রণজিত দত্ত জনি
আপডেট: ১৭:০৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
যেমন দেখেছি তাঁকে, দুই নয়নে : সৈয়দ মহসিন আলী
মাটি ও মানুষের নেতা সৈয়দ মহসিন আলী
শিশুদের পাশে গেলে নিজেও হয়ে যেতেন এক বাচ্চা শিশু। পিএস থাকার ফলে স্যারের সাথে অনেক স্কুল, কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যারের সাথে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে দেখেছি, কোমলমতি শিশুদের সাহচর্যে সৈয়দ মহসিন আলীও কতোটা কোমল হয়ে যেতেন।
সৈয়দ মহসিন আলী, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে যেমন এ গোটা বাংলার মানুষ বঙ্গ বন্ধু বলে ভূষিত করেছিলো তেমনি এই পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের মানুষ সৈয়দ মহসিন আলীকে ভূষিত করেছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা বিশেষণে। সেই কীর্তিমান রাজনীতিবিদ, মৌলভীবাজারের এক নক্ষত্রের ঝরে যাওয়ার মলিন দিন আজ। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী।
আজকে থেকে ঠিক সাত বছর আগে আমাদের সকলকে স্তব্ধ করে চলে যান এই কাছের মানুষটি। কাছের মানুষ বলছি কারণ, উনার সাথে আমার পেশাগত একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলো। ফলে সুযোগ হয়েছিলো মানুষটিকে খুব কাছ থেকে দেখার, ভাবার। সেই স্মৃতিচারণ থেকেই আজ তাঁকে নিয়ে আইনিউজের জন্য লিখতে বসেছি 'যা দেখেছি যা চিনেছি' শিরোনামের লেখাটি।
সৈয়দ মহসিন আলী যখন সমাজকল্যান মন্ত্রী তখন আমি তার পি.এস। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাই দায়িত্বকালীন সময়ে ছায়ার মতো ছিলাম তাঁকে ঘিরেই। যতোটা না উনার কাজে এসেছি তার থেকে বেশি শিখেছি এই গুণী রাজনীতিবিদের কাছ থেকে।
তিনি রাজনীতির মাঠে ছিলেন গুরুগম্ভীর, কিন্তু সাংসদে হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে সবাইকে বিনোদিত করার সময় হয়ে যেতেন শিশুর মতো। শিশুদের পাশে গেলে নিজেও হয়ে যেতেন এক বাচ্চা শিশু। পিএস থাকার ফলে স্যারের সাথে অনেক স্কুল, কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যারের সাথে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে দেখেছি, কোমলমতি শিশুদের সাহচর্যে সৈয়দ মহসিন আলীও কতোটা কোমল হয়ে যেতেন।
অথচ তিনি একাধারে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকও। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ২৩ বছর বয়সে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে একজন জাতীয় সংসদ সদস্য এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করেছেন।
মৌলভীবাজার পৌরসভা মেয়র হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন তিনি। পরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা মেয়র নির্বাচিত হন। দেশে যখন দুর্নীতির জন্য একের পর এক মন্ত্রীর নামের পেছনে বিভিন্ন ট্যাগ বসিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ তখন আমার স্যার সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন সেই দুর্নীতির বেড়াজাল মুক্ত। তিনি তখনো মাটি ও মানুষের এক নির্ভতার জায়গা। ব্যক্তি জীবনে তার ৩ মেয়ে থাকলেও এলাকায় তিনি ছিলেন শত শত ছেলে মেয়ের বাবা! শত শত মানুষ তাকে বাবা বলে ডাকতেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার আগে অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন আইসিইউতে থাকেন মহসিন আলী। অসুস্থতার পরও বদলাননি সাধারণ মানুষের কাছে। ঢাকার মিন্টো রোডে স্যার দুইটা ঘর বানিয়েছিলেন। একটি ঘরতো শেষে হাসপাতালের রূপ নিয়েছিলো!
আসলে স্যারের মিন্টো রোডের ওই বাসায় তিনি মৌলভীবাজার থেকে যেসব শিক্ষার্থী, রোগী ঢাকায় যেতেন তাদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। চিকিৎসার জন্য ছিলো একটি গাড়িও। এলাকার যেকোনো অসুস্থ মানুষ শুধু যাওয়ার ভাড়া নিয়ে পৌঁছে যেত মহসিন আলীর কাছে। বাকিটা মহসিন আলী দেখতেন।
মিন্টো রোডের সেই বাড়িটি এখনো আছে, কিন্তু স্যার নেই। স্যার সাত বছর আগে চলে গেছেন সবাইকে ছেড়ে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াই এখনো কিন্তু সাথে স্যার থাকেন না। মাঝেমাঝে খারাপ লাগে। মনে হয়, কিছু মানুষ চলে না গেলেও তো পারে! কিছু মানুষ আছে যারা চলে গেলে দীর্ঘকালীন স্তব্ধতায় ঢেকে যায় চারপাশ।
লেখক- রণজিত দত্ত জনি, প্রয়াত সমাজকল্যানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- মৌলভীবাজারে বঙ্গবন্ধু : খুঁজে পাই পিতার পদচিহ্ন (ভিডিও)
- দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: ইতিহাসে ভিন্নরকম এক সঙ্গীতায়োজন
- এ পি জে আব্দুল কালাম: ‘দ্য মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ