ড. রেজা খান
আপডেট: ২০:৩৪, ৮ এপ্রিল ২০২২
বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচাতে কী করা উচিত
বর্জ্যে দূষিত রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গা। ছবি : রেজা খান
এখনকার মত ১৫০০-এর দশকেও ঢাকার সদরঘাট একটি ব্যবসায়িক বন্দর ছিল, এটা শুধুমাত্র বুড়িগঙ্গা নদীর কারণে। কিন্তু বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলির একটি। প্রায় কয়েক যুগ পর, আমি ৪ এপ্রিল ২০২২ বুড়িগঙ্গায় ভয়ানক স্যুপি কেমিক্যালে জরাজীর্ণ অবস্থা দেখেছি। যা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বারা সৃষ্ট দূষণরোধে প্রয়োজনীয় চ্যালেঞ্জ নেওয়ার নেতৃত্বের ঘাটতি আছে বাংলাদেশের।
পুরো রাজধানীই গড়ে উঠেছিল বুড়িগঙ্গা ও এর সাথে চট্টগ্রাম ও কলকাতার সংযোগের জন্য। যদিও এই রুটগুলো মুঘল, বিদেশী জলদস্যু এবং ব্রিটিশদের মতো দখলদারদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। তাই শুধু ঢাকাই নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্য দূষণমুক্ত বুড়িগঙ্গা প্রয়োজন।
বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট যে, এত অগ্রগামী সচেতন এবং ডিজিটাল সরকার বুড়িগঙ্গার তলদেশের পলিথিনের স্তুপ এবং এর তীরের মারাত্মক রাসায়নিক দূষণের জন্য দায়ী পয়নিষ্কাশনের বর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য উপেক্ষা করে থাকতে পারে!
- আরও পড়ুন - ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে কারা আছেন
পয়নিষ্কাশন ও রাসায়নিক বর্জ্য যাচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। ছবি : রেজা খান
তাই সরকারের নিন্মোক্ত পন্থা অবলম্বন করা উচিত
- প্রথমে বুড়িগঙ্গার খনন বা ড্রেজিং করে নিচ থেকে সমস্ত পলিথিন এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করতে হবে।
- সমস্ত অপদ্রব্য নির্মূলের জন্য পানিকে রাসায়নিকভাবে শোধন করা উচিত।
- এরপর গাবতলী থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জেট ইঞ্জিন/টারবাইন বা জল প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে এমন টেকসই যন্ত্র স্থাপন করতে হবে যাতে এগুলো দ্বারা উৎপন্ন প্রবাহ মিরপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পানি চলাচলে যথেষ্ট গতি সৃষ্টি করতে পারে। (দুবাই বিজনেস বে এই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করে জল প্রবাহ ধরে রাখে যাতে রা'স আল খোর থেকে জুমেইরাহ এ. ৩.৫ কিমি পর্যন্ত জল সহজে প্রবাহিত হয়)। এ ছাড়া মস্ত বড় বড় ও মোটা পাইপ বসিয়ে অন্য নদী থেকে পানি এনে সাময়িক জল প্রবাহ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
- নদী দূষণের এর আগের সময়কার জল প্রবাহ ফিরে আসলে এই জেট ইঞ্জিন সাময়িক অথবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।
- নদীর দু’পাশে সিমেন্ট দিয়ে বেরীবাঁধ করা, সবুজ প্রশস্ত পথ ও সাধারণের হাঁটার রাস্তা করা, উন্মুক্ত বাগান, খোলা আকাশের নিচে বাজার, নাটক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য থিয়েটার হল স্থাপন করা যেতে পারে। কোন কোন জায়গায় কেবল শুক্রবার বাজার বসান যাব। যেমনটি আছে ইউরোপীয় অনেক দেশে। একই সাথে পার্লামেন্টারি কার্যক্রম বা সরকারি সংবাদ সম্প্রচার, ঢাকা চিড়িয়াখানা এবং বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বিশেষ বিশেষ প্রাণীর কার্যকলাপ দেখানোর জন্য প্রয়োজনে ডিজিটাল বোর্ড দিয়ে সম্পূর্ণ এলাকা সাজানো যেতে পারে।
তাছাড়া লঞ্চঘাটকে আরো আধুনিক করতে হবে পাশাপাশি যাত্রী পরিহনের জন্য শুধুমাত্র সৌর অথবা হাতে চালিত বোটকে অনুমোদন দিতে হবে। তেল/ডিজেল মোটর চালিত লঞ্চ এবং স্টিমারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য নদীর ফতুল্লা অথবা আরো দূরবর্তী এলাকা থেকে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে বুড়িগঙ্গাও হয়ত দানিউবে পরিণত হবে অথবা সেই নদী যে আমস্টারডাম শহরের বুক চিড়ে যায় সেটার মতো বিশ্ব নন্দিত ও দারুণ ফলপ্রসূ হতে পারে।
কেন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ বা সরকারী ভুল পরিকল্পনার ফলে দারিদ্র্যের মধ্যে থাকতে বাধ্য জনগণকে ভালো থাকার লক্ষ্যস্থির করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে দিতে পারি না? সর্বোপরি, বাংলাদেশ বর্তমানে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভের স্তুপে বসে আছে, যার সিংহভাগ আমার মতো অন্যান্য লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এবং তাদের পোশাক খাতের আয় দ্বারা প্রেরণ করা হয়।
আমি আশা করি সরকার বিশ্বব্যাপী দূষিত নদীগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন এমন বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে বুড়িগঙ্গার জন্য পরিকল্পনামাফিক অর্থ ব্যয় করবেন।
ড. রেজা খান, প্রধান বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ, দুবাই সাফারি পার্ক
আইনিউজে দেখুন আরও ভিডিও খবর
মনে আছে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের কথা? (ভিডিও)
বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী
ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়
মৌলভীবাজারের বিস্ময় বালিকা : ১৯৫ দেশের রাজধানীর নাম বলতে পারে
মৌলভীবাজারের সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারত সরকারের পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ