মিহির কান্তি চৌধুরী
আপডেট: ১৮:৪৪, ৮ জানুয়ারি ২০২২
তবারক হোসেইন-শামসুন্নাহার গ্রন্থাগার : প্রেরণার উৎস
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শাহবাজপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন কৃতি ছাত্র, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী, প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৬২ সাল থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রপথিক অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন। তিনি তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান শাহবাজপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে তাঁর ও তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী মিসেস শামসুন্নাহারের যৌথ নামে নতুন ভবন নির্মাণসহ একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। নাম দিয়েছেন তবারক হোসেইন-শামসুন্নাহার গ্রন্থাগার। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহতী উদ্যোগ।
একটি লাইব্রেরি হল স্কুলে তরুণদের জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস৷ তবারক হোসেইন-শামসুন্নাহার গ্রন্থাগার শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে৷ প্রতিটি বিদ্যালয়ে এ ধরনের একটি আধুনিক গ্রন্থাগার থাকা উচিত। এই গ্রন্থাগার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষকদেরও প্রচুর পড়াশোনা করা উচিত।
শাহবাজপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ তো বটেই পুরো শাহবাজপুর এলাকার জন্য একটি আনন্দ সংবাদ, বুক ভরে গর্ব করার মতো একটি উদ্যোগ। এই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রাক্তন ছাত্র ও এলাকাবাসী হিসেবে শ্রদ্ধাভাজন অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন ও তাঁর সহধর্মিনী মিসেস শামসুন্নাহার ভাবিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
শাহবাজপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইনের অনেক অবদান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে নগদ অর্থসাহায্য থেকে শুরু করে ব্যক্তি, সাংবাদিক, উকিল নানা পরিচয়ের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে জেলা ও মহকুমা প্রশাসন, জেলা পরিষদ থেকে নগদ-অনগদ অনেক কিছুই আদায় করে দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। সর্বশেষ দিলেন একটি মাস্টার স্ট্রোক। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে গ্রন্থাগারের চারতলা ভবন এবং আসবাবপত্র ও বইপুস্তক আরও কয়েক লাখ টাকা সবকিছু মিলে পঞ্চাশ-ষাট লাখ টাকা বা তারও বেশি আজকালের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যাকরণে বেমানান একটি পরিমাণ, বেমানান একটি উদ্যোগ। সিংহহৃদয় দ্বারাই তা করা সম্ভব। এ ধরনের উদ্যোগ শুধু শাহবাজপুর বা বড়লেখা বা সিলেট নয়, পুরো দেশের জন্য একটি শুভ বার্তা। বর্তমানের ভোগপ্রধান বাংলাদেশে এ ধরনের ত্যাগ, অবদান নিঃসন্দেহে আগামীর প্রেরণার উৎস।
আরও পড়ুন- বছরের পর বছর তাঁরা ছিলেন ভারতীয় বন্দী, অবশেষে পেলেন মুক্তি
অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইনের পথচলায় তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী মিসেস শামসুন্নাহার বেগমের অবদান অনস্বীকার্য। জীবনে তাঁরা তুলনামূলক কম সময়ে সকল সন্তানকে লেখাপড়া করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মিসেস শামসুন্নাহার বেগমের ছাত্রজীবনও অনেক উজ্জ্বল, ছিলেন প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত। সংসার জীবনে স্বামী সহযোগে সকল প্রগতিশীল আন্দোলন ও চর্চার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পেশাগতসহ সকল কর্মদক্ষতায় এলাকা, এলাকাবাসী, শাহবাজপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ- সকল সম্বন্ধসংযোগকে হোসেইন দম্পতি গৌরবান্বিত করেছেন। শুধু নিজের ছেলেদের নয়, অন্যের অনেক ছেলেকে, ছাত্রকে, সাংবাদিককে, উকিলকে সহায়তা করেছেন বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, অর্থ দিয়ে, লজিং দিয়ে, পরিচয়সূত্র দিয়ে এবং আরও যে কতভাবে তার শেষ নেই।
স্কুল লাইব্রেরির গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোনো উপায়-সুযোগ নেই। একটি লাইব্রেরি হল স্কুলে তরুণদের জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস৷ তবারক হোসেইন-শামসুন্নাহার গ্রন্থাগার শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে৷ প্রতিটি বিদ্যালয়ে এ ধরনের একটি আধুনিক গ্রন্থাগার থাকা উচিত। এই গ্রন্থাগার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষকদেরও প্রচুর পড়াশোনা করা উচিত। বিভিন্ন বিষয়ের রেফারেন্স বই থাকা প্রয়োজন। একজন পূর্ণকালীন গ্রন্থাগারিকের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব।
আরও পড়ুন- কখনো কি ফিরবে সড়কের শৃঙ্খলা?
শাহবাজপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করি। কারণ প্রথাগত গ্রন্থাগার পরিচালনার পরিবর্তে আধুুনিক পরিচালন সুফল বয়ে আনবে। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কৃতিত্বের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে হবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বই পড়ে পরীক্ষার সময়ে ভালো করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ছাত্র-শিক্ষকের সঠিকভাবে গ্রন্থাগার ব্যবহারের ওপর শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকের কাজ সহজতর হয়। গ্রন্থাগারসহ সকল অবকাঠামোতে সামাজিক অবস্থান, সুযোগ বা সীমাবদ্ধতা নির্বিশেষে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সম্পদগুলোতে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য সংস্থান এবং প্রযুক্তিকে একীভূত করে স্বাধীনভাবে শেখার প্রোগ্রাম চালাতে হবে। একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সজ্জিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের জন্য পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং বজায় রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক, নান্দনিক, সাংস্কৃতিক এবং মানসিক বৃদ্ধিকে সমৃদ্ধ করার জন্য মানসম্পন্ন কথাসাহিত্য সরবরাহ করে তা প্রচার করতে হবে। কল্পকাহিনী এবং নন-ফিকশন, ডিজিটাল, প্রিন্ট, অডিও এবং ভিডিও- বিস্তৃত পাঠ্যক্রমের সংস্থানগুলোর বিধান এবং অ্যাকসেসের সমতার মাধ্যমে শেখার এবং শেখানোর শৈলীতে পার্থক্যগুলো পূরণ করাও জরুরী। বিদ্যালয়ের ভিতরে এবং বাইরে প্রাসঙ্গিক পাঠ্যক্রমের তথ্য এবং পেশাগত উন্নয়ন সামগ্রীতে শিক্ষকদের অ্যাকসেস প্রদান করা এবং সহযোগিতামূলকভাবে শেখার কর্মসূচির পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
শাহবাজপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্য এবং এলাকার একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইনের স্নেহধন্য অনুজ হিসেবে, সর্বোপরি হোসেইন পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করছি তাঁর সাথে আমার ও আমাদের পরিবারের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আমাদের পরম প্রাপ্তি, সম্পদ। এ সম্পর্ক, সম্বন্ধ রক্ষায় আমরা সদা তৎপর। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কাছে আমি ও আমার পরিবার অত্যন্ত ঋণী যে ঋণ কোনওদিন শোধ হওয়ার নয়।
১৯৮০ সালে আমার বাবা প্রথিতযশা চিকিৎসক নিবারণচন্দ্র চৌধুরী পরলোকগমন করলে আমরা আর্থিকভাবে অনেকটা অসুবিধায় পড়ি। আমাদের বাড়ির একসময়ে অনেক বড়ো এস্টেট ছিল, ছিল চাবাগানসহ অনেক বিষয়সম্পত্তি। কালের গতিতে ও দেশ বিভাগের ব্যাকরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সবকিছু হারিয়ে গেলেও আমাদের পরিবার বাবার ডাক্তারি প্র্যাকটিসের কারণে বিপর্যয় থেকে বেঁচে যায়। আমার বাবা মারা যাওয়ার সময়ে আমার ছোটো ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল এবং সব ছোটো বোন দশম শ্রেণিতে পড়ত। আমি ১৯৬৯ সালে শাহবাজপুর হাইস্কুলের ছাত্র ছিলাম। আমার শ্রদ্ধেয় প্রধানশিক্ষক ছিলেন জনাব আছদ্দর আলী। ১৯৮০ সালে তিনি এবং শাহবাজপুর হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী, আমাদের অত্যন্ত শুভাকাক্সক্ষী অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন আমাকে শাহবাজপুর হাইস্কুলে শিক্ষক পদে চাকুরি দিয়ে যারপরনাই উপকার করেছিলেন, বাঁচিয়েছিলেন একটি পরিবারকে নিশ্চিত আর্থিক বিপর্যয় থেকে। জনাব আছদ্দর আলী এবং জনাব তবারক হোসেইনের এ সাহায্য কোনও ধরনের কৃতজ্ঞতা বা ধ্যনবাদ দিয়ে প্রকাশ করার মতো নয়, করলে তাঁদের অকৃত্রিম সাহায্য ও সহমর্মিতাকে খাটো করা হবে। শুধু এটুকুই বলব যে আমার বা আমার পরিবারের এ কথাগুলো মনে আছে। এ ক্ষয়িষ্ণু সমাজের সীমিতসংখ্যক হলেও তাঁদের মতো উদার ব্যক্তিত্বদের বদৌলতে অনেক ইতিবাচক ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে চোখের আড়ালে। তাঁরা প্রকৃত অর্থে এ জাতির নমস্য ব্যক্তি, সম্পদ। আমরা তাঁদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
আগামী ৮ জানুয়ারি ২০২২ তবারক হোসেইন-শামসুন্নাহার গ্রন্থাগারের শুভ উদ্বোধন, বিরাট এক আয়োজন। প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত মন্ত্রী জনাব মো. শাহাব উদ্দিন। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মনস্বী অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, কবি ও বিশিষ্ট লোক-গবেষক মদনমোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, বিশিষ্ট ভ্রমণলেখক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা জনাব শাকুর মজিদ এবং স্থপতি মি. রাজন দাশ। আর আমরা বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রত্বের দায় ও অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইনের সঙ্গে আত্মীয়তা ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে উপস্থিত থাকব।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি যাঁরা নিরলস পরিশ্রম করে, নানাভাবে অবদান রেখে এই প্রতিষ্ঠানকে বর্তমান পর্যায়ে এনছেন তাঁদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন ও মিসেস শামসুন্নাহার বেগমের প্রতি। তবারক হোসেইন-শামসুন্নাহার গ্রন্থাগারের জয়যাত্রা শুভ হোক। শুভ উদ্বোধনের পূর্বমুহূর্তে এই কামনা করি।
মিহিরকান্তি চৌধুরী, লেখক, অনুবাদক ও নির্বাহী প্রধান, টেগোর সেন্টার, সিলেট।
আইনিউজ ভিডিও
মৌলভীবাজারে মশার `কামান`
গ্রিসের বস্তিতে বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন, অধিকাংশই সিলেটি
ঘোড়দৌড় : সিলেট বিভাগের সব তেজি ঘোড়া এসেছিল এই মাঠে
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ