মোহাম্মদ আব্দুল খালিক
আপডেট: ১৩:৩৩, ৯ আগস্ট ২০২১
ব্যক্তি ও সৃষ্টি
দ্বিজেন শর্মা ও তাঁর কুরচি তোমার লাগি
নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা। ছবি : সংগৃহীত
এক.
দ্বিজেন শর্মা (১৯২৯-২০১৭) ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ উদ্ভিদতত্ত্ববীদ ও প্রকৃতি প্রেমিক। যাঁর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করি প্রকৃতির পাশাপাশি দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। এ অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সমান্তরাল পথে তিনি অগ্রসর হয়েছেন।
‘তিনি বুকে টেনে নেন সমগ্র বিশ্বকে। তাঁর মধ্যে গভীর মায়া। গাছপালা, নদী, পুকুর, পাখি সবুজ বনানী- সবাই তাঁকে চিরকাল মুগ্ধ করে এসেছে। নিসর্গই তাঁর একরকম নেশা হয়ে উঠেছিল, পরে তো উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করতে গিয়ে তা পেশাও হয়ে গেল। পাশাপাশি ‘নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা মানুষকে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করতেন। প্রকৃতিকে জয় করা নয়, তাকে ভালোবেসে তার অংশ হয়ে স্নিগ্ধ সুন্দর জীবন যাপনের দিকে তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন।’
কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক দ্বিজেন শর্মার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি মধুময় পৃথিবীর ধূলি’ গ্রন্থের ভূমিকায় উদ্ধৃত এ কথাগুলো ছাড়াও উল্লেখ করেন
‘যে কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করার সংকল্প নিয়ে প্রথম যৌবনেই তিনি বাংলাদেশের উন্মুক্ত প্রকৃতির কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তারপর থেকে কেন্দ্রে পৌছানোর পথ কখনোই পরিত্যাগ করেননি,... প্রায় শতবর্ষব্যাপী অনুসন্ধানের ফলে যে ঐশ্বর্য লাভ করেছিলেন, তাতে কি তৃপ্ত হতে পেরেছিলেন? বেশিরভাগ পিপাসারই অন্ত মিলে, কেবল জ্ঞান পিপাসার অন্ত মেলে না। কিন্তু আমরা কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে, যা পেয়েছি তাতেই আমাদের প্রত্যাশার ঘট পূর্ণ হয়েছে।’
দ্বিজেন শর্মার জন্ম ২৯ মে ১৯২৯ খ্রি. বৃহত্তর সিলেট জেলার (বর্তমান মৌলভীবাজার) বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে। পিতা চন্দ্রকান্ত শর্মা, মাতা মগ্নময়ী দেবী। ছয় ভাই বোনের মধ্যে দ্বিজেন শর্মা ছিলেন প ম। ভাই বোনের অনুক্রম নিম্নরূপ-
- ১.প্রভাত,
- ২. মৃণালিনী,
- ৩. বলরাম,
- ৪.প্রভাবতী (মিঠু)
- ৫. দ্বিজেন্দ্র (খোকা)
- ৬. সন্ধ্যারাণী (খুকি)
শিক্ষকতা দিয়েই তাঁর কর্মজীবনের শুরু। করিমগঞ্জ কলেজে জীববিদ্যার ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে আরম্ভ। পরবর্তীতৈ বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ (১৯৫৮-১৯৬২), ঢাকার নটরডেম কলেজ (১৯৬২-১৯৭৪), তারপর মস্কোর ‘প্রগতি প্রকাশন’ সংস্থায় (১৯৭৪-১৯৯১) অনুবাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন। শিক্ষকতা দিয়ে যে কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল বলা যায় জীবনের শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল ভিন্ন ভাবে, অন্য মাত্রায়।
‘বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে রমনা, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, বলধা গার্ডেনসহ বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষ পরিচিতির আয়োজন করা হয়। তাঁর (দ্বিজেন শর্মা) জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন এ কর্মসূচির প্রাণপুরুষ। এ কাজে তাঁকে সম্মান করা হত একজন প্রকৃতি সাধক মেনটর হিসেবে। উদ্যানগুলোর বৃক্ষ, লতা-গুল্ম শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবাদের কাছে তিনি পরিচয় করিয়ে দিতেন। একই সঙ্গে তিনি প্রতিটির নামকরণ, বিজ্ঞানসম্মত বিবরণ শোনাতেন, বলতেন এগুলোর ভেষজ গুণ ও উপযোগিতা।
এছাড়াও এ বৃক্ষসমূহের প্রজাতি ও দেশ বিদেশের অন্য প্রজাতির সঙ্গে সাদৃশ্য বৈশাদৃশ্য ব্যাখ্যা করতেন। (স্বপন নাথ: দ্বিজেন শর্মার হার্বেরিয়াম ভ্রমণ, ফসল-৪, ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। কর্মসূত্রে অনুদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ এবং নিজের লেখা ষোলো/সতেরোটির মতো। তন্মধ্যে অধিকাংশ বই প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও শিক্ষাবিষয়ক। এক সময় তিনি বেশ কিছু ছোট গল্পও লিখেছিলেন। এগুলো ছাপা হয়েছিল স্থানীয় লিটল ম্যাগাজিনে।
‘জহিরের সঙ্গে আধঘন্টা’ গল্পের কথা তিনি মনে রেখেছেন দীর্ঘদিন। তাঁর লেখা একটি নাটকও একসময় বন্ধু বৃত্তের মধ্যে অভিনীতও হয়েছিল নয়াবাড়ির চন্ডীমন্ডপে। কিন্তু এগুলো পুস্তকাকারে বেড়িয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
১, শ্যামলী নিসর্গ (১৯৮০);
২. সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেনিবিন্যাস (১৯৮০);
৩. ফুলগুলি যেন কথা (১৯৮৮);
৪.বিগল যাত্রীর ভ্রমণকথা (১৯৯১);
৫. গহন কোনো বনের ধারে (১৯৯৪);
৬. ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি (১৯৯৭);
৭. সতীর্থ বলয়ে ডারউইন (১৯৯৯);
৮. সমাজতন্ত্রে বসবাস (১৯৯৯);
৯. গাছের কথা ফুলের কথা (১৯৯৯);
১০. নিসর্গ ও নান্দনিক ভাবনা (২০০০);
১১.জীবনের শেষ নেই (২০০০);
১২. বাংলার বৃক্ষ (২০০১);
১৩. বিজ্ঞান ও শিক্ষা: দায়বদ্ধতার নিরিখ (২০০৩);
১৪. হিমালয়ের উদ্ভিদ রাজ্যে ডেন্টন হুকার (২০০৪);
১৫. কুরচি তোমার লাগি (২০০৭);
১৬. আমার একাত্তর ও অন্যান্য (২০০৮);
১৭. জীবনস্মৃতি মধুময় পৃথিবীর ধূলি (২০১৭);
অসাম্প্রদায়িক চেতনার সহজ, সরল, নির্মল চরিত্রের অধিকারী ছিলেন দ্বিজেন শর্মা। অন্য ধর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ, তাঁর আবেগ ও অনুভূতিকে নাড়া দিযেছে কখনো কখনো। ক্ষেত্র বিশেষ তাঁর ‘শ্রুতি ও মনন’ নির্মাণে তা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনও করেছে বলে তিনি মনে করতেন। তিনি বলেন, ‘রশিদ আলীর বাড়ির পশ্চিমে ছিল গ্রামের একমাত্র মসজিদ। ঐ পথে নিত্য যাতায়াত। সকালে ছেলে মেয়েরা সুরেলা কণ্ঠে কোরান আবৃত্তি করত। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। ঐ সুরের একটা স্থায়ী যোগ ঘটে যায় আমার সত্তায়। এখন মনে হয়, ঐ সুর আমার শ্রুতি ও মনন নির্মাণে বড় একটা ভূমিকা রেখেছে’ [জীবনস্মৃতি: মধুময় পৃথিবীর ধূলি]।
আমরা আজ তাঁর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে ‘এসেও বেশ গভীরভাবে উপজেলব্ধি করতে পারছি বৃক্ষাচার্য দ্বিজেন শর্মা আমাদের জীবনে কতটা প্রভাব বিস্তার করে আছেন। অসংখ্য বিশেষণে বিভূষিত মহিরূহসম সরল এই মানুষটি কখনোই বুঝতে পারেননি; নিজের অলক্ষ্যে কতটা বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি। দেশের প্রকৃতি বিমুখ মানুষদের নতুন করে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রেও সফল তিনি। তিনি এমন একজন মানুষ, যার জন্য পরিবেশ, প্রকৃতি ও উদ্ভিদ জগতের অজানা অধ্যায় গুলো আমাদের সামনে সুন্দরভাবে উন্মোচিত হয়েছে’ [মোকাররম হোসেন, প্রথম আলো, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০]।
আমরা লক্ষ্য করি ‘দ্বিজেন শর্মার দীর্ঘ জীবনের কোনো পর্ব ছিল আশায় উজ্জল, কোনো পর্ব আশা ভঙ্গের বেদনায় মলিন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন আশাবাদী মানুষ। এক অনি:শেষ শুভবোধে প্রশান্ত ছিল তাঁর মন।’ [ফ্ল্যাপ-জীবন স্মৃতি: মধুময় পৃথিবীর ধূলি]
তিনি প্রথম বাগান তৈরি করেন ১৯৫৮ সালে বরিশাল বি.এম করেজে। বর্তমানে অল্প কয়েকটি বড় গাছ ছাড়া সেখানে খুব একটা নেই। প্রকৃত অর্থে বাগান তৈরির হাতেখড়ি ১৯৬২ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজে আসার পর। দ্বিজেন শর্মা বলেন,‘ফাদার টিম অধ্যক্ষ। বি.এম কলেজের মত এখানেও গাছ পালা লাগানোর ভাবনা মনে আসে এবং একটি চিঠির মাধ্যমে তা তাঁকে জানাই। সেটা সম্ভবত ১৯৬৪ সাল। কোনো সাড়া মিলেনা। গরমের ছুটি শুরুর আগের দিন ইংরেজির অধ্যাপক ফাদার জেমস বেনাস দেখা করে পরদিন জীববিদ্যার ল্যাবে আসতে বলেন। গিয়ে দেখি ল্যাবের বিশাল টেবিলে কলেজের কাগুজে নকশা বিছানো এবং কাঠির উপর তুলো জড়িয়ে তৈরি নানা গড়ন ও উচ্চতার অনেক গাছের নমুনা। ফাদার হেসে বললেন এই তোমার ক্যাম্পাস এবার গাছগুলো বসাও যেমনটি থাকে প্রকৃতির মধ্যে বনে-জঙ্গলে। ল্যান্ডস্ক্যাপ উদ্যান নির্মাণে এই আমার হাতে খড়ি’ [ভূবন ভ্রমিয়া শেষে: কুরচি তোমার লাগি]।
দ্বিজেন শর্মা লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ অনেক সম্মাননা অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এই নিসর্গব্রতী, প্রকৃতি-প্রেমী, ‘বৃক্ষাচার্য’ পরলোক গমন করেন।
দুই
কুরচি তোমার লাগি বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের অমর একুশে বই মেলায়। প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশন, ১২৭ আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা), শাহবাগ, ঢাকা-১০০০। গ্রন্থটির প্রথম ফ্ল্যাপে বলা হয়েছে, ‘প্রকৃতিকে বশ্য বানাতে গিয়ে আজ নিজেই সে কোণঠাসা। এই উপলব্ধি মানুষকে এখন প্রকৃতির সঙ্গে একটা আপোসরফার পথ খুঁজতে বাধ্য করেছে আর সেই বৃত্তান্তই ত এই সংকলনে প্রাধান্য পেয়েছে।’ এরই আলোকে ‘কুরচি তোমার লাগি’ বইটির সূচিপত্রের দিকে আমরা একটু দৃষ্ঠি দিতে পারি। যেমন-
ফুল ফুটুক না ফুঠুক, বনে এমন ফুল ফুটেছে, বৃক্ষশোভা: স্মৃতি বিস্মৃতির কড়চা, লাঈক ফতেহ আলীর সঙ্গে কল্প আলাপ, নগর বৃক্ষের দেখভাল, বাাগান: নির্মাণ ও নিয়তি, ভূবন ভ্রমিয়া শেষে, বসন্ত জাগ্রত: লন্ডন, চেলসি পুষ্প-মেলায়, আমাদের দেওদার গাছ, বোটানিক উদ্যানের উদ্বোধন, বিনোদন উদ্যানের রূপবদল, প্রাণসম্পদ ও প্রতিপক্ষ, সভ্যতার ভার, নৃ জাতির নিয়তি, পরিবেশের কথকথা, মরুজয়ে রেজাখান, বনফুলের বিনোদ মালা, এক উন্নয়ন ব্রতীর কথা, অধরা মাধুরী ধরেছি এবং একটি সাক্ষাৎকার’ শিরোনামযুক্ত বিশটি লেখা স্থান পেয়েছে ১০৩ পৃষ্ঠার এই পুস্তকে। বইটির নামকরণ হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পঙক্তি থেকে। রবীন্দ্রনাথের কুরচি কবিতার কিছু অংশ-
‘কুরচি, তোমার লাগি পদ্মেরে ভুলেছে আনমনা
যে ভ্রমর, শুনি নাকি তারে কবি করেছে ভর্ৎসনা।
আমি সেই ভ্রমরের দলে। তুমি আভিজাত্যহীনা,
নামের গৌরবহারা শ্বেতভুজা ভারতীর বীণা
তোমারে করেনি অভ্যর্থনা অলংকার ঝংকারিত
কাব্যের মন্দিরে। [কুরচি: বনবাণী]’
বৃক্ষশোভা: স্মৃতি বিস্মৃতির কড়চা লেখাটি তিনি শুরু করেছেন এভাবে-‘১৯৬৪ সাল আমার প্রথম বই ‘শ্যমলী নিসর্গ’তে লিখে ছিলাম- রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,
‘‘মানুষের লোকালয় যদি কেবলই একান্ত মানবময় হয়ে উঠে, এর ফাঁকে ফাঁকে যদি প্রকৃতি কোনোমতে প্রবেশাধিকার না পায়, তা হলে চিন্তা ও কর্ম ক্রমশ কলুষিত, ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে নিজের অতলস্পর্শ আবর্জনার মধ্যে আত্মহত্যা করে।’’ নতুন ঢাকার ছায়াঘন পথে চলার সময় একথাটি বার বার মনে পড়ে।’
লেখাটিতে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল এবং প্রতিষ্ঠানের এক সময়ের দেশি বিদেশি অস্তিত্ববান বৃক্ষ, লতা-গুল্ম ইত্যাদির বিলুপ্তি সংবাদ এবং বিদ্যমান বৃক্ষাদির কিছুটা বর্ণনা তুলে ধরেছেন। অপর আরেকটি লেখায় তিনি উল্লেখ করেন-
‘বাংলাদেশের বাগানে এখনো টেবেব্যুইয়া, লিগনামভিটি, গুলগুল, কলুভিল নেই, এগুলো লাগানো আবশ্যক মনে করি। তাছাড়া আমাদের পাহাড়-জঙ্গলে আছে দুলি-চাঁপা, রামডালু, পুন্নাগ, গুলাল, উদাল, নাগকেশর, পালাম যেগুলো বাগানে লাগানো শুধু সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যের জন্যই নয়, ওদের বিলুপ্তি ঠেকানোর জন্যও আবশ্যক’ [লাঈক ফতেহ আলীর সঙ্গে কল্প আলাপ]।
বিভিন্ন স্থানে উদ্যান তৈরি, বৃক্ষরোপন ও সংরক্ষণের যথাযথ পরিকল্পনা না করে বা প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় না এনে যত্রতত্র রোপন, প্রতিস্থাপন এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোনো প্রকার বিচার বিবেচনা না করে বিনাশ সাধন। এসব ক্ষেত্রে দ্বিজেন শর্মা দ্বিমত পোষণ করে অনেক সময় বেশ লেখালেখিও করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে মনে হয়নি। এ প্রসঙ্গে ‘নগর বৃক্ষের দেখভাল’ লেখাটিতে তিনি উল্লেখ করেন,
‘আমি ১৯৬২ সাল থেকে ঢাকা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা, উদ্ভিদ আমার পেশা ও নেশা, সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সর্বদাই যোগাযোগ ছিল ও আছে। অনেক লিখেছি কিন্তু বিশেষ কোনো ফলোদয় হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত এমন ধারণা জন্মেছে যে, আমাদের দেশে লিখে ব্যক্তিগত সুনাম কুড়ানো ব্যতীত কোনো বাস্তব ফললাভ ঘটে না।’
তারপরও তিনি লিখেছেন বিশৃঙ্খল উদ্যানশৈলীর একজন ‘কঠোর সমালোচক’ হিসেবে।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন এবং শিক্ষার্জন বিষয়ে তরুণদের উদ্দেশ্যে শর্মা তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন এভাবে-
‘তরুণ প্রজন্মকে যেহেতু আগামীতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে সে জন্য বিদ্যালয়িক পড়াশোনার বাইরে তাদের স্ব স্ব আগ্রহের ক্ষেত্রে আরো ব্যাপক পড়াশোনা প্রয়োজন। আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার পক্ষে অপ্রতুল। তাই বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডার ও বিশ্ববরেণ্য মানুষের দিকে হাত বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে স্বদেশের মানুষ ও প্রকৃতিকে গভীর ও নিবিড় ভাবে জানার চেষ্টায় নিরলস থাকতে হবে। পরিবেশ উন্নয়ন যেহেতু দেশের গোটা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়, তাই সমস্যা সমাধানে হলিস্টিক বা সর্বতোমুখী শিক্ষা গ্রহণও খুবই জরুরী’ [একটি সাক্ষাৎকার]।
একটি সাক্ষাৎকার অংশে তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘প্রকৃতিতে আমি আকৃষ্ট, তবে প্রকৃতি ও মানুষের আন্তঃসম্পর্ক, প্রকৃতির সঙ্গে সভ্যতার দ্ব›দ্ব ইত্যাদি বিষয়েই অধিকতর আগ্রহী। আমার লেখায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা আছে, কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আত্মিক ও আর্থিক গুরুত্ব উন্মোচনই আমার লক্ষ্য।’ আমরা দেখব কুরচি তোমার লাগি গ্রন্থের অধিকাংশ লেখায় বা অন্যত্রও দ্বিজেন শর্মা তাঁর এই মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। কাজেই ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আত্মিক ও আর্থিক’ লাভালাভ ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে দ্বিজেন শর্মা অধিকতর পাঠ এবং প্রকৃতির প্রতি আমাদের আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
[ফসল, সংখ্যা ৫, মার্চ ২০২১ এ প্রকাশিত]
অধ্যাপক আব্দুল খালিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ