Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫,   চৈত্র ২৭ ১৪৩১

আলমগীর শাহরিয়ার

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১২ এপ্রিল ২০২২
আপডেট: ১৬:৫৯, ১৩ এপ্রিল ২০২২

শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল-আমোদিনী পাল-সুনীল চন্দ্র দাস, অতঃপর...

লেখক

লেখক

সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একজন শিক্ষকের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা হলো। উদ্দেশ্য ছিল উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের ধর্ম অবমাননা বিষয়ে বিস্তারিত জানা। যার কাছ থেকে জেনেছি সঙ্গত কারণেই সে শিক্ষকের নাম গোপন রাখছি। তবে ধর্ম পরিচয়ে তিনি মুসলিম।

একজন শিক্ষক যে মাটিতে জন্মেছেন, বছরের পর বছর বাস করেছেন, শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন, তাদের বা তাদের অভিভাবকদের ভয়ে তাঁকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়? এ কেমন সমাজ? তিনি যুগের পর যুগ কী শিক্ষা দিলেন? এত অনাস্থা ও অবিশ্বাস?

জানালেন, অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাসের বাড়ি প্রতিষ্ঠানটির পাশেই। বহু বছর ধরেই তিনি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। আরো কয়েক বছর পরেই অবসরে যাবেন। ধর্ম নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কখনো কোনোদিন আপত্তিকর কোনও কথা তো দূরে থাক বরং মুসলিম সহকর্মীদের ধর্ম-কর্ম চর্চায় তিনি সহযোগিতা করেছেন। বিজ্ঞানের একটি ক্লাসে তিনি অক্সিজেন নিয়ে আলোচনায় কন্যাসম ছাত্রীকে অনুরোধ করেন তার মুখের নেকাব (মুখের সামনে টানানো অংশ। আমরা যখন স্কুলে যেতাম তখন এসব কাউকে পরতে দেখিনি। নতুন সংযোজন) খুলে শ্বাস নেওয়ার জন্য।

দুই তিন বার বলার পর ইতস্তত করলেও পরে সে খুলে এবং বিষয়টি বাসায় যেয়ে বাবার সঙ্গে শেয়ার করে। শিক্ষার্থীর সেই বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি ফেসবুকে তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, তার আগে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উপজেলার এক অনুষ্ঠানেও শিক্ষার্থীটিকে নেকাব খুলে কিছু বলতে বলা হলে সে খুলেনি বলে জানা গেছে।

যা হোক, ফেসবুকে লেখার পর সুযোগ নেয় স্থানীয় কিছু ধর্মান্ধ মানুষ। তারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে। আগুনে ঘি ঢালে ব্যাঙের ছাতার মতো ঘরে ঘরে গজিয়ে ওঠা গণমাধ্যমও। যেমন জামাতিদের মুখপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত নিউজ করে, "হিজাব পরিধান করায় এক ছাত্রীকে ক্লাসরুমে লাঞ্চিত করার পাশাপাশি প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।”

সরল প্রশ্ন হলো ওই মেয়ে কী প্রতিষ্ঠানে একাই হিজাব পরে আসে? আরও অনেকের আসার কথা। তাহলে অধ্যক্ষ সবাইকে গালাগালি করার কথা। অথচ মূল ইস্যু হিজাব নয়, নেকাব। এভাবেই সুযোগ-সন্ধানীরা সুযোগ নেয় এবং ঝাঁপিয়ে পড়ে। অধ্যক্ষ পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হচ্ছে টের পেয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি যান এবং দুঃখপ্রকাশ করে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলেন। শিক্ষার্থীর বাবাও ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলে নতুন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। কিন্তু মহলবিশেষের যোগসাজশে আরেকজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে রঙ ছড়িয়ে ভিডিও করিয়ে নতুন করে ইন্ধন দেওয়া হয়। অধ্যক্ষের নামে নতুন আইডি খুলে ধর্ম অবমাননাসূচক স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। ফলে, স্থানীয়দের মধ্যে আরও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পরিস্থিতি প্রতিকূলে যাচ্ছে আঁচ শিক্ষক সপরিবারে এলাকা ত্যাগ করেন। তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও ফিরেন নি।

একজন শিক্ষক যে মাটিতে জন্মেছেন, বছরের পর বছর বাস করেছেন, শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন, তাদের বা তাদের অভিভাবকদের ভয়ে তাঁকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়? এ কেমন সমাজ? তিনি যুগের পর যুগ কী শিক্ষা দিলেন? এত অনাস্থা ও অবিশ্বাস? এরচেয়ে বেদনা ও চূড়ান্ত দুঃখের কিছু নেই। শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল, আমোদিনী পাল-এর ঘটনা যখন দেশের মানুষকে নাড়া দিচ্ছে তখন অধ্যক্ষ সুনীল কুমার দাসকে যেন আমরা ভুলে না যাই। তাঁকেও সসম্মানে ফিরিয়ে আনা হোক।

সারাদেশে ধর্মীয় উন্মাদনা ও উসকানির পরিবেশ যারা সৃষ্টি করছে তাদের চিহ্নিত করে সরকার ব্যবস্থা নিক। এগুলো বড় ধরনের কোনও নীল নকশার অংশ। দেশব্যাপী অস্থিরতা ও নাশকতা সৃষ্টির পায়তারা। প্রতিবারই সরকার এই ধর্মীয় সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের ছাড় দেয় বলে আরও অনেক নতুন ঘটনা ঘটে। রামু-নাসিরনগর-রংপুর-কুমিল্লা-শাল্লা এসব বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। এসবের অবসান চাইলে এবং শিক্ষাঙ্গনে, সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার হোক। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

আলমগীর শাহরিয়ার, লেখক, কবি ও গবেষক

  • খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়