জসীম উদ্দীন মাসুদ
আপডেট: ২০:০৫, ২১ জুন ২০২১
বিটকয়েনের নিয়ন্ত্রণ কতটা যৌক্তিক?
আমরা কিন্তু একসময় সাবমেরিন ক্যাবল বা পেপালকে মেনে নিতে পারিনি। একই উদাহরণ কি আবার আমরা তৈরি করতে যাচ্ছি? অদূর ভবিষ্যতে বিটকয়েন আন্তর্জাতিক মুদ্রায় পরিণত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।
ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন
২০০৮ সালের শেষের দিকে বিটকয়েন উদ্ভাবন করেছিলেন ছদ্মনাম ব্যবহার করা এক জাপানী কম্পিউটারবিজ্ঞানী সাতোশি নাকামোতো। যদিও এর পরে তার অস্তিত্ব আর মেলেনি, কিন্তু তার উদ্ভাবিত এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। বিটকয়েন এমনই এক মুদ্রা, যাকে দেখাও যায় না, আবার ছোঁয়াও যায় না। একে ঘরে রাখার প্রয়োজন নেই, আবার ব্যাংকেও রাখার প্রয়োজন নেই।
বিশ্বের বিভিন্ন মুদ্রার যেমন বিভিন্ন নাম রয়েছে তেমনি ভার্চ্যুয়াল মুদ্রারও রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। স্টেলার, ইথারিয়াম, লাইটকয়েন এইরকম প্রায় এক হাজার মুদ্রা প্রচলিত আছে। তবে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রার নাম বিটকয়েন। সম্প্রতি যোগ হয়েছে ফেইসবুকের লিবরা।
ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার বিশাল বাজার
বর্তমান বিশ্বে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বাজার দাঁড়িয়েছে এ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার। বাজারে প্রচলিত ১০ থেকে ১২ ধরনের মুদ্রা বেশি পরিচিত হলেও বাজার দখলের হিসাবে ৭০ শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছে বিটকয়েন। মার্কিন বিলিওনিয়ার এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলা এই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে দেড়’শ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে বিটকয়েনের বাজার ফুলেফেপে উঠেছে।
বিটকয়েনের ভিত্তি
বিটকয়েনের সরবরাহ খুব সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং সীমিত। কেউ চাইলেই নতুন করে বিটকয়েন তৈরি করতে পারবে না বা ইস্যু করতে পারবে না। বিটকয়েনের সংখ্যা কখোনই ২ কোটি ১০ লাখের বেশি হবে না। প্রতিটি বিটকয়েন আবার দশ কোটি ইউনিটে বিভক্ত। এগুলোকে বলা হয় সাটোশিস। এর ফলে বাজারে এখন প্রচলিত মুদ্রাগুলোর মুদ্রামান যেখানে ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে, সেখানে বিটকয়েনের বেলায় তা ঘটে না।
বিটকয়েনের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে একেকটি বিট কয়েনের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের মোট ৬৯টি দেশে সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে চলছে এই ব্যবসা। প্রতিবেশি ভারতও আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিয়েছে এ লেনদেনকে। তবে বাংলাদেশ ২০১৪ সালে অবৈধ ঘোষণা করে বিট কয়েন লেনদেনকে। নিষিদ্ধ করা তালিকায় আছে বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, নেপাল ও মেসেডোনিয়া।
বিটকয়েনে কোটিপতি
ব্যাংকিং পদ্ধতির মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার জটিল না হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এটি ব্যবহার করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার নজির আছে। ২০১১ সালে এরিক ফিনম্যান নামে এক ১২ বছর বয়সী কিশোর ১২ ডলারের বিটকয়েন কিনে এক হাজার ডলারে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়। তার কাছে এখন ৪০৩টির মতো বিটকয়েন আছে। যার বাজারদর কয়েক কোটি টাকা! বিটকয়েন যত বেশি বেশি লেনদেন হয়, বাজারদর তত ওঠানামা করে।
বিটকয়েনের সহজ ব্যবসা
সরকার বা ব্যাংকগুলো বিটকয়েন ছাপে না বা নিয়ন্ত্রণ করেনা। নোট বা ধাতব মুদ্রার মত এটি পকেট বা পার্সে রাখা যায়না, এটির অবস্থান অনলাইনে। এক্সপেডিয়া, অ্যামাজন বা মাইক্রোসফটের মত বড় বড় কোম্পানিগুলোও এখন বিটকয়েন গ্রহণ করছে। তবে প্রচুর মানুষ এখন প্রধানত বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিটকয়েন কিনে রাখছে।
মনে করুন, আপনার কাছে কয়েক লক্ষ অলস টাকা পড়ে আছে। আপনি সেগুলো ব্যাংকে রাখতে চান না। আবার নিজের কাছেও রাখতে চান না। এমন একটা স্থানে রাখতে চান, যেখান থেকে যেকোনো সময় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন, অর্থের মান আবার হঠাৎ করে কয়েক গুণ বাড়ার সম্ভাবনাও থাকবে। এটি করতে হলে আপনার সেই টাকা দিয়ে আপনাকে ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হবে। বিটকয়েন বা অন্য যে কোন ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে একটা তুলনামূলক সুবিধা হচ্ছে এগুলোর লেনদেনে কোন মধ্যস্বত্বভোগী থাকে না।
বিটকয়েন জমানোর প্রক্রিয়া
বিটকয়েন লেনদেনকারী অনলাইন প্রতিষ্ঠানে নাম লিখিয়ে এই ব্যবসা শুরু করে থাকেন। তিনি একটি ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেটের মালিক হন, বিটকয়েন জমান। এটি মূলত ডিজিটাল মানি। অর্থাৎ অনলাইনে একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে, সেই অ্যাকাউন্টে ডিজিটাল কোডের মাধ্যমে মুদ্রা সংরক্ষিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট মুদ্রার অ্যাপ নামিয়ে কিংবা তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করে এর ব্যবহার শুরু করতে হয়। অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে গেলে টাকার বিনিময়ে সেখানে বিটকয়েন জমা করতে হবে।
বিটকয়েন ব্যবহার করে অনলাইনে খুব সহজে কেনাবেচা করা যায় বলে এ মুদ্রাব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন বলা হয়। বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগব্যবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। পিয়ার টু পিয়ার অর্থাৎ গ্রাহকের সাথে গ্রাহকের সরাসরি যোগাযোগে অনলাইনে লেনদেন হয় বিটকয়েন।
ব্লকচেইন টেকনোলজির আউটপুট বিটকয়েন
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি প্রোডাক্ট হচ্ছে বিটকয়েন, ব্লকচেইন টেকনোলজির মাধ্যমে যা তৈরি হয়। কিন্তু এই ব্লকচেইন টেকনোলজি তো এই বাংলাদেশেই অনেক কোম্পানি ব্যবহার করছে। এগুলো বৈধ হিসেবেই চলছে। তাছাড়া সরকারও ব্লকচেইন টেকনোলজিকে বিভিন্ন ভাবে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে। ব্লকচেইন এর ভ্যালু পরিমাপক যেহেতু ক্রিপ্টিক ভাবে হয়ে থাকে তাই এখানে ভ্যালুকে কারেন্সি হিসেবে ধরা হয় এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি থাকার কারণে এটাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি বলা হয়।
বিটকয়েনের ব্যবসা কি জুয়াখেলা?
কেউ কেউ এটি মনে করেন যে, বিটকয়েনের দাম কখনোই কমেনা, বরং বাড়তেই থাকে। এটি একটি ভুল ধারণা। বিটকয়েনের বাজারদরের সাথে শেয়ার মার্কেটের তুলনা করা যেতে পারে। এটি যেকোনো সময়ই কমতে বা বাড়তে পারে। বিটকয়েনের বাজারদর মারাত্মকভাবে ওঠানামা করে বলে একে ‘জুয়াখেলা’র সঙ্গে তুলনা করা হয়।
বিটকয়েনের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে বিটকয়েনের দাম পড়ে গেলে মানুষ সর্বস্ব হারাতে পারে। মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি বা শীর্ষ ইমাম শেখ শাউকি আলাম ফতোয়া জারি করেছেন, বিট কয়েনের কেনা-বেচা ইসলামে নিষিদ্ধ। তিনি বলেছেন, ‘ডিজিটাল এই মুদ্রার কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান নেই, ফলে এর ব্যবসার সাথে ঝুঁকি জড়িত। বিটকয়েন শারিয়া বিরোধী, কারণ এটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিসীম ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।’
বাংলাদেশে বিটকয়েন পরিস্থিতি
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিটকয়েন ব্যবসা লাভজনক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এটি নিষিদ্ধ হলেও গোপনে ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন করে বিটকয়েন কেনাবেচা করছে কয়েকটি চক্র। বাংলাদেশে বিটকয়েনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ায় ওয়েবসাইটে নাম লেখানোর পর যে যে দেশে বিটকয়েনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নেই, সেসব দেশ থেকে ডলার বা কোনো পণ্যের বিপরীতে প্রথমে একজন বিটকয়েন সংগ্রহ করেন। এরপর লেনদেন করেন।
দেশে ক’বছর ধরে বিটকয়েন ব্যবসায়ীদের খুঁজে খুজে ধরা হচ্ছে। এত উন্নত প্রযুক্তির আউটপুট নিয়ে যারা কাজ করছে তাদেরকে কেন ধরতে হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নটি আসতেই পারে। বলা হচ্ছে অবৈধভাবে বিটকয়েনের ব্যবসা করে তারা স্বল্পসময়ে কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে। গত ২ মে মো. ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ২০১৩ সাল থেকে তারা এই ব্যবসা করছিল। অভিযোগে বলা হয়েছে, বেসিক বিজ মাকেটিং নামের অনলাইন আউটসোর্সিং কোম্পানির আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ বিটকয়েন লেনদেন ব্যবসা করে আসছিলেন সুমন। প্রতিষ্ঠানটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে।
তাঁর একাধিক ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেট আছে, এসব ওয়ালেটে গ্রেপ্তারের সময়ও লাখ দেড়েক ডলার ছিল। এভাবে সুমন বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন, ঢাকায় তার দুটি ফ্লাট, প্লট, সুপার শপের ব্যবসা আছে। গত এক বছরে সুমন বিটকয়েনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ১২ থেকে ১৫ লাখ ডলার লেনদেন করেছে।
এর আগেও বাংলাদেশে বিটকয়েনের অবৈধ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ঠ অনেককেই ধরা হয়েছে। এ বছর ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে বিটকয়েন প্রতারণা চক্রের মূল হোতা মো. রায়হান ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘অনলাইনে নিষিদ্ধ বিটকয়েন কেনাবেচা ও প্রতারণার মাস্টারমাইন্ড রায়হান সম্প্রতি এক কোটি সাত লাখ টাকা দামের অডি গাড়ি কিনেছেন। মাত্র এক মাসে তার অ্যাকাউন্টে ৩৫ লাখ ইউএস ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
বিটকয়েন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিমত
বাংলাদেশে যেকোন ডিজিটাল মুদ্রা এখনও নিষিদ্ধ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নোটিশ জারি করে প্রত্যেককে এই জাতীয় লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বলেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কোন দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না বিধায় এর বিপরীতে আর্থিক দাবির কোন স্বীকৃতিও নেই।
ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে বিটকয়েনের কোন অনুমোদন নেই। যেহেতু অনুমোদন নেই, সুতরাং এই জাতীয় লেনদেন বৈধ নয়।
বিটকয়েনে জঙ্গি-মাদক-আগ্নেয়াস্ত্র?
অভিযোগ রয়েছে, বিটকয়েনের মাধ্যমে অবৈধ মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রের চালানের অর্থও পরিশোধ করা হয়েছে।
এ বছর ৯ মার্চ ইন্ডিয়া টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠিয়েছে কাশ্মীরে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তরিত করে বিটকয়েনের মাধ্যমে এই পাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তাদের ভাষ্যমতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি বিশেষ অ্যাকশন গ্রুপ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়াল নেওয়াজ ওরফে সোহেল নেওয়াজ ও ফজলে রাব্বি চৌধুরী নামে দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা বলেছিল, জঙ্গি সংগঠনগুলি ২০১৪ সাল থেকে বিটকয়েন সিস্টেমের মাধ্যমে প্রচুর তহবিল পাচ্ছে।
২০২০ সালের আগস্টে মার্কিন সরকার ঘোষণা করে, কয়েকশ ক্রিপ্টোকারেন্সী অ্যাকাউন্ট, চারটি ওয়েবসাইট এবং চারটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এ পদক্ষেপ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর ডিজিটাল মুদ্রার সাহায্যে তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
এল সালভেদরে স্বীকৃতি পেলো বিটকয়েন
এল সালভেদর হচ্ছে বিশ্বের প্রথম কোন দেশ যারা বিটকয়েনকে সরকারিভাবে একটি বৈধ মুদ্রা বা কারেন্সি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ৮ জুন এল সালভেদরের কংগ্রেসে এক ভোটাভুটিতে বিটকয়েনকে আনুষ্ঠানিক মুদ্রার এই স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর ফলে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি বিটকয়েন দেশটিতে একটি বৈধ মুদ্রা হিসেবে লেনদেন করা যাবে।
এল সালভেদরের এই নতুন আইনের ফলে দেশটির সব আর্থিক লেনদেনে এখন বিটকয়েনকে বৈধ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, তবে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিটকয়েনে লেনদেনের প্রযুক্তি নেই তারা ছাড়া। এল সালভেদরের যেসব মানুষ প্রবাসে থাকেন এবং দেশে অর্থ পাঠান, তাদের পক্ষে এখন কাজটা অনেক সহজ হবে। এল সালভেদরের বহু মানুষ তাদের প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজনের পাঠানো রেমিটেন্স বা অর্থের উপর নির্ভরশীল। দেশটির জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ আসে রেমিটেন্স থেকে। এল সালভাদরের প্রায় ২০ লাখ মানুষ বিদেশে থাকেন। কিন্তু মাতৃভূমির সঙ্গে তাদের রয়েছে বেশ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, বছরে তারা দেশে পাঠান প্রায় চার বিলিয়ন বা চারশো কোটি মার্কিন ডলার।
বিটকয়েনের নিয়ন্ত্রণ কতটুকু যৌক্তিক?
অনেকেই বলছেন, উন্নত দেশগুলো যেখানে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিটকয়েন ব্যবহারের অনুমোদন দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের এত কড়াকড়ি আরোপ করা ঠিক নয়। এদিকে ভার্চ্যুয়াল জগতে বিটকয়েন নিয়ে বাংলায় প্রচার চালাচ্ছেন অনেকেই, পাওয়া যাচ্ছে শিক্ষণীয় অনেক টিউটোরিয়ালও। তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের কাছে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য বিটকয়েন হতে পারে আকর্ষণীয় একটি মুদ্রা।
অনেকেই আবার বলছেন, পৃথিবীতে ক্রমেই এই মুদ্রা যেহেতু জনপ্রিয় হচ্ছে তাই এটাকে একদম অস্বীকার করারও উপায় নেই। পুরোপুরি বন্ধ না করে এ বিষয়ে সরকারের গবেষণা করা উচিত বলে অনেকে মত দিচ্ছেন। এ জন্য প্রস্তুতি নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা করা, যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতা যাচাই করা উচিত। বিটকয়েন কোথায় যাচ্ছে এ দিকেও নজর রাখা উচিত।
শেষ কথা
আমরা কিন্তু একসময় সাবমেরিন ক্যাবল বা পেপালকে মেনে নিতে পারিনি। একই উদাহরণ কি আবার আমরা তৈরি করতে যাচ্ছি? অদূর ভবিষ্যতে বিটকয়েন আন্তর্জাতিক মুদ্রায় পরিণত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। অবৈধ মুদ্রা বলে কেউ এর ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে। কারণ বিটকয়েন বা ভার্চ্যুয়াল এই মুদ্রার ব্যাংক আছে বিশ্বের অনেক দেশে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড় বড় ব্যবসায় লেনদেন হচ্ছে বিটকয়েনের মত আরো অনেক মুদ্রার।
দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারক্লাউড লিমিটেডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) তানভীর এহসানুর রহমান বলছিলেন, ‘আমরা মানি বা না মানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা দুনিয়ার অর্থনৈতিক চেহারা বদলে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যে অনেক দেশেই ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা নিয়ন্ত্রিত আকারে অনুমোদন পেতে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও বিশেষ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালু করা যেতে পারে।’
জসীম উদ্দীন মাসুদ, কলাম লেখক
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ