অমলেন্দু কুমার দাশ
আপডেট: ১৩:৫২, ২৯ নভেম্বর ২০২১
তীর্থযাত্রা ও ভ্রমণের জন্য ভারতের আসাম রাজ্যের গৌহাটি গমন
ড. মোহাম্মদ তানভীর মনসুর লেখককে সম্মাননা প্রদান করছেন।
আগের পর্বের পর...
ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর আমার কর্মতৎপরতা ও বিচক্ষণতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এ কাজে আরো সহযোগিতা করার জন্য তিনি আমাকে উৎসাহিত করেন। মার্চ, ২০১৯। বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশন গৌহাটি বাংলাদেশের ৪৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিশাল প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। ড. মনসুর আমাকে সে অনুষ্ঠানে যেতে অনুরোধ করলেন।
আমি ২৬ মার্চ সুতারকান্দি বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করলাম। শিলচর শহরে দুই দিন অবস্থান করে গৌহাটি যাওয়ার পরিকল্পনা। বন্ধুবর অমিত দে শিলচর শহরে আমার থাকার জন্য গেস্ট হাউজের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আমি শ্যাওলা-সুতারকান্দি সীমান্ত অতিক্রম করে করিমগঞ্জ শহরে গিয়ে একটি প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে শিলচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। বিকাল ৩ টার সময় অমিত দে আমাকে রিসিভ করে শিলচর শহরের কুঞ্জলতা গেস্ট হাউসে নিয়ে গেলেন। এই অমিত বাবুর সাথে আমার পরিচয় ২০১৪ সালে এলাহাবাদে। তারপর থেকে আমার ভারতে যাওয়া আর তার বাংলাদেশে আসার মাধ্যমে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। শিলচর শহরে আমার যেসকল পরিচিতজন রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম এই অমিত দে ও সূর্য্যকান্ত সরকার। সেদিন বিকালে শিলচর শহরের কিছু বিশিষ্ট জনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলাম।
পরদিন ২৭ মার্চ, ২০১৯ তারিখে চলে গেলাম শিলচর জেলা কারাগার পরিদর্শনে। আগেই জেলসুপারের সাথে অ্যাপয়েন্টম্যান্ট করা ছিল। কিছুদিন পূর্বে এই জেল ভিজিট করেছেন সহকারী হাই কমিশনার ড. মনসুর। আমার কাজের সুবিধার জন্য সুযোগ পেয়ে আমিও ভিজিট করে নিলাম। সকাল ১১ ঘটিকার সময় অমিত বাবুসহ আমি জেলখানায় প্রবেশ করলাম। জেলসুপারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে বাংলাদেশি বন্দীদের তালিকা ধরে তাদের সাথে সাক্ষাত করলাম। সেদিন ঐ জেলের ৩৩ জন বাংলাদেশি বন্দীর সাথে আমি কথা বললাম। কথা বলার পর বুঝতে পারলাম তারা ১৪-১৫ জন সঠিক ঠিকানা বা তথ্য দিতে পেরেছে। ৯/১০ জন পূর্নাঙ্গ তথ্য দিতে পারে নাই কারণ তারা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছে। আর অবশিষ্ট কয়েকজন চরমভাবে মানসিক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় কিছুই বলতে পারছিল না।
কিছু বন্দী তাদের নাম, পিতার নাম ও গ্রামের নাম সঠিক বলতে পারলেও জেলা বা উপজেলা বলতে গিয়ে উলট-পালট করে ফেলে, আবার অনেকেই নাম ঠিকানা তেমন কিছুই বলতে পারে না, কিন্তু তাদের কথাবার্তা শুনলে বুঝা যায় তারা বাংলাদেশি। অনেকটা অসহায় হয়ে তাদের সনাক্ত করার জন্য তাদের ছবি উঠানো শুরু করলাম। তাদের বাড়ি-ঘরের ঠিকানা বের করার জন্য বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ক্লু বের করার জন্য তাদের হাট-বাজার, চেয়ারম্যান-মেম্বারের নাম, বাড়ির পাশের স্কুল, মাদ্রাসা, নদীর নাম ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে নোট করতে থাকলাম। সেদিন আমি যাদের তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম তারা হলেন- বড়লেখা উপজেলার কামাল উদ্দিন, নরসিংদী জেলার আব্দুল লতিফ, যশোর জেলার ঝর্না বেগম, সিলেট জেলার দেবদাস রবি দাস, সিলেট জেলার আহমেদ উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলার বাবলু রাজ ঘাটুয়াল, সিলেট জেলার জামাল উদ্দিন, ইকবাল হোসেন, ঢাকার হাবিব মোল্লা (তৃতীয় লিঙ্গ), খাগড়াছড়ি জেলার নূরুল আমিন, ময়মনসিংহ জেলার সাইদুর রহমান, আলম খান (জেলা অজ্ঞাত), চট্টগ্রাম জেলার অমিত বোস, মৌলভীবাজার জেলার ফারুক মিয়া, সিলেট জেলার ইছহাক আলী, সিলেট জেলার আজিম উদ্দিন, সিলেট জেলার সুজিত চন্দ্র দাশ, চট্টগ্রাম জেলার আব্দুছ ছালাম, মৌলভীবাজার জেলার ইব্রাহিম, কিশোরগঞ্জ জেলার রবীন্দ্র দাস, দিজেন্দ্র চন্দ্র দাস, শাহেল মিয়া, কক্্রবাজার জেলার প্রফুল্ল জালো দাস, সিলেট জেলার শেখর নমশুদ্র, কুমিল্লা জেলার অমর ফারুক, সিলেট জেলার শামিম আহমদ, দিনাজপুর জেলার রহিম উদ্দিন, সিলেট জেলার আব্দুল গফুর, গোপালগঞ্জ জেলার রবিউল সর্দার, মৌলভীবাজার জেলার চান্দ আলী, হবিগঞ্জ জেলার আল আমিন ও সিলেট জেলার বাদল মিয়া।
ঐদিন বিকালে শিলচরের কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে এলাম। পরদিন ২৮ মার্চ, ২০১৯ শিলচর থেকে বিমানে যাত্রা করে বিকাল ৪ টার দিকে গৌহাটি সহকারী হাই কমিশন অফিস গণেশগুড়িতে পেঁৗঁছলাম। ড. মনসুর আমাকে দেখে খুবই খুশি হলেন। আমি তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলাম। সেদিন রাতে গৌহাটি শহরের ৫ তারকা হোটেল তাজে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন। রাজ্যের বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা মে উপবিষ্ট। হল ভর্তি আমন্ত্রিত বিশিষ্ট জনেরা। ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করলেন। সেদিন আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি বাংলাদেশের একজন মেধাবী কুটনীতিবিদকে।
ভারতবাসীর কাছে তাঁর ইংরেজি ভাষায় বাংলাদেশের ইতিহাস ও শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের কথা উপস্থাপন কৌশলে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশ সরকারের একজন বিচক্ষণ কুটনীতিবিদকে দেখে আমার মন গর্বে ভরে যায়। তাঁর বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি আমাকে মে নিয়ে উপস্থিত সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, ক্রেষ্ট দিয়ে সম্মানিত করেন। সাথে সাথে অসহায় বন্দীদের জন্য আমার আন্তরিক ভাবে কাজ করার বিষয়টি সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। হল ভর্তি দর্শকের মুর্হুমুহু হাততালি আমাকে অভিভূত করেছিল।
- আরও পড়ুন- বন্দী প্রত্যাবর্তন ও কিছু মানবিক উদ্যোগ
ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর ইতোপূর্বে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কূটনীতিক হিসেবে চাকুরী করে আসলেও ভারতের আসাম প্রদেশে নতুন মিশনে বিভিন্ন প্রতিক‚লতা সামলে নিয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিশেষ করে ভারত সরকার ও জনগণের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি ভিসা, যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেন। প্রত্যেক রাষ্ট্রের দূতাবাসের একটি চলমান দায়িত্ব তার দেশের নাগরিকদের আইনগত সহায়তা প্রদান করা এবং কোনো কারণে কোনো নাগরিক বিদেশের কারাগারে বন্দী হলে নিজ নিজ দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুরের এক বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যম্প থেকে মুক্ত করে দেশে পাঠানো।
অমলেন্দু কুমার দাশ, সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এবং লেখক, লোকগবেষক ও সমাজকর্মী
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ