Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

রজত গোস্বামী

প্রকাশিত: ২২:০৭, ৩০ জুলাই ২০২১
আপডেট: ০০:০৬, ৩১ জুলাই ২০২১

করোনার উচ্চ সংক্রমণ এবং বাঙালির মাস্ক বিষয়ে মনস্তত্ত্ব

দেশের সিংহভাগ মানুষ মাস্ক পরিধান করার কথা বললে ’কানাই মাষ্টারের সেই ছাত্রের (বিড়াল) মতো কেন 'মিয়োঁ মিয়োঁ' করে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। এ বিষয়ে একটা গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে দেখেছি, দেশের কোনো হাটে বা বাজারে কিংবা শহরের কোন প্রান্তে যদি একটা ককটেল বা পটকা বিস্ফোরিত হয়, দেখা যায় মানুষ দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে দৌড়ে পালাতে থাকে। এমনকি, কোন কিছুই হয়নি, কেউ একজন বললো- বাজারের ওই প্রান্তে বোমা ফেটেছে, তা শুনেই মানুষ পালাতে থাকে।

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে, সংক্রমণ হারের উঠানামার ভিত্তিতে বারবার লকডাউন দেয়া হচ্ছে। কয়েকমাস থেকে আবার  কোভিড-১৯ এর জীবন বিনাশী ’ডেল্টা ভেরিয়েন্টের’ প্রবল সংক্রমণ শুরু হয়েছে। পহেলা জুলাই থেকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার জন্য ৮ দিনের বিরতি দিয়ে লকডাউন চলছে। এখন দেশে দিনে গড়ে ২০০ প্রাণহানী এবং ১৫ হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। মৃত্যুর মিছিলের এ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে , দেশের মানুষের পরিচিত কেউ না কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং দেশের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞগণ শুরু থেকেই বলে আসছেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রধান উপায় দুইটি। প্রথম হচ্ছে- টিকা গ্রহণ। দ্বিতীয়, দ্রুত টিকা পাওয়া কঠিন, তাই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, বিশেষ করে আবশ্যিক ভাবে মাস্ক পরিধান ও নিজের দুইহাত কিছুক্ষণ পরপর জীবাণুমুক্ত করা। কিন্তু আমার দেশের অধিকাংশ সোনার মানুষরা দুইহাত জীবাণুমুক্ত করা তো দূরের কথা , মাস্কই পড়বেন না। এই লকডাউনের সময়ও দেখা যাচ্ছে মাস্ক না পড়াটা যেন তাদের একটি জেদ।

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয়ভাবে মাইকিং এর কল্যানে মাস্ক জিনিষটা সবার পরিচিত হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, হাট-বাজারে ঘুরে বেড়ানো মানুষ কিংবা দোকানদার/ব্যবসায়ী প্রায় শতভাগেরই মাস্ক আছে, তবে তা দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা নয়, বরং তা থুতনিতে লাগানো, বা পকেটে রাখা। অর্থাৎ, মাস্ক ব্যবহার না করার জেদ।  কোভিড-১৯ মহামারী, এতো সংক্রমণ, এতো মৃত্যু, তারপরও কেনো এই জেদ? 

প্রায় ১২৫/১৩০ বছর আগে শিশু কাব্যগ্রন্থে লেখা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত 'আমি আজ কানাই মাষ্টার' খ্যাত ’মাষ্টারবাবু’ শিশুতোষ কবিতাটি যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কবিতার একটি লাইন- 'আমি বলি চ ছ জ ঝ ঞ / ও কেবল বলে মিয়োঁ মিয়োঁ'। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয়ভাবে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণার পরও দেশের সিংহভাগ মানুষ মাস্ক পরিধান করার কথা বললে ’কানাই মাষ্টারের সেই ছাত্রের (বিড়াল) মতো কেন 'মিয়োঁ মিয়োঁ' করে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। এ বিষয়ে একটা গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

আমি না হয় অবুঝ মানুষ, কিন্তু মাস্ক না পড়া এতসব মানুষের সবাইতো আমার মতো অবুঝ নন। তবে কেনো মাস্ক না পড়ার এতো জেদ? যেখানে সামান্য পটকা/ককটেল ফাটলে দেন ভো-দৌড়, ভূমিকম্প হলে প্রাণভয়ে দৌঁড়ে ঘরের বাইরে চলে আসেন, সেখানে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই ক্রান্তিকালে কেন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। কি এর জবাব? যদি স্বাস্থ্যবিধি না-ই মানবেন, মাস্ক না-ই পড়বেন, তাহলে লকডাউনে কেনো বাইরে গিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলবেন?

নব-উদঘাটিত বাক্য- ’জীবন ও জীবিকার’ কথা বলছেন?  তাহলে, মাস্ক সঠিকভাবে পরিধান করলে ’জীবন ও জীবিকায়’ কি ক্ষতি হয়, বলতে পারেন?

রজত গোস্বামী, অধ্যাপক ও প্রাক্তন সাংবাদিক।

  • খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়