জসীম উদ্দীন মাসুদ
আপডেট: ১৩:১৪, ১১ মে ২০২১
বাঁচতে হলে মাস্ক নিয়েই চলতে হবে
জসীম উদ্দীন মাসুদ
মাস্ক পরা অবস্থায় সুস্থ ব্যক্তি করোনা সংক্রমিতের কাছে গেলেও সুস্থ ব্যক্তির শরীরে যে পরিমাণ ভাইরাস ঢুকতে পারে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই ব্যক্তিকে কাবু করার ক্ষমতা রাখে না। বরং মাস্কের মধ্য দিয়ে সামান্যতম ভাইরাস ঢুকার ফলে দেহে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রায় ভ্যাকসিনের মতো কাজ করে বলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভিমত। তাই মাস্ক ছাড়া চলাফেরা আত্মহত্যার শামিল।
শুরুর কথা
উহান পরবর্তী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির কথা বলছি। ফার্মেসিতে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে আমার কাছে এক বন্ধু এলেন সাহায্যপ্রার্থী হয়ে। তিনি বেরিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তার পরিবারের জন্যে মাস্ক কিনতে। অনেক কষ্ট করে ১০ গুণ দাম দিয়ে তিনি ২০ পিছ মাস্ক কিনতে পেরেছেন। আমেরিকাতেও নাকি মাস্ক পাওয়া যাচ্ছেনা। কি তাজ্জব ব্যাপার! বন্ধুর গাড়িতে চড়ে মাস্ক কেনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বের হয়ে হাড়ে হাড়ে সেই ব্যাপারটাই টের পেলাম। কোথাও মাস্ক নেই। কোন কোন ফার্মেসিওয়ালা বললো, বিক্রির মতো কোন মাস্কই নেই তাদের হাতে, বেশি লাভের আশায় বরং তারাই হন্যে হয়ে খুঁজছেন মাস্ক।
যাই হোক, চরকির মতো ঘুরতে ঘুরতে কিছুটা পরিচিত এক ফার্মেসিতে অনুনয় বিনয় করতে তিনি আমার প্রতি অনেকটা কাতর হলেন ঠিকই, কিন্তু ১ প্যাকেট মাস্কের ১০-১২ গুণ দাম হাঁকলেন। বুঝতে পারলাম সময় যত গড়াচ্ছে মাস্কের দাম ততই বাড়ছে। এটাও হারাবো ভেবে ছোঁ মেরে হাতে নিয়ে দাম চুকিয়ে ভালয় ভালয় কেটে পরলাম। সেদিন মাস্কের যথার্থ মাহাত্ম্য বুজতে পেরেছিলাম। দু’বছর দু’মাস সময়ের পরিক্রমায় সেই দাম অনেকটা কমে এলেও মাস্কের গুরুত্ব বহাল তবিয়তে সেই আগেই মতোই আছে, বরং বেড়েছে বহুগুণ।
পুরানো সেই দিনের কথা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্যে এ পর্যন্ত যত উপায় উদ্ভাবিত হয়েছে তার মধ্যে মাস্ক পরিধান হলো সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আজ থেকে ১২৪ বছর আগে পোল্যান্ডের ব্রেসলাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের প্রধান জোহান মিকুলিক্জ ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচার জন্যে ১৮৯৭ সালে মুখে দুইদিকে রশিওয়ালা কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার শুরু করেছিলেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে দমকলকর্মী ও সৈন্যদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম হিসেবে এ মাস্ক ব্যবহার করা হতো। তবে প্রথম সার্জিক্যাল মাস্কটি এসেছিল ১৮৯৯ সালে, যখন কার্ল ফ্লেজ যক্ষ্মার জীবাণু সম্পর্কিত সংক্রমণের তত্ত্বটি আবিষ্কারের গবেষণা চালাচ্ছিলেন।
আর মহামারীর সময় আমরা যে মাস্ক পরতে শিখেছি তার পথ প্রদর্শক ছিলেন মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে জন্মগ্রহণ করা চীনা চিকিৎসক উ লিয়ান থে, যার আসল নাম ছিল ‘গো লেয়ান টাক’। তিনি লিভারপুলে ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এ স্যার রোনাল্ড রস এর অধীনে এক বছর পোস্ট-গ্রাজুয়েট রিসার্চ করেছিলেন। তারপর ম্যালেরিয়া ও টিটেনাস নিয়ে গবেষণা করেন প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে। ১৯১০ সালে চীনে দেখা দিল ‘মনচুরিয়ান প্লেগ’ মহামারী। ক্যাম্ব্রিজ-পাশ তরুণ উ লিয়ান থে প্লেগ আক্রান্ত এলাকা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘মাস্ক পরলেই আটকানো যাবে মহামারী।’ প্রথম দিকে অনেক চিকিৎসক তাকে অবজ্ঞা ও অপমানিত করলেও ধীরে ধীরে সবাই বুঝতে পারে মাস্কই মহামারী থেকে বাঁচাবে মানুষকে। এর চূড়ান্ত প্রমাণ মেলে ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর সময়। তার দেখানো পথ ধরে এখনও গোটা বিশ্বে ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্প্যানিশ ফ্লু থেকে শুরু করে, সার্স ও হালের করোনাভাইরাস রুখতে মাস্ক ব্যবহৃত হচ্ছে। ঠিক যে পদ্ধতিতে লিয়ান থে ‘অ্যান্টি-প্লেগ মাস্ক’ তৈরি করেছিলেন আজও চলছে সেই পদ্ধতিই। একটুও বদলায়নি।
মহামারীতে মাস্ক কেন পরতেই হবে
কথা বলার সময়, হাঁচি, কাশির সময় মুখ-নাক থেকে বেশকিছু তরলবিন্দু বা ড্রপলেট বেরিয়ে আসে। একজন করোনা আক্রান্তের ড্রপলেটে থাকে ভাইরাস। আক্রান্ত মানুষটা কথা বললে, হাঁচলে বা কাশলে ড্রপলেট বের হয়। যেগুলো বাতাসে ৩-৪ ঘণ্টা ভেসে থাকতে সক্ষম। সেই ড্রপলেট কোনো সুস্থ ব্যক্তির নাক, মুখ, চোখ হয়ে শরীরে প্রবেশ করা মানেই তার দেহে ঢুকে গেলো করোনাভাইরাস। কিন্তু মাস্ক পরলে মাইক্রো-ড্রপলেট থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে অনায়াসে। ২০১৬ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি সমীক্ষায় বলা হয়, মানুষ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২৩ বার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করে। দীর্ঘসময় ধরে টানা একটি মাস্ক পরে থাকা বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হলেও বায়ুবাহিত ক্ষতিকর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদার্থের হাত থেকে বাঁচার জন্যে মানুষ তা এখন করছে।
মাস্কের ধরণ ও সঠিক ব্যবহার
মাস্ক যদি পরতেই হয় এবং এটা থেকে উপকার পেতেই হয়, তবে সেটা পরতে হবে সঠিকভাবে। বদলাতে হবে নিয়মিত এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণত নীল রংয়ের হয়ে থাকে, যা রাবারের মাধ্যমে শক্তভাবে কানের মধ্যে আটকানো যায়। এর মাধ্যমে মুখ, চিবুক ও নাক ঢাকা সম্ভব হয়। আর এসব মাস্কের ওপরে একটি শক্ত স্ট্রিপ থাকে, যা সহজে মুখ-নাক ঢেকে রাখে। তবে ব্যবহারের পাশাপাশি এ ধরনের মাস্ক সঠিকভাবে খোলার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খোলার সময় খেয়াল রাখা উচিত যেন এতে কোনো ময়লা না লাগে এবং একবারে খোলা যায়।
কাপড়ের মাস্ক ধুয়ে ব্যবহার করা যায় বলে এটা অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন নকশা করে বর্ণিলভাবে এই মাস্ক উপস্থাপন করা যায়। কাপড়ের মাস্ক দিনে কমপক্ষে একবার পানি, সম্ভব হলে গরম পানি (কমপক্ষে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আঁচে) এবং সাবান বা গুড়া সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মেশিনে ধোয়ার ক্ষেত্রে, কাপড়ের ধরণ অনুযায়ী উপযুক্ত উষ্ণতার সেটিং ব্যবহার করতে হবে।
মাস্ক পরার সময়
- সব সময় সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পর মাস্ক পরা শুরু করুন।
- মাস্কটি পরিষ্কার আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। এতে ছিদ্র বা গর্ত আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। মাস্কটি ময়লা বা নষ্ট হলে এটি পরবেন না।
- মাস্কটি এমনভাবে পরুন যাতে মুখ, নাক এবং চিবুক ভালোভাবে ঢেকে থাকে এবং পাশে কোনো ফাঁক না থাকে।
- মাস্ক পরা অবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্যে নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হোন।
মাস্ক খোলার সময়
- মাস্কটি খোলার আগে দুই হাত ধুয়ে নিন।
- ইলাস্টিক বন্ধনী বা গিটগুলো ধরে মাস্কটি খুলুন। মাস্কের সামনে অংশে স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন।
- মাস্ক খোলার পর আপনার দুই হাত ধুয়ে নিন।
- কাপড়ের মাস্ক প্রতিবার ব্যবহারের পরে ধুয়ে ফেলা এবং একটি পরিষ্কার ব্যাগে সংরক্ষণ করা উচিত।
মেডিকেল মাস্কগুলো একবার ব্যবহার উপযোগী এবং ব্যবহারের পর এগুলো ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়া উচিত।
শরীরচর্চা, খেলাধুলা বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপের সময় মাস্ক পরা উচিত নয়। এতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ঘাম মাস্ককে ভিজিয়ে ফেলতে পারে, যা নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা তৈরি করবে এবং জীবাণু বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
শিশুদের জন্য মাস্ক
শিশুদের জন্য মাস্ক বাছাই করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বড়দের জন্য বানানো মাস্ক শিশুদের মুখে সঠিকভাবে লাগে না। শিশুদের জন্য মাস্ক কিনার সময় বা বানানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মাস্ক শিশুর মুখ, নাক ও থুতনি ভালোভাবে ঢেকে রাখে এবং গালের পাশে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে বা তাদের চোখ ঢেকে না যায়। শিশুরা মাস্ক পরে দ্রুততার সঙ্গে হাঁটা বা কথা বলার সময় যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে নিঃশ্বাস নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাইরে পা দিলেই মাস্ক জরুরি
বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত্র প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীই উপসর্গহীন। এদের শরীরে ভাইরাস বাসা বাঁধলেও রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে না। মুশকিল হলো, এরা কিন্তু অন্যের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে অনায়াসে। রোগ লক্ষণ থাকে না বলে এদের চিহ্নিত করাও কঠিন। আপনি বুঝতেও পারবেন না, সামনের মানুষটা উপসর্গহীন কি না! এই সমস্যা সমাধানে বাড়ির বাইরে পা দিলেই মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে , করোনা মোকাবিলায় মাস্কের বিকল্প নেই। মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোলে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের ভয়ে শুধুই সঙ্গে আছে মাস্ক
পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের ভয়ে বাংলাদেশে মাস্ক সবাই সঙ্গে রাখছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যেখানে মাস্ক থাকার কথা সেখানে নেই। কারো থুতনিতে, কারো কানের পাশে। কখনো আবার নাকের নিচে এবং কারো মাস্ক রয়ে যাচ্ছে পকেটে। আবার মাস্ক পরা মানুষরা কোন কোন জায়গায় হাস্যরস আর ট্রলের সম্মুখীন হচ্ছেন। জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় এ প্রবণতা থেকে আমাদের উত্তরণ প্রয়োজন।
মাস্ক মানে ওষুধ, মাস্ক মানে ভ্যাকসিন
দেশের সকল মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে অনেক সময় লাগবে। করোনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাইরাস কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করলে ওই ব্যক্তি সংক্রমিত হন। তার আগে নয়। এই মুহূর্তে সবারই বোঝা দরকার, মাস্ক হলো এমন একটা ওষুধ, এমন একটা ভ্যাকসিন যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে রুখে দেওয়া যায় করোনা। নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরে থাকলে ভাইরাস থেকে যেমন নিজে সুরক্ষিত থাকা যায়, তেমনই অন্যকেও সংক্রমিত করার অপরাধ থেকে বাঁচা যায়।
মাস্ক পরা অবস্থায় সুস্থ ব্যক্তি করোনা সংক্রমিতের কাছে গেলেও সুস্থ ব্যক্তির শরীরে যে পরিমাণ ভাইরাস ঢুকতে পারে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই ব্যক্তিকে কাবু করার ক্ষমতা রাখে না। বরং মাস্কের মধ্য দিয়ে সামান্যতম ভাইরাস ঢুকার ফলে দেহে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রায় ভ্যাকসিনের মতো কাজ করে বলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভিমত। তাই মাস্ক ছাড়া চলাফেরা আত্মহত্যার শামিল। কোনো কারণে দূরত্ব হয়তো সব সময় মানা সম্ভব হয় না। বাঁচার একমাত্র উপায় চোখ, নাক, মুখ ঢেকে রাখা। এতে মুখোমুখি হলে মাস্কই বাঁচাবে। মাস্ক পরার অর্থ নিজেকে বাঁচানো এবং রোগ না ছড়ানো।
মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে সরকার
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই সরকার কর্তৃক মাস্ক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করে বলা হয়েছিল ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি কোনো অফিসেই মাস্ক ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না, কোনো সেবাও পাবে না। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করার জন্য দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালতও চালানো হচ্ছে। দেশব্যাপী অর্থ জরিমানাও করা হচ্ছে।
মানুষকে মাস্ক পরাতে সরকার মে মাসের শুরুতে আবারও ‘কঠোর অ্যাকশনে’ যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বললেন, ‘৪ মে থেকে পুলিশ ও সিটি করপোরেশন এবং প্রশাসন দেশের প্রতিটি মার্কেটে সুপারভাইজ করবে। মাস্ক ছাড়া যদি বেশি লোকজন ঘোরাফেরা করে, তাহলে প্রয়োজনে সেসব মার্কেট বন্ধ করে দেব। দোকান মালিক সমিতি এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।’ ইতোমধ্যে এ ঘোষণার অংশ হিসেবে আড়ংসহ দেশের অনেক মার্কেটে জরিমানাসহ দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার বরাবরই কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং গত ৬ মে ঘরের বাইরে মাস্ক পরার বিষয়ে আটটি নির্দেশনা দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
মাস্ক পরা নিয়ে সরকারের আট নির্দেশনা
১. কয়েকস্তরবিশিষ্ট সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো, যা এককালীন ব্যবহার করতে হবে।
২. অনেকে মাস্ক পরার সময় নাক খোলা রেখে শুধু মুখ ঢেকে রাখে, যা সঠিক নয়। বরং উপরের মেটাল অংশটাকে নাকের সঙ্গে চেপে ও নিচের অংশটাকে থুঁতনির নিচে নিয়ে উভয়ই ঢেকে রাখতে হবে। সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ঢেকে রেখে মাস্ক পরতে হবে।
৩. অনেকে মাস্ক থুঁতনি পর্যন্ত খুলে রেখে কথাবার্তা বলেন। এটাও ঠিক নয়। এতে লেগে থাকা জীবাণু সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
৪. সার্জিক্যাল মাস্ক ঘরে রেখে দিয়ে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা উচিত নয়। একটি মাস্ক সর্বোচ্চ একদিন ব্যবহার করে সেটাকে ধ্বংস করে দিতে হবে।
৫. যেসব স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মুশকিল, যেমন- গণপরিবহন ও বাজার বা দোকানপাট, সেসব জায়গায় মাস্ক পরতেই হবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় ও হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৬. সাধারণ কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পর অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। অপরিষ্কার মাস্ক পরলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ব্যবহার করা মাস্ক জীবাণুমুক্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মাস্ক সাবান পানিতে ভিজিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৭. ভেজা মাস্ক পরিধান উচিত নয়। এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৮. বাইরে গেলে দুটি মাস্ক ব্যাগে রাখা দরকার। মুখে বাঁধা মাস্ক কোনো কারণে নষ্ট হলে বা ভিজে গেলে অন্যটি ব্যবহার করতে হবে।
শেষ কথা
দেশে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করার জন্য অন্তত ১০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আমাদেরকে সবকাজই চালিয়ে নিতে হবে। তাই মাস্ক পরাকে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রণালির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। সিঙ্গাপুরের ৯২ শতাংশ, স্পেনে ৯০, থাইল্যাল্ডে ৮৮, হংকংয়ে ৮৬ এবং জাপানের ৮৬ শতাংশ মানুষ নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করে। আমাদের দেশে এ ধরণের কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে শতভাগ মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। মনে রাখতে হবে, একাজে বাধ্য করানো শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। আমরা যে যেখানে আছি, নিজেকে বাঁচাতে, নিজের পরিবারকে বাঁচাতে এবং দেশকে ভয়াবহ এ সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে মাস্ক ব্যবহারকে সবাই মিলে একটি সর্বজনীন সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোন বিকল্প নেই।
জসীম উদ্দীন মাসুদ, সরকারি কর্মকর্তা
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ