি দেশে ৫৫ হাজার মানুষের ওপর এ টিকার তৃতীয় ট্রায়াল পরিচালিত হয়েছে। সব মিলে এ টিকা যথেষ্ট কার্যকর হবে বলে আশা করা যায়। চীনের পক্ষ থেকে এ টিকা বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য দুই ধরনের প্যাকেজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- প্রতিটি প্যাকেজে তিনটি ডোজ প্যাক করা হবে এবং দ্বিতীয়টি হলো- প্রতিটি প্যাকেজে এক ডোজ করে প্যাক করা হবে। প্যাকেজের সাইজ ও ওজন প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকবে। এমনকি প্যাকেজের মোট ভলিউমও সেখানে উল্লেখ করা থাকবে, যাতে বিমান থেকে নামিয়ে পরিবহণব্যবস্থায় স্থানান্তরের সময় এ বিষয়গুলো নির্ভুলভাবে লক্ষ্য রাখা হয়।
এ টিকা যখন পরিবহণের জন্য প্রস্তুত করা হবে তখন চীনের পক্ষ থেকে তারিখটি জানানো হবে। পরিবহণকালীন টিকাগুলোর কোল্ডচেইন প্যাকিং বাক্সে থাকবে। যেখানে এগুলো ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যাবে। গত ২৯ এপ্রিল চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার। এ টিকাও ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ করে নিতে হয়। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এ টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
চীনের টিকার বিষয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, চীনের টিকা কেনা হবে সরকারি পর্যায়ে। চীন অনুদান হিসাবে ৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এগুলো আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে। টিকা বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে ১ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেফটি এবং অ্যাফিকেসি দেখার পর গণটিকাদান কার্যক্রমে সিনোফার্মের টিকা ব্যবহার করা হবে।
শুধু আমদানি নয়, সিনোফার্মের টিকা দেশেই উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অথবা কাঁচামাল নিয়ে এসে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে টিকা উৎপাদন করা যাবে। বাংলাদেশের ইনসেপ্টা, পপুলার এবং হেলথ কেয়ার ফার্মার টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। তবে চীনের প্রতিনিধি এসে তিনটি ফার্মাসিউটিক্যালস দেখে তাদের সক্ষমতা যাচাই করার পর বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন সম্পর্কিত সমঝোতা হবে।
সরকারি উদ্যোগে নবচিন্তন
প্রাথমিকভাবে সরকার দেশের ১৩ কোটির বেশি মানুষকে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। সেই লক্ষ্যে নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনতে চুক্তি করে সরকার। তবে চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে টিকা দিতে না পারায় বিকল্প হিসাবে ২৮ এপ্রিল রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত স্পুটনিক-ভি এবং ২৯ এপ্রিল চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-সিওআরভি জরুরি ব্যবহারে জন্য অনুমোদন দেয় সরকার।
টিকায় বাংলাদেশের সাফল্য
‘ভ্যাকসিনহিরো’র দেশ বাংলাদেশ। ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১-এর মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্যে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কঠোর পরিশ্রম এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বাংলাদেশে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির অনন্য সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। এই টিকাদান কর্মসূচির কারণেই বাংলাদেশ থেকে পোলিও, কলেরা ও নানা ধরনের সংক্রামক চিরতরে বিদায় হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচি এখন তাই বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের সাফল্যের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর এ সাফল্য এসেছে নিয়মিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অর্থাৎ টিকা প্রদান কর্মসূচির ধারাবাহিকতা ছিল চোখে পড়ার মতো। টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের পেছনে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপের ভূমিকাও কম নয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে ‘‘চিন্তা করেছে আন্তর্জাতিকভাবে আর কাজ করেছে স্থানীয়ভাবে৷’’ এ কৌশলের অংশ হিসেবে সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত কর্মী৷ শুধু টিকা দিয়েই থেমে থাকেনি সরকার৷ এ সময়ের মধ্যে নতুন কেউ আক্রান্ত হলো কিনা আর টিকা কতটা কার্যকর হয়েছে তা-ও ছিল সরকারের তীক্ষ্ম নজরদারিতে৷
টিকায় অনাগ্রহ কেটে যায় প্রবল জোয়ারে
শিশুদের টিকা দানের হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় সাফল্য থাকলেও করোনার টিকার ক্ষেত্রে প্রথমে জনগণের মধ্যে টিকা গ্রহণে ব্যাপকভাবে অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। টিকার অনাগ্রহের ব্যাপারটা অবশ্য আমাদের দেশেই নতুন ছিল না। টিকা শুরুর দিন থেকেই ধনী দেশগুলোতেও এই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। মানুষের কিছু বদ্ধমূল ভুল ধারণা রয়েছে যেমন-মিজলেস, মামপ ও রুবেলা টিকার সাথে অটিজমের একটা যোগসূত্র রয়েছে। এটি যেকোনো টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহের অন্যতম কারণ হিসেবে এখনও বিদ্যমান আছে অনেক দেশে। আমাদের দেশে সীমিত আয়ের মানুষদের মধ্যে বিশেষ করে যারা কায়িক পরিশ্রম করেন তাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে,শক্ত শারীরিক কাঠামোর কারণে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না। এজন্যে গ্রামে বসবাসরত অধিকাংশ লোকেরা শুধু টিকা নয়, মাস্ক ও স্বাস্থ্যসুরক্ষায় পর্যন্ত তাদের তেমন বিশ্বাস নেই। এই শ্রেণির মানুষদেরকে করোনার টিকা দিতে বেশ বেগ পেতে হতো যদি বিনামূল্যে টিকা না দেয়া হতো।
বিনামূল্যে টিকা দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল
প্রথমে সবারই একটি বদ্ধমূল ধারণা ছিল টিকা কিনে নিতে হবে। দামটা যে কত হবে সেটাই ছিল ভাবনার বিষয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলো তো জোর লবিং চালাচ্ছিল কে কত ভ্যাকসিন নিজেদের দখলে আনতে পারে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন, বিনামূল্যে টিকা পাবে সারা দেশের মানুষ। বেসরকারি হাসপাতালে বাণিজ্যিকভাবে টিকা বিক্রির প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে অবশ্য বেসরকারি হাসপাতালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
প্রশংসা কুড়িয়েছে টিকা কার্যক্রম
করোনা নির্মূলে শুরু হওয়া টিকা কার্যক্রম এর মধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। শুরুতে টিকা নিয়ে নানা গুজব-অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা ছিল। কিন্তু মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জোয়ারে ভেস্তে গেছে সে প্রচেষ্টা। অব্যাহতভাবে নিবন্ধনের চাপ বেড়েছে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে। টিকা কেন্দ্রে এখনও ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। রাজধানী থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন অগুণিত মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে টিকাদান শুরুর পর থেকে ২ মে পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬১৬ জন।আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৪১ জন।দুই ডোজ মিলিয়ে ৮৭ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ হয়েছে।
ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ ২৬ এপ্রিল থেকে আপাতত বন্ধ রয়েছে। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬১৬ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৬ লাখ আট হাজার ৭৬৭ জন আর নারী ২২ লাখ ১০ হাজার ৮৮৯ জন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়া ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৪১ জনের মধ্যে পুরুষ টিকা নিয়েছেন ১৯ লাখ দুই হাজার ৪০৫ জন আর নারী টিকা নিয়েছেন ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৬ জন। ২ মে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৮ জন।
দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়।প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ৮ এপ্রিল থেকে। টিকা প্রয়োগকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে ৫৪তম স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশেই শুরু হয়েছে গণটিকা দান কর্মসূচি।
সারা বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের ২ শতাধিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। প্রশংসা করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও।
বাংলাদেশেও সম্ভব টিকা উৎপাদন
বাংলাদেশে অন্তত তিন থেকে চারটা ওষুধ কোম্পানি রয়েছে যারা টিকা উৎপাদনে সক্ষম। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি এখন আর আগের অবস্থায় নাই। এগুলো আগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি উন্নত। বিশ্বমানের কোম্পানিও রয়েছে কয়েকটি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। এমনকি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নানা ওষুধও বাংলাদেশ থেকে অন্যদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা দেশে মেশিনপত্র আছে, ফ্যাক্টরি আছে, দক্ষ জনবল আছে- শুধু প্রয়োজন প্রযুক্তি। আর রাশিয়া ও চীন তো এসবের আদ্যেপান্ত জেনেই বাংলাদেশকে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে।
শেষ কথা
সত্যি করে বলতে কি, এখনও ভাবতে অবাক লাগে কি করে আমরা এতো আগে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেয়ে গেলাম। বিশ্বের অন্তত ১৩০টি দেশ যখন এক ডোজও টিকা পায়নি তখন আমরা দিব্যি লাইন ধরে টিকা দিচ্ছি। তাই কেউ মানুক আর না মানুক এ কথা স্বীকার করতেই হবে, ভ্যাকসিনের এমন বিশ্ব পরিস্থিতিতে উন্নত দেশ না হয়েও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। জনসংখ্যার সঙ্গে টিকাদানের অনুপাত হিসাব করলেও বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখতে হবে। এর জন্যে ভ্যাকসিন হিরো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। অগ্রিম টাকা প্রদানের মত সুদূরপ্রসারী উদ্যোগও নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর পরই বাংলাদেশ পেয়ে গেছে ভ্যাকসিন। শুধু ভুল যেটা হয়েছে সেটা হলো কেবলমাত্র একটি উৎসে সীমাবদ্ধ না থেকে ফাইজার-মডার্না-সিনোফার্ম-স্পুটনিক-ভি সহ আরও কয়েক জায়গায় প্রাপ্তির এই উদ্যোগকে ছড়িয়ে দেয়া যেতো। তবুও মনে হয় ভুলটুকু শুধরে টিকার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে এবং নিশ্চিতভাবে সেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বাংলাদেশের রয়েছে।
জসীম উদ্দীন মাসুদ, সরকারি কর্মকর্তা
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ