অমলেন্দু কুমার দাশ
আপডেট: ২১:৪৬, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
বছরের পর বছর তাঁরা ছিলেন ভারতীয় বন্দী, অবশেষে পেলেন মুক্তি
কুকড়াঝাড় জেলে বন্দী মহিলাগণ। ছবি- লেখক।
আগের পর্বের পর...
২০১৯ সালের মার্চ মাসে আমি গৌহাটিতে থাকাকালীন মান্যবর সহকারী হাই কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর আমাকে কয়েকটি ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যান যাতে আমি বাংলাদেশের বন্দী নাগরিকদের আইডেন্টিফাই করতে পারি এবং দেশে এসে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে পারি। আমি ড. মনসুরের সাথে গোয়ালপাড়া ও কুকড়াঝাড় জেল ভিজিট করি। আমরা প্রথমে গোয়ালপাড়া জেল ভিজিটের জন্য রওয়ানা দিলাম। ২৯ মার্চ বিকাল ৫ ঘটিকার সময় হাই কমিশন অফিস থেকে দুইটি গাড়িতে করে আমরা যাত্রা করলাম।
একটি গাড়িতে সহকারী হাই কমিশনার, আমি ও কনসুলার সহকারী বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। অন্য গাড়িতে মিসেস সহকারী হাই কমিশনার ও উনার ছেলে-মেয়ে। দুইজন অভিজ্ঞ ড্রাইভার ফেরদৌস সরকার ও তপন কলিতার সুদক্ষ ড্রাইভিং এ আমরা দ্রুতবেগে এগিয়ে যাচ্ছিলাম প্রশস্ত আর.সিসি ঢালাই রাস্তা ধরে। সহকারী হাই কমিশনারের গাড়ি গোয়ালপাড়া সীমান্তে প্রবেশপথে দেখা গেল সেখানের পুলিশ প্রশাসনের দুইটি গাড়ি আমাদেরকে প্রটেকশন দিতে অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা লাগানোর কারণে পুলিশ স্কট চিনতে অসুবিধা হয় নাই। আমাদের গাড়ি তাদের কাছাকাছি যেতেই তারা আমাদের ড্রাইভারকে সিগন্যাল দিয়ে থামিয়ে দিল এবং সহকারী হাই কমিশনারকে অভিবাদন জানিয়ে একটি গাড়ি সামনে আর অপর গাড়িটি পিছনে থেকে সাইরেন বাজিয়ে আমাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে গোয়ালপাড়া সার্কিট হাউজে নিয়ে গেল। তখন রাত আনুমানিক ১০ টা হবে।
আমাদেরকে অর্ভ্যথনা জানানোর জন্য সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট সুপ্রভা রায় অপেক্ষা করছিলেন। ভদ্রমহিলা আসামের ঐতিহ্যবাহী উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া দিয়ে সহকারী হাই কমিশনারকে সম্মান জানালেন, সাথে আমাকেও। প্রায় ২০০ কিলোমিটারের জার্নিতে আমরা বেশ ক্লান্ত। ফ্রেস হওয়ার জন্য আমরা জন্য সার্কিট হাউজে আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলাম এবং খুব দ্রুতই আমরা ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং রুমে চলে গেলাম। প্রটোকল অফিসারের সুদক্ষ পরিচালনায় আমাদের ডিনারের ভালো প্রস্তুতি ছিল, তিনি ষ্টাপদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমাদের ডিনার শেষ হলে প্রটোকল অফিসার সহকারী হাই কমিশনারের নিকট থেকে পরদিন সকাল কয়টায় তিনি সার্কিট হাউজে উপস্থিত হবেন তার সময়টুকু জেনে আজকের মতো যাওয়ার অনুমতি নিলেন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা সার্কিট হাউজের ভিতরে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ও অনেক পুলিশ ফোর্স দেখতে পেলাম। প্রটোকল অফিসার খুবই ব্যস্ত। সহকারী হাই কমিশনার প্রস্তুত কী না? এর ফাঁকে আমাদের গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে নিচ্ছেন।
পরদিন ৩০ মার্চ সকাল ১০ টার সময় আমরা গোয়ালপাড়া জেলে প্রবেশ করলাম। জেলসুপার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া দিয়ে সহকারী হাই কমিশনার ও আমাকে স্বাগত জানান। তারপর শুরু হয় বাংলাদেশি মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎ। তারা একজন একজন করে আমাদের সামনে এসে তাদের বাড়ি-ঘরের ঠিকানা বলতে লাগলো। এখানে আমরা ২০-২২ জন বাংলাদেশি বন্দীর সাথে কথা বললাম। কিন্তু ১০-১২ জনের সাথে আলাপ করে বুঝা গেলো তারা সঠিক ঠিকানা বা তত্ত্ব দিতে পেরেছে। ৬-৭ জন পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে পারছিল না কারণ তারা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছে। আর অবশিষ্ট কয়েকজন সম্পূর্ণভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় কিছুই বলতে পারছিল না। এ ডিটেনশন ক্যাম্পে অনেকেই ২ বছর থেকে ৪/৫ বছর ধরে বন্দী আছেন। গৌহাটিতে মিশন চালু হওয়ার অনেক আগে থেকেই তারা বন্দী আছেন। দিল্লী বা কলকাতার বাংলাদেশ মিশন থেকে এ সকল কারাগার দেখা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ছিল। তাই গৌহাটিতে মিশন চালু হওয়ায় এ সকল বন্দীর খুব ভালো হয়েছে।
আসামের গোয়ালপাড়া জেল ভিজিট কালীন সময় ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুরের সাথে আমি।
সেদিন গোয়ালপাড়া জেলে আমরা যে সকল বাংলাদেশি বন্দীর সাথে কথা বলি তারা হলেন - কক্সবাজার জেলার আরিফুল হাকিম, লালমনিরহাট জেলার নুর জামাল, বগুড়া জেলার আব্দুল কালাম, কুমিল্লা জেলার মমিন আলী, ইয়ানুর আলী (জেলা অজ্ঞাত), ময়মনসিংহ জেলার সাইফ আলী, চাঁদপুর জেলার ইব্রাহিম খলিল, যশোর জেলার সজ্ঞা দাস, জামালপুর জেলার চান মিয়া, মানিকগঞ্জ জেলার ফজর আলী মোল্লা, ফরিদপুর জেলার মজর মোল্লা, ময়মনসিংহ জেলার আল আমিন ইসলাম, ইব্রাহিম জনি (জেলা অজ্ঞাত), সুনামগঞ্জ জেলার লক্ষণ চক্রবর্তী, কুড়িগ্রাম জেলার জাহাঙ্গির আলম, কুমিল্লা জেলার মোঃ জাবেদ, চট্টগ্রাম জেলার আশিষ দাস, কুমিল্লা জেলার আবুল খায়ের, উত্তম দাস (জেলা অজ্ঞাত), কুড়িগ্রাম জেলার সাদ্দাম হোসেন, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার মো. জলিল। এখানে উল্লেখ্য উপরোক্ত ২২ জন বন্দীর নাম-ঠিকানাতে গরমিল রয়েছিল যা পরবর্তীতে তাদের অনেকের সাথে ফোনে আরো কথা বলে ও বাংলাদেশে তাদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে তাদের মুক্ত করে নিজ দেশে আনা সম্ভব হয়েছিল।
গোয়ালপাড়া জেলা কারাগার ভিজিটকালীন সময় ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর ও জেল সুপারের সাথে আমি।
যাদেরকে আমার ভারত ভ্রমণের পরবর্তী ৮ মাসের মধ্যে আনা সম্ভব হয়েছিল তারা হলেন- কক্সবাজার জেলার আরিফুল হাকিম, লালমনিরহাট জেলার নুর জামাল, বগুড়া জেলার আব্দুল কালাম, কুমিল্লা জেলার মমিন আলী, জামালপুর জেলার চান মিয়া, মানিকগঞ্জ জেলার ফজর আলী, ফরিদপুর জেলার মজর মোল্লা, সুনামগঞ্জ জেলার লক্ষণ চক্রবর্তী, কুড়িগ্রাম জেলার জাহাঙ্গির আলম, কুমিল্লা জেলার মোঃ জাবেদ, চট্টগ্রাম জেলার আশিষ দাস, কুমিল্লা জেলার আবুল খায়ের, কুড়িগ্রাম জেলার সাদ্দাম হোসেন।
গোয়ালপাড়া জেল ভিজিট শেষ হতে বিকাল প্রায় ৪ টা বেজে যায়। গোয়ালপাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিসেস বর্ণালী ডেকা, সহকারী হাই কমিশনারের জন্য তাঁর অফিসে অপেক্ষা করছেন। আমরা জেল থেকে বের হয়ে সোজা চলে যাই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর অফিসে। সেখানেও আমাদেরকে প্রথা অনুযায়ী অর্ভ্যথনা জানানো হয়। সহকারী হাই কমিশনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বর্নালী ডেকাকে ক্রেষ্ট দিয়ে সম্মানিত করেন। সৌজন্য সাক্ষাত ও চা চক্র শেষ করে আমরা রওয়ানা হলাম কুকড়াঝাড় জেলার উদ্দেশ্যে।
কারাগার ভিজিটকালীন সময় গোয়ালপাড়া জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সম্মাননা দিচ্ছেন ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর
সড়ক পথে গোয়ালপাড়া পুলিশ আমাদের গাড়ির আগে ও পিছনে প্রটেকশন দিয়ে গোয়ালপাড়ার শেষ সীমান্তে কুকড়াঝাড় পুলিশের নিকট দায়িত্বভার দিয়ে তারা ফেরত চলে যায়। আমরা রাত ১০.৩০ টার সময় কুকড়াঝাড় সার্কিট হাউজে পৌঁছলাম। আমাদেরকে ফুলের তোড়া ও আসামের গামছা দিয়ে আমাদের বরণ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রটোকল অফিসার রঞ্জু মণি দত্ত। সহকারী হাই কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর গোয়ালপাড়া থেকেই তাঁর পরিবারকে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে গৌহাটিতে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এই কুকড়াঝাড় জেলায় সহকারী হাই কমিশনার, আমি ও বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী জেল ভিজিটের জন্য রয়েছি। একসাথে ডিনার করে আমরা বিশ্রামের জন্য যার যার কক্ষে চলে গেলাম। পরদিন সকালে নাস্তার পর কুকড়াঝাড় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সার্কিট হাউজে এসে ড. মনসুরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। তিনি আমাদের যাতে কোনপ্রকার অসুবিধা না হয় তার জন্য ড. মনসুরকে বারবার সুবিধা-অসুবিধার কথা বলে যাচ্ছিলেন। তাদের মত বিনিময় শেষে আমরা কুকড়াঝাড় জেল ভিজিটে চলে গেলাম।
গোয়ালপাড়া পুরাতন সার্কিট হাউজে আমরা।
আমরা কুকড়াঝাড় জেলে পৌঁছানোর পর জেলসুপার প্রথা অনুযায়ী আমাদের বরণ করলেন। এই জেলে বন্দী সকলেই মহিলা। এখানে বিদেশি কোনো পুরুষ বন্দী নেই। ৮-১০ জন মহিলা বন্দীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের তথ্যাদি নোট করলাম। এই জেলে আলো রানী জলো দাস নামে একজন মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দী আছেন, ইতোপূর্বে সহকারী হাই কমিশনার তার ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছেন, তাই তার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখানেও কয়েকজন মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দী পাওয়া গেল। বন্দীদের সনাক্ত করার জন্য তাদের ছবি উঠালাম। তাদের বাড়ি-ঘরের ঠিকানা, এলাকার হাট-বাজার, চেয়ারম্যান, মেম্বারের নাম, বাড়ির পাশের স্কুল, মাদ্রাসা, নদীর নাম ইত্যাদি তথ্য জানার চেষ্টা করলাম। কুকড়াঝাড় জেলে সে দিন বাংলাদেশি যে সকল বন্দীর সাথে কথা বলি তারা হলেন -কুমিল্লা জেলার সালেহা আক্তার, ময়মনসিংহ জেলার মনোয়ারা আক্তার, ল²ীপুর জেলার রোকেয়া বেগম, রাজশাহী জেলার সফুরা বিবি, টাঙ্গাইল জেলার আনোয়ারা খাতুন, নোয়াখালী জেলার আলো রানী জলো দাস, নীলফামারী জেলার সুমি বেগম। পরবর্তীতে বাংলাদেশে এসে তাদের বাড়ি-ঘরের ঠিকানা বের করে পরিবার পরিজনের সাথে যোগাযোগ করে যাদেরকে বাংলাদেশে মুক্ত করে নিয়ে আসি তারা হলেন - চাঁদপুর জেলার সালেহা আক্তার, নীলফামারী জেলার সুমি বেগম, লক্ষীপুর জেলার রোকেয়া বেগম, রাজশাহী জেলার সফুরা বিবি।
৩০ ও ৩১ মার্চ পরপর দুই দিনে গোয়ালপাড়া ও কুকড়াঝাড় জেল ভিজিট করে আমরা রওয়ানা দিলাম গৌহাটির উদ্দেশ্যে। ৩১ মার্চ রাত ৮ টার সময় আমরা গৌহাটি শহরে প্রবেশ করলাম। সেদিন গৌহাটির বাঙালীপাড়া মাঠে লোক গানের উৎসব চলছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে বাউল শিল্পীরা সেখানে গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের পরিচালক সৌমেন ভারতিয়া ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুরকে দেখে অগ্রসর হয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। ড. মনসুর এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। আমিও এই বড় আয়োজনে অতিথি হিসেবে মে আসন গ্রহণ করলাম। সামনে হাজার হাজার বাংলা ভাষা-ভাষী দর্শক-শ্রোতা লোকসঙ্গীত অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা উপভোগ করছেন। ড. মনসুর তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের লোকগান সম্পর্কে দর্শক-শ্রোতাকে সংক্ষেপে ধারণা দিলেন। সেদিন একটি লালন সংগীতের দল লালন সংগীত পরিবেশনের জন্য মে উপবিষ্ট রয়েছেন, তাই ড. মনসুর লালন শাহ্ সম্পর্কেও বললেন। তিনি একজন গানপাগল মানুষ। তাঁর রয়েছে দরাজ কন্ঠ, আধুনিক গানের প্রতি তিনি বেশি আসক্ত। ড. মনসুরের বক্তব্য দর্শক-শ্রোতা মনোযোগ সহকারে শুনছিলেন। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি আমাকে নিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন। আমি উভয় দেশের বন্দী লোকদের মুক্ত করতে কীভাবে কাজ করি তার গল্প শুরু করলেন। স্যার আমাকে হিন্দি সিনেমার বাজরাঙ্গি ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সামনে বসা হাজার হাজার দর্শক মুর্হুমুহু করতালির মাধ্যমে আমাকে অভিবাদন জানাতে থাকলেন। জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। নিজের ভালো লাগা থেকে মানবতার জন্য কাজ করি। কখনো এমনভাবে অভিবাদন গ্রহণ করবো ভাবিনি। আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। মে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে তাদের অভিবাদনের জবাব দিয়েছিলাম।
তেজপুর জেলা কারাগার পরিদর্শনে আমি। সাথে ডিআইজি প্রিজন হিরেণ চন্দ্র কলিতা, জেল সুপার ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যগণ।
১ এপ্রিল ২০১৯ আমি গৌহাটিতে বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের গেষ্ট হাউজে অবস্থান করছি। ড. মনসুর আমাকে আপনজনের মতো আদর যত্ন করছেন। গৌহাটি শহর দেখার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি দিলেন। আমি গৌহাটি শহরের পানশী বাজার ও গণেশগুড়িতে কেনা-কাটা করে নিলাম। কারণ আমার ছুটি ছিল মাত্র ১৫ দিন, ছুটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২ এপ্রিল আমি গেলাম তেজপুর ও জোড়হাট জেল ভিজিটে। এবার আমি ডিআইজি প্রিজন হরেণ চন্দ্র কলিতার সাথে জেল ভিজিটে যাচ্ছি। তিনি তেজপুর ও জোড়হাট এই দুইটি জেলের দায়িত্বে রয়েছেন। আইজি প্রিজন, সংশ্লিষ্ট জেলসুপার ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরা ভোর ৬ টার সময় গৌহাটি থেকে গাড়িতে করে রওয়ানা দিলাম। গাড়ি ড্রাইভ করছেন পংকজ কলিতা। আমাদের টার্গেট তেজপুর জেলা কারাগার ভিজিট করে জোড়হাট জেলায় রাত্রি যাপন করা। দূরত্ব কম নয়! প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার হবে। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, চমৎকার রাস্তা, তাই ভ্রমণ আরামদায়ক ছিল। পথিমধ্যে আমরা সকালের নাস্তা করে নিয়েছি। তেজপুরের জেলসুপার মৃন্ময় ডাউকা ডিআইজি প্রিজনকে বারবার ফোন করে আমাদের অবস্থান জেনে নিচ্ছিলেন। আসাম রাজ্যের একটি জেলার নাম তেজপুর। প্রশাসনিক শহর শোণিতপুরে অবস্থিত। এই শহরটি ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর তীরে অবস্থিত। তেজপুর শহর চিত্রলেখা উদ্যান, অগ্নিগড়, জ্যোতিকলা ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্নের জন্য বিখ্যাত।
তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দী।
সকাল ১১ ঘটিকার সময় আমরা তেজপুর জেলা কারাগারে পৌছলাম। আমাদের উপস্থিতিতে জেলসুপারের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। আমাদের আপ্যায়নের জন্য ষ্টাপদের তিনি নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চা চক্র শেষ করে নিলাম। দেখা যায় এই জেলখানাতেও বেশ বাংলাদেশি বন্দী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২/১ জনের সাজার মেয়াদ এখনও শেষ হয় নাই।
তেজপুর জেলা কারাগারে বন্দীর সাথে কথা বলছি, সাথে আছেন ডিআইজি প্রিজন হরেণ চন্দ্র কলিতা।
বন্দীদের তালিকা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করি ও তাদের সনাক্ত করার জন্য ছবি উঠাই। এই জেলে আমরা দুইজন ভারতীয় বন্দী নাগরিককে পেয়েছিলাম, তারা মানসিক রোগী হওয়ার কারণে জেল কর্তৃপক্ষ ভুল করে তাদেরকে বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকায় সন্নিবেশিত করে রেখে দিয়েছেন। আমি ডিআইজি প্রিজন হরেন চন্দ্র কলিতাকে বিষয়টিতে নজর দিতে বললাম। তিনিও এদেরকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবী করলেন। সেদিন এই জেলে যেসকল বাংলাদেশি বন্দীর সাথে কথা বলে তাদের নাম ও বাড়ি-ঘরের ঠিকানা সংগ্রহ করলাম তারা হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ওয়াহিদুল হক, খুলনা জেলার আব্দুল কালাম, ঢাকা জেলার আব্দুল কাদির, প গড় জেলার জাহাঙ্গির আলম, খুলনা জেলার সদ্দার আলী, ঢাকা জেলার সাহিদ, নোয়াখালী জেলার ইব্রাহিম আলী, ময়মনসিংহ জেলার সৈকত আলী, কুষ্টিয়া জেলার খাজা আব্দুল্লা, ময়মনসিংহ জেলার নুর ইসলাম, প গড় জেলার ইলিয়াছ আলী, ময়মনসিংহ জেলার মহাদেব, সাতক্ষীরা জেলার আজবর আলী, ময়মনসিংহ জেলার আব্দুল কাসেম, কক্্রবাজার জেলার নুরুল আলম, ঠাকুরগাঁও জেলার জহিরুল ইসলাম, মনিমা বেগম (জেলা অজ্ঞাত), শেরপুর জেলার ফাতেমা বিবি, নাটোর জেলার বাবুল সর্দার, কুমিল্লা জেলার মমতাজ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আলাল মিয়া।
পরবর্তীতে আমি দেশে এসে বন্দীদের পরিবার পরিজনকে খোঁজে বের করে সহকারী হাই কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুরের মাধ্যমে যাদেরকে দেশে এনেছিলাম তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওয়াদুল হক, খুলনা জেলার আব্দুল কালাম, পঞ্চগড় জেলার জাহাঙ্গির আলম, কুষ্টিয়া জেলার খাজা আব্দুল্লা, পঞ্চগড় জেলার ইলিয়াছ আলী, সাতক্ষীরা জেলার আজবর আলী, ময়মনসিংহ জেলার আব্দুল কাসেম, কক্সবাজার জেলার নুরুল আলম, নাটোর জেলার বাবুল সর্দার। এখানে উল্লেখ্য কুমিল্লা জেলার মমতাজ হোসেনের বাড়ি ও পুত্রের সন্ধান পাওয়া গেলেও তার সাজার মেয়াদ শেষ না হওয়াতে এই দলের সাথে মমতাজ হোসেনকে তখন দেশে আনা সম্ভব হয় নাই। অবশিষ্ট বন্দীদের সঠিক ঠিকানা বের করতে না পারায় তারা এখনও এই জেলে বন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
জোড়হাট জেল ভিজিট, সাথে ডিআইজি প্রিজন হরেন চন্দ্র কলিতা, জেল সুপার ও অন্যান্যরা।
তেজপুর জেলে সকাল ১১টা থেকে একটানা দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করে দুপুরের লাঞ্চ করলাম। তারপর আমরা যাত্রা শুরু করলাম জোড়হাট জেলার উদ্দেশ্যে। তেজপুর জেলা থেকে জোড়হাট জেলার দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সমতল ও পাহাড়ি রাস্তা মিলিয়ে গাড়ি চলছিল। কোথাও রাস্তার উভয় পাশে উঁচু নিচু পাহাড়, ঘন বন। রাস্তা খুব চমৎকার। অসমিয়া যুবক দক্ষতার সাথে দ্রæতগতিতে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছিলেন। গাড়ী থেকে দেখছিলাম রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী চলাচল করছে। পাহাড়ের ঢালে বড় বড় গণ্ডার দেখতে পেলাম। গণ্ডার ছাড়াও এই উদ্যানে আরো বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের সামনেই জেব্রার দল চলাচল করছিল। মাঝে মাঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছবি উঠালাম। গাড়িতে বসেই ডিআইজি প্রিজন হরেণ কলিতা দাদার কাছ থেকে এই অ ল সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। তিনি বললেন আমরা যে বনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি তার নাম কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক। পৃথিবী বিখ্যাত একমাত্র এই বনে এক শিং ওয়ালা গণ্ডার পাওয়া যায়। এই পার্কটি আসামের গোলাঘাট ও নোয়াগাঁও জেলার আওতাধীন। এই জাতীয় উদ্যানে প্রচুর হাতি, বন্য জল মহিষ, বাঘ ও বারশৃঙ্গার পাওয়া যায়। এই কাজিরাঙায় প্রচুর ছন জাতীয় ঘাস জন্মে। ব্রহ্মপুত্র নদসহ চারটি নদী এই বনের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বনটি বেশ গভীর, বনের মধ্যে অসংখ্য ছোট-বড় বিল রয়েছে। এটি ভারতের বণ্যপ্রাণীদের অন্যতম একটি অভয়াশ্রম। এই কাজিরাঙাকে নিয়ে অনেকেই বই, তথ্যচিত্র ও গান রচনা করেছেন।
এই দৃশ্য দেখার জন্য মনে হচ্ছিল এই পাহাড়ের ঢালে বসে থাকি, কিন্তু সে ইচ্ছাতো পূরণ করা সম্ভব নয়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে অনেক দূর যেতে হবে। পথে যাত্রা বিরতি নিয়ে আমরা চা নাস্তা করে নিলাম। তখন আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টা হবে। ছোট এক বাজারে একটি দোকানের বাইরে বসেই চা নাস্তা করলাম। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, তাদের ভাষাও আমার নিকট অচেনা। চা নাস্তার পর আমাদের গাড়ি আবার যাত্রা শুরু করলো জোড়হাটের দিকে। রাত প্রায় ৮ টার সময় আমরা জোড়হাট জেলখানায় পৌঁছলাম। জেল সুপারের কক্ষেই আমরা চা নাস্তা করে পরবর্তী দিনের কাজ সম্পর্কে প্ল্যান করে সার্কিট হাউজে চলে গেলাম।
জোড়হাট জেল ভিজিট, সাথে ডিআইজি প্রিজন হরেন চন্দ্র কলিতা ও জেল সুপার চম্পা কলি বড়ধলই।
পরদিন সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় সার্কিট হাউজ থেকে সকালের নাস্তা শেষ করে আমরা জোড়হাট জেলে গেলাম । সেখানে জেলসুপার চম্পা কলি বড়ধলইসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। আসামের ঐতিহ্যবাহী উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে আমাদের বরণ করা হয়। চা চক্র শেষে আমরা তালিকাভুক্ত মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দীদের সাক্ষাৎকার নিলাম। অন্যান্য জেল থেকে এই জেলে বাংলাদেশি বন্দী তুলনামূলকভাবে কম। এই জেল ভিজিটকালীন সময়ে সেদিন যাদেরকে পেয়েছিলাম তারা হলেন দিনাজপুর জেলার সম্ভু আলী, চাঁদপুর জেলার মোহাম্মদ গাজী, কুমিল্লা জেলার কার্তিক চন্দ্র শীল, ময়মনসিংহ জেলার আসমা বেগম, জয়পুরহাট জেলার ইউনুস আলী, বগুড়া জেলার আব্দুল হক, গাইবান্ধা জেলার মালিক মিয়া, নোয়াখালী জেলার সুভাষ চন্দ্র দাস ও নেত্রকোণা জেলার সুচিত্রা বিশ্বাস। কারাগারে আরো দুইজন বন্দী ছিলেন তারা মারাত্বকভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় থাকার কারণে কোন কিছু বলতে ও লিখতে পারেন নাই। তাদের কাছ থেকে কোনো উপায়েই তাদের বাড়ি-ঘরের সন্ধান করার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি। জোড়হাট জেলা কারাগারে বন্দী সংখ্যা কম থাকায় এই কারাগার ভিজিটে তেমন সময় লাগে নাই।। আমরা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ১.৩০ ঘটিকার সময় গৌহাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। যাত্রা পথে কোথাও কোনপ্রকার ব্রেক না দিয়ে বিকাল ৪.৩০ ঘটিকার সময় গৌহাটি আইজি প্রিজন অফিসে প্রবেশ করলাম। সৌজন্য সাক্ষাত করলাম আইজি প্রিজন শ্রী রঞ্জন শর্ম্মা, এসিএস এর সাথে। সাথে ছিলেন ডিআইজি প্রিজন হরেণ চন্দ্র কলিতা। চা চক্র ও মতবিনিময় শেষে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য নির্ধারিত গেস্ট রুমে চলে গেলাম।
বাংলাদেশে ফিরে এসে উল্লিখিত বন্দীদের মুক্তির জন্য তাদের বাড়ির লোকদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে সহকারী হাই কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুরের কাছে পাঠিয়ে তাদের বাংলাদেশ ফেরৎ আনতে সক্ষম হই। এই জেল থেকে সেসময় যাদেরকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয় তারা হলেন দিনাজপুর জেলার সম্ভু আলী, কুমিল্লা জেলার কার্তিক চন্দ্র শীল, চাঁদপুর জেলার নূর মোহাম্মদ গাজী, ময়মনসিংহ জেলার আছমা বেগম, নাটোর জেলার মোঃ ইউনুস আলী ও নেত্রকোণা জেলার সুচিত্রা বিশ্বাস। নোয়াখালী জেলার সুভাস চন্দ্র দাসকে তখন দেশে ফেরত আনা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল। জোড়হাট জেলা কারাগারে ৩ জন বন্দী ছাড়া সবাইকে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হয়েছিল।
জোড়হাট জেলে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দী
আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম ৪ এপ্রিল কামাক্ষা মায়ের মন্দির দর্শন করে টুকটাক কেনাকাটা করবো, কারণ ৫ এপ্রিল সহকারী হাই কমিশনার সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উভয় দেশের প্রায় ৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইসচেন্সলরদের এক সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন। আমিও এই সুযোগ হাতছাড়া না করে ঐদিন তাদের সাথে দেশে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম।
- আরও পড়ুন- বন্দী প্রত্যাবর্তন ও কিছু মানবিক উদ্যোগ
৪ এপ্রিল সকাল ১০ টার সময় কামাক্ষা মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করলাম। যাকে আমরা বলে থাকি কাম রূপ কামাক্ষ্যা। মায়ের মন্দির দর্শনের কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে, আমি এগুলো সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত হয়েছিলাম। মন্দিরে প্রচুর লোক সমাগম হয়ে থাকে। তাই মাকে দর্শন করার জন্য ভক্তরা ভোর রাত থেকে লাইন ধরে থাকেন। মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য লাইনে দাঁড়ালে মায়ের দর্শন পেতে মোটামুটি ৪-৫ ঘন্টা সময় লাগবেই। এখানে আরেকটি লাইন রয়েছে যেখানে ভক্তরা ৫০০ টাকা দিয়ে রশিদ কেটে লাইনে দাঁড়ান, কিন্তু এই লাইন থেকেও মাকে দর্শন করতে মোটামুটি দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লেগে যায়। ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর এই নিয়ম আগে থেকেই জানতেন। তিনি কয়েকবার মন্দির দর্শন করেছেন। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে।
আইজি প্রিজন শ্রী রঞ্জন শর্ম্মা এসিএস, ডিআইজি প্রিজন হরেন চন্দ্র কলিতা ও আমি।
আমার যাতে মন্দির দর্শন করতে কোনোরকম কষ্ট বা সময় নষ্ট না হয় সেজন্য ড. মনসুর মন্দির কমিটির সভাপতিকে ফোন করে আমার কথা বলে দিয়েছিলেন। আমি উনার ড্রাইভারকে নিয়ে চলে গেলাম মন্দিরের গেইটে। আমি মন্দিরে প্রবেশ করে সরাসরি চলে গেলাম অফিস রুমে। সেখানে আমার পরিচয়পত্র প্রদান করতেই একজন পান্ডা (পুরোহিত) আমাকে সেক্রেটারীর রুমে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে মায়ের পূজোর নিয়মকানুন বুঝিয়ে দিলেন এবং একজন পান্ডাকে দায়িত্ব দিলেন আমাকে সাথে নিয়ে মাকে দর্শন করাতে।
আমি পান্ডা মহাশয়ের কথামত ভোগ ও ফুলের ডালি ক্রয় করে উনার সাথে মায়ের গর্ভ মন্দিরে প্রবেশ করলাম। গৌহাটিতে মায়ের মন্দির আমি ২য় বারের মতো দর্শন করছি। কামাক্ষা মায়ের মন্দির একটি পাহাড়ের চূড়াতে অবস্থিত। মায়ের মন্দিরের প্রবেশ মুখ থেকে নীচের দিকে অনেক সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলাম। গর্ভ মন্দিরের ভিতরেও ভক্তদের দুটি লাইন রয়েছে। একজন লোক ১/২ ফুট অগ্রসর হতে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। আমি তানভীর স্যারের গেস্ট হওয়ায় পান্ডা মহাশয় আমাকে ভিআইপি গেস্ট হিসাবে সরাসরি মায়ের ঠিক সামনে নিয়ে গেলেন। ৩-৪ মিনিটের মধ্যে আমি মায়ের সামনে উপস্থিত। আমি কাতর হয়ে মায়ের কাছে প্রার্থনা করলাম। ভিতরে অন্ধকার! দিনের আলো সেখানে পৌঁছে না। বিদ্যুৎ এর আলো রয়েছে।
পান্ডা মহাশয় এবার আমাকে মন্ত্র উচ্চারণ করতে বললেন। আমি উনার সাথে মন্ত্র উচ্চারণ করলাম। মায়ের কাছে প্রার্থনা করলাম, তারপর আমি মন্দিরের বাইরে চলে এলাম। বাইরেও পূজার কিছু নিয়মকানুন পালন করতে হয়, আমি সেগুলো পালন করে পান্ডামহাশয়কে দক্ষিণা দিয়ে প্রণাম করে চলে এলাম অফিস রুমে। সেখানে কমিটির লোকজন প্রসাদ খাওয়ালেন। ড. তানভীরের সহায়তার কারণে আমি অনায়াশেই মায়ের মন্দিরে পূজা দিয়ে মাকে দর্শন করে আনন্দমনে ফিরে এলাম।
[লেখাটি ধারাবাহিকভাবে চলবে...]
অমলেন্দু কুমার দাশ, সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এবং লেখক, লোকগবেষক ও সমাজকর্মী
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ