মোহাম্মদ আবদুল খালিক
আপডেট: ১২:১৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
সৈয়দ মহসিন আলী: এক আলোড়িত রাজনীতিবিদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী। ফাইল ছবি।
বলা যেতেই পারে কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব থাকেন যাঁরা দাগ কেটে যেতে পারেন তাঁদের দীর্ঘ কিংবা সংক্ষিপ্ত, বর্ণাঢ্য অথবা সাদামাটা জীবনের বাঁকে বাঁকে, মানুষের মনের গহীনে। আর তাই সাধারণ মানূষ স্মরণ করেন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়, তাঁদের হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ ও ভালো কাজের প্রতিদান হিসেবে। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেন কিছু ত্রুটি বিচ্যুতিকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে রেখে। অনেক ক্ষেত্রে ভালো কাজগুলো ওজনদার হয়ে ওঠে বিচ্যুতিকে হালকা করে দিয়ে।
সৈয়দ মহসিন আলী (১৯৪৮-২০১৫) এরকমই একজন নিষ্ঠাবান সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন- যিনি নানাদিক থেকেই বহুল আলোচিত ও আলোড়িত এক ব্যতিক্রমী মানুষ। অনেকেই তাঁকে বড় আত্মার অধিকারী, হৃদয়বান ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর ঔদার্যের, মানবিকতার গুণকীর্তন করেন, কেউ কেউ বা তাঁর সমালোচনায়ও মুখর ছিলেন। এটাই স্বাভাবিক, মানুষ তো একবারে ত্রুটিমুক্ত হতে পারে না।
সৈয়দ মহসিন আলীকে নিয়ে তৈরি আইনিউজের ভিডিও (নীচে)
আমরা জানি তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে লড়াই করে যাওয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমৃত্যু জাতীয় সংসদ সদস্য ও গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদক স্বাধীনতা পুরস্কারে সম্মানিত গণ-মানুষের একান্ত আপনজন। গরীব ও নিপীড়িত জনের ছিলেন ভরসাস্থল। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে যার বিপুল আগ্রহ ছিল, ছিল আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতাও।
মৌলভীবাজার পৌরসভার তিন তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং দুইবার জাতীয় সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশেষ করে মৌলভীবাজারের যে সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তিনি কাজ করেছেন, এগুলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন তার মধ্যে-
১. বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, মাতারকাপন, মৌলভীবাজার।
২. ডায়াবেটিক সমিতি, মৌলভীবাজার শাখা।
৩. দি ফ্লাওয়ার্স কে জি এন্ড হাই স্কুল, মৌলভীবাজার।
৪. মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ।
৫. দি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, মৌলভীবাজার শাখা।
৬. সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া মন্ত্রী হিসেবে সারা দেশব্যাপী সৈয়দ মহসিন আলীর অনেক উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড হয়তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যা পরিপূর্ণভাবে আমাদের দৃষ্টিতে আসেনি।
প্রকৃতি ও পরিবেশ সচেতন একজন সৌখিন ও দায়িত্ববান মানুষ ছিলেন তিনি। নিজস্ব বাসাবাড়িতে শোভা বর্ধনকারী গাছ ও ফুলের চারা রোপন ও পরিচর্যার পাশাপাশি নিজ শহর মৌলভীবাজারকে নান্দনিক ফুলেল শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গল-সিলেট রোডের মৌলভীবাজার অংশের সড়ক বিভাজকে রঙ-বেরঙের ফুল ও সুদৃশ্য গাছের অনেক চারা লাগিয়েছেন সৈয়দ মহসিন আলী-যা আজ তাঁর সুন্দর মনের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে, পুষ্প-পত্র-পল্লবের হাতছানিতে আকৃষ্ট করে নগরবাসীকে, জাগিয়ে তোলে তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসার স্মৃতি। আর এই নিসর্গ প্রেমের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে মরনোত্তর ‘আলোকধারা সম্মাননা-২০১৯’ এ ভূষিত করা হয় ‘আলোকধারা’ মৌলভীবাজারের পক্ষ থেকে।
একটা সময়ে তাঁর বাবা সৈয়দ আশরাফ আলী সাহেব ব্যবসায়িক প্রয়োজনে কলকাতার আলীপুরে বসবাস করতেন। সেখানেই সৈয়দ মহসিন আলীর জন্ম ১২ ডিসেম্বর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে। শৈশব ও কৈশোরের কিছুটা সময় এবং লেখাপড়ার একটা পর্যায় পর্যন্ত সেখানেই কাটিয়েছেন তিনি। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে পাক-ভারত যুদ্ধের সময়টাতে সৈয়দ আশরাফ আলী সাহেব ছেলে মেয়েদের নিয়ে মৌলভীবাজারে প্রত্যাবর্তন করেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ আরেক অধ্যায়।
আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার নতুন জীবন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন। আর তাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি খুবই অনুরক্ত। অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আদর্শিক বিচ্যুতি তাঁর ঘটেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি ছিলেন অবিচল ও নিষ্ঠাবান। যে কারণেই হয়তো পরবর্তীতে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আসতে পেরেছিলেন। শেখ হাসিনাও তাঁকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করেছেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১। সৈয়দ মহসীন আলীর ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিক উদযাপিত হতে যাচ্ছে। এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ আদর্শের সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক হৃদয়বান মানুষ সৈয়দ মহসিন আলীকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
সৈয়দ মহসিন আলীকে নিয়ে তৈরি আইনিউজের ভিডিও-
মোহাম্মদ আবদুল খালিক, সাবেক অধ্যক্ষ, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ।
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ