মিহিরকান্তি চৌধুরী
আপডেট: ২০:৪০, ১০ নভেম্বর ২০২১
সিলেট এমসি কলেজ ও ইতিহাসের এক নায়ক আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া
সিলেট এমসি কলেজ (মুরারিচাঁদ কলেজ) প্রধান ফটক, ইনসেটে খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়া)।
রাজা গিরিশচন্দ্র যে বীজ বপন করেছিলেন কাপ্তান মিয়া সেটাকে মহীরুহুতে পরিণত করেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ১৯১৯ সালে সিলেট আগমন করলে তাকে যে বিরাট সংবর্ধনা দেয়া হয়, আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া ছিলেন সেই অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি। আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া আসামের শিক্ষামন্ত্রীও হয়েছিলেন।
সিলেট এমসি কলেজ বা মুরারিচাঁদ কলেজ যে বাংলাদেশের একটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেটা সকলেরই জানা। সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত এবং বৃহত্তর সিলেটের সবচাইতে পুরোনো ও শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাকালের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোর মধ্যে ৭ম; ঐতিহ্যবাহী কলেজটি ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুরারিচাঁদ কলেজ ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তৎকালীন সিলেটের প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের (১৮৪৫-১৯০৮) অনুদানে। কলেজটির নামকরণ করা হয় তার প্রমাতামহ মুরারিচাঁদ এর নামে। পূর্বে কলেজটি সিলেটের বন্দর বাজারের নিকট রাজা জি. সি. উচ্চ বিদ্যালয় এর পাশে অবস্থিত ছিল। ১৮৯১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে এফ. এ. ক্লাস খোলার অনুমতি দিলে ১৮৯২ সালের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মুরারিচাঁদ কলেজের যাত্রা শুরু হয়। সেসময় ছাত্রদের বেতন ছিল ৪ টাকা এবং ১ম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশকৃতদের জন্য বিনা খরচে পড়ার ব্যবস্থা ছিল।
১৮৯২ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত রাজা গিরিশচন্দ্র রায় নিজেই কলেজটির সকল খরচ বহন করেন। ১৯০৮ সালে রাজা মারা গেলে কলেজটি সরকারি সহায়তা চায়। তখন থেকে কলেজটি সরকারি সহায়তায় পরিচালিত হতে থাকে। এরপর ১৯১২ সালে কলেজটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি কলেজ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। একই বছর তৎকালীন আসামের চিফ কমিশনার স্যার আর্চডেল আর্ল কলেজটিকে ২য় শ্রেণির কলেজ থেকে ১ম শ্রেণির কলেজে উন্নীত করেন । ১৯১৩ সালে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান ক্লাস চালু হয়। পরবর্তীতে জননেতা আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়া) সহ আরো অনেকে মিলে ১৮০০০ টাকা অনুদান দিলে কলেজটিতে স্নাতক শ্রেণি চালু হয়।
১ম বিশ্বযুদ্ধ ও অন্যান্য নানা সমস্যার কারণে কলেজের ক্যাম্পাস পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন কলেজ থেকে ৩ কি. মি. দূরে থ্যাকারে টিলায় (বর্তমান টিলাগড়) ১২৪ একর ভূমি নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসে কলেজ স্থানান্তর করা হয়। সে সময় কলেজের ছাত্রসংখ্যা ছিল ৫৬৮ জন। ১৯২১ সালে তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম মরিস কলেজের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯২৫ সালে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে তা উদ্বোধন করেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম রিড।
১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত সিলেট এমসি কলেজ (মুরারিচাঁদ কলেজ) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। দেশ বিভাগের পর এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৬৮ সালে কলেজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়, এবং সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর মত মুরারিচাঁদ কলেজটিকেও বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত করা হয় এবং অদ্যাবধি রয়েছে।
সিলেট এমসি কলেজের (মুরারিচাঁদ কলেজ) ইতিহাসের এক মহান নায়ক খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়া)। ১৮৯৭ সালের বিরাট ভূমিকম্পের ফলে রাজার বাড়ি ঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি ঋণ গ্রহণ করে তা পুনর্নির্মাণ করতে যেয়ে ধীরে ধীরে আর্থিক অনটনে পতিত হন। ১৯০৮ সালে রাজা গিরিশ চন্দ্রের মৃত্যুর পর এইডেড প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বাবু দুলাল চন্দ্র দেব এবং কাপ্তান মিয়ার উদ্যোগে কলেজটি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়।
সেই সময় মুরারিচাঁদ কলেজ সিলেট শহরের ভিতর ছিল এবং প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রি কলেজের উপযুক্ত পরিবেশ এবং দালান কোঠা সেখানে ছিলনা। তিনি শহর থেকে তিন মাইল দূরে ১২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বর্তমান মুরারিচাঁদ কলেজ প্রাঙ্গণের ভিত্তির সূচনা। কাপ্তান মিয়া কলেজের নতুন কোনো নাম বা নিজের নাম না দিয়ে এই নতুন প্রাঙ্গণে কলেজটিকে মুরারিচাঁদ কলেজের নামই রাখেন। রাজা গিরিশচন্দ্র যে বীজ বপন করেছিলেন কাপ্তান মিয়া সেটাকে মহীরুহুতে পরিণত করেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ১৯১৯ সালে সিলেট আগমন করলে তাকে যে বিরাট সংবর্ধনা দেয়া হয়, আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া ছিলেন সেই অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি। আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া আসামের শিক্ষামন্ত্রীও হয়েছিলেন। (ইতিহাস : উইকিপিডিয়া)
এখন প্রশ্ন হল, খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদের (কাপ্তান মিয়া) মূল্যায়নের সময় কি চলে যাচ্ছে না? আরেকটি প্রশ্ন হল, রাজনীতি বাদ দিলেও তাঁর অ্যাকাডেমিক চিন্তাধারা ও অবদান কি মূল্যায়নের দাবি রাখে না? মুরারিচাঁদ কলেজে খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদকে একোমোডেট করা কঠিন। মুরারিচাঁদ ও কাপ্তান মিয়া উভয়কেই খাটো করা হবে। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের ভরা মৌসুমে মুরারিচাঁদ কলেজের নামকরণ করা হয় সিলেট সরকারি কলেজ। আর এমসি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ নামে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের একটি স্থাপন করা হয়। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন শিক্ষাসচিব হেদায়েত আহমেদের উদ্যোগ ও বদান্যতায় মূল মুরারিচাঁদ কলেজ নাম ফিরে পায় এবং এমসি ইন্টারমিডিয়েট কলেজকে ডিগ্রি স্তরে উন্নীত করে সিলেট সরকারি কলেজ নামকরণ করা হয়।
স্টাফিং প্যাটার্ন থেকে অধীত বিষয়ের সংখ্যা ও ব্যাপ্তি, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস নানা বিষয়ের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এখনও প্রথম শ্রেণির ডিগ্রি কলেজ হয়নি। এই কলেজের উল্লিখিত সকল চাহিদা মিটিয়ে কলেজটিকে খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদের (কাপ্তান মিয়া) নামানুসারে করা হোক। এই কলেজের ইতিহাস মুরারিচাঁদ কলেজের সাথে সম্পৃক্ত। এমনটি হলে সৈয়দ আব্দুল মজিদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। দেশের নানা অঞ্চলে এটুর মা ফেটুর মায়ের নামে স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে কতকিছু আছে। যাঁরা ডিজার্ভ করেন তাঁদের নামে নেই।
উল্লেখ্য, খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজার শহরের বেজবাড়ি এলাকায়।
মিহিরকান্তি চৌধুরী, অনুবাদক ও নির্বাহী প্রধান, টেগোর সেন্টার, সিলেট
প্রকৃতির সন্তান খাসি - খাসিয়া জনগোষ্ঠী
হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে পর্যটক আর পদ্মটুনার ভিডিও ভাইরাল
নীলাদ্রি লেক আমাদের এক টুকরো কাশ্মীর | পাখির চোখে নীলাদ্রি
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ